মংলা উপজেলা

মংলা উপজেলা (বাগেরহাট জেলা)  আয়তন: ১৪৬১.২০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২১°৪৯´ থেকে ২২°৩৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩২´ থেকে ৮৯°৪৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে রামপাল উপজেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলা, পশ্চিমে দাকোপ উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৩৬৫৮৮; পুরুষ ৭১৪৯২, মহিলা ৬৫০৯৬। মুসলিম ১০২২৯৮, হিন্দু ২৯৪২৬, বৌদ্ধ ২১, খ্রিস্টান ৪৮৩৭ এবং অন্যান্য ৬।

জলাশয় পশুর, মংলা, ভোলা, বাঙরা ও চাঁদপাই নদী উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন মংলা থানা গঠিত হয় ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
২৮ ৮৩ ৩৯৮৩৭ ৯৬৭৫১ ৯৩ ৬৪.১ ৫৪.৩
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৯.৪০ ১৩ ৩৯৮৩৭ ২০১২ ৬৪.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
চাঁদপাই ২৩ ৫০৭৭ ৮৭৭০ ৮৮৯২ ৫৩.২
চিলা ২৯ ৭৪৫২ ৮৮৪৫ ৮৭৬২ ৪৯.৯
বুড়িরডাঙ্গা ২৭ ৭১৪৩ ৭৮১০ ৭৫০১ ৬৫.৮
মিঠাখালী ৫৯ ৮৫০৬ ৮৫৫৭ ৮৫৮২ ৫৬.৫
সুন্দরবন ৮৯ ৮৭৮২ ৮৩৫২ ৮৪৮২ ৫২.০
সুনীলতলা ৮৩ ৩৮১৯ ৪২৯৩ ৪৫৩৯ ৪৭.৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জয়মনি ও লাউডোবায় পাকবাহিনীর দুটি খাদ্য ও গোলা বারুদ বোঝাই জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। পশুর নদীতে নৌকমান্ডো অভিযান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত। মুক্তিবাহিনীর নৌকমান্ডোরা ৪টি অভিযানে পাকসেনাদের ২০টি জাহাজ ডুবিয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন মংলা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৭০, মন্দির ২৯, গির্জা ১১, মাযার ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: মেছের শাহ জামে মসজিদ, হরিভজন ঠাকুর মন্দির, সেন্ট পলের গির্জা।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৭.২%; পুরুষ ৫৮.৯%, মহিলা ৫৫.৩%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬১, শিশু বিদ্যালয় ৩, মাদ্রাসা ২৯৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মংলা কলেজ (১৯৮১), দিগরাজ ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৮), মংলা বন্দর স্কুল ও কলেজ (১৯৮৭), টাটিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৭), সেন্ট পল্স উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৪), বুড়িরডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৬১), চালনা বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৬২), ইউনুছ আলী কলেজিয়েট স্কুল (১৯৮৫), চালনা বন্দর সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৬০), আদর্শ ইসলামী একাডেমি (১৯৯১)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: সুন্দরবন; সাপ্তাহিক: মংলা, দক্ষিণবার্তা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৫, নাট্যদল ১৪, সিনেমা হল ২, অডিটোরিয়াম ১, খেলার মাঠ ৭।

দর্শনীয় স্থান মংলা বন্দর (এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সামুদ্রিক বন্দর), সুন্দরবনের করমজল ও হিরন পয়েন্ট, সুন্দরবন জাদুঘর (২০০৬), সেন্ট পলের গির্জা।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৬.৩১%, অকৃষি শ্রমিক ১৭.০২%, শিল্প ০.৮%, ব্যবসা ১৮.৮৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৪৮%, চাকরি ১০.৬৫%, নির্মাণ ১.৩৬%, ধর্মীয় সেবা ০.২৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৭% এবং অন্যান্য ১২.০২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪১.১২%, ভূমিহীন ৫৮.৮৮%। শহরে ৩১.৫৫% এবং গ্রামে ৪৬.৯৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি সুপারি, আখ।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, লেবু, তাল, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৭৬১, হাঁস-মুরগি ৬০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৪৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৪৬ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৪৯ কিমি; নৌপথ ৭০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা সিমেন্ট কারখানা ২, এলপি গ্যাস প্লান্ট ১, আইস ফ্যাক্টরি ১০, রাইস মিল ৬।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, পাটশিল্প, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ, নকশী কাঁথা।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২০, মেলা ১। মংলা বন্দর বাজার, দিগরাজ হাট ও চটের হাট এবং চাঁদপাইর তৈয়ববাড়ির মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য চিংড়ি, কাঁকড়া।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৪.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৪.৪%, ট্যাপ ৬.৭% এবং অন্যান্য ৮৮.৯%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮১.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৪.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৪.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, হাসপাতাল ৩, ইউনিয়ন ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৬, কমিউনিটি ক্লিনিক ১০।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ২৯ ডিসেম্বর ১৯৮৮ সালে এবং ৫ নভেম্বর ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বহু লোক, গৃহপালিত পশু-পাখি, সুন্দরবনের জীবজন্তু মারা যায় এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কারিতাস, ওয়ার্ল্ড ভিশন। [মোসফেকুর রহমান]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মংলা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।