বাবা আদম মসজিদ ও সমাধিসৌধ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:২৭, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

বাবা আদম মসজিদ ও সমাধিসৌধ মুন্সিগঞ্জ জেলার রামপালের অন্তর্গত রেকাবি বাজার ইউনিয়নের কাজী কসবা গ্রামে অবস্থিত। মসজিদটি বহু গম্বুজবিশিষ্ট এবং ভূমি পরিকল্পনায় আয়তাকৃতির। এ মসজিদের অভ্যন্তর ভাগের পরিমাপ ১০.৩৫ মিটার × ৬.৭৫ মিটার এবং বহির্ভাগের পরিমাপ ১৪.৩০ মিটার × ১১.৪৫ মিটার। মসজিদটির দেয়াল ২ মিটার পুরু। মসজিদটিতে তিনটি ‘বে’ ও দুটি ‘আইল’ আছে।

পশ্চিম দেয়ালের পশ্চাৎভাগ বাইরের দিকে তিন স্তরে বর্ধিত। পেছনের বর্ধিতাংশটি অতীব সুন্দর টেরাকোটা অলংকরণে নকশাকৃত, যার সাথে মোয়াজ্জমপুর মসজিদের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। মিহরাবের মাঝখানে এবং পূর্ব ফাসাদে ঝুলন্ত শিকল ঘণ্টা ও ঝুলন্ত তক্তীর নকশা রয়েছে। তাছাড়া কুলুঙ্গির মাঝখানে বহু খাঁজবিশিষ্ট খিলান, জ্যামিতিক নকশা ও খিলান শীর্ষে ‘রোজেট’ নকশা লক্ষণীয়; এরূপ নকশাসমৃদ্ধ ‘ফাসাদ’ দেখতে পাওয়া যায় সিরাজগঞ্জ জেলায় অবস্থিত শাহজাদপুর মসজিদে।


বাবা আদম মসজিদ, মুন্সিগঞ্জ

বাবা আদমের মসজিদটি ছয়টি সম আকৃতির একই রকম অনতিউচ্চ গম্বুজে আচ্ছাদিত। গম্বুজগুলি পর্যায়ক্রমে দুসারিতে স্থাপিত। মসজিদের অভ্যন্তরে রয়েছে দুটি দন্ডায়মান কালো ব্যাসল্ট পাথরের স্তম্ভ। এগুলি প্রাক-মুসলিম যুগের ভগ্ন অথবা পরিত্যক্ত ইমারতের স্তম্ভ বলে প্রতীয়মান হয়। দন্ডায়মান স্তম্ভ থেকে খিলান উত্থিত হয়ে উপরে গম্বুজ ধারণ করে আছে। মসজিদের খিলানগুলি সূচ্যগ্র দ্বিকেন্দ্রিক রীতির। মসজিদটি ইটের তৈরি কিন্তু দন্ডায়মান ও সংলগ্ন স্তম্ভগুলি প্রস্ত্তর নির্মিত। সুলতানি শাসন আমলে নির্মিত মসজিদের ন্যায় বাবা আদমের মসজিদের কার্নিস এবং ছাদ বক্রাকারে গঠিত। মসজিদটির পূর্ব দিকের ফাসাদে তিনটি আকর্ষণীয় খিলানকৃত প্রবেশপথ রয়েছে এবং এর সোজাসুজি কিবলা দেয়ালে রয়েছে তিনটি মিহরাব। কেন্দ্রীয় মিহরাবের খিলান দুপার্শ্বের অলংকৃত স্তম্ভের উপরে বহু খাঁজবিশিষ্ট খিলান রীতিতে নির্মিত। খিলানের ‘স্প্যানড্রিল’-এ চক্রাকার ফুলেল নকশা এবং উপরে রয়েছে একসারি অবতল খোপ অলংকরণ এবং সর্বশীর্ষে রয়েছে মোল্ডিং নকশা। সবগুলি প্রবেশপথ ও মিহরাব আয়তাকৃতির ফ্রেমের মধ্যে সংস্থাপিত। দক্ষিণ ও উত্তর দিকে দেয়ালে রয়েছে আয়তাকৃতির অবতল কুলুঙ্গি। বাবা আদমের মসজিদে কোনো মিনার নেই। মসজিদটিতে বাংলায় সুলতানি শাসন আমলে বিকশিত স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য ও অলঙ্করণশৈলী প্রকাশ পেয়েছে। বস্ত্তত, এ অঞ্চলে (বাংলাদেশে) মসজিদ স্থাপত্যে সুলতানি স্থাপত্য রীতি পরিণতরূপ লাভ করেছে বাবা আদমের মসজিদে। এটি একটি ছয়গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ নিদর্শন এবং এ ধরনের আর একটি মাত্র নিদর্শন সাতগাঁও মসজিদ (১৫২৯ খ্রি.)। গম্বুজগুলি খিলান সহযোগে পেন্ডেন্টিভ পদ্ধতির মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে। এ মসজিদের ছাদের কার্নিসে বক্রতা লক্ষ্য করা যায় এবং এ বৈশিষ্ট্যটি জাহানিয়া মসজিদ (১৫৩৫ খ্রি., গৌড়), ছোট সোনা মসজিদ, ষাটগম্বুজ মসজিদ ও শাহাজাদপুর মসজিদে দেখতে পাওয়া যায়।

মসজিদের সম্মুখভাগে কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের শীর্ষে উৎকীর্ণ শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, মসজিদের নির্মাণ তারিখ ৮৮৮ হিজরি/১৪৮৩ খ্রিস্টাব্দ। সুলতান ফতেহ শাহের শাসনকালে মালিক কাফুর এ মসজিদ নির্মাণ করেন।

বাবা আদমের মসজিদটি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংরক্ষিত ইমারত। মসজিদটি সংস্কার করা হয়েছে এবং তুলনামূলকভাবে ভাল অবস্থায় টিকে আছে। মসজিদ ছাড়া এখানে রয়েছে বাবা আদমের মাযার। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী বাবা আদম শহীদ এখানে ধর্মীয় যুদ্ধে শহীদ হন এবং তাঁকে মসজিদের সন্নিকটে সমাহিত করা হয়। নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাবে এ ঘটনার ঐতিহাসিকতা প্রমাণ করা কঠিন। কথিত আছে, বল্লালসেন এর রাজত্বকালে বাবা আদম নামে একজন প্রভাবশালী দরবেশ এদেশে আগমন করেন। ঘটনাক্রমে বল্লালসেনের নির্দেশে বাবা আদমকে হত্যা করা হয়। এজন্য তিনি বাবা আদম শহীদ নামে পরিচিতি লাভ করেন। বাংলাদেশে মসজিদ স্থাপত্য বিকাশে স্থাপত্য রীতি ও অলংকরণশৈলীর দিক থেকে পর্যবেক্ষণ করলে বাবা আদমের মসজিদ পরিণত মসজিদ স্থাপত্যের একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন বলে বিবেচিত।

বাবা আদমের মসজিদের সন্নিকটে মসজিদ প্রাঙ্গণের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি নব নির্মিত ক্ষুদ্র কবর আছে। কবরটি বাবা আদম শহীদের মাযার বলে পরিচিত। পূর্বে কবরের উপরে কোন আচ্ছাদন ছিল না। বর্তমান মাযারটি বর্গাকৃতির (৭.৬২ মিটার একক বাহু), তারিখ বিহীন এবং এতে কোন শিলালিপি নেই।  [আয়শা বেগম]