বাহর-উল-হায়াত

বাহর-উল-হায়াত  সংস্কৃত ভাষায় লিখিত একটি যোগশাস্ত্রীয় গ্রন্থ অমৃতকুন্ড এর ফারসি অনুবাদ। বাংলায় মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কামরূপের জনৈক যোগী (সন্ন্যাসী) ভোজর ব্রাহ্মণ লখনৌতি শহর ও সেখানে বসবাসকারী মুসলমান পন্ডিতদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য মুসলমানদের রাজধানী লখনৌতিতে আগমন করেন। তখন সুলতান আলী মর্দান খলজীর অধীনে লখনৌতির কাজী হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন রুকনুদ্দীন সমরকন্দি। ভোজর ব্রাহ্মণ কাজীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন এবং ইসলামের নবী (সঃ) ও তাঁর শিক্ষা সম্পর্কে জানতে চান। আলোচনায় সন্তুষ্ট হয়ে যোগী ভোজর ব্রাহ্মণ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি ইসলামি শাস্ত্রসমূহ এমন গভীরভাবে রপ্ত করেন যে, তাঁকে আইনগত সিদ্ধান্ত প্রদানের অনুমতি দেওয়া হয়। যোগী তখন কাজীকে অমৃতকুন্ড উপহার দেন। কাজী এ গ্রন্থের প্রশংসা করেন এবং তিনি যোগশাস্ত্র এমনভাবে অনুশীলন করেন যে, তিনি যোগীর পর্যায়ে পৌঁছে যান।

কাজী সংস্কৃত গ্রন্থ অমৃতকুন্ডকে প্রথমে ফারসিতে এবং পরে ফারসি হতে আরবিতে ভাষান্তর করেন। ফারসি অনুবাদের নাম করা হয় বাহর-উল-হায়াত এবং আরবি অনুবাদের নাম করা হয় হাউজ-উল-হায়াত। উভয় অনুবাদই বর্তমানে মুদ্রিত অবস্থায় পাওয়া যায়। ১০টি অধ্যায় ও ৫০টি শ্লোক সম্বলিত এটি একটি ক্ষুদ্র পুস্তক। এতে মানব জীবনের সঙ্গে যোগশাস্ত্রের বাস্তব প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ গ্রন্থে যোগের পন্থা ও যোগাসন বর্ণনা করা হয়েছে। এসবের সাহায্যে একজন যোগী তার আধ্যাত্মিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন।  [আবদুল করিম]