ভুট্টা ফসলের ক্ষতিকর পোকা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

("'''ভুট্টা ফসলের ক্ষতিকর পোকা''' (Insect Pests of Maize) বাংলাদেশে ভুট্টা ফসলের মাঠে সংক্রমণকারী পোকাগুলো হলো ফল আর্মিওয়ার্ম (''Spodoptera frugiperda''), জাবপোকা (''Rhopalosiphum maidis''), ডগার মাছি (''Atherigona orientalis''), কাটুই পোক..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
'''ভুট্টা ফসলের ক্ষতিকর পোকা''' (Insect Pests of Maize)  বাংলাদেশে ভুট্টা ফসলের মাঠে সংক্রমণকারী পোকাগুলো হলো ফল আর্মিওয়ার্ম (''Spodoptera frugiperda''), জাবপোকা (''Rhopalosiphum maidis''), ডগার মাছি (''Atherigona orientalis''), কাটুই পোকা (''Agrotis ipsilon''), সাধারণ কাটুই পোকা (''Spodoptera litura''), অধিরোহী কাটুই পোকা (''Mythimna separate''), মাজরা পোকা (''Chilo partellus''), গোলাপী মাজরা পোকা (''Sesamia inferens''), ইউরোপিয়ান কর্ণ বোরার (''Ostrinia nubilalis''), শিষ কাটা লেদা পোকা (''Helicoverpa armigera''), ফাঁচ পোকা (''Trichoplusia'' sp.) এবং ঘাস ফডিং (''Oxya'' sp.)। এসব পোকার মধ্যে ফল আর্মিওয়ার্ম ভুট্টা ফসলের মাঠে সবচেয়ে ক্ষতিকর এবং মুখ্য আপদ হিসেবে স্বীকৃত। গুদামে সংরক্ষণকালে আপদ দমনের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভুট্টার গুবরে পোকা (''Sitophilus zeamais''), চালের গুবরে পোকা (''Sitophilus oryzae'') এবং দানা ছিদ্রকারী ক্ষুদে পোকা (''Rhyzopertha dominica'') মারাত্মক আপদ হিসেবে সংক্রমণ করে থাকে। ফলে আর্মিওয়ার্ম বাংলাদেশে সম্প্রতি ভুট্টার একটি মারাত্মক ক্ষতিকর এবং ধ্বংসাত্মক আপদ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। আমেরিকায় বিচরণকারী এই পোকা আফ্রিকা এবং ভারতের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং ২০১৮ সালে প্রথম সনাক্ত হয়। ইতোমধ্যে এই পোকা দেশের ৪৮টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং দেশে ভুট্টা আবাদী জমির শতকরা ৩৫ ভাগে সংক্রমণ করছে। ফল আর্মিওয়ার্ম এর শুককীটগুলো ২৬টি  পরিবারের প্রায় ৮০ প্রজাতির গাছ-পালায় সংক্রমণের মাধ্যমে কৃষি ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করে। শুককীটগুলো গাছের পাতা এবং ফল খায় এবং শুককীটগুলো পূর্ণতা প্রাপ্ত হলে অধিকতর পেটুক হয়ে উঠে। এ সময় তারা প্রাথমিক অবস্থার চেয়ে ৫০ গুণ বেশি খাবার গ্রহণ করে এবং এক রাতের মধ্যে ক্ষেতের সমস্ত ভুট্টা ফসল ধ্বংস করে। এই বহুভোজী পোকার জীবনে চারটি দশা যথাক্রমে ডিম, কীড়া বা শুককীট, মুককীট এবং পূর্ণাঙ্গ মথ পরিলক্ষিত হয়। প্রাপ্তবয়স্ক মথগুলো ৩২ থেকে ৪০ মিলিমিটার লম্বা, তাদের সামনের পাখা বাদামি বা ধূসর এবং পেছনের পাখা সাদা বর্ণের দেখায়। স্ত্রী মথগুলো গাছের পাতার নিচের দিকে গম্বুজ আকৃতির ডিম পাড়ে এবং একটি স্ত্রী মথ তার জীবনকালে ১৫০০টি পর্যন্ত ডিম পাড়তে পারে। তিন থেকে চারদিনের মধ্যে ডিম ফুটে কীড়া বের হয়। পূর্ণতাপ্রাপ্ত কীড়াগুলো সবুজ বা কালো রঙের এবং ৩৫ থেকে ৪০ মিলিমিটার লম্বা। কীড়াগুলো তিন থেকে সাতদিন গুটির মধ্যে আবদ্ধ থেকে ভুগর্ভে মুককীট দশা অতিক্রম করে পূর্ণাঙ্গ মথরূপে বেরিয়ে আসে। পূর্ণাঙ্গ মথ ১০ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে এবং এই পোকা বছরে ছয়টির অধিক বংশধর তৈরি করতে পারে। সঙ্গনিরোধ এই পোকার ডিম, শুককীট এবং মুককীটগুলো চারা সংলগ্ন মাটি, কচি চারা, কন্দ, কলম ইত্যাদির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করতে পারে। পূর্ণাঙ্গ মথগুলো দ্রুত উড্ডয়নক্ষম এবং তারা ঝড়ো বাতাসের সাথে কয়েকশত কিলোমিটার পর্যন্ত দূরে ছড়িয়ে যেতে পারে।  [রুহুল আমিন]
'''ভুট্টা ফসলের ক্ষতিকর পোকা''' (Insect Pests of Maize)  বাংলাদেশে ভুট্টা ফসলের মাঠে সংক্রমণকারী পোকাগুলো হলো ফল আর্মিওয়ার্ম (''Spodoptera frugiperda''), জাবপোকা (''Rhopalosiphum maidis''), ডগার মাছি (''Atherigona orientalis''), কাটুই পোকা (''Agrotis ipsilon''), সাধারণ কাটুই পোকা (''Spodoptera litura''), অধিরোহী কাটুই পোকা (''Mythimna separate''), মাজরা পোকা (''Chilo partellus''), গোলাপী মাজরা পোকা (''Sesamia inferens''), ইউরোপিয়ান কর্ণ বোরার (''Ostrinia nubilalis''), শিষ কাটা লেদা পোকা (''Helicoverpa armigera''), ফাঁচ পোকা (''Trichoplusia'' sp.) এবং ঘাস ফডিং (''Oxya'' sp.)। এসব পোকার মধ্যে ফল আর্মিওয়ার্ম ভুট্টা ফসলের মাঠে সবচেয়ে ক্ষতিকর এবং মুখ্য আপদ হিসেবে স্বীকৃত। গুদামে সংরক্ষণকালে আপদ দমনের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভুট্টার গুবরে পোকা (''Sitophilus zeamais''), চালের গুবরে পোকা (''Sitophilus oryzae'') এবং দানা ছিদ্রকারী ক্ষুদে পোকা (''Rhyzopertha dominica'') মারাত্মক আপদ হিসেবে সংক্রমণ করে থাকে। ফলে আর্মিওয়ার্ম বাংলাদেশে সম্প্রতি ভুট্টার একটি মারাত্মক ক্ষতিকর এবং ধ্বংসাত্মক আপদ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। আমেরিকায় বিচরণকারী এই পোকা আফ্রিকা এবং ভারতের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং ২০১৮ সালে প্রথম সনাক্ত হয়। ইতোমধ্যে এই পোকা দেশের ৪৮টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং দেশে ভুট্টা আবাদী জমির শতকরা ৩৫ ভাগে সংক্রমণ করছে। ফল আর্মিওয়ার্ম এর শুককীটগুলো ২৬টি  পরিবারের প্রায় ৮০ প্রজাতির গাছ-পালায় সংক্রমণের মাধ্যমে কৃষি ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করে। শুককীটগুলো গাছের পাতা এবং ফল খায় এবং শুককীটগুলো পূর্ণতা প্রাপ্ত হলে অধিকতর পেটুক হয়ে উঠে। এ সময় তারা প্রাথমিক অবস্থার চেয়ে ৫০ গুণ বেশি খাবার গ্রহণ করে এবং এক রাতের মধ্যে ক্ষেতের সমস্ত ভুট্টা ফসল ধ্বংস করে। এই বহুভোজী পোকার জীবনে চারটি দশা যথাক্রমে ডিম, কীড়া বা শুককীট, মুককীট এবং পূর্ণাঙ্গ মথ পরিলক্ষিত হয়। প্রাপ্তবয়স্ক মথগুলো ৩২ থেকে ৪০ মিলিমিটার লম্বা, তাদের সামনের পাখা বাদামি বা ধূসর এবং পেছনের পাখা সাদা বর্ণের দেখায়। স্ত্রী মথগুলো গাছের পাতার নিচের দিকে গম্বুজ আকৃতির ডিম পাড়ে এবং একটি স্ত্রী মথ তার জীবনকালে ১৫০০টি পর্যন্ত ডিম পাড়তে পারে। তিন থেকে চারদিনের মধ্যে ডিম ফুটে কীড়া বের হয়। পূর্ণতাপ্রাপ্ত কীড়াগুলো সবুজ বা কালো রঙের এবং ৩৫ থেকে ৪০ মিলিমিটার লম্বা। কীড়াগুলো তিন থেকে সাতদিন গুটির মধ্যে আবদ্ধ থেকে ভুগর্ভে মুককীট দশা অতিক্রম করে পূর্ণাঙ্গ মথরূপে বেরিয়ে আসে। পূর্ণাঙ্গ মথ ১০ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে এবং এই পোকা বছরে ছয়টির অধিক বংশধর তৈরি করতে পারে। সঙ্গনিরোধ এই পোকার ডিম, শুককীট এবং মুককীটগুলো চারা সংলগ্ন মাটি, কচি চারা, কন্দ, কলম ইত্যাদির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করতে পারে। পূর্ণাঙ্গ মথগুলো দ্রুত উড্ডয়নক্ষম এবং তারা ঝড়ো বাতাসের সাথে কয়েকশত কিলোমিটার পর্যন্ত দূরে ছড়িয়ে যেতে পারে।  [মো. রুহুল আমিন]


[[en:Insect Pests of Maize]]
[[en:Insect Pests of Maize]]

১৫:১৭, ১৪ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

ভুট্টা ফসলের ক্ষতিকর পোকা (Insect Pests of Maize) বাংলাদেশে ভুট্টা ফসলের মাঠে সংক্রমণকারী পোকাগুলো হলো ফল আর্মিওয়ার্ম (Spodoptera frugiperda), জাবপোকা (Rhopalosiphum maidis), ডগার মাছি (Atherigona orientalis), কাটুই পোকা (Agrotis ipsilon), সাধারণ কাটুই পোকা (Spodoptera litura), অধিরোহী কাটুই পোকা (Mythimna separate), মাজরা পোকা (Chilo partellus), গোলাপী মাজরা পোকা (Sesamia inferens), ইউরোপিয়ান কর্ণ বোরার (Ostrinia nubilalis), শিষ কাটা লেদা পোকা (Helicoverpa armigera), ফাঁচ পোকা (Trichoplusia sp.) এবং ঘাস ফডিং (Oxya sp.)। এসব পোকার মধ্যে ফল আর্মিওয়ার্ম ভুট্টা ফসলের মাঠে সবচেয়ে ক্ষতিকর এবং মুখ্য আপদ হিসেবে স্বীকৃত। গুদামে সংরক্ষণকালে আপদ দমনের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভুট্টার গুবরে পোকা (Sitophilus zeamais), চালের গুবরে পোকা (Sitophilus oryzae) এবং দানা ছিদ্রকারী ক্ষুদে পোকা (Rhyzopertha dominica) মারাত্মক আপদ হিসেবে সংক্রমণ করে থাকে। ফলে আর্মিওয়ার্ম বাংলাদেশে সম্প্রতি ভুট্টার একটি মারাত্মক ক্ষতিকর এবং ধ্বংসাত্মক আপদ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। আমেরিকায় বিচরণকারী এই পোকা আফ্রিকা এবং ভারতের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং ২০১৮ সালে প্রথম সনাক্ত হয়। ইতোমধ্যে এই পোকা দেশের ৪৮টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং দেশে ভুট্টা আবাদী জমির শতকরা ৩৫ ভাগে সংক্রমণ করছে। ফল আর্মিওয়ার্ম এর শুককীটগুলো ২৬টি পরিবারের প্রায় ৮০ প্রজাতির গাছ-পালায় সংক্রমণের মাধ্যমে কৃষি ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করে। শুককীটগুলো গাছের পাতা এবং ফল খায় এবং শুককীটগুলো পূর্ণতা প্রাপ্ত হলে অধিকতর পেটুক হয়ে উঠে। এ সময় তারা প্রাথমিক অবস্থার চেয়ে ৫০ গুণ বেশি খাবার গ্রহণ করে এবং এক রাতের মধ্যে ক্ষেতের সমস্ত ভুট্টা ফসল ধ্বংস করে। এই বহুভোজী পোকার জীবনে চারটি দশা যথাক্রমে ডিম, কীড়া বা শুককীট, মুককীট এবং পূর্ণাঙ্গ মথ পরিলক্ষিত হয়। প্রাপ্তবয়স্ক মথগুলো ৩২ থেকে ৪০ মিলিমিটার লম্বা, তাদের সামনের পাখা বাদামি বা ধূসর এবং পেছনের পাখা সাদা বর্ণের দেখায়। স্ত্রী মথগুলো গাছের পাতার নিচের দিকে গম্বুজ আকৃতির ডিম পাড়ে এবং একটি স্ত্রী মথ তার জীবনকালে ১৫০০টি পর্যন্ত ডিম পাড়তে পারে। তিন থেকে চারদিনের মধ্যে ডিম ফুটে কীড়া বের হয়। পূর্ণতাপ্রাপ্ত কীড়াগুলো সবুজ বা কালো রঙের এবং ৩৫ থেকে ৪০ মিলিমিটার লম্বা। কীড়াগুলো তিন থেকে সাতদিন গুটির মধ্যে আবদ্ধ থেকে ভুগর্ভে মুককীট দশা অতিক্রম করে পূর্ণাঙ্গ মথরূপে বেরিয়ে আসে। পূর্ণাঙ্গ মথ ১০ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে এবং এই পোকা বছরে ছয়টির অধিক বংশধর তৈরি করতে পারে। সঙ্গনিরোধ এই পোকার ডিম, শুককীট এবং মুককীটগুলো চারা সংলগ্ন মাটি, কচি চারা, কন্দ, কলম ইত্যাদির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করতে পারে। পূর্ণাঙ্গ মথগুলো দ্রুত উড্ডয়নক্ষম এবং তারা ঝড়ো বাতাসের সাথে কয়েকশত কিলোমিটার পর্যন্ত দূরে ছড়িয়ে যেতে পারে। [মো. রুহুল আমিন]