ভট্টাচার্য, বিপুল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

("right|thumbnail|200px|বিপুল ভট্টাচার্য '''ভট্টাচার্য, বিপুল''' (১৯৫৩-২০১৩) স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র=এর কন্ঠসৈনিক, বাংলাদেশ বেতারের প্রযোজক, স..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Image:BhattacharyaBipul.jpg|right|thumbnail|200px|বিপুল ভট্টাচার্য]]
[[Image:BhattacharyaBipul.jpg|right|thumbnail|200px|বিপুল ভট্টাচার্য]]
'''ভট্টাচার্য, বিপুল''' (১৯৫৩-২০১৩)  [[স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র|স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র]]=এর কন্ঠসৈনিক, বাংলাদেশ বেতারের প্রযোজক, সুরকার ও সংগীত পরিচালক এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের নন্দিত লোকসংগীত শিল্পী। তিনি ১৯৫৩ সালের ২৫শে জুলাই সোমবার কিশোরগঞ্জ জেলার শোলাকিয়া শহরে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম নগেশ ভট্টাচার্য এবং মাতার নাম হেমপ্রভা দেবী। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সর্ব কনিষ্ঠ। তিনি রামানন্দ হাই স্কুল বর্তমানে কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক বিদ্যালয়-এর ছাত্র ছিলেন। স্কুলে লেখাপড়ার পাশাপাশি স্কাউটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ছোটবেলা থেকে দিদিমার গাওয়া ঘুম পাড়ানি গানের মধ্যে দিয়ে তাঁর সংগীতের প্রতি ভালোবাসা জন্মে। পরবর্তীতে মায়ের উৎসাহ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তিনি সংগীত চর্চা শুরু করেন। ওস্তাদ অমর চন্দ্র শীল, ওস্তাদ অশ্বিনী কুমার রায়, সুখেন্দু চক্রবর্তী ও নিত্ইা রায়ের কাছে তিনি সংগীত শিক্ষা লাভ করেন। তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে জেলাভিত্তিক সংগীত প্রতিযোগিতায় তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার হয়ে দুইবার চ্যাম্পিয়ন হন। ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান সংগীত প্রতিযোগিতায় নজরুল সংগীতে প্রথম ও গোল্ড মেডেল এবং ১৯৬৯ সালে পল্লীগীতিতে পূর্ব পাকিস্তান সংগীত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। বিপুল ভট্টাচার্য ১৯৬৯ সালে গোবিন্দপুর হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি এবং কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। একই কলেজে তিনি বি.এ শ্রেণেিত অধ্যয়নরত ছিলেন। তিনি ১৯৭৫ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাঁর স্ত্রী-র নাম কুমকুম ভট্টাচার্য। তাদের দুই সন্তানÑ কন্যা মল্লিকা ভট্টাচার্য এবং পুত্রের নাম পার্থ ভট্টাচার্য।
'''ভট্টাচার্য, বিপুল''' (১৯৫৩-২০১৩)  [[স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র|স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র]]-এর কন্ঠসৈনিক, বাংলাদেশ বেতারের প্রযোজক, সুরকার ও সংগীত পরিচালক এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের নন্দিত লোকসংগীত শিল্পী। তিনি ১৯৫৩ সালের ২৫শে জুলাই সোমবার কিশোরগঞ্জ জেলার শোলাকিয়া শহরে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম নগেশ ভট্টাচার্য এবং মাতার নাম হেমপ্রভা দেবী। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সর্ব কনিষ্ঠ। তিনি রামানন্দ হাই স্কুল বর্তমানে কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক বিদ্যালয়-এর ছাত্র ছিলেন। স্কুলে লেখাপড়ার পাশাপাশি স্কাউটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ছোটবেলা থেকে দিদিমার গাওয়া ঘুম পাড়ানি গানের মধ্যে দিয়ে তাঁর সংগীতের প্রতি ভালোবাসা জন্মে। পরবর্তীতে মায়ের উৎসাহ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তিনি সংগীত চর্চা শুরু করেন। ওস্তাদ অমর চন্দ্র শীল, ওস্তাদ অশ্বিনী কুমার রায়, সুখেন্দু চক্রবর্তী ও নিত্ইা রায়ের কাছে তিনি সংগীত শিক্ষা লাভ করেন। তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে জেলাভিত্তিক সংগীত প্রতিযোগিতায় তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার হয়ে দুইবার চ্যাম্পিয়ন হন। ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান সংগীত প্রতিযোগিতায় নজরুল সংগীতে প্রথম ও গোল্ড মেডেল এবং ১৯৬৯ সালে পল্লীগীতিতে পূর্ব পাকিস্তান সংগীত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। বিপুল ভট্টাচার্য ১৯৬৯ সালে গোবিন্দপুর হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি এবং কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। একই কলেজে তিনি বি.এ শ্রেণেিত অধ্যয়নরত ছিলেন। তিনি ১৯৭৫ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাঁর স্ত্রী-র নাম কুমকুম ভট্টাচার্য। তাদের দুই সন্তানÑ কন্যা মল্লিকা ভট্টাচার্য এবং পুত্রের নাম পার্থ ভট্টাচার্য।


বিপুল ভট্টাচার্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগদান করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগীত শিল্পীদের অবিস্মরণীয় অবদান মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান করেছে। সমগ্র বাঙালি জাতিকে যুগিয়েছে অসীম সাহস ও উদ্দীপনা। এই বেতার কেন্দ্র দীর্ঘ ন’মাস ধরে সংগীতসহ নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলার আপামর জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণা দিয়ে, শক্তি দিয়ে, সাহস দিয়ে, বাঙালিকে বিজয়ের সিংহদ্বারে পৌঁছে দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।
বিপুল ভট্টাচার্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগদান করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগীত শিল্পীদের অবিস্মরণীয় অবদান মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান করেছে। সমগ্র বাঙালি জাতিকে যুগিয়েছে অসীম সাহস ও উদ্দীপনা। এই বেতার কেন্দ্র দীর্ঘ ন’মাস ধরে সংগীতসহ নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলার আপামর জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণা দিয়ে, শক্তি দিয়ে, সাহস দিয়ে, বাঙালিকে বিজয়ের সিংহদ্বারে পৌঁছে দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।

১৫:২৫, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

বিপুল ভট্টাচার্য

ভট্টাচার্য, বিপুল (১৯৫৩-২০১৩) স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র-এর কন্ঠসৈনিক, বাংলাদেশ বেতারের প্রযোজক, সুরকার ও সংগীত পরিচালক এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের নন্দিত লোকসংগীত শিল্পী। তিনি ১৯৫৩ সালের ২৫শে জুলাই সোমবার কিশোরগঞ্জ জেলার শোলাকিয়া শহরে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম নগেশ ভট্টাচার্য এবং মাতার নাম হেমপ্রভা দেবী। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সর্ব কনিষ্ঠ। তিনি রামানন্দ হাই স্কুল বর্তমানে কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক বিদ্যালয়-এর ছাত্র ছিলেন। স্কুলে লেখাপড়ার পাশাপাশি স্কাউটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ছোটবেলা থেকে দিদিমার গাওয়া ঘুম পাড়ানি গানের মধ্যে দিয়ে তাঁর সংগীতের প্রতি ভালোবাসা জন্মে। পরবর্তীতে মায়ের উৎসাহ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তিনি সংগীত চর্চা শুরু করেন। ওস্তাদ অমর চন্দ্র শীল, ওস্তাদ অশ্বিনী কুমার রায়, সুখেন্দু চক্রবর্তী ও নিত্ইা রায়ের কাছে তিনি সংগীত শিক্ষা লাভ করেন। তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে জেলাভিত্তিক সংগীত প্রতিযোগিতায় তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার হয়ে দুইবার চ্যাম্পিয়ন হন। ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান সংগীত প্রতিযোগিতায় নজরুল সংগীতে প্রথম ও গোল্ড মেডেল এবং ১৯৬৯ সালে পল্লীগীতিতে পূর্ব পাকিস্তান সংগীত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। বিপুল ভট্টাচার্য ১৯৬৯ সালে গোবিন্দপুর হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি এবং কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। একই কলেজে তিনি বি.এ শ্রেণেিত অধ্যয়নরত ছিলেন। তিনি ১৯৭৫ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাঁর স্ত্রী-র নাম কুমকুম ভট্টাচার্য। তাদের দুই সন্তানÑ কন্যা মল্লিকা ভট্টাচার্য এবং পুত্রের নাম পার্থ ভট্টাচার্য।

বিপুল ভট্টাচার্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগদান করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগীত শিল্পীদের অবিস্মরণীয় অবদান মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান করেছে। সমগ্র বাঙালি জাতিকে যুগিয়েছে অসীম সাহস ও উদ্দীপনা। এই বেতার কেন্দ্র দীর্ঘ ন’মাস ধরে সংগীতসহ নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলার আপামর জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণা দিয়ে, শক্তি দিয়ে, সাহস দিয়ে, বাঙালিকে বিজয়ের সিংহদ্বারে পৌঁছে দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।

বিপুল ভট্টাচার্য ‘মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থার’ সদস্য হিসাবে ট্রাকে করে শরণার্থী শিবিরগুলোতে, কখনও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে আবার কখনওবা মুক্তাঙ্গনে সংগীত পরিবেশন করে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ ও প্রেরণা যুগিয়েছেন। শরণার্থী শিবিরের সহায় সম্বলহীন হাজার হাজার মানুষের মনে সাহস ও আশার সঞ্চার করেছিলেন। মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থার এই কার্যক্রম থেকে পরবর্তীতে তারেক মাসুদ নির্মণ করেন মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল ‘মুক্তির গান’। মুক্তির গান চলচ্চিত্রে অধিকাংশ কোরাস গানের নেতৃত্বে ছিলেন বিপুল ভট্টাচার্য। চলচ্চিত্রে প্রদর্শিত এগারটি গানের মধ্যে অধিকাংশ গানই লোকসংগীত ভিত্তিক। তাঁর বিখ্যাত কিছু গান হলো - এই না বাংলাদেশের গান গাইতে রে আমার দুঃখ পরান কান্দে, বলো বলো রে বলো সবে বলো রে বাঙালির জয়, নাও ছাড়িয়া দে পাল উড়াইয়া দে ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর ১৯৭২ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারি তিনি প্রথম বাংলাদেশ বেতারে সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে নিয়মিত শিল্পী হিসেবে সংগীত পরিবেশন করতেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ অনেক দেশ সফর করেন। তিনি গান শিখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বিপুল ভট্টাচার্য মল্লিকা সংগীত সমারোহ বিদ্যায়তনের প্রতিষ্ঠাতা। ফুসফুসে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশ বরেণ্য এ লোকসংগীত শিল্পী ২০১৩ সালের ৫ই জুলাই রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। [শাহনাজ নাসরীন ইলা]