ব্যথা উপশম

ব্যথা উপশম (Pain management)  যন্ত্রণা নিরাময়কারী হিসেবে পরিচিত এক ধরনের বৈশিষ্ট্যময় চিকিৎসা ব্যবস্থা যেখানে রোগীর ব্যথার অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা ও চিন্তা-চেতনার উপশমের ব্যবস্থা করা হয়। রোগীর এ ধরনের মানসিক ক্রিয়া প্রকৃত ঘটনাকে কেন্দ্র করে অথবা কাল্পনিক চিন্তা থেকে উদ্ভূত হতে পারে। তবে এ ধরনের ব্যাধির সঙ্গে শারীরিক অথবা শারীরবৃত্তিক কোন সম্পর্ক নাও থাকতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে এটি অলিক চিন্তা থেকে উদ্ভূত। তবে এ ব্যাধি দেখা দেওয়ার পশ্চাতে যে কারণই থাকুক না কেন, ব্যথার যন্ত্রণা অনেক সময় রোগীর জন্য তীব্র ও মারাত্মক হয়ে ওঠে এবং স্বাভাবিকভাবেই এ যন্ত্রণা থেকে রোগী নিরাময় কামনা করে। ব্যথা উপশম একটি বহুমুখী চিকিৎসা পদ্ধতি, যা চিকিৎসাবিজ্ঞান, শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম সুসংগঠিত ব্যথা উপশম চিকিৎসার সুবিধাদি গড়ে ওঠে। ১৯৭০ এর দশকে এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বাংলাদেশে এ চিকিৎসা পদ্ধতি ও এর প্রয়োগ ১৯৯৩ সাল থেকে শুরু হয়। ঐ সময় কিয়ুসু বিশ্ববিদ্যালয়, ফুকুওকা, জাপান থেকে উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডা. জোনাইদ শফিক, তদান্তিন Institute of Post Graduate Medicine and Research, IPGMR (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়)-এর অ্যানেসথেসিওলজি-র অধ্যাপক ডা. কে.এম ইকবাল এবং নিউরোমেডিসিন-এর অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদের সহযোগিতায় IPGMR হাসপাতালে ব্যথা উপশম ক্লিনিক প্রথম সংগঠিত করেন। ঐ সময় Neuromedicine, Neurosurgery, Psychiatry এবং Physical Medicine বিভাগগুলির পৃষ্ঠপোষকতায় Anesthesiology বিভাগ IPGMR হাসপাতালের বহির্বিভাগে এ ক্লিনিক চালু করে। বহির্বিভাগের চিকিৎসার সন্তোষজনক ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সাল থেকে ঐ হাসপাতালে এ ধরনের চিকিৎসার অভ্যন্তরীণ সুযোগ সুবিধে গড়ে ওঠে।

১৯৯৪ সালে ডা. জোনাইদ শফিক ঢাকায় জাপান বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল (Japan Bangladesh Friendship Hospital)-এ প্রথম বেসরকারি পর্যায়ে ব্যথা উপশম ক্লিনিক চালু করেন। এ ধরনের চিকিৎসার সঙ্গে সম্পৃক্ত চিকিৎসকদের সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে Bangladesh Society for Study of Pain (BSSP) নামের একটি পেশাদার সংগঠন ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গবেষণা ও অভিজ্ঞতা বিকাশের লক্ষ্যে এ সোসাইটি প্রতি দুই মাস পরপর বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মত বিনিময় ও আলাপ-আলোচনার জন্য সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে অংশগ্রহণ করেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন ইনস্টিটিউট ও প্রতিষ্ঠানের সদস্যবৃন্দ। এছাড়া সোসাইটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে জাপানে এ ধরনের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে চিকিৎসকদের বিনিময় প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।  [সরদার এ. নাঈম]