মজনু শাহ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
(Text replacement - "\[মুয়ায্যম হুসায়ন খান\]" to "[মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]")
 
৬ নং লাইন: ৬ নং লাইন:
মজনু শাহ ১৭৬০ সাল থেকে বাংলায় ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন এবং দীর্ঘ ছাবিবশ বছর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে অবিরাম যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। কোম্পানি শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর সশস্ত্র সংগ্রামে তিনি প্রকাশ্য যুদ্ধ ও গেরিলা যুদ্ধে পঞ্চাশ হাজারেরও অধিক সংখ্যক ফকির ও সন্ন্যাসীদের সংঘবদ্ধ করতে সক্ষম হন। তিনি তাঁর অধীনস্ত সৈন্যাধ্যক্ষদের নিয়ে সারা বাংলায় বহু সফল অভিযান পরিচালনা করেন। এসব অভিযানে তিনি কোম্পানির কুঠি, রাজস্ব অফিস ও স্থাপনা দখল করে নেন, কোম্পানির শাসকদের তাঁবেদার জমিদারদের কাচারি লুট করেন এবং কোম্পানির সেনাবাহিনীকে পরাজিত ও পর্যুদস্ত করেন। এসব যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক ইংরেজ সৈন্য ও কর্মচারী নিহত হয়। মজনু শাহের প্রধান কৃতিত্ব এখানেই যে তিনি ফকির ও সন্ন্যাসীদের ঐক্য অক্ষুন্ন রেখে শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধে তাঁর সুদীর্ঘ সংগ্রামের অখন্ডতা অব্যাহত রাখতে পেরেছেন।
মজনু শাহ ১৭৬০ সাল থেকে বাংলায় ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন এবং দীর্ঘ ছাবিবশ বছর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে অবিরাম যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। কোম্পানি শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর সশস্ত্র সংগ্রামে তিনি প্রকাশ্য যুদ্ধ ও গেরিলা যুদ্ধে পঞ্চাশ হাজারেরও অধিক সংখ্যক ফকির ও সন্ন্যাসীদের সংঘবদ্ধ করতে সক্ষম হন। তিনি তাঁর অধীনস্ত সৈন্যাধ্যক্ষদের নিয়ে সারা বাংলায় বহু সফল অভিযান পরিচালনা করেন। এসব অভিযানে তিনি কোম্পানির কুঠি, রাজস্ব অফিস ও স্থাপনা দখল করে নেন, কোম্পানির শাসকদের তাঁবেদার জমিদারদের কাচারি লুট করেন এবং কোম্পানির সেনাবাহিনীকে পরাজিত ও পর্যুদস্ত করেন। এসব যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক ইংরেজ সৈন্য ও কর্মচারী নিহত হয়। মজনু শাহের প্রধান কৃতিত্ব এখানেই যে তিনি ফকির ও সন্ন্যাসীদের ঐক্য অক্ষুন্ন রেখে শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধে তাঁর সুদীর্ঘ সংগ্রামের অখন্ডতা অব্যাহত রাখতে পেরেছেন।


মজনু শাহ ১৭৮৬ সালে ময়মনসিংহ সন্নিহিত অঞ্চলে অভিযানকালে কালেশ্বর এলাকায় লেফটেন্যান্ট ব্রেনানের অধীনে কোম্পানির এক বাহিনীর নিকট পরাজয় বরণ করেন। এ যুদ্ধে তাঁর বহুসংখ্যক অনুসারী নিহত হন। যুদ্ধে আহত তাঁর কতিপয় অনুসারীকে মেওয়াটে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৭৮৬ সালের পরে মজনু শাহকে আর কোনো অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়নি। লেফটেন্যান্ট ব্রেনানের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, মজনু শাহ ১৭৮৬ সালের ৮ ডিসেম্বর এক যুদ্ধে পরাজিত ও আহত হন। ১৭৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি কানপুর জেলার মকানপুরে শাহ মাদারের দরগায় মৃত্যুবরণ করেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। সম্ভবত যুদ্ধে আহত অবস্থায় তিনি শাহ মাদারের দরগায় ফিরে যান এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।  [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]
মজনু শাহ ১৭৮৬ সালে ময়মনসিংহ সন্নিহিত অঞ্চলে অভিযানকালে কালেশ্বর এলাকায় লেফটেন্যান্ট ব্রেনানের অধীনে কোম্পানির এক বাহিনীর নিকট পরাজয় বরণ করেন। এ যুদ্ধে তাঁর বহুসংখ্যক অনুসারী নিহত হন। যুদ্ধে আহত তাঁর কতিপয় অনুসারীকে মেওয়াটে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৭৮৬ সালের পরে মজনু শাহকে আর কোনো অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়নি। লেফটেন্যান্ট ব্রেনানের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, মজনু শাহ ১৭৮৬ সালের ৮ ডিসেম্বর এক যুদ্ধে পরাজিত ও আহত হন। ১৭৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি কানপুর জেলার মকানপুরে শাহ মাদারের দরগায় মৃত্যুবরণ করেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। সম্ভবত যুদ্ধে আহত অবস্থায় তিনি শাহ মাদারের দরগায় ফিরে যান এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।  [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]


[[en:Majnu Shah]]
[[en:Majnu Shah]]

১৬:০৮, ১৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

মজনু শাহ  মাদারিয়া তরিকার সুফি সাধক এবং বাংলায় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্যের বিরুদ্ধে ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলনের নায়ক। মজনু শাহ ছিলেন মেওয়াটের অধিবাসী। তাঁর প্রথম জীবন সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। তাঁর প্রকৃত নামও অজ্ঞাত। মজনু শাহ নামেই তিনি পরিচিত। কখনও মজনু শাহ বুরহানা, আবার কখনও বা মজনু ফকির নামে তাঁর উল্লেখ পাওয়া যায়।

বাংলায় বিহার ভিত্তিক মাদারিয়া সুফি তরিকার নেতা শাহ সুলতান হাসান সুরিয়া বুরহানার মৃত্যুর পর আঠারো শতকের মধ্যভাগে মজনু শাহ এ তরিকার নেতৃত্ব লাভ করেন। তিনি বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রামে সুফি দরবেশ ও যোগী সন্ন্যাসীদের ঐক্যবদ্ধ করেন। তিনি বিহারের পশ্চিমাঞ্চল থেকে বাংলার পূর্বপ্রান্ত পর্যন্ত অবিরাম সফর করে এ অঞ্চলের ফকির ও সন্ন্যাসীদের ঐক্যবদ্ধ করেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামে তিনি অত্যন্ত সফলভাবে বাংলার বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রেণি ও সাধারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন লাভে সক্ষম হন। মজনু শাহ সাধারণত দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদ থানার বালিয়াকান্দিতে বসবাস করতেন। বগুড়ার মাদারগঞ্জে তাঁর একটি অস্থায়ী নিবাসও ছিল।

মজনু শাহ ১৭৬০ সাল থেকে বাংলায় ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন এবং দীর্ঘ ছাবিবশ বছর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে অবিরাম যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। কোম্পানি শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর সশস্ত্র সংগ্রামে তিনি প্রকাশ্য যুদ্ধ ও গেরিলা যুদ্ধে পঞ্চাশ হাজারেরও অধিক সংখ্যক ফকির ও সন্ন্যাসীদের সংঘবদ্ধ করতে সক্ষম হন। তিনি তাঁর অধীনস্ত সৈন্যাধ্যক্ষদের নিয়ে সারা বাংলায় বহু সফল অভিযান পরিচালনা করেন। এসব অভিযানে তিনি কোম্পানির কুঠি, রাজস্ব অফিস ও স্থাপনা দখল করে নেন, কোম্পানির শাসকদের তাঁবেদার জমিদারদের কাচারি লুট করেন এবং কোম্পানির সেনাবাহিনীকে পরাজিত ও পর্যুদস্ত করেন। এসব যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক ইংরেজ সৈন্য ও কর্মচারী নিহত হয়। মজনু শাহের প্রধান কৃতিত্ব এখানেই যে তিনি ফকির ও সন্ন্যাসীদের ঐক্য অক্ষুন্ন রেখে শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধে তাঁর সুদীর্ঘ সংগ্রামের অখন্ডতা অব্যাহত রাখতে পেরেছেন।

মজনু শাহ ১৭৮৬ সালে ময়মনসিংহ সন্নিহিত অঞ্চলে অভিযানকালে কালেশ্বর এলাকায় লেফটেন্যান্ট ব্রেনানের অধীনে কোম্পানির এক বাহিনীর নিকট পরাজয় বরণ করেন। এ যুদ্ধে তাঁর বহুসংখ্যক অনুসারী নিহত হন। যুদ্ধে আহত তাঁর কতিপয় অনুসারীকে মেওয়াটে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৭৮৬ সালের পরে মজনু শাহকে আর কোনো অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়নি। লেফটেন্যান্ট ব্রেনানের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, মজনু শাহ ১৭৮৬ সালের ৮ ডিসেম্বর এক যুদ্ধে পরাজিত ও আহত হন। ১৭৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি কানপুর জেলার মকানপুরে শাহ মাদারের দরগায় মৃত্যুবরণ করেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। সম্ভবত যুদ্ধে আহত অবস্থায় তিনি শাহ মাদারের দরগায় ফিরে যান এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।  [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]