ভট্টাচার্য, গোপালচন্দ্র
ভট্টাচার্য, গোপালচন্দ্র (১৮৯৫-১৯৮১) প্রকৃতিবিজ্ঞানী গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের জন্ম বৃহত্তর ফরিদপুরের শরীয়তপুর জেলার লোনসিং গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে। পিতা অম্বিকাচরণ ভট্টাচার্য। অল্প বয়সে পিতৃবিয়োগ ঘটে এবং গোপালচন্দ্রকে যজমানি করে পড়ার খরচ চালাতে হয়। লোনসিং হাইস্কুল থেকে ১৯১৩ সালে মেট্রিক পরীক্ষায় স্বর্ণপদক পান। ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে এফএ (বর্তমান উচ্চমাধ্যমিক) ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু অর্থাভাবে পড়াশোনা ছেড়ে নিজ গ্রামে ফিরেন এবং লোনসিং স্কুলে শিক্ষকতা (১৯১৫-১৯১৯) শুরু করেন। বাল্যকাল থেকেই কীটপতঙ্গ এবং এদের জীবনধারার প্রতি ছিল অদম্য কৌতুহল। সাহিত্যেও আগ্রহী ছিলেন, লিখেছেন ছড়া, কবিতা, পালাগান। গ্রামের এই ভূগোল শিক্ষক একদিন আবিস্কার করলেন ‘পচা গাছপালার আশ্চর্য আলো বিকীরণ করার ক্ষমতা’ এবং এ নিয়ে তাঁর প্রবন্ধ প্রকাশিত হলো মাসিক ‘প্রবাসী’ পত্রিকায়। লেখাটি পড়ে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু তাঁকে ডেকে পাঠালেন বসু বিজ্ঞান মন্দিরে এবং আলাপে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে এই প্রতিষ্ঠানে রিসার্চ অ্যাসিসটেন্টের পদে নিয়োগ দিলেন (১৯২১)। সেখানে তিনি ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।
পিঁপড়ে, মাকড়সা, চামচিকা, টিকটিকি, আরশোলা, কাঁকড়াবিছা, শুঁয়াপোকা, ব্যাঙাচি, প্রজাপতি ইত্যাদি প্রাণীর জীবনপ্রণালী ও স্বভাব-চরিত্র বিষয়ক তাঁর পর্যবেক্ষণ ও লিখিত নিবন্ধগুলি দেশ ও বিদেশে মৌলিক গবেষণা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় তাঁর অবদান অতুলনীয়। ‘বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ’ প্রকাশিত ‘জ্ঞান ও বিজ্ঞান’ পত্রিকা সম্পাদনার পদেও যুক্ত ছিলেন। প্রকাশিত গ্রন্থ : বাংলার মাকড়া (১৯৪১), বাঙলার কীটপতঙ্গ (১৯৭৫), বাংলার গাছপালা (১৯৮৬)। তিনি আনন্দ পুরস্কার (১৯৬৮), রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৭৫) এবং অন্যান্য সম্মাননাও পেয়েছেন। ১৯৮১ সালে ৮ই এপ্রিল তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। [দ্বিজেন শর্মা]