বোটানিক্যাল গার্ডেন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''বোটানিক্যাল গার্ডেন'''  বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষামূলক কাজে ব্যবহার্য দুর্লভ, বিদেশী ও প্রয়োজনীয় গাছগাছালির বাগান। ইতিহাসের প্রথম বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রতিষ্ঠা ৩৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অ্যারিস্টটলের হাতে। ১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে ইতালিতে প্রথম সর্বজনীন বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠিত হলে প্রত্যেকটি ইউরোপীয় শহরে এই ধরনের একটি উদ্যান প্রতিষ্ঠা রেওয়াজে পরিণত হয়। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বোটানিক্যাল গার্ডেন রয়েল বোটানিক্যাল গার্ডেনস প্রতিষ্ঠিত হয় লন্ডনের শহরতলি কিউ-তে ১৭৫৯ সালে, যদিও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ১৮৪১ সালে। প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন জ্যাকসন হুকার (১৭৮৫-১৮৬৫)। অতঃপর তাঁর পুত্র বিশ্বখ্যাত উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ড্যাল্টন হুকারের (১৮১৭-১৯১১) হাতে এটি পরিপূর্ণ বোটানিক্যাল গার্ডেন হয়ে ওঠে। এই উদ্যান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বোটানিক্যাল গার্ডেন নির্মাণ, উদ্ভিদ সংগ্রহ ও গবেষণায় প্রভূত সাহায্য যুগিয়েছে এবং এখনও যোগাচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকার মিরপুরে বাংলাদেশ জাতীয় হার্বেরিয়াম প্রতিষ্ঠায় কিউ মূল্যবান টেকনিক্যাল সহায়তা দিয়েছে। কলকাতায় হুগলি নদীর তীরের শিবপুরে রয়েল বোটানিক্যাল গার্ডেনস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৭ সালে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্নেল রবার্ট কিড ছিলেন উদ্যোক্তা। শুরুতে সেগুন গাছের চাষ প্রধান লক্ষ্য থাকলেও কিডের মৃত্যুর (১৭৯৩) আগেই এই উদ্যানে ৩০০ প্রজাতির গাছপালা লাগানো হয়। অতঃপর উইলিয়ম রক্সবার্গ (১৮৫১-১৮১৫), নাথানিয়াল ওয়ালিচ (১৭৮৬- ১৮৫০), জর্জ কিং (১৮৪০-১৯০৯), ডেভিড প্রেইন (১৮৫৭-১৯৪৪) প্রমুখ বিজ্ঞানী ও নিসর্গপ্রেমীর চেষ্টায় এই উদ্যানটি উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বোটানিক্যাল গার্ডেন হয়ে ওঠে।
'''বোটানিক্যাল গার্ডেন'''  বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষামূলক কাজে ব্যবহার্য দুর্লভ, বিদেশী ও প্রয়োজনীয় গাছগাছালির বাগান। ইতিহাসের প্রথম বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রতিষ্ঠা ৩৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অ্যারিস্টটলের হাতে। ১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে ইতালিতে প্রথম সর্বজনীন বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠিত হলে প্রত্যেকটি ইউরোপীয় শহরে এই ধরনের একটি উদ্যান প্রতিষ্ঠা রেওয়াজে পরিণত হয়। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বোটানিক্যাল গার্ডেন রয়েল বোটানিক্যাল গার্ডেনস প্রতিষ্ঠিত হয় লন্ডনের শহরতলি কিউ-তে ১৭৫৯ সালে, যদিও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ১৮৪১ সালে। প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন জ্যাকসন হুকার (১৭৮৫-১৮৬৫)। অতঃপর তাঁর পুত্র বিশ্বখ্যাত উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ড্যাল্টন হুকারের (১৮১৭-১৯১১) হাতে এটি পরিপূর্ণ বোটানিক্যাল গার্ডেন হয়ে ওঠে। এই উদ্যান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বোটানিক্যাল গার্ডেন নির্মাণ, উদ্ভিদ সংগ্রহ ও গবেষণায় প্রভূত সাহায্য যুগিয়েছে এবং এখনও যোগাচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকার মিরপুরে বাংলাদেশ জাতীয় হার্বেরিয়াম প্রতিষ্ঠায় কিউ মূল্যবান টেকনিক্যাল সহায়তা দিয়েছে। কলকাতায় হুগলি নদীর তীরের শিবপুরে রয়েল বোটানিক্যাল গার্ডেনস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৭ সালে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্নেল রবার্ট কিড ছিলেন উদ্যোক্তা। শুরুতে সেগুন গাছের চাষ প্রধান লক্ষ্য থাকলেও কিডের মৃত্যুর (১৭৯৩) আগেই এই উদ্যানে ৩০০ প্রজাতির গাছপালা লাগানো হয়। অতঃপর উইলিয়ম রক্সবার্গ (১৮৫১-১৮১৫), নাথানিয়াল ওয়ালিচ (১৭৮৬- ১৮৫০), জর্জ কিং (১৮৪০-১৯০৯), ডেভিড প্রেইন (১৮৫৭-১৯৪৪) প্রমুখ বিজ্ঞানী ও নিসর্গপ্রেমীর চেষ্টায় এই উদ্যানটি উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বোটানিক্যাল গার্ডেন হয়ে ওঠে।


[[Image:BotanicalGarden.jpg|thumb|right|400px|বোটানিক্যাল গার্ডেন]]
বর্তমান বাংলাদেশ ভূখন্ডে প্রাচীনতম উদ্যান ১৮৯৪ সালে জামালপুরে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত প্রতিষ্ঠিত ‘চৈতন্য নার্সারি’। প্রায় ১৫ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই উদ্যানে ছিল শ্যাকুয়া, অ্যাজালিয়া, ভিক্টোরিয়া রিজিয়া, আফ্রিকান ওয়েলপাম, গোমটি পাম, সুপার পাম, জাপানি তুঁত, মোমপ্রদ তালগাছ, গোলমরিচ, কর্পূর, দারুচিনি, ছোট এলাচ, পীচ, কফি, ডবল নারিকেল সহ পৃথিবীর বিভিন্ন জলবায়ু অঞ্চলের বহু কৃষিজ, জলজ ও শোভাময় উদ্ভিদ। ১৯৩০ সালে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের মৃত্যুর পর অর্থাভাব ও সংরক্ষণের অভাবে উদ্যানটি বিনষ্ট হয়।
বর্তমান বাংলাদেশ ভূখন্ডে প্রাচীনতম উদ্যান ১৮৯৪ সালে জামালপুরে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত প্রতিষ্ঠিত ‘চৈতন্য নার্সারি’। প্রায় ১৫ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই উদ্যানে ছিল শ্যাকুয়া, অ্যাজালিয়া, ভিক্টোরিয়া রিজিয়া, আফ্রিকান ওয়েলপাম, গোমটি পাম, সুপার পাম, জাপানি তুঁত, মোমপ্রদ তালগাছ, গোলমরিচ, কর্পূর, দারুচিনি, ছোট এলাচ, পীচ, কফি, ডবল নারিকেল সহ পৃথিবীর বিভিন্ন জলবায়ু অঞ্চলের বহু কৃষিজ, জলজ ও শোভাময় উদ্ভিদ। ১৯৩০ সালে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের মৃত্যুর পর অর্থাভাব ও সংরক্ষণের অভাবে উদ্যানটি বিনষ্ট হয়।


১৯০৯ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত বলধা উদ্যান বলধা জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায়ের কীর্তি হিসেবে আজও টিকে আছে।
১৯০৯ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত বলধা উদ্যান বলধা জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায়ের কীর্তি হিসেবে আজও টিকে আছে।


[[Image:BotanicalGarden.jpg|thumb|right|বোটানিক্যাল গার্ডেন]]
আকারে ছোট হলেও উদ্ভিদকুলের সৌন্দর্য এবং অর্ধশতাধিক দেশ থেকে সংগৃহীত দুর্লভ ও নানা গাছপালার বৃহৎ সংগ্রহ হিসেবে বাগানটি প্রসিদ্ধ। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঢাকার অদূরে মীরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান (National Botanical Garden)। বাগানের আয়তন প্রায় ৮৪ হেক্টর এবং প্রচুর সংখ্যক জলজ উদ্ভিদসহ গাছগাছালির প্রজাতি সংখ্যা প্রায় ৫০,০০০। অনেক প্রজাতির বিদেশী গাছপালা এখানে রোপিত ও অভিযোজিত হয়েছে এবং স্থানীয় আবহাওয়ায় সেগুলি নিয়মিত বংশবৃদ্ধি করছে। উদ্যানের সংগ্রহে আছে বহু দুর্লভ ও বিদেশী প্রজাতি: অ্যানথুরিয়াম (''Anthurium crystallinum''), কর্পূর (''Cinamomum camphora''), র‌্যাবিট ফার্ন (''Davallia canariensis''), ডম্বিয়া (''Dombeya spectabilis''), শ্বেতরঙ্গণ (''Ixora superba''), ক্ষুদে ম্যুসান্ডা (''Mussaenda luteola''), আমাজন লিলি (''Victoria amazonica''), আফ্রিকান টিউলিপ (''Spathodea campanulata''), শ্বেতচন্দন (''Santalum album'') ইত্যাদি। প্রায় ৫৭টি বিভাগসহ এই সুপরিকল্পিত বাগানে আছে শিক্ষামূলক ও বিনোদনমূলক নানা ব্যবস্থা। এটি বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বনবিভাগ কর্তৃক পরিচালিত। রাজধানীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছোট বোটানিক্যাল গার্ডেন আছে কার্জন হল চত্বরে, যা ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা ও গবেষণার নানা উপকরণ যুগিয়ে সহায়তা দিয়ে থাকে। ঢাকার বাইরে সকল বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষা ও গবেষণার জন্য নিজস্ব বোটানিক্যাল গার্ডেন রয়েছে। সরকার চট্টগ্রামের চন্দ্রনাথ পাহাড় অঞ্চলে একটি নতুন বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে।  [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]


আকারে ছোট হলেও উদ্ভিদকুলের সৌন্দর্য এবং অর্ধশতাধিক দেশ থেকে সংগৃহীত দুর্লভ ও নানা গাছপালার বৃহৎ সংগ্রহ হিসেবে বাগানটি প্রসিদ্ধ। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঢাকার অদূরে মীরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান (National Botanical Garden)। বাগানের আয়তন প্রায় ৮৪ হেক্টর এবং প্রচুর সংখ্যক জলজ উদ্ভিদসহ গাছগাছালির প্রজাতি সংখ্যা প্রায় ৫০,০০০। অনেক প্রজাতির বিদেশী গাছপালা এখানে রোপিত ও অভিযোজিত হয়েছে এবং স্থানীয় আবহাওয়ায় সেগুলি নিয়মিত বংশবৃদ্ধি করছে। উদ্যানের সংগ্রহে আছে বহু দুর্লভ ও বিদেশী প্রজাতি: অ্যানথুরিয়াম (''Anthurium crystallinum''), কর্পূর (''Cinamomum camphora''), র‌্যাবিট ফার্ন (''Davallia canariensis''), ডম্বিয়া (''Dombeya spectabilis''), শ্বেতরঙ্গণ (''Ixora superba''), ক্ষুদে ম্যুসান্ডা (''Mussaenda luteola''), আমাজন লিলি (''Victoria amazonica''), আফ্রিকান টিউলিপ (''Spathodea campanulata''), শ্বেতচন্দন (''Santalum album'') ইত্যাদি। প্রায় ৫৭টি বিভাগসহ এই সুপরিকল্পিত বাগানে আছে শিক্ষামূলক ও বিনোদনমূলক নানা ব্যবস্থা। এটি বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বনবিভাগ কর্তৃক পরিচালিত। রাজধানীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছোট বোটানিক্যাল গার্ডেন আছে কার্জন হল চত্বরে, যা ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা ও গবেষণার নানা উপকরণ যুগিয়ে সহায়তা দিয়ে থাকে। ঢাকার বাইরে সকল বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষা ও গবেষণার জন্য নিজস্ব বোটানিক্যাল গার্ডেন রয়েছে। সরকার চট্টগ্রামের চন্দ্রনাথ পাহাড় অঞ্চলে একটি নতুন বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে।
''আরও দেখুন'' [[বলধা গার্ডেন|বলধা গার্ডেন]]।
 
[জিয়া উদ্দিন আহমেদ]
 
''আরও দেখুন'' [[চিড়িয়াখানা|চিড়িয়াখানা]];[[বলধা গার্ডেন|বলধা গার্ডেন]]; [[বলধা জাদুঘর|বলধা জাদুঘর]]।


[[en:Botanical Garden]]
[[en:Botanical Garden]]

১০:২৪, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

বোটানিক্যাল গার্ডেন  বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষামূলক কাজে ব্যবহার্য দুর্লভ, বিদেশী ও প্রয়োজনীয় গাছগাছালির বাগান। ইতিহাসের প্রথম বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রতিষ্ঠা ৩৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অ্যারিস্টটলের হাতে। ১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে ইতালিতে প্রথম সর্বজনীন বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠিত হলে প্রত্যেকটি ইউরোপীয় শহরে এই ধরনের একটি উদ্যান প্রতিষ্ঠা রেওয়াজে পরিণত হয়। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বোটানিক্যাল গার্ডেন রয়েল বোটানিক্যাল গার্ডেনস প্রতিষ্ঠিত হয় লন্ডনের শহরতলি কিউ-তে ১৭৫৯ সালে, যদিও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ১৮৪১ সালে। প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন জ্যাকসন হুকার (১৭৮৫-১৮৬৫)। অতঃপর তাঁর পুত্র বিশ্বখ্যাত উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ড্যাল্টন হুকারের (১৮১৭-১৯১১) হাতে এটি পরিপূর্ণ বোটানিক্যাল গার্ডেন হয়ে ওঠে। এই উদ্যান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বোটানিক্যাল গার্ডেন নির্মাণ, উদ্ভিদ সংগ্রহ ও গবেষণায় প্রভূত সাহায্য যুগিয়েছে এবং এখনও যোগাচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকার মিরপুরে বাংলাদেশ জাতীয় হার্বেরিয়াম প্রতিষ্ঠায় কিউ মূল্যবান টেকনিক্যাল সহায়তা দিয়েছে। কলকাতায় হুগলি নদীর তীরের শিবপুরে রয়েল বোটানিক্যাল গার্ডেনস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৭ সালে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্নেল রবার্ট কিড ছিলেন উদ্যোক্তা। শুরুতে সেগুন গাছের চাষ প্রধান লক্ষ্য থাকলেও কিডের মৃত্যুর (১৭৯৩) আগেই এই উদ্যানে ৩০০ প্রজাতির গাছপালা লাগানো হয়। অতঃপর উইলিয়ম রক্সবার্গ (১৮৫১-১৮১৫), নাথানিয়াল ওয়ালিচ (১৭৮৬- ১৮৫০), জর্জ কিং (১৮৪০-১৯০৯), ডেভিড প্রেইন (১৮৫৭-১৯৪৪) প্রমুখ বিজ্ঞানী ও নিসর্গপ্রেমীর চেষ্টায় এই উদ্যানটি উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বোটানিক্যাল গার্ডেন হয়ে ওঠে।

বোটানিক্যাল গার্ডেন

বর্তমান বাংলাদেশ ভূখন্ডে প্রাচীনতম উদ্যান ১৮৯৪ সালে জামালপুরে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত প্রতিষ্ঠিত ‘চৈতন্য নার্সারি’। প্রায় ১৫ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই উদ্যানে ছিল শ্যাকুয়া, অ্যাজালিয়া, ভিক্টোরিয়া রিজিয়া, আফ্রিকান ওয়েলপাম, গোমটি পাম, সুপার পাম, জাপানি তুঁত, মোমপ্রদ তালগাছ, গোলমরিচ, কর্পূর, দারুচিনি, ছোট এলাচ, পীচ, কফি, ডবল নারিকেল সহ পৃথিবীর বিভিন্ন জলবায়ু অঞ্চলের বহু কৃষিজ, জলজ ও শোভাময় উদ্ভিদ। ১৯৩০ সালে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের মৃত্যুর পর অর্থাভাব ও সংরক্ষণের অভাবে উদ্যানটি বিনষ্ট হয়।

১৯০৯ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত বলধা উদ্যান বলধা জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায়ের কীর্তি হিসেবে আজও টিকে আছে।

আকারে ছোট হলেও উদ্ভিদকুলের সৌন্দর্য এবং অর্ধশতাধিক দেশ থেকে সংগৃহীত দুর্লভ ও নানা গাছপালার বৃহৎ সংগ্রহ হিসেবে বাগানটি প্রসিদ্ধ। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঢাকার অদূরে মীরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান (National Botanical Garden)। বাগানের আয়তন প্রায় ৮৪ হেক্টর এবং প্রচুর সংখ্যক জলজ উদ্ভিদসহ গাছগাছালির প্রজাতি সংখ্যা প্রায় ৫০,০০০। অনেক প্রজাতির বিদেশী গাছপালা এখানে রোপিত ও অভিযোজিত হয়েছে এবং স্থানীয় আবহাওয়ায় সেগুলি নিয়মিত বংশবৃদ্ধি করছে। উদ্যানের সংগ্রহে আছে বহু দুর্লভ ও বিদেশী প্রজাতি: অ্যানথুরিয়াম (Anthurium crystallinum), কর্পূর (Cinamomum camphora), র‌্যাবিট ফার্ন (Davallia canariensis), ডম্বিয়া (Dombeya spectabilis), শ্বেতরঙ্গণ (Ixora superba), ক্ষুদে ম্যুসান্ডা (Mussaenda luteola), আমাজন লিলি (Victoria amazonica), আফ্রিকান টিউলিপ (Spathodea campanulata), শ্বেতচন্দন (Santalum album) ইত্যাদি। প্রায় ৫৭টি বিভাগসহ এই সুপরিকল্পিত বাগানে আছে শিক্ষামূলক ও বিনোদনমূলক নানা ব্যবস্থা। এটি বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বনবিভাগ কর্তৃক পরিচালিত। রাজধানীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছোট বোটানিক্যাল গার্ডেন আছে কার্জন হল চত্বরে, যা ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা ও গবেষণার নানা উপকরণ যুগিয়ে সহায়তা দিয়ে থাকে। ঢাকার বাইরে সকল বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষা ও গবেষণার জন্য নিজস্ব বোটানিক্যাল গার্ডেন রয়েছে। সরকার চট্টগ্রামের চন্দ্রনাথ পাহাড় অঞ্চলে একটি নতুন বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে। [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]

আরও দেখুন বলধা গার্ডেন