বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪

বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ (১৯৭৪ সালের ১৪ নং আইন)  ১৯৭৪ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি জারি করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী কিছু কার্যকলাপ প্রতিহত করা এবং কিছু গুরুতর অপরাধের দ্রুত বিচার এবং কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা। আইনটি নিরাপত্তা আইন ১৯৫২, জননিরাপত্তা অর্ডিন্যান্স ১৯৫৮ এবং বাংলাদেশ তফসিলী অপরাধ (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ ১৯৭২ (রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৫০) এর ধারাবাহিকতায় প্রণীত হয়।

রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে আইনটির কিছু কিছু সংশোধন করা হয় বা অতিরিক্ত ব্যবস্থাদি বিশেষ করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সম্পর্কিত বিষয় সংযোজন করা হয়। অন্যান্য যেসব প্রধান বিষয়ে সংযোজনী আনা হয় তার মধ্যে ছিল কাগজের মুদ্রা এবং সরকারি স্ট্যাম্প জাল করা, চোরাচালানি, খাদ্য পানীয় ওষুধ ও প্রসাধনী দ্রব্যে ভেজাল, অপরাধ করার ষড়যন্ত্র করা এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কিছু কিছু অপরাধমূলক কর্মকান্ড। আইনটির ২নং ধারায় রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের এভাবে সংজ্ঞা দেয়া হয়: (ক) বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং প্রতিরক্ষা বিরোধী কার্যকলাপ; (খ) বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষতিসাধন; (গ) দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা বা জননিরাপত্তা বিরোধী কাজ করা; (ঘ) দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী বা শ্রেণির মধ্যে শত্রুতা ও ঘৃণা সৃষ্টি করা; (ঙ) দেশের আইন ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় বাধা প্রদান করা; (চ) জনসাধারণের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা; (ছ) জনগণের মধ্যে অথবা জনগোষ্ঠীর কোনো অংশের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করা এবং (জ) দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করা।

আইনে গুরুতর অপরাধগুলো এভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে:

রেশনে সরবরাহকৃত দ্রব্যাদির কালোবাজারি এবং রেশনের লাইসেন্স, পারমিট ইত্যাদি কেনাবেচা করা;

আইনে নির্ধারিত পরিমাণের বেশি দ্রব্যাদি মজুদ করা;

ধ্বংসাত্বক কার্য বলতে বোঝানো হয়েছে কাজে দক্ষতা নষ্ট বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য কোনো কাজ করা অথবা নিম্নোক্ত সম্পদ বিনষ্ট করা: (ক) কোন সরকারি বা আধাসরকারি বা স্থানীয় সরকারের বা রাষ্ট্রায়ত্ব কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানের ইমারত, যানবাহন, যন্ত্রপাতি বা অপরাপর সম্পত্তি; (খ) কোন রেলপথ, রাস্তা, খাল, সেতু, বন্দর, জাহাজ মেরামতের কারখানা, বিমানবন্দর, টেলিগ্রাফ বা টেলিফোনের লাইন অথবা টেলিভিশন বা বেতার; (গ) রেলগাড়ি, জাহাজ বা উড়োজাহাজ; (ঘ) কোন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উৎপাদন, বিতরণ বা সরবরাহে ব্যবহূত ভবন বা অন্যান্য সম্পত্তি বা কোন পয়ঃব্যবস্থা, খনি বা কারখানা; অথবা (ঙ) পাট, পাটজাত দ্রব্য, পাটের গুদাম, পাটকল, বা পাট বাঁধাই প্রেস;

দেশের মুদ্রা ও সরকারি স্ট্যাম্প জাল করা;

খাদ্য, পানীয়, ওষুধ ও প্রসাধনী দ্রব্যে ভেজাল দেয়া বা ভেজাল সামগ্রী বিক্রি করা; এবং

অস্ত্র আইন ১৮৭৮, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ১৯০৮ এবং পেনাল কোডের ৩৭৬, ৩৮৫ এবং ৩৮৭ ধারায় উল্লেখিত অপরাধ সমূহ। ১৯৯১ সালের সংশোধনীতে আইনটির ১৬, ১৭ ও ১৮ ধারা রদ করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করা হয়।

এ আইনের বলে সরকার কিছু কিছু চক্রান্তমূলক সভাসমিতির নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা লাভ করে এবং সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে কোনো সভা সমিতি বা ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা বেআইনি ঘোষণা করার অধিকার লাভ করে। এই বিশেষ ক্ষমতা আইনের দ্বারা সরকার নিবর্তনমূলক আটক করার অধিকার লাভ করে। এ ধরনের আটক ব্যক্তিদের বিষয় পুনর্বিবেচনার জন্য উপদেষ্টা বোর্ড গঠন, বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধের বিচার, ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড, কালোবাজারি, নোট বা স্ট্যাম্প জাল করার অপরাধে মৃতুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদানের অধিকার লাভ করে।  [এনামুল হক]