ভ্রাতৃদ্বিতীয়া

ভ্রাতৃদ্বিতীয়া হিন্দুসমাজে প্রচলিত একটি  লোকউৎসব। এর পশ্চাতে একটি পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে। কাহিনীটি হলো: কোনো এক কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে যমুনাদেবী তাঁর ভাই যমের পূজা করেন এবং তার পুণ্যপ্রভাবে যমদেব অমরত্ব লাভ করেন। এ কারণে এই তিথির নামান্তর হয় যমদ্বিতীয়া। যমুনার পূজার ফলে ভাই যমের এই অমরত্বলাভের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পরবর্তীকালে হিন্দু রমণীরাও ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় সামান্য ভিন্ন রীতিতে এ উৎসব পালন শুরু করে। বর্তমানে বোন  উপবাস থেকে কার্তিক মাসের দ্বিতীয়া তিথিতে ভাইয়ের কপালে বাঁহাতের কড়ে আঙুল দিয়ে চন্দনের (ঘি, কাজল বা দৈ-ও হতে পারে) ফোঁটা দিয়ে হাতে ‘রাখি’ পরিয়ে দেয়, আর তার দীর্ঘায়ু কামনা করে বলে: ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা/ যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।’ এ থেকে এ উৎসবের আরেক নাম হয় ‘ভাইফোঁটা’। এ উৎসব উপলক্ষে বোন ভাইকে নতুন জামা-কাপড় বা অন্যান্য উপহার সামগ্রী দেয় এবং ভাইও বোনকে প্রত্যুপহার দেয়। বাড়িতে এদিন বিশেষ ভোজেরও আয়োজন করা হয়।

ভাইফোঁটার দিন ভাইয়ের হাতে রাখি পরিয়ে দেওয়ার সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক ঘটনার সম্পর্ক আছে। ১৩১২ বঙ্গাব্দে (১৯০৫ সাল)

বঙ্গভঙ্গ আইন পাস হলে তার প্রতিবাদ এবং সৌভ্রাতৃত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে ৩০ আশ্বিন দুই বঙ্গের লোকদের হাতে হলুদ সুতার রাখি রিয়ে দেওয়া হয়, যা ‘রাখিবন্ধন’ উৎসব নামে পরিচিতি লাভ করে। এর  মন্ত্র হলো: ‘ভাই ভাই এক ঠাঁই।’  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এতে নেতৃত্ব দেন। তিনি হয়তো রাখিবন্ধনের প্রেরণা লাভ করেছিলেন উত্তর ভারত থেকে। সেখানে হিন্দু ও জৈনসমাজে শ্রাবণী পূর্ণিমায় সৌহার্দ্য বা ভ্রাতৃত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে পরস্পরের হাতে রঙিন সুতা বেঁধে দেওয়া হয়। সুতা বাঁধার সময় তারা বলে: ‘যার দ্বারা মহাবলী দৈত্যরাজ বলিকে বাঁধা হয়েছিল, তার দ্বারা আমি তোমাকে বাঁধলাম’, অর্থাৎ এ বন্ধন যেন কখনও ছিন্ন না হয়। বাংলার গৃহবধূদের রাখিবন্ধন আন্দোলনে সামিল করার উদ্দেশ্যে  রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী রচনা করেন বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথা।  [সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়]