বিদ্যুৎ কেন্দ্র: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''বিদ্যুৎ কেন্দ্র''' হলো বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্থাপনা। বাংলাদেশে মাথাপিছু বিদ্যুৎশক্তির ব্যবহার খুবই কম, মাত্র ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা। দেশের মাত্র ৪৭% মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি/বিউবো) দেশের একমাত্র সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বিপিডিবি নিজে এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (আরইবি)। এছাড়া ঢাকা অঞ্চলের জন্য ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ ([[ডিপিডিসি|ডিপিডিসি]]) ও ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানি (ডেসকো) এবং খুলনার জন্য আছে খুলনা বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানি (কেসকো)। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা। স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ প্রজেক্ট-এর (আইপিপি) অধীনে মন্ত্রণালয় সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন উদ্যোগগুলির উৎপাদন ও বিতরণ কার্যক্রমের উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছে।
'''বিদ্যুৎ কেন্দ্র''' হলো বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্থাপনা। বাংলাদেশে মাথাপিছু বিদ্যুৎশক্তির ব্যবহার খুবই কম, মাত্র ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা। দেশের মাত্র ৪৭% মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি/বিউবো) দেশের একমাত্র সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বিপিডিবি নিজে এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (আরইবি)। এছাড়া ঢাকা অঞ্চলের জন্য ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ ([[ডিপিডিসি|ডিপিডিসি]]) ও ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানি (ডেসকো) এবং খুলনার জন্য আছে খুলনা বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানি (কেসকো)। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা। স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ প্রজেক্ট-এর (আইপিপি) অধীনে মন্ত্রণালয় সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন উদ্যোগগুলির উৎপাদন ও বিতরণ কার্যক্রমের উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছে।


[[Image:PowerPlant.jpg|thumb|400px|right]]
স্বাধীনতা লাভের পরপর বাংলাদেশে মোট ১১টি ইউনিটবিশিষ্ট ৭টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ছিল। এগুলি কাপ্তাই, শাহজীবাজার, সিদ্ধিরগঞ্জ, খুলনা, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী এবং বগুড়ায় অবস্থিত। পরবর্তীকালে আশুগঞ্জ, সিলেট, ফেঞ্চুগঞ্জ, ঘোড়াশাল, হরিপুর, রাউজান, বাঘাবাড়ি, ভেড়ামারা, সৈয়দপুর, বরিশাল, রংপুর, ভোলা, চট্টগ্রাম ও শিকলবাহায় সরকারি উদ্যোগে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। তবে নববই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে সরকার শিল্প-কারখানাগুলিতে নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উৎসাহিত করছে যাতে লোড শেডিং-এর সময়ও কারখানাগুলিতে বিরতিহীন উৎপাদন চলতে পারে। প্রাইভেট পাওয়ার কোম্পানিগুলিকে নির্দিষ্ট শর্তে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ নীতির সুযোগ নিয়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানি বার্জ মাউন্টেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রগুলি বাঘাবাড়ি, হরিপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ ও মেঘনাঘাটে অবস্থিত। ২০০৯ সাল নাগাদ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত মোট ৪৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত ১৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৩৮২৪ মেগাওয়াট এবং বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত ২৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ২১০৪ মেগাওয়াট। তবে এসব কেন্দ্র থেকে প্রকৃতপক্ষে উৎপাদনক্ষমতার সমপরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় না। পিক আওয়ারে সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে সর্বোচ্চ ৩৩৩১ এবং বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে ২০৪৫ মেগাওয়াটসহ মোট সর্বোচ্চ ৫৩৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়।
স্বাধীনতা লাভের পরপর বাংলাদেশে মোট ১১টি ইউনিটবিশিষ্ট ৭টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ছিল। এগুলি কাপ্তাই, শাহজীবাজার, সিদ্ধিরগঞ্জ, খুলনা, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী এবং বগুড়ায় অবস্থিত। পরবর্তীকালে আশুগঞ্জ, সিলেট, ফেঞ্চুগঞ্জ, ঘোড়াশাল, হরিপুর, রাউজান, বাঘাবাড়ি, ভেড়ামারা, সৈয়দপুর, বরিশাল, রংপুর, ভোলা, চট্টগ্রাম ও শিকলবাহায় সরকারি উদ্যোগে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। তবে নববই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে সরকার শিল্প-কারখানাগুলিতে নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উৎসাহিত করছে যাতে লোড শেডিং-এর সময়ও কারখানাগুলিতে বিরতিহীন উৎপাদন চলতে পারে। প্রাইভেট পাওয়ার কোম্পানিগুলিকে নির্দিষ্ট শর্তে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ নীতির সুযোগ নিয়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানি বার্জ মাউন্টেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রগুলি বাঘাবাড়ি, হরিপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ ও মেঘনাঘাটে অবস্থিত। ২০০৯ সাল নাগাদ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত মোট ৪৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত ১৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৩৮২৪ মেগাওয়াট এবং বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত ২৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ২১০৪ মেগাওয়াট। তবে এসব কেন্দ্র থেকে প্রকৃতপক্ষে উৎপাদনক্ষমতার সমপরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় না। পিক আওয়ারে সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে সর্বোচ্চ ৩৩৩১ এবং বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে ২০৪৫ মেগাওয়াটসহ মোট সর্বোচ্চ ৫৩৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়।


[[Image:PowerPlant.jpg|thumb|400px|right|বিদ্যুৎ কেন্দ্র]]
'''''বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ধরণ'''''  বর্তমানে বাংলাদেশে পাঁচ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়ে থাকে। এগুলি হলো: ১. স্টিম টারবাইন, ২. গ্যাস টারবাইন, ৩. কম্বাইন্ড সাইকেল গ্যাস টারবাইন, ৪. হাইড্রো পাওয়ার প্ল্যান্ট বা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ৫. উইন্ড টারবাইন পাওয়ার প্ল্যান্ট।
 
'''বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ধরণ'''  বর্তমানে বাংলাদেশে পাঁচ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়ে থাকে। এগুলি হলো: ১. স্টিম টারবাইন, ২. গ্যাস টারবাইন, ৩. কম্বাইন্ড সাইকেল গ্যাস টারবাইন, ৪. হাইড্রো পাওয়ার প্ল্যান্ট বা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ৫. উইন্ড টারবাইন পাওয়ার প্ল্যান্ট।


স্টিম টারবাইন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে মূলত প্রাকৃতিক গ্যাসের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জ্বালানি হিসেবে কয়লা এবং ফারনেস অয়েলও ব্যবহূত হয়ে থাকে। দেশের সবচেয়ে বড় স্টিম টারবাইন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নরসিংদী জেলার ঘোড়াশালে অবস্থিত। ৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি এবং ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিটের মাধ্যমে এ কেন্দ্রটি সর্বমোট ৯৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। ঘোড়াশালে দ্বৈত জ্বালানির মাধ্যমে পরিচালিত ২০০ থেকে ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরেকটি ইউনিটের নির্মাণকাজ চলছে।
স্টিম টারবাইন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে মূলত প্রাকৃতিক গ্যাসের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জ্বালানি হিসেবে কয়লা এবং ফারনেস অয়েলও ব্যবহূত হয়ে থাকে। দেশের সবচেয়ে বড় স্টিম টারবাইন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নরসিংদী জেলার ঘোড়াশালে অবস্থিত। ৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি এবং ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিটের মাধ্যমে এ কেন্দ্রটি সর্বমোট ৯৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। ঘোড়াশালে দ্বৈত জ্বালানির মাধ্যমে পরিচালিত ২০০ থেকে ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরেকটি ইউনিটের নির্মাণকাজ চলছে।

০৭:০৬, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলো বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্থাপনা। বাংলাদেশে মাথাপিছু বিদ্যুৎশক্তির ব্যবহার খুবই কম, মাত্র ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা। দেশের মাত্র ৪৭% মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি/বিউবো) দেশের একমাত্র সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বিপিডিবি নিজে এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (আরইবি)। এছাড়া ঢাকা অঞ্চলের জন্য ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ (ডিপিডিসি) ও ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানি (ডেসকো) এবং খুলনার জন্য আছে খুলনা বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানি (কেসকো)। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা। স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ প্রজেক্ট-এর (আইপিপি) অধীনে মন্ত্রণালয় সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন উদ্যোগগুলির উৎপাদন ও বিতরণ কার্যক্রমের উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছে।

স্বাধীনতা লাভের পরপর বাংলাদেশে মোট ১১টি ইউনিটবিশিষ্ট ৭টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ছিল। এগুলি কাপ্তাই, শাহজীবাজার, সিদ্ধিরগঞ্জ, খুলনা, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী এবং বগুড়ায় অবস্থিত। পরবর্তীকালে আশুগঞ্জ, সিলেট, ফেঞ্চুগঞ্জ, ঘোড়াশাল, হরিপুর, রাউজান, বাঘাবাড়ি, ভেড়ামারা, সৈয়দপুর, বরিশাল, রংপুর, ভোলা, চট্টগ্রাম ও শিকলবাহায় সরকারি উদ্যোগে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। তবে নববই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে সরকার শিল্প-কারখানাগুলিতে নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উৎসাহিত করছে যাতে লোড শেডিং-এর সময়ও কারখানাগুলিতে বিরতিহীন উৎপাদন চলতে পারে। প্রাইভেট পাওয়ার কোম্পানিগুলিকে নির্দিষ্ট শর্তে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ নীতির সুযোগ নিয়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানি বার্জ মাউন্টেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রগুলি বাঘাবাড়ি, হরিপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ ও মেঘনাঘাটে অবস্থিত। ২০০৯ সাল নাগাদ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত মোট ৪৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত ১৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৩৮২৪ মেগাওয়াট এবং বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত ২৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ২১০৪ মেগাওয়াট। তবে এসব কেন্দ্র থেকে প্রকৃতপক্ষে উৎপাদনক্ষমতার সমপরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় না। পিক আওয়ারে সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে সর্বোচ্চ ৩৩৩১ এবং বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে ২০৪৫ মেগাওয়াটসহ মোট সর্বোচ্চ ৫৩৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ধরণ  বর্তমানে বাংলাদেশে পাঁচ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়ে থাকে। এগুলি হলো: ১. স্টিম টারবাইন, ২. গ্যাস টারবাইন, ৩. কম্বাইন্ড সাইকেল গ্যাস টারবাইন, ৪. হাইড্রো পাওয়ার প্ল্যান্ট বা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ৫. উইন্ড টারবাইন পাওয়ার প্ল্যান্ট।

স্টিম টারবাইন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে মূলত প্রাকৃতিক গ্যাসের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জ্বালানি হিসেবে কয়লা এবং ফারনেস অয়েলও ব্যবহূত হয়ে থাকে। দেশের সবচেয়ে বড় স্টিম টারবাইন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নরসিংদী জেলার ঘোড়াশালে অবস্থিত। ৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি এবং ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিটের মাধ্যমে এ কেন্দ্রটি সর্বমোট ৯৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। ঘোড়াশালে দ্বৈত জ্বালানির মাধ্যমে পরিচালিত ২০০ থেকে ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরেকটি ইউনিটের নির্মাণকাজ চলছে।

দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দিনাজপুর জেলার বড় পুকুরিয়ায় অবস্থিত। এ কেন্দ্রে রয়েছে প্রতিটি ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন মোট দুটি ইউনিট। একই ক্ষমতার আরেকটি ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ফারনেস অয়েলভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে খুলনা জেলার গোয়ালপাড়ায়। এ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ ও ১১০ মেগাওয়াট, অর্থাৎ মোট ১৭০ মেগাওয়াট।

বাংলাদেশে ইদানিং দুধরনের গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। যথা: পিকিং প্ল্যান্ট এবং বেজ লোড প্ল্যান্ট। এর মধ্যে পিকিং প্ল্যান্টগুলি মূলত ওপেন সাইকেল গ্যাস টারবাইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, আর বেজ লোড প্ল্যান্টগুলি পরিচালিত হয় কম্বাইন্ড সাইকেল গ্যাস টারবাইনের মাধ্যমে। গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির মধ্যে হরিপুরে প্রতিটি ৩৩ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি বেজ লোড প্ল্যান্ট ইউনিট এবং সিদ্ধিরগঞ্জে প্রতিটি ১০৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি পিকিং প্ল্যান্ট ইউনিট রয়েছে। কম্বাইন্ড সাইকেল গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির মধ্যে মেঘনাঘাট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ৪৫০ মেগাওয়াট। এছাড়া ফেঞ্চুগঞ্জ, বাঘাবাড়িসহ আরো কয়েকটি ছোটখাটো ইউনিটে কম্বাইন্ড সাইকেল গ্যাস টারবাইন ব্যবহূত হয়।

বাংলাদেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাইয়ে অবস্থিত। ১৯৬২ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে স্থাপিত পাঁচটি ইউনিটের মাধ্যমে এখানে মোট সর্বোচ্চ ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। কেন্দ্রটিতে আরো দুটি ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার খুব সামান্য অংশই এ কেন্দ্র মেটাতে সক্ষম।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহূত প্রাথমিক জ্বালানির সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব্ দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে তাই জ্বালানি হিসেবে কয়লা, এলএনজি, পরমাণুশক্তি, বায়ুশক্তি এবং সৌরশক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ফেনীর মাতামুহুরিতে দেশের প্রথম বায়ূভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে, যেখানে ২২৫ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন চারটি ইউনিটের মাধ্যমে ০.৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। কুতুবদিয়ায় এ রকম আরেকটি কেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ২০ কিলোওয়াট।

পাবনার রূপপুরে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ কেন্দ্রে প্রতিটি ১০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিট স্থাপন করা হবে। কেন্দ্রটি ২০১৭-১৮ সাল নাগাদ চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  [এ.কে মাহমুদ]