বেগম, মমতাজ১: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

("Category:বাংলাপিডিয়া '''বেগম, মমতাজ<sup>১</sup>''' (১৯২৩-১৯৬৭) শিক্ষক।..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
৪ নং লাইন: ৪ নং লাইন:
তাঁর বাবা উচ্চ শিক্ষিত হলেও অতিশয় রক্ষণশীল ছিলেন। মেয়েদের লেখাপড়ার ব্যাপারে তাঁর তেমন আগ্রহ ছিল না। সম্পূর্ণ নিজ প্রচেষ্টায় মমতাজ বেগম ১৯৩৮ সালে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে ম্যাট্রিক পাস  করেন। তবে ম্যাট্রিক পাস করার পরই পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর লেখাপড়া বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। কিন্তু মমতাজের প্রতিজ্ঞা ছিল উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার। কঠিন পর্দাপ্রথার ঘেরাটোপে থেকে ১৯৪২ সালে তিনি কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষা এবং ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিএড পরীক্ষায় পাশ করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ’এডুকেশন ওয়ার্কশপ ফর টিচার্স’ কোর্স সম্পন্ন করেন এবং ১৯৬৩ সালে এমএড ডিগ্রি অর্জন করেন।
তাঁর বাবা উচ্চ শিক্ষিত হলেও অতিশয় রক্ষণশীল ছিলেন। মেয়েদের লেখাপড়ার ব্যাপারে তাঁর তেমন আগ্রহ ছিল না। সম্পূর্ণ নিজ প্রচেষ্টায় মমতাজ বেগম ১৯৩৮ সালে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে ম্যাট্রিক পাস  করেন। তবে ম্যাট্রিক পাস করার পরই পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর লেখাপড়া বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। কিন্তু মমতাজের প্রতিজ্ঞা ছিল উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার। কঠিন পর্দাপ্রথার ঘেরাটোপে থেকে ১৯৪২ সালে তিনি কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষা এবং ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিএড পরীক্ষায় পাশ করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ’এডুকেশন ওয়ার্কশপ ফর টিচার্স’ কোর্স সম্পন্ন করেন এবং ১৯৬৩ সালে এমএড ডিগ্রি অর্জন করেন।


১৯৪২ সালে তিনি কলকাতার ’দি স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া’য় যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর তিনি ময়মনসিংহ চলে আসেন এবং শহরের বিদ্যাময়ী স্কুলে সহকারী শিক্ষিকা পদে সাত মাস শিক্ষকতা করেন। ১৯৫১ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জের মর্গ্যান হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সংগঠিত ভাষা আন্দোলনের মিছিলে পুলিশের গুলিতে ছাত্র শহীদ হওয়ার সংবাদে নারায়ণগঞ্জের রহমতুল্লাহ মুসলিম ইনস্টিটিউট মাঠে একটি বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন মমতাজ বেগমের নেতৃত্বে মর্গ্যান স্কুলের ছাত্রীসহ মহিলাদের প্রথম মিছিল উক্ত জনসভায় উপস্থিত হয়। তাছাড়া ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য মমতাজ বেগম তৎকালীন রাজনীতিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে গোপনে বৈঠক ও মতবিনিময় করেন। তিনি আদমজী জুট মিল শ্রমিকদের সঙ্গে বেশ কয়েকদফা বৈঠক করেন এবং তাদেরকে আন্দোলনের তাৎপর্য বোঝাতে সক্ষম হন। দূরদর্শী ও দক্ষ সাংগঠনিক কর্মতৎপরতায় হয়ে ওঠেন আন্দোলনের প্রধান প্রাণশক্তি। মমতাজ বেগমকে গ্রেফতার করতে পারলেই আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাবে-এ লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মর্গ্যান স্কুলের তহবিল তসরূপের মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে ১৯৫২ সালে ২৯ ফেব্রুয়ারি, তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর গ্রেফতারের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে সংগঠিত বিক্ষোভ-মিছিল সংবাদ ১৯৫২ সালের ৩ মার্চ ভারতের The Statement পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
১৯৪২ সালে তিনি কলকাতার ’দি স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া’য় যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর তিনি ময়মনসিংহ চলে আসেন এবং শহরের বিদ্যাময়ী স্কুলে সহকারী শিক্ষিকা পদে সাত মাস শিক্ষকতা করেন। ১৯৫১ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জের মর্গ্যান হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সংগঠিত ভাষা আন্দোলনের মিছিলে পুলিশের গুলিতে ছাত্র শহীদ হওয়ার সংবাদে নারায়ণগঞ্জের রহমতুল্লাহ মুসলিম ইনস্টিটিউট মাঠে একটি বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন মমতাজ বেগমের নেতৃত্বে মর্গ্যান স্কুলের ছাত্রীসহ মহিলাদের প্রথম মিছিল উক্ত জনসভায় উপস্থিত হয়। তাছাড়া ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য মমতাজ বেগম তৎকালীন রাজনীতিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে গোপনে বৈঠক ও মতবিনিময় করেন। তিনি আদমজী জুট মিল শ্রমিকদের সঙ্গে বেশ কয়েকদফা বৈঠক করেন এবং তাদেরকে আন্দোলনের তাৎপর্য বোঝাতে সক্ষম হন। দূরদর্শী ও দক্ষ সাংগঠনিক কর্মতৎপরতায় হয়ে ওঠেন আন্দোলনের প্রধান প্রাণশক্তি। মমতাজ বেগমকে গ্রেফতার করতে পারলেই আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাবে-এ লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মর্গ্যান স্কুলের তহবিল তসরূপের মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে ১৯৫২ সালে ২৯ ফেব্রুয়ারি, তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর গ্রেফতারের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে সংগঠিত বিক্ষোভ-মিছিল সংবাদ ১৯৫২ সালের ৩ মার্চ ভারতের The Statement পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।


১৯৫৩ সালের মে মাসে তিনি কারামুক্ত হন। তিনিই একমাত্র মহিলা ভাষা-সংগ্রামী যিনি ভাষার জন্য দীর্ঘ সময় কারাভোগ করেছেন। এবছরই তিনি ’ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি স্কুল পরিদর্শক’ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি আনন্দময়ী গার্লস স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা পদে যোগদান করেন। পরে স্বল্প সময়ের জন্য তিনি আহমদ বাওয়ানী জুটমিল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পদে চাকরি করেন। জীবনের অবশিষ্ট সময় শিশুদের সেবা ও শিক্ষা বিস্তারের মধ্যে দিয়েই তিনি কাটাতে চেয়েছেন। শিক্ষা বিস্তার ও শিক্ষা প্রসারকে একমাত্র লক্ষ্য বিবেচনায় তিনি ’শিশু নিকেতন’ নামে একটি কিন্ডার গার্টেন প্রতিষ্ঠা করেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষকতা পেশাতেই নিয়েজিত ছিলেন।  তাঁর মৃত্যু ৩০ জুন, ১৯৬৭।  [শামীমা আক্তার]
১৯৫৩ সালের মে মাসে তিনি কারামুক্ত হন। তিনিই একমাত্র মহিলা ভাষা-সংগ্রামী যিনি ভাষার জন্য দীর্ঘ সময় কারাভোগ করেছেন। এবছরই তিনি ’ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি স্কুল পরিদর্শক’ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি আনন্দময়ী গার্লস স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা পদে যোগদান করেন। পরে স্বল্প সময়ের জন্য তিনি আহমদ বাওয়ানী জুটমিল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পদে চাকরি করেন। জীবনের অবশিষ্ট সময় শিশুদের সেবা ও শিক্ষা বিস্তারের মধ্যে দিয়েই তিনি কাটাতে চেয়েছেন। শিক্ষা বিস্তার ও শিক্ষা প্রসারকে একমাত্র লক্ষ্য বিবেচনায় তিনি ’শিশু নিকেতন’ নামে একটি কিন্ডার গার্টেন প্রতিষ্ঠা করেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষকতা পেশাতেই নিয়েজিত ছিলেন।  তাঁর মৃত্যু ৩০ জুন, ১৯৬৭।  [শামীমা আক্তার]


[[en:Begum, Mumtaz1]]
[[en:Begum, Mumtaz]]

১৫:৩১, ১৮ জুলাই ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

বেগম, মমতাজ (১৯২৩-১৯৬৭) শিক্ষক। ১৯২৩ সালের ২০ মে কলকাতার হাওড়ার শিবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম কল্যাণী রায় চৌধুরী, ডাক নাম মিনু। ১৯৪৪ সালে কলকাতার সিভিল সাপ্লাই অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নাফের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর তিনি মমতাজ বেগম নাম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবা রায় বাহাদুর মহিমচন্দ্র রায় ছিলেন জেলা জজ এবং পরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি। মা মাখনমতি দেবী ছিলেন স্কুল শিক্ষক। তাঁর পূর্বপুরুষ ছিলেন রাজশাহীর রঘুনন্দপুরের জমিদার এবং নাটোরের রাণী ছিলেন তাঁদের আত্মীয়। মমতাজ বেগম বিশিষ্ট সাহিত্যিক প্রমথনাথ বিশীর বোনের মেয়ে।

তাঁর বাবা উচ্চ শিক্ষিত হলেও অতিশয় রক্ষণশীল ছিলেন। মেয়েদের লেখাপড়ার ব্যাপারে তাঁর তেমন আগ্রহ ছিল না। সম্পূর্ণ নিজ প্রচেষ্টায় মমতাজ বেগম ১৯৩৮ সালে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে ম্যাট্রিক পাস করেন। তবে ম্যাট্রিক পাস করার পরই পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর লেখাপড়া বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। কিন্তু মমতাজের প্রতিজ্ঞা ছিল উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার। কঠিন পর্দাপ্রথার ঘেরাটোপে থেকে ১৯৪২ সালে তিনি কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষা এবং ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিএড পরীক্ষায় পাশ করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ’এডুকেশন ওয়ার্কশপ ফর টিচার্স’ কোর্স সম্পন্ন করেন এবং ১৯৬৩ সালে এমএড ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৪২ সালে তিনি কলকাতার ’দি স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া’য় যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর তিনি ময়মনসিংহ চলে আসেন এবং শহরের বিদ্যাময়ী স্কুলে সহকারী শিক্ষিকা পদে সাত মাস শিক্ষকতা করেন। ১৯৫১ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জের মর্গ্যান হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সংগঠিত ভাষা আন্দোলনের মিছিলে পুলিশের গুলিতে ছাত্র শহীদ হওয়ার সংবাদে নারায়ণগঞ্জের রহমতুল্লাহ মুসলিম ইনস্টিটিউট মাঠে একটি বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন মমতাজ বেগমের নেতৃত্বে মর্গ্যান স্কুলের ছাত্রীসহ মহিলাদের প্রথম মিছিল উক্ত জনসভায় উপস্থিত হয়। তাছাড়া ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য মমতাজ বেগম তৎকালীন রাজনীতিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে গোপনে বৈঠক ও মতবিনিময় করেন। তিনি আদমজী জুট মিল শ্রমিকদের সঙ্গে বেশ কয়েকদফা বৈঠক করেন এবং তাদেরকে আন্দোলনের তাৎপর্য বোঝাতে সক্ষম হন। দূরদর্শী ও দক্ষ সাংগঠনিক কর্মতৎপরতায় হয়ে ওঠেন আন্দোলনের প্রধান প্রাণশক্তি। মমতাজ বেগমকে গ্রেফতার করতে পারলেই আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাবে-এ লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মর্গ্যান স্কুলের তহবিল তসরূপের মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে ১৯৫২ সালে ২৯ ফেব্রুয়ারি, তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর গ্রেফতারের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে সংগঠিত বিক্ষোভ-মিছিল সংবাদ ১৯৫২ সালের ৩ মার্চ ভারতের The Statement পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

১৯৫৩ সালের মে মাসে তিনি কারামুক্ত হন। তিনিই একমাত্র মহিলা ভাষা-সংগ্রামী যিনি ভাষার জন্য দীর্ঘ সময় কারাভোগ করেছেন। এবছরই তিনি ’ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি স্কুল পরিদর্শক’ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি আনন্দময়ী গার্লস স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা পদে যোগদান করেন। পরে স্বল্প সময়ের জন্য তিনি আহমদ বাওয়ানী জুটমিল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পদে চাকরি করেন। জীবনের অবশিষ্ট সময় শিশুদের সেবা ও শিক্ষা বিস্তারের মধ্যে দিয়েই তিনি কাটাতে চেয়েছেন। শিক্ষা বিস্তার ও শিক্ষা প্রসারকে একমাত্র লক্ষ্য বিবেচনায় তিনি ’শিশু নিকেতন’ নামে একটি কিন্ডার গার্টেন প্রতিষ্ঠা করেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষকতা পেশাতেই নিয়েজিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যু ৩০ জুন, ১৯৬৭। [শামীমা আক্তার]