বানারীপাড়া উপজেলা

বানারীপাড়া উপজেলা (বরিশাল জেলা) আয়তন: ১৩৪.৩০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৪৫´ থেকে ২২°৫২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০২´ থেকে ৯০°১৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে উজিরপুর, দক্ষিণে নেছারাবাদ, পূর্বে উজিরপুর এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলা, পশ্চিমে নাজিরপুর ও নেছারাবাদ উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৪৮১৮৮; পুরুষ ৭৩০৭৩, মহিলা ৭৫১১৫। মুসলিম ১২৫০৫৮, হিন্দু ২২৭৯০, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ৩৩৮ এবং অন্যান্য ১।

জলাশয় প্রধান নদী: সন্ধ্যা, স্বরূপকাঠি। এছাড়া বিশারকান্দি খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন বানারীপাড়া থানা গঠিত হয় ১৯১৩ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৭৬ ৭৬ ১৬৮৮২ ১৩১৩০৬ ১১০৩ ৭২.২ (২০০১) ৬৫.১
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১.৮১ (২০০১) ১৬ ১০৩৬৬ ৪৮০৩ (২০০১) ৮৮.৫
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৫.১৬ (২০০১) ৬৫১৬ ১২০২ (২০০১) ৭৫.৮
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ইলুহার ৫২ ৪০২৯ ৯১৬১ ৯৬৫০ ৬২.৬
উদয়কাঠি ৮৪ ৩০৯০ ৫৯৫৪ ৬১৬১ ৫৯.৮
চাখার ৪২ ৩৯৫৩ ৭৫০৫ ৮৫০৪ ৬৩.৩
বাইশারী ২১ ২৭৭২ ৭৬৮৪ ৭৫৮৮ ৬৭.৭
বানারীপাড়া ১০ ৩০৪৫ ৫৬৮০ ৫৯২৯ ৮২.৭
বিশারকান্দি ৩১ ৫১১৭ ১০৭৪৮ ১০২৮৬ ৫৯.৭
সালিয়া বাকপুর ৬৩ ৩৭৭৫ ৯৪০৪ ১০১৮৮ ৭৮.৭
সৈয়দকাঠি ৭৩ ৬৭৩৭ ১১৫৭২ ১১৮০৮ ৫৭.০

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ দুটি সতীদাহের মঠ, বড়বনিয়া বাড়ীতে সাড়ে তিন মন ওজনের পিতলের মনসা বিগ্রহ, নরোত্তমপুরে দুশো বছরের পুরানো ৬ ফুট উঁচু বিগ্রহ।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের পাকবাহিনী এ উপজেলায় ব্যাপক গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নির্যাতন চালায়। গাভা গ্রামে পাকবাহিনী ২১২ জন লোককে হত্যা করে। বানারীপাড়া থানা, বানারীপাড়া বাজার, জম্বুদ্বীপ, আলতা প্রভৃতি স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে উপজেলায় ১টি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন বানারীপাড়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী নতুনমুখ (১৯৯০), অধ্যায় (২০০১), কালস্রোত (২০০০)।

বিশেষ বৈশিষ্ট্য  বিশারকান্দি বিলের পানিতে ভাসমান কচুরিপানার উপর সবজি চাষ।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৯৭, মন্দির ২৪, গির্জা ৩, তীর্থস্থান ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান; বানারীপাড়া জামে মসজিদ, বিনোদ বিহারী মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬৭.২%; পুরুষ ৬৭.৮%, মহিলা ৬৬.৭%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সরকারি ফজলুল হক কলেজ (১৯৪০), বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন (১৮৮৯), বানারীপাড়া মডেল ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন (১৮৮৯), গাভা হাইস্কুল (১৮৯৯), বানারীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৯), বাইশারী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০১), বাইশারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০১), খলিসাকোটা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৭), বলদিয়া মলুহার মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৫২), উত্তরকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৬৫), সৈয়দ বজলুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জসীম উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সালিয়া বাকপুর ফজলুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ওয়াজেদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৭, ক্লাব ৩০, নজরুল একাডেমী ১, সার্কাস দল ১, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ২, খেলার মাঠ ১০, নাট্যদল ২।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪২.৩২%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৩৬%, শিল্প ১.৩২%, ব্যবসা ২৭.১০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.০৮%, চাকরি ৯.২৭%, নির্মাণ ১.৫৯%, ধর্মীয় সেবা ০.৩২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.৬০% এবং অন্যান্য ১০.০৪%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬০.৬৬%, ভূমিহীন ২৯.৩৪%। শহরে ৪৮.২১% এবং গ্রামে ৬১.৯২% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, মরিচ, ডাল, কলাই, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, সরিষা।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, আমড়া, নারিকেল, পেয়ারা, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৭০, গবাদিপশু ২৫, হাঁস-মুরগি ১৩০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৬৪.০৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৬৫.৮২ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪২২.৯৫ কিমি; নৌপথ ৪১০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, ডালকল, আটাকল, বরফকল, স’মিল, বিড়িকারখানা, ব্যাট তৈরীর কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩০, মেলা ৪। বানারীপাড়া হাট, দাসের হাট, চৌমোহনা হাট, শেখের হাট, হক সাহেবের হাট, কাউয়ার হাট, রায়ের হাট, শেরে-বাংলা হাট, জিয়ার হাট এবং দশহরা মেলা ও সূর্য্যমনির মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, আমড়া, কলা, পেয়ারা, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৭.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৯.০%, ট্যাপ ০.৩% এবং অন্যান্য ০.৭%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৯২.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৭.০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ০.৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, হাসপাতাল ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৫, শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ক্লিনিক ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৫৮৫ সালের ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৭৮৭ সালের বন্যা এবং ১৮২২ ও ১৮৬৯ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে অনেক লোক প্রাণ হারায় এবং মৎস্য, গবাদিপশু ও ফসলের ক্ষতি হয়। ১৯১৯ সালের বন্যা এবং ১৯৬০ ও ১৯৬৫ সালের ঘূর্ণিঝড়ও ছিল ভয়াবহ। তাছাড়া ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় ও প্লাবনে (ঘন্টায় ১২০-১৪০ মাইল) উপজেলার অনেক লোক প্রাণ হারায় এবং মৎস্য, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এনজিও কেয়ার, ব্র্যাক, কারিতাস, আশা, প্রশিকা, আশার আলো।  [কাজী মিজানুর রহমান]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বানারীপাড়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।