ব্যাবিসিওসিস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''ব্যাবিসিওসিস '''(Babesiosis)  গৃহপালিত ও বন্যপশুদের একটি রোগ, যাতে লোহিতকণিকার ব্যাপক ভাঙনের ফলে তারা রক্তশূন্যতা, পান্ডুরোগ ও হিমোগ্লোবিন ইউরিয়া (প্রস্রাবে রক্তকণিকা) ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়। প্রোটোজোয়া পরজীবী Babesia দ্বারা সংক্রামিত এ রোগটি বিভিন্ন এঁটেল প্রজাতির মাধ্যমে এক পোষক থেকে অন্য পোষকে বাহিত হয়ে থাকে। Babesia পরজীবীর আকৃতি নাসপাতির মতো, ২-৫ মিলিমাইক্রন লম্বা এবং এগুলি রোগাক্রান্ত পশুর লোহিত কণিকাকে আক্রমণ করে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়াতে কমপক্ষে ১৪ প্রজাতির Babesia বিভিন্ন মেরুদন্ডী প্রাণীকে আক্রমণ করে।
'''ব্যাবিসিওসিস''' (Babesiosis)  গৃহপালিত ও বন্যপশুদের একটি রোগ, যাতে লোহিতকণিকার ব্যাপক ভাঙনের ফলে তারা রক্তশূন্যতা, পান্ডুরোগ ও হিমোগ্লোবিন ইউরিয়া (প্রস্রাবে রক্তকণিকা) ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়। প্রোটোজোয়া পরজীবী Babesia দ্বারা সংক্রামিত এ রোগটি বিভিন্ন এঁটেল প্রজাতির মাধ্যমে এক পোষক থেকে অন্য পোষকে বাহিত হয়ে থাকে। Babesia পরজীবীর আকৃতি নাসপাতির মতো, ২-৫ মিলিমাইক্রন লম্বা এবং এগুলি রোগাক্রান্ত পশুর লোহিত কণিকাকে আক্রমণ করে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়াতে কমপক্ষে ১৪ প্রজাতির Babesia বিভিন্ন মেরুদন্ডী প্রাণীকে আক্রমণ করে।


বাংলাদেশে এর প্রজাতিগুলির মধ্যে রয়েছে B. bigemina; দুই বছরের বেশি বয়সী গবাদি পশু প্রায়শই এর দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং দেশে এই সংক্রমণের হার প্রায় ০.৩%। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে এই ধরনের সংক্রমণ মহিষেও দেখা যায়। B. bovis কর্তৃক গবাদি পশুর সংক্রমণের ঘটনাও মাঝে মাঝে ঘটে। ''Boophilus microplus'' নামের এঁটেল B. bigemina এবং B. bovis উভয়ের বাহক হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণ সর্বদাই ডিম্বাণুর মাধ্যমে অর্থাৎ প্রথমে খাদ্যের সঙ্গে স্ত্রী-এঁটেল জীবাণু উদরস্থ করলে সেগুলি ডিম্বাশয়ে প্রবেশ করে, অতঃপর ডিম্বাশয়  থেকে ডিম্বাণুতে পৌঁছায়। ঐ ডিম্বাণু থেকে জন্মানো লার্ভা জন্মসূত্রে পরজীবী লাভ করে; এর পরে প্রোটোজোয়াটিকে নতুন পোষকের শরীরে চালান করে।
বাংলাদেশে এর প্রজাতিগুলির মধ্যে রয়েছে ''B. bigemina''; দুই বছরের বেশি বয়সী গবাদি পশু প্রায়শই এর দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং দেশে এই সংক্রমণের হার প্রায় ০.৩%। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে এই ধরনের সংক্রমণ মহিষেও দেখা যায়। ''B. bovis'' কর্তৃক গবাদি পশুর সংক্রমণের ঘটনাও মাঝে মাঝে ঘটে। ''Boophilus microplus'' নামের এঁটেল ''B. bigemina'' এবং ''B. bovis'' উভয়ের বাহক হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণ সর্বদাই ডিম্বাণুর মাধ্যমে অর্থাৎ প্রথমে খাদ্যের সঙ্গে স্ত্রী-এঁটেল জীবাণু উদরস্থ করলে সেগুলি ডিম্বাশয়ে প্রবেশ করে, অতঃপর ডিম্বাশয়  থেকে ডিম্বাণুতে পৌঁছায়। ঐ ডিম্বাণু থেকে জন্মানো লার্ভা জন্মসূত্রে পরজীবী লাভ করে; এর পরে প্রোটোজোয়াটিকে নতুন পোষকের শরীরে চালান করে।


''Babesia motasi'' এবং ''B. ovis'' দ্বারা বাংলাদেশে ভেড়া ও ছাগলের সংক্রমণের ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটে। এক্ষেত্রে ''Haemaphysalis bispinosa এবং Rhipicephalus sanguineus'' নামের এঁটেলগুলি বাহক হিসেবে কাজ করে।
''Babesia motasi'' এবং ''B. ovis'' দ্বারা বাংলাদেশে ভেড়া ও ছাগলের সংক্রমণের ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটে। এক্ষেত্রে ''Haemaphysalis bispinosa এবং Rhipicephalus sanguineus'' নামের এঁটেলগুলি বাহক হিসেবে কাজ করে।


''Babesia equi'' সংক্রমণ বাংলাদেশে ঘোড়া ও গাধার ক্ষেত্রে শনাক্ত করা গেছে এবং জানা মতে এর বাহক হলো R. sanguineus এঁটেল। কুকুরের ক্ষেত্রে ''Babesia gibsoni'' ও B. canis সংক্রমণ দেশে সচরাচর লক্ষ্য করা যায়। এসব সংক্রমণের ততটা তথ্য নথিভুক্ত না হলেও পশুর চিকিৎসকরা প্রায়শই কুকুরে ব্যাবিসিওসিস দেখতে পান। R. sanguineus ও H. bispinosa নামের দুটি এঁটেল B. gibsoni ও B. canis জীবাণু দুটির বাহক হিসেবে কাজ করে।
''Babesia equi'' সংক্রমণ বাংলাদেশে ঘোড়া ও গাধার ক্ষেত্রে শনাক্ত করা গেছে এবং জানা মতে এর বাহক হলো ''R. sanguineus'' এঁটেল। কুকুরের ক্ষেত্রে ''Babesia gibsoni'' ও ''B. canis'' সংক্রমণ দেশে সচরাচর লক্ষ্য করা যায়। এসব সংক্রমণের ততটা তথ্য নথিভুক্ত না হলেও পশুর চিকিৎসকরা প্রায়শই কুকুরে ব্যাবিসিওসিস দেখতে পান। ''R. sanguineus'' ''H. bispinosa'' নামের দুটি এঁটেল ''B. gibsoni'' ''B. canis'' জীবাণু দুটির বাহক হিসেবে কাজ করে।


ব্যাবিসিওসিস রোগের জীবাণু পশুর লোহিতকণিকা আক্রমণ করে ও সেগুলির ব্যাপক ভাঙন ঘটায়। সংক্রমণের ২-৭ সাত দিনের মধ্যে রোগের প্রকোপ চরমে পৌঁছায় এবং সেসঙ্গে শরীরের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায়। এই সময়ের মধ্যে প্রায় ৭০% লোহিতকণিকার ভাঙনের ফলে হিমোগ্লোবিন নিঃসরণ ঘটে এবং প্রস্রাব লালচে রং ধারণ করে। রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার ২-৩ দিনের মধ্যে চিকিৎসা শুরু না করলে পশুর মৃত্যু অনিবার্য। বাছুর, ছাগলছানা, মেষশাবক ও বাচ্চা ঘোড়ার মতো অল্পবয়সী পশু অত্যধিক ব্যাবিসিওসিস প্রবণ। সব বয়সী কুকুরই এই রোগে আক্রান্ত হয়, তবে বয়স্ক কুকুরের তুলনায় কুকুরছানার সংবেদনশীলতা বেশি।  [মোঃ হাফিজুর রহমান]
ব্যাবিসিওসিস রোগের জীবাণু পশুর লোহিতকণিকা আক্রমণ করে ও সেগুলির ব্যাপক ভাঙন ঘটায়। সংক্রমণের ২-৭ সাত দিনের মধ্যে রোগের প্রকোপ চরমে পৌঁছায় এবং সেসঙ্গে শরীরের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায়। এই সময়ের মধ্যে প্রায় ৭০% লোহিতকণিকার ভাঙনের ফলে হিমোগ্লোবিন নিঃসরণ ঘটে এবং প্রস্রাব লালচে রং ধারণ করে। রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার ২-৩ দিনের মধ্যে চিকিৎসা শুরু না করলে পশুর মৃত্যু অনিবার্য। বাছুর, ছাগলছানা, মেষশাবক ও বাচ্চা ঘোড়ার মতো অল্পবয়সী পশু অত্যধিক ব্যাবিসিওসিস প্রবণ। সব বয়সী কুকুরই এই রোগে আক্রান্ত হয়, তবে বয়স্ক কুকুরের তুলনায় কুকুরছানার সংবেদনশীলতা বেশি।  [মোঃ হাফিজুর রহমান]


''আরও দেখুন'' এঁটেল।
''আরও দেখুন'' [[এঁটেল|এঁটেল]]।


[[en:Babesiosis]]
[[en:Babesiosis]]

০৪:৪৮, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

ব্যাবিসিওসিস (Babesiosis)  গৃহপালিত ও বন্যপশুদের একটি রোগ, যাতে লোহিতকণিকার ব্যাপক ভাঙনের ফলে তারা রক্তশূন্যতা, পান্ডুরোগ ও হিমোগ্লোবিন ইউরিয়া (প্রস্রাবে রক্তকণিকা) ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়। প্রোটোজোয়া পরজীবী Babesia দ্বারা সংক্রামিত এ রোগটি বিভিন্ন এঁটেল প্রজাতির মাধ্যমে এক পোষক থেকে অন্য পোষকে বাহিত হয়ে থাকে। Babesia পরজীবীর আকৃতি নাসপাতির মতো, ২-৫ মিলিমাইক্রন লম্বা এবং এগুলি রোগাক্রান্ত পশুর লোহিত কণিকাকে আক্রমণ করে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়াতে কমপক্ষে ১৪ প্রজাতির Babesia বিভিন্ন মেরুদন্ডী প্রাণীকে আক্রমণ করে।

বাংলাদেশে এর প্রজাতিগুলির মধ্যে রয়েছে B. bigemina; দুই বছরের বেশি বয়সী গবাদি পশু প্রায়শই এর দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং দেশে এই সংক্রমণের হার প্রায় ০.৩%। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে এই ধরনের সংক্রমণ মহিষেও দেখা যায়। B. bovis কর্তৃক গবাদি পশুর সংক্রমণের ঘটনাও মাঝে মাঝে ঘটে। Boophilus microplus নামের এঁটেল B. bigemina এবং B. bovis উভয়ের বাহক হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণ সর্বদাই ডিম্বাণুর মাধ্যমে অর্থাৎ প্রথমে খাদ্যের সঙ্গে স্ত্রী-এঁটেল জীবাণু উদরস্থ করলে সেগুলি ডিম্বাশয়ে প্রবেশ করে, অতঃপর ডিম্বাশয়  থেকে ডিম্বাণুতে পৌঁছায়। ঐ ডিম্বাণু থেকে জন্মানো লার্ভা জন্মসূত্রে পরজীবী লাভ করে; এর পরে প্রোটোজোয়াটিকে নতুন পোষকের শরীরে চালান করে।

Babesia motasi এবং B. ovis দ্বারা বাংলাদেশে ভেড়া ও ছাগলের সংক্রমণের ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটে। এক্ষেত্রে Haemaphysalis bispinosa এবং Rhipicephalus sanguineus নামের এঁটেলগুলি বাহক হিসেবে কাজ করে।

Babesia equi সংক্রমণ বাংলাদেশে ঘোড়া ও গাধার ক্ষেত্রে শনাক্ত করা গেছে এবং জানা মতে এর বাহক হলো R. sanguineus এঁটেল। কুকুরের ক্ষেত্রে Babesia gibsoniB. canis সংক্রমণ দেশে সচরাচর লক্ষ্য করা যায়। এসব সংক্রমণের ততটা তথ্য নথিভুক্ত না হলেও পশুর চিকিৎসকরা প্রায়শই কুকুরে ব্যাবিসিওসিস দেখতে পান। R. sanguineusH. bispinosa নামের দুটি এঁটেল B. gibsoniB. canis জীবাণু দুটির বাহক হিসেবে কাজ করে।

ব্যাবিসিওসিস রোগের জীবাণু পশুর লোহিতকণিকা আক্রমণ করে ও সেগুলির ব্যাপক ভাঙন ঘটায়। সংক্রমণের ২-৭ সাত দিনের মধ্যে রোগের প্রকোপ চরমে পৌঁছায় এবং সেসঙ্গে শরীরের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায়। এই সময়ের মধ্যে প্রায় ৭০% লোহিতকণিকার ভাঙনের ফলে হিমোগ্লোবিন নিঃসরণ ঘটে এবং প্রস্রাব লালচে রং ধারণ করে। রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার ২-৩ দিনের মধ্যে চিকিৎসা শুরু না করলে পশুর মৃত্যু অনিবার্য। বাছুর, ছাগলছানা, মেষশাবক ও বাচ্চা ঘোড়ার মতো অল্পবয়সী পশু অত্যধিক ব্যাবিসিওসিস প্রবণ। সব বয়সী কুকুরই এই রোগে আক্রান্ত হয়, তবে বয়স্ক কুকুরের তুলনায় কুকুরছানার সংবেদনশীলতা বেশি।  [মোঃ হাফিজুর রহমান]

আরও দেখুন এঁটেল