বিয়ানীবাজার উপজেলা

বিয়ানীবাজার উপজেলা (সিলেট জেলা)  আয়তন: ২৫৩.২৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪৫´ থেকে ২৪°৫৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০৩´ থেকে ৯২°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কানাইঘাট এবং জকিগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে বড়লেখা, পূর্বে জকিগঞ্জ উপজেলা ও ভারতের আসাম রাজ্য, পশ্চিমে গোলাপগঞ্জ উপজেলা। ভারতের সাথে ১২.০১ কিমি দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। মোট বনাঞ্চল ১৫.৫৪ বর্গ কিমি। ছোট বড় টিলা ১৭০।

জনসংখ্যা ২৫৩৬১৬; পুরুষ ১২৩৯৩৯, মহিলা ১২৯৬৭৭। মুসলিম ২৪৪৪৫৩, হিন্দু ৯১৪৭, বৌদ্ধ ২, খ্রিস্টান ৬ এবং অন্যান্য ৮।

জলাশয় প্রধান নদী: সুরমা, কুশিয়ারা, সোনাই। কালাউচি খাল ও সাদা খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯৩৮ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১০ ১৩৪ ১৭৪ ৪২০৩০ ২১১৫৮৬ ১০০১ ৬৩.৫ ৫৮.৯
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১২.৩৯ ৩৭ ৪২০৩০ ৩৩৯২ ৬৩.৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আলীনগর ০৮ ৫৭০৯ ১০৪৭০ ১০৯৫৯ ৬০.৮
কুড়ার বাজার ৪৩ ৪১১৫ ১১৬৯৫ ১২১৭৭ ৬০.৭
চরখাই ২৫ ৯০৫৫ ১৫৩৪০ ১৫২৩৫ ৫৯.০
তিলপাড়া ৯৪ ৬৪৬৩ ৮৩২৭ ৯০৩৭ ৬৩.৭
দোভাগ ৩৪ ৬৩১২ ১০৭৪৬ ১১৪৫৭ ৫৩.৯
মথিউরা ৬০ ৩৬৭১ ৭৩৫২ ৭৩৫৩ ৬৬.৯
মুড়িয়া ৭৭ ৮৮২৪ ১৩০৪৬ ১৪২৯১ ৫৬.৭
মোল্লাপুর ১৪ ২৮২৭ ৫৪৫৩ ৫৯০৯ ৬৫.২
লাউতা ৫১ ৪৮০৩ ১১১১৯ ১১৮৩৪ ৫১.৩
শেওলা ৮৬ ৬৭৪০ ৯৩৫৯ ১০৪২৭ ৫৭.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ সুপাতলায় হিন্দু তীর্থ শ্রী শ্রী বাসুদেব বাড়ি এবং কষ্টি পাথর নির্মিত বাসুদেব মূর্তি। ৭ম শতাব্দীর কামরূপ নরপতি ভাস্কর বর্মার তাম্রশাসনের ৭টি খন্ডের মধ্যে ৬টি খন্ড এবং গজ (হাতি) চিহ্নিত একটি রাজকীয় সীলমোহর পাওয়া গেছে। টেংরার রাজবাড়ির ভগ্নাবশেষ।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী থানা সদরের ডাকবাংলোর পিছনে, থানা চত্বরে এবং বর্তমান শহীদ টিলা নামক স্থানে বহুলোককে ধরে এনে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা কুলাউড়া-বড়লেখা-বিয়ানীবাজার-শেওলা-গোলাপগঞ্জ হয়ে সিলেটের সুরমা নদীর দক্ষিণ তীরে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। শালুটিকর ও লাক্কাতুরা এলাকায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। বিয়ানীবাজারে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ২টি বড় যুদ্ধ ছিল সুতারকান্দির যুদ্ধ ও সারপাড়া যুদ্ধ। উপজেলার ৪টি স্থানে (উপজেলা সদরের ডাকবাংলোর পিছনে, থানা চত্বর, শহীদ টিলা, সারপার ক্যাম্প) বধ্যভূমি রয়েছে এবং সি এন্ড বি রাস্তার ১টি গণকবর রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পরে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। এটি শহীদ টিলা নামে খ্যাত।

বিস্তারিত দেখুন বিয়ানীবাজার উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৩৮৮, মন্দির ১৯, তীর্থস্থান ১, মাযার ৭। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: পাতন বাঘমারা জামে মসজিদ (সপ্তদশ শতাব্দী), গোলাব শাহের মাযার (বাস্বা ‘ইমামবাড়ী’ নামে পরিচিত), শ্রী শ্রী কালীমন্দির, শ্রী শ্রী মহাপ্রভূ বিগ্রহ আখড়া (জলঢুপ)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৯.৭%; পুরুষ ৬১.৬%, মহিলা ৫৭.৯%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩৪, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৬, কিন্ডার গার্টেন ৪, মাদ্রাসা ৩৪৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: লাউতা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭১), খাসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯৫), জলঢুপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৯), পঞ্চখন্ড হরগোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: বিয়ানীবাজার বার্তা, সাপ্তাহিক দিবালোক, সাপ্তাহিক নবদ্বীপ, সাপ্তাহিক আগামী প্রজন্ম সাপ্তাহিক সপ্তাহজুড়ে, সাপ্তাহিক সম্ভাবনা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৭৫, লাইব্রেরি ২, কমিউনিটি সেন্টার ১৩, মহিলা সংগঠন, খেলার মাঠ ১৫।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা/বিনোদনকেন্দ্র বিয়ানীবাজার গ্যাসফিল্ড, বার হালের দিঘি, গোলাবশাহ মাজার।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ২৬.৩৯%, অকৃষি শ্রমিক ৬.৮০%, শিল্প ০.৭৮%, ব্যবসা ১২.২০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.০৯%, চাকরি ৪.১৬%, নির্মাণ ৩.৭৪%, ধর্মীয় সেবা ০.৫১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২৮.৩৭% এবং অন্যান্য ১৩.৯৬%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, তিল, তেজপাতা।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি সরিষা, তিসি, অড়হর, বাদাম।

প্রধান ফল-ফলাদি কাঁঠাল, কমলা, লিচু, পেয়ারা, সাতকরা, আমলকি, জলপাই, বাতাবি লেবু।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১২৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৯৭ কিমি; নৌপথ ১১.৭ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা আইসক্রীম ফ্যাক্টরি ২১, রাইস মিল ৫৫, স‘মিল ২৫, ওয়েল্ডিং কারখানা ৪১।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প ৫০, লৌহশিল্প ৪০, মৃৎশিল্প ১০, বাঁশ ও কাঠের কাজ ১০৪, সেলাই কাজ ২০১, উলবুনন ৫, চামড়ার কাজ ১।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৮, মেলা ৩। বিয়ানীবাজার, মাথিউরা (ভাটার) বাজার, বৈরাগী বাজার, জলঢুপের থানা বাজার এবং বাসুদেব বাড়ির রথ যাত্রার মেলা, বারুণী মেলা, দেউলগ্রাম আখড়ার মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  কমলা, কাঁঠাল, তেজপাতা, গ্যাস।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসুচির আওতাধীন। তবে ৭১.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

খনিজ সম্পদ  প্রাকৃতিক গ্যাস।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮২.১%, ট্যাপ ৮.৬% এবং অন্যান্য ৯.৩%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৬.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২২.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ০.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৪, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৫।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার।  [আজিজুর রহমান]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বিয়ানীবাজার উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।