ভট্টাচার্য, শিশির কুমার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(" en:Bhattacharjee, Shishir Kumar" দিয়ে পাতা তৈরি)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
'''ভট্টাচার্য, শিশির কুমার''' (১৯৪০-২০২০)  গণিতবিদ ও মহাকাশ বিজ্ঞানী। বাংলাদেশে মহাকাশ বিজ্ঞান অধ্যয়নে তিনি একজন অন্যতম অগ্রনায়ক। শিশির কুমার ভট্টাচার্য ১৯৪০ সালের ২৫শে এপ্রিল বরিশাল জেলার ডামুরা গ্রামের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে তার প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়। স্থানীয় স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর খুলনার এফ.এইচ কলেজ এবং বি.এল কলেজে শিক্ষাগ্রহণ করেন। ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।


[[Image:BhattacharjeeShishirKumar.jpg|right|thumbnail|200px|শিশির কুমার ভট্টাচার্য]]
শিশির কুমার ভট্টাচার্য খুলনার এফ.এইচ কলেজ এবং ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে স্বল্পকালীন সময় প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু, তিনি তার পেশাজীবন গড়ে তোলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৫ সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত সেখানে তিনি শিক্ষকতা এবং গবেষণায় নিবিড়ভাবে নিয়োজিত ছিলেন। তার গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল তারকা এবং গ্রহ-নক্ষত্রের গঠন প্রকৃতি এবং মহাবিশ্বের বিস্তৃতি। ১৯৭৮ সালে লন্ডনের কুইন মেরী কলেজে যোগদানের ফলে তার গবেষণাকর্ম নতুন উদ্দীপনা লাভ করে। এ কলেজে তিনি প্রফেসর এমিরিটাস আয়ান উইলিয়ামসকে তার পরামর্শদাতা হিসেবে সাহচর্য লাভ করেন। শিশির ভট্টাচার্যের পিএইচ.ডি অভিসন্দর্ভের বিষয়বস্তু ছিলো তারকা এবং গ্রহ-নক্ষত্রের গঠন এবং এদের বিবর্তন। এই গবেষণায় মৌলিক অবদানের জন্য তাকে কুইন মেরী কলেজে শিক্ষকতার প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু, তিনি তার কর্মস্থান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। ১৯৮৭ সালে তিন মাসের জন্য ভিজিটিং ফেলো হিসেবে তিনি আবার কুইন মেরী কলেজে যোগদান করেন।
শিশির ভট্টচার্য বহু এমফিল এবং পিএইচডি ছাত্রদের গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। দেশী-বিদেশী খ্যাতনামা জার্নালে মহাকাশ বিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত তার অনেক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তিনি বাংলাদেশ ও দেশের বাইরে বহু সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং কনফারেন্সে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বিভাগীয় চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিভাগে কর্মরত অবস্থায় তিনি উচ্চতর ব্যবহারিক গণিতশাস্ত্র মডেল অন্তর্ভুক্ত করেন।
তিনি ১৯৮০ সালে যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটিতে ইন্টারন্যাশনাল এস্ট্রোনোমিক্যাল কনফারেন্সে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন; ১৯৮৫ সালে ইটালির আইসিটিপিতে পদার্থ বিজ্ঞান এবং সৃষ্টিতত্ত্বের ওপর গ্রীষ্মকালীন ওয়ার্কশপে যোগাদন করেন; ১৯৮৭ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের QMC-তে অনুষ্ঠিত তৃতীয় আন্তর্জাতিক IRAS কনফারেন্সে যোগদান করেন। ১৯৮৯ সালে নেপালের কাঠমুন্ডুতে অনুষ্ঠিত বিসিএসপিন গ্রীষ্মকালীন কর্মসূচিতে যোগদান করেন; ১৯৮৯-৯০ সালে ভারতের কলকাতায় অনুষ্ঠিত সুপারনোভা এবং এইচই মহাকাশ বিজ্ঞান সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে যোগদান করেন।
তিনি একাডেমিক এবং জনপ্রিয় বিজ্ঞানধর্মী বহু গ্রন্থের রচয়িতা। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘মানুষ ও মহাবিশ্ব’, ‘মহাজাগতিক মহাকাব্য’, ‘আইনস্টাইন: একটি জীবনী’, ‘সৃষ্টির মহাপরিকল্পনা’, ‘সৌরজগতের সৃষ্টি ও নানা প্রসংগ’। তিনি ডিগ্রি পর্যায়ের স্ফেরিকেল জ্যোর্তিবিজ্ঞান এবং জ্যামিতির ওপর দু’টি রচনা করেছেন। ২০১৯ সালে বাংলা একাডেমি তাকে ‘মেহের নিগার বিজ্ঞান সাহিত্য পুরষ্কার’ প্রদান করেন।
তিনি ২০২০ সালের ১০ই জুলাই রাজশাহীর নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।  [মোহাম্মদ লুৎফর রহমান]


[[en:Bhattacharjee, Shishir Kumar]]
[[en:Bhattacharjee, Shishir Kumar]]

১৫:৩২, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

ভট্টাচার্য, শিশির কুমার (১৯৪০-২০২০) গণিতবিদ ও মহাকাশ বিজ্ঞানী। বাংলাদেশে মহাকাশ বিজ্ঞান অধ্যয়নে তিনি একজন অন্যতম অগ্রনায়ক। শিশির কুমার ভট্টাচার্য ১৯৪০ সালের ২৫শে এপ্রিল বরিশাল জেলার ডামুরা গ্রামের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে তার প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়। স্থানীয় স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর খুলনার এফ.এইচ কলেজ এবং বি.এল কলেজে শিক্ষাগ্রহণ করেন। ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

শিশির কুমার ভট্টাচার্য

শিশির কুমার ভট্টাচার্য খুলনার এফ.এইচ কলেজ এবং ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে স্বল্পকালীন সময় প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু, তিনি তার পেশাজীবন গড়ে তোলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৫ সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত সেখানে তিনি শিক্ষকতা এবং গবেষণায় নিবিড়ভাবে নিয়োজিত ছিলেন। তার গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল তারকা এবং গ্রহ-নক্ষত্রের গঠন প্রকৃতি এবং মহাবিশ্বের বিস্তৃতি। ১৯৭৮ সালে লন্ডনের কুইন মেরী কলেজে যোগদানের ফলে তার গবেষণাকর্ম নতুন উদ্দীপনা লাভ করে। এ কলেজে তিনি প্রফেসর এমিরিটাস আয়ান উইলিয়ামসকে তার পরামর্শদাতা হিসেবে সাহচর্য লাভ করেন। শিশির ভট্টাচার্যের পিএইচ.ডি অভিসন্দর্ভের বিষয়বস্তু ছিলো তারকা এবং গ্রহ-নক্ষত্রের গঠন এবং এদের বিবর্তন। এই গবেষণায় মৌলিক অবদানের জন্য তাকে কুইন মেরী কলেজে শিক্ষকতার প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু, তিনি তার কর্মস্থান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। ১৯৮৭ সালে তিন মাসের জন্য ভিজিটিং ফেলো হিসেবে তিনি আবার কুইন মেরী কলেজে যোগদান করেন।

শিশির ভট্টচার্য বহু এমফিল এবং পিএইচডি ছাত্রদের গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। দেশী-বিদেশী খ্যাতনামা জার্নালে মহাকাশ বিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত তার অনেক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তিনি বাংলাদেশ ও দেশের বাইরে বহু সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং কনফারেন্সে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বিভাগীয় চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিভাগে কর্মরত অবস্থায় তিনি উচ্চতর ব্যবহারিক গণিতশাস্ত্র মডেল অন্তর্ভুক্ত করেন।

তিনি ১৯৮০ সালে যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটিতে ইন্টারন্যাশনাল এস্ট্রোনোমিক্যাল কনফারেন্সে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন; ১৯৮৫ সালে ইটালির আইসিটিপিতে পদার্থ বিজ্ঞান এবং সৃষ্টিতত্ত্বের ওপর গ্রীষ্মকালীন ওয়ার্কশপে যোগাদন করেন; ১৯৮৭ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের QMC-তে অনুষ্ঠিত তৃতীয় আন্তর্জাতিক IRAS কনফারেন্সে যোগদান করেন। ১৯৮৯ সালে নেপালের কাঠমুন্ডুতে অনুষ্ঠিত বিসিএসপিন গ্রীষ্মকালীন কর্মসূচিতে যোগদান করেন; ১৯৮৯-৯০ সালে ভারতের কলকাতায় অনুষ্ঠিত সুপারনোভা এবং এইচই মহাকাশ বিজ্ঞান সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে যোগদান করেন।

তিনি একাডেমিক এবং জনপ্রিয় বিজ্ঞানধর্মী বহু গ্রন্থের রচয়িতা। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘মানুষ ও মহাবিশ্ব’, ‘মহাজাগতিক মহাকাব্য’, ‘আইনস্টাইন: একটি জীবনী’, ‘সৃষ্টির মহাপরিকল্পনা’, ‘সৌরজগতের সৃষ্টি ও নানা প্রসংগ’। তিনি ডিগ্রি পর্যায়ের স্ফেরিকেল জ্যোর্তিবিজ্ঞান এবং জ্যামিতির ওপর দু’টি রচনা করেছেন। ২০১৯ সালে বাংলা একাডেমি তাকে ‘মেহের নিগার বিজ্ঞান সাহিত্য পুরষ্কার’ প্রদান করেন।

তিনি ২০২০ সালের ১০ই জুলাই রাজশাহীর নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। [মোহাম্মদ লুৎফর রহমান]