বানু, সেলিনা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''বানু, সেলিনা''' (১৯২৬-১৯৮৩)  শিক্ষক, রাজনীতিক, সমাজসেবক। জন্ম ১৯২৬ সালের ১২ অক্টোবর পাবনা শহরে। বাবা ওয়াসিম উদ্দিন আহমদ (১৮৭৬-১৯২৮) ছিলেন আইনজীবী, পাবনা জেলা বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট, মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান ও বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য (১৯২০)। মাতা হাজেরা খাতুন। সেলিনা বানু ১৯৪৩ সালে পাবনা গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪৫ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং একই কলেজ থেকে ১৯৪৯ সালে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৬১ সালে ঢাকা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ থেকে শিক্ষায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
'''বানু, সেলিনা''' (১৯২৬-১৯৮৩)  শিক্ষক, রাজনীতিক, সমাজসেবক। জন্ম ১৯২৬ সালের ১২ অক্টোবর পাবনা শহরে। বাবা ওয়াসিম উদ্দিন আহমদ (১৮৭৬-১৯২৮) ছিলেন আইনজীবী, পাবনা জেলা বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট, মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান ও বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য (১৯২০)। মাতা হাজেরা খাতুন। সেলিনা বানু ১৯৪৩ সালে পাবনা গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪৫ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং একই কলেজ থেকে ১৯৪৯ সালে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৬১ সালে ঢাকা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ থেকে শিক্ষায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।


[[Image:BanuSelina.jpg|thumb|400px|right|সেলিনা বানু]]
সেলিনা বানু প্রথমে পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি পাবনা সেন্ট্রাল গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি রংপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ও ঢাকায় নারী শিক্ষামন্দিরে শিক্ষকতা (১৯৫৯-১৯৬৪) করেন। তিনি ১৯৬৪ সালে কুমিল্লার ফরিদা বিদ্যায়তনের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করে আমৃত্যু কর্মরত ছিলেন।
সেলিনা বানু প্রথমে পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি পাবনা সেন্ট্রাল গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি রংপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ও ঢাকায় নারী শিক্ষামন্দিরে শিক্ষকতা (১৯৫৯-১৯৬৪) করেন। তিনি ১৯৬৪ সালে কুমিল্লার ফরিদা বিদ্যায়তনের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করে আমৃত্যু কর্মরত ছিলেন।


সেলিনা বানু ছাত্রজীবনেই কমিউনিস্ট স্টাডি গ্রুপে (১৯৩৯) যোগ দেন। তিনি ১৯৪৩-এর মন্বন্তরে মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি পরিচালিত লঙ্গরখানায় খাদ্য পরিবেশন করেন। তিনি ১৯৪৬-১৯৪৮ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। সেলিনা বানু ১৯৪৯ সালে নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং ১৯৫৩ সালে প্রাদেশিক কমিটির মহিলা সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের পাবনা মহিলা আসন থেকে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির হুইপ মনোনীত হন। আইন পরিষদে তিনি ইলা মিত্রের উপর অমানুষিক নির্যাতনের প্রতিবাদ করেন এবং বিনাবিচারে আটক বন্দীদের মুক্তি দাবি করেন।  
সেলিনা বানু ছাত্রজীবনেই কমিউনিস্ট স্টাডি গ্রুপে (১৯৩৯) যোগ দেন। তিনি ১৯৪৩-এর মন্বন্তরে মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি পরিচালিত লঙ্গরখানায় খাদ্য পরিবেশন করেন। তিনি ১৯৪৬-১৯৪৮ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। সেলিনা বানু ১৯৪৯ সালে নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং ১৯৫৩ সালে প্রাদেশিক কমিটির মহিলা সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের পাবনা মহিলা আসন থেকে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির হুইপ মনোনীত হন। আইন পরিষদে তিনি ইলা মিত্রের উপর অমানুষিক নির্যাতনের প্রতিবাদ করেন এবং বিনাবিচারে আটক বন্দীদের মুক্তি দাবি করেন।  
[[Image:BanuSelina.jpg|thumb|400px|right|সেলিনা বানু]]


সেলিনা বানু ১৯৫৭ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে তিনি ঢাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৬৭ সালে মস্কোপন্থি ন্যাপে যোগ দেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে ড. শামসুজ্জোহা হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তিনি কুমিল্লার শিক্ষক সমাজ আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ত্রিপুরার আগরতলা ক্রাফটস ক্যাম্প ও কলকাতার সল্টলেক শরণার্থী ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করেন।
সেলিনা বানু ১৯৫৭ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে তিনি ঢাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৬৭ সালে মস্কোপন্থি ন্যাপে যোগ দেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে ড. শামসুজ্জোহা হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তিনি কুমিল্লার শিক্ষক সমাজ আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ত্রিপুরার আগরতলা ক্রাফটস ক্যাম্প ও কলকাতার সল্টলেক শরণার্থী ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করেন।

০৯:১১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

বানু, সেলিনা (১৯২৬-১৯৮৩)  শিক্ষক, রাজনীতিক, সমাজসেবক। জন্ম ১৯২৬ সালের ১২ অক্টোবর পাবনা শহরে। বাবা ওয়াসিম উদ্দিন আহমদ (১৮৭৬-১৯২৮) ছিলেন আইনজীবী, পাবনা জেলা বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট, মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান ও বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য (১৯২০)। মাতা হাজেরা খাতুন। সেলিনা বানু ১৯৪৩ সালে পাবনা গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪৫ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং একই কলেজ থেকে ১৯৪৯ সালে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৬১ সালে ঢাকা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ থেকে শিক্ষায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

সেলিনা বানু

সেলিনা বানু প্রথমে পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি পাবনা সেন্ট্রাল গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি রংপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ও ঢাকায় নারী শিক্ষামন্দিরে শিক্ষকতা (১৯৫৯-১৯৬৪) করেন। তিনি ১৯৬৪ সালে কুমিল্লার ফরিদা বিদ্যায়তনের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করে আমৃত্যু কর্মরত ছিলেন।

সেলিনা বানু ছাত্রজীবনেই কমিউনিস্ট স্টাডি গ্রুপে (১৯৩৯) যোগ দেন। তিনি ১৯৪৩-এর মন্বন্তরে মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি পরিচালিত লঙ্গরখানায় খাদ্য পরিবেশন করেন। তিনি ১৯৪৬-১৯৪৮ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। সেলিনা বানু ১৯৪৯ সালে নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং ১৯৫৩ সালে প্রাদেশিক কমিটির মহিলা সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের পাবনা মহিলা আসন থেকে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির হুইপ মনোনীত হন। আইন পরিষদে তিনি ইলা মিত্রের উপর অমানুষিক নির্যাতনের প্রতিবাদ করেন এবং বিনাবিচারে আটক বন্দীদের মুক্তি দাবি করেন।

সেলিনা বানু ১৯৫৭ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে তিনি ঢাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৬৭ সালে মস্কোপন্থি ন্যাপে যোগ দেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে ড. শামসুজ্জোহা হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তিনি কুমিল্লার শিক্ষক সমাজ আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ত্রিপুরার আগরতলা ক্রাফটস ক্যাম্প ও কলকাতার সল্টলেক শরণার্থী ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করেন।

সেলিনা বানু কুমিল্লা মধুমিতা কচি-কাঁচা মেলার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাবনায় কলেরা মহামারী আকারে দেখা দিলে তিনি স্বেচ্ছাসেবক দল নিয়ে চিকিৎসাসেবায় সহায়তা করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে মহিলা পরিষদ গঠিত হলে এ সংস্থার সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৭০ সালে তিনি ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত পটুয়াখালী জেলায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন।

সেলিনা বানু ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ে প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন। ১৯৮৩ সালের ২৬ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়।  [মামুন সিদ্দিকী]