ভোলা সদর উপজেলা

ভোলা সদর উপজেলা (ভোলা জেলা)  আয়তন: ৪১৩.১৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৩২´ থেকে ২২°৫২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩২´ থেকে ৯০°৪৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে মেহেন্দীগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা, দক্ষিণে বাউফল ও বোরহানউদ্দিন উপজেলা, পূর্বে দৌলতখান উপজেলা, পশ্চিমে মেহেন্দীগঞ্জ, বরিশাল সদর ও বাকেরগঞ্জ উপজেলা।

জনসংখ্যা ৪৩০৫২০; পুরুষ ২১৪২১২, মহিলা ২১৬৩০৮ (আদমশুমারি ২০১১)। মুসলিম ৩৯৪৫৫৩, হিন্দু ১৩৪১৩, বৌদ্ধ ৪৭, খ্রিস্টান ১৯ এবং অন্যান্য ৬২ (আদমশুমারি ২০০১)।

জলাশয় প্রধান নদী: মেঘনা, তেঁতুলিয়া।

প্রশাসন ভোলা থানা গঠিত হয় ১৮৪২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৩ ৯২ ১০৮ ৮৭২৪৩ ৩৪৩২৭৭ ১০৪২ ৬০.৭ (২০০১) ৩৯.৮
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২২.৬৬ (২০০১) ১৯ ৪৭৪৭৭ ১৭৮৬ (২০০১) ৭৬.০
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৯.২৭ (২০০১) ৩৯৭৬৬ ৩৭২৩ (২০০১) ৫২.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আলী নগর ১২ ২৪৫২ ৮৫০৫ ৮৪৩৮ ৫১.০
ইলিশা ৫১ ১০৩৫৮ ২৩৪৩৭ ২৩৪৮৭ ৩৪.৫
উত্তর দিঘলদী ৬৫ ৪৭৫০ ১১৬১৮ ১৩১২০ ৪৯.০
কচিয়া ৫৮ ৪১৭০ ৬৮৫১ ৬৭০৯ ৩৬.১
চর সামাইয়া ২১ ৩৫৯০ ৯৫৮৭ ৯৬৭৪ ৫৩.২
চর শিবপুর ২৯ ২৭৫৮ ১০৫৪৬ ১০৭৩৮ ৪৯.৬
দক্ষিণ দিঘলদী ৮০ ৫০৬২ ১৪৫৭৪ ১৫২২০ ৪৫.০
ধনিয়া ৩৬ ৫২৯৭ ১৫৯২০ ১৬০৩১ ৪৫.৫
পশ্চিম ইলিশা ৫৫ ৮১৮৪ ১৭১৮৭ ১৮৩০৯ ৩৬.০
বাপ্তা ১৪ ১২৮৮৭ ১৭৯২৭ ১৮৬২১ ৫১.৪
ভেদরিয়া ৮৭ ৯৭৬৫ ১৫৫৩০ ১৫৫২৩ ৩৩.২
ভেলুমিয়া ৯৪ ১৩৩১২ ১৫৪৮৯ ১৫০৮৫ ৩৬.৫
রাজাপুর ৭৩ ৮৮৮৪ ২২৫৪৮ ২২৩৬৯ ৩০.০

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ বুড়ি মসজিদ, রজনী করের বাসভবন (বর্তমানে ফজিলাতুন্নেসা মহিলা কলেজের ছাত্রী নিবাস), পঞ্চরত্ন মঠ উল্লেখযোগ্য।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে উপজেলার ঘুইংগার হাটে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর যুদ্ধে ১২১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২৭ অক্টোবর ভোলা থেকে ১০ কিমি দূরে টনির হাট নামক স্থানে আনসার এডজুট্যান্ট আলী আকবর একদল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে পাকবাহিনীকে আক্রমণ করার জন্য অবস্থান নেয়। পাকবাহিনী অতর্কিতে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেক গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এসময় মুক্তিযোদ্ধারা ভোলা থেকে ৭ কিমি দূরে ঘুইংগার হাটে অবস্থান নেয় এবং পাকসেনাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে ৫ জন পাক সেনা হত্যা করে। যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা টনির হাটের নাম রাখেন বাংলাবাজার। উপজেলায় ১টি গণকবর রয়েছে; ১টি স্থানে স্মৃতিফলক নির্মিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন ভোলা সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৪২৩, মন্দির ১৫। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: বুড়ি মসজিদ, রাজাপুর জামে মসজিদ, খেয়াঘাট মসজিদ, ঘুইংগার হাট মসজিদ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৫.২%; পুরুষ ৪৫.০%, মহিলা ৪৫.৪%। কলেজ ৪, আইন কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৮, কিন্ডার গার্টেন ১৩, মাদ্রাসা ৪৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ভোলা সরকারী কলেজ (১৯৬২), সরকারী ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজ (১৯৭২), নলিনী দাস হোমিও মেডিক্যাল কলেজ (১৯৮১), আলতাজের রহমান কলেজ (১৯৯৪), ভোলা সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), ভোলা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদালয় (১৯২৮)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: ভোলাবাণী, বাংলার কণ্ঠ, ভোলা কল্যাণ, নকীব, ভোলা বার্তা, আজকের ভোলা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, ক্লাব ১৫, সিনেমা হল ৩, নাট্যদল ২, সাইক্লোন আশ্রয়কেন্দ্র ২০।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৫.৭২%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৪৩%, শিল্প ০.৫০%, ব্যবসা ১৪.৭৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৩৩%, চাকরি ৭.৭৪%, নির্মাণ ২.১৭%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৪১% এবং অন্যান্য ৯.৫৫%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৫.১২%, ভূমিহীন ৫৪.৮৮%। শহরে ৪৩.৬০%  এবং গ্রামে ৪৫.৪৪% পরিবারের  কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, ডাল, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, তিল, তিসি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, সুপারি, নারিকেল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২৬০, হাঁস-মুরগি ২৭।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৩৫১ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩২, কাঁচারাস্তা ৩১২ কিমি; নৌপথ ২৪ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন গরুর গাড়ি, পাল্কি।

শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ার মিল, রাইস মিল, অয়েল মিল, স’মিল, আইস ফ্যাক্টরি, বিস্কুট ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প মৃৎশিল্প, বুননশিল্প, বাঁশের কাজ, নকশিকাঁথা।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৫২। ঈশ্বর হাট, খানের হাট, ঘুইংগার হাট, ব্যাংকের হাট, মাঝির হাট, রৌদ্রের হাট, তালুকদার হাট, কন্দ্রকপুর বাজার, খেয়াঘাট বাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য সুপারি, ডাল, ইলিশ মাছ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসুচির আওতাধীন। তবে ৪২.৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.০%, ট্যাপ ০.৬% এবং অন্যান্য ২.৪%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৪.৬% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩১.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে । ৩.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১৩, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৪, হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল ১, পশু হাসপাতাল ১।

এনজিও প্রশিকা, আশা, ব্র্যাক, কোস্ট, হীড বাংলাদেশ, কেয়ার।  [মো. মিজানুর রহমান]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ভোলা সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।