বুকানন, ফ্রান্সিস

বুকানন, ফ্রান্সিস (১৭৬২-১৮২৯)  খ্যাতিমান ব্রিটিশ বিজ্ঞানবিষয়ক তথ্যানুসন্ধানী ও জরিপকারী। তিনি বাংলার উদ্ভিদ, প্রাণিকুল, প্রা্কৃতিক পরিবেশ, সমাজ ও অর্থনীতি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং এ বিষয়াবলী সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছেন।

বুকানন ১৭৬২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ডাক্তারি বিদ্যা লাভ করেন এডিনবরা থেকে। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় বানিজ্যি জাহাজের শল্য চিকিৎসক হিসেবে। ১৭৯৩ সালে ফ্রান্সিস বুকানন বাংলায় নিয়োগ লাভ করেন। তার পূর্বে তিনি এশিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সমুদ্র যাত্রায় বেশ কয়েকবার অংশ নেন। বার্মার রাজধানী আভাতে ক্যাপ্টেন মাইকেল সাইম্স-এর কূটনৈতিক দলের সঙ্গেও সার্জন হিসেবে তিনি যুক্ত ছিলেন। আভায় দায়িত্ব সম্পাদনের পর তাঁকে বাংলাদেশের বর্তমান চাঁদপুরের নিকট পাত্তাহাটে নিয়োগ প্রদান করা হয়। ১৭৯৮ সালে কোম্পানি সরকার বুকাননকে চট্টগ্রাম ও তার সন্নিহিত এলাকা জরিপের কাজে নিয়োজিত করে। উক্ত এলাকাসমূহে রপ্তানির উপযোগী মশলা ও কৃষিপণ্য উৎপন্ন করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা ছিল এ জরিপের উদ্দেশ্য। অর্পিত দায়িত্ব পালন ছাড়াও বুকানন অতিরিক্ত আরও কিছু কাজ সম্পাদন করেন। তিনি ১৭৯৮ সালের ২ মার্চ থেকে ২১ মে-র মধ্যে উক্ত অঞ্চলের মাটির গুণাগুণ, ফসল উৎপাদনের ধরন, উদ্ভিদ সংক্রান্ত বিষয়, সমাজিক প্রতিষ্ঠান, গবাদি পশু পালনের অবস্থা এবং উক্ত অঞ্চলের সমাজ ও অর্থনীতি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন।

১৮০০ সালে বুকাননকে মহিশূর, মালাবার ও অপরাপর ব্রিটিশ কর্তৃক সদ্য অধিকৃত রাজ্য সমূহের সমাজ, অর্থনীতি ও প্রাকৃতিক অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য পাঠানো হয়। ১৮০২ ও ১৮০৩ সালে তিনি নক্স মিশনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দুবার নেপাল গমন করেন। সেখানেও তিনি একই ধরনের জরিপ কাজ সম্পাদন করেন। ১৮০৩ থেকে ১৮০৪ সাল পর্যন্ত বুকানন ভারতের গভর্নর জেনারেলের সার্জনের দায়িত্ব পালন করেন। কলকাতায় অবস্থানকালে তিনি একটি চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেন যা পরবর্তী সময়ে কলকাতা আলীপুর চিড়িয়াখানায় রূপান্তরিত হয়।

১৮০৭ সাল থেকে বাংলার উত্তরবঙ্গ ও বিহার সফর ছিল ফ্রান্সিস বুকাননের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তিনি সাত বছর ব্যাপী এ অঞ্চলসমূহে জরিপ কাজ চালান। তাঁর এ সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট - পরিসংখ্যান, ভৌগোলিক ও জাতিতাত্ত্বিক বিবরণের বিভিন্ন খন্ডে পান্ডুলিপি আকারে বর্তমানে ব্রিটিশ লাইব্রেরির প্রাচ্য বিভাগে সংরক্ষিত আছে। বুকাননের মৃত্যুর পরে এ রিপোর্টের কিছু অংশ মুদ্রিত হয়েছিল। বুকানন ১৮১৪ সালের নভেম্বর থেকে ১৮১৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কলকাতা বোটানিক গার্ডেন এর উন্নয়নের দায়িত্বে সুপারিনটেন্ডেন্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি স্বদেশে ফিরে যেতে বাধ্য হন। ১৮১৫ সালে তিনি তাঁর মূল নাম থেকে ডাক নাম বাদ দেন এবং নিজ নামের সঙ্গে মাতৃকুলের নাম ‘হ্যামিল্টন’ যুক্ত করেন। তাঁর জরিপ ও সংগৃহীত তথ্যাদি  ইতিহাসবিদ, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রকৃতিবিজ্ঞানিগণ এ সময়ের বাংলা সম্পর্কে গবেষণা করতে উৎস হিসেবে বুকানন হ্যামিল্টনের রিপোর্ট ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেন। বুকাননের মুত্যু ১৮২৯ সালের ১৫ জুন। রংপুর ও দিনাজপুরের ওপর তাঁর গবেষণার রিপোর্ট এখন গবেষকদের জন্য অমূল্য আকর হিসেবে বিবেচিত।  [সিরাজুল ইসলাম]