ভেড়েন্ডা

ভেড়েন্ডা গাছ

ভেড়েন্ডা (Castor)  দ্বিবীজপত্রী Euphorbiaceae গোত্রের উষ্ণমন্ডলীয় ও উপ-উষ্ণমন্ডলীয় উদ্ভিদ প্রজাতি Ricinus communis। ভেরেন্ডা রেড়ী নামেও পরিচিত। ভেড়েন্ডা ছোটখাটো উদ্ভিদ।

গাছের পাতা একক, বেশ বড়, গভীরভাবে খাঁচ কাটা, ছাতার মতো এবং গাঢ় সবুজ রঙের, বোঁটা লম্বা (প্রায় ৩০ সেমি), ফলক গোলাকৃতি ও লতিযুক্ত। একই গাছে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল জন্মে। ফুল গুচ্ছবদ্ধ, একলিঙ্গ। ফল গোলাকার, কাঁটাভরা ক্যাপসুলের মতো; প্রতি ফলে তিনটি মসৃণ, দাগযুক্ত বীজ থাকে। প্রতিটি বীজের গোড়ায় ছোট, কোমল একটি স্পঞ্জের মতো স্ফীতি থাকে। এর বীজ থেকে তেলের জন্য ভেড়েন্ডার চাষ হয়।

ভেড়েন্ডার আদি নিবাস সম্ভবত আফ্রিকা। এর ব্যাপক আবাদ হয় ভারত, মেক্সিকো ও ব্রাজিলে। বাংলাদেশে সর্বত্র জন্মে, গ্রামাঞ্চলে কেউ কেউ বসতভিটার আশেপাশেরোপণ করে, কিংবা বনেবাদাড়ে আপনিতে জন্মে। মার্চ-এপ্রিল মাসে বীজ বপন করতে হয়। গাছে ফুল ও ফল হয় আগস্ট-সেপ্টেম্বরে। ভেড়েন্ডা জলা জায়গায় বাঁচে না। বর্তমানে দেশে প্রায় ৪৭৩ হেক্টর জমিতে ২৮০ মে টন ভেরেন্ডা ফলে।

ফরিদপুর, কুমিল্লা, বরিশাল, পটুয়াখালী জেলায় বেশি চাষ হয়। বীজে তেলের পরিমাণ হয় ২০-৫০%। ভেরেন্ডার তেল ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহার করা যায় না।তবে এ তেল কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে এবং বিভিন্ন শিল্পকার্যে ব্যবহূত হয়। বার্নিশে, উন্নতমানের সাবান তৈরিতে, কলকারখানার যন্ত্রপাতি পিচ্ছিলকরণে এবং কৃত্রিম চামড়া তৈরিতে ভেরেন্ডার তেল ব্যবহূত হয়। তদুপরি প্রকৃত চামড়া ড্রেসিং এবং রং ও প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরিতেও কাজে লাগে। খৈলে বিষাক্ত রাইসিন (ricin) থাকায় পশুখাদ্যের অনুপযোগী, তবে সার হিসেবে ভাল। পাতা গবাদি পশু ও রেশমপোকার খাদ্য। কোন কোন এলাকার আদিবাসীরা মাথা ব্যথায় কপালে পাতার মন্ডের প্রলেপ লাগায়। [মোঃ আবুল হাসান]