বাংলাদেশ স্কাউটস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''বাংলাদেশ স্কাউটস''' বাংলাদেশের জাতীয় স্কাউটিং সংস্থা। ১৯৭২ সালের ৮-৯ এপ্রিল সারাদেশের স্কাউট নেতৃবৃন্দ ঢাকায় এক সভায় মিলিত হয়ে গঠন করেন বাংলাদেশ স্কাউট সমিতি। ঐ বছরের ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির ১১১ নং অধ্যাদেশ বলে উক্ত সমিতি সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। এর আগে প্রবীণ স্কাউটার সলিমুল্লাহ ফাহমীর নেতৃত্বে ২২মে ১৯৪৮ সালে ঢাকায় গঠিত হয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল স্কাউট এসোসিয়েশন। যাদের প্রচেষ্টায় এ অঞ্চলে স্কাউট কার্যক্রম ১৯৭১ সাল পর্যন্ত চলে আসছিল তাঁদের মধ্যে ছিলেন এ.এফ.এম আব্দুল হক ফরিদী, এইচ.জি.এস বিভার, ভি.এ আবাসী, ভি.সি প্রিন্স, আজীজ-উল হক, কমান্ড্যান্ট আব্দুর রশিদ, এম আব্দুল বারী এবং এম ওয়াজিদ আলী। বিশ্ব স্কাউট সংস্থা (WOSM) ১৯৭৪ সালের ১ জুন বাংলাদেশ স্কাউট সমিতিকে ১০৫ তম সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তবে ১৯৭৮ সালের ১৮ জুন পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল সভায় সমিতির নাম বদলে রাখা হয় বাংলাদেশ স্কাউটস। মেয়েদের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে জাতীয় কাউন্সিল ১৯৯৪ সালের ২৪ মার্চ একাদশ সভায় বিশ্ব স্কাউট সংস্থার অনুমোদনক্রমে গার্ল-ইন-স্কাউটিং চালু করে বাংলাদেশে।
'''বাংলাদেশ স্কাউটস''' বাংলাদেশের জাতীয় স্কাউটিং সংস্থা। ১৯৭২ সালের ৮-৯ এপ্রিল সারাদেশের স্কাউট নেতৃবৃন্দ ঢাকায় এক সভায় মিলিত হয়ে গঠন করেন বাংলাদেশ স্কাউট সমিতি। ঐ বছরের ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির ১১১ নং অধ্যাদেশ বলে উক্ত সমিতি সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। এর আগে প্রবীণ স্কাউটার সলিমুল্লাহ ফাহমীর নেতৃত্বে ২২মে ১৯৪৮ সালে ঢাকায় গঠিত হয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল স্কাউট এসোসিয়েশন। যাদের প্রচেষ্টায় এ অঞ্চলে স্কাউট কার্যক্রম ১৯৭১ সাল পর্যন্ত চলে আসছিল তাঁদের মধ্যে ছিলেন এ.এফ.এম আব্দুল হক ফরিদী, এইচ.জি.এস বিভার, ভি.এ আবাসী, ভি.সি প্রিন্স, আজীজ-উল হক, কমান্ড্যান্ট আব্দুর রশিদ, এম আব্দুল বারী এবং এম ওয়াজিদ আলী। বিশ্ব স্কাউট সংস্থা (WOSM) ১৯৭৪ সালের ১ জুন বাংলাদেশ স্কাউট সমিতিকে ১০৫ তম সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তবে ১৯৭৮ সালের ১৮ জুন পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল সভায় সমিতির নাম বদলে রাখা হয় বাংলাদেশ স্কাউটস। মেয়েদের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে জাতীয় কাউন্সিল ১৯৯৪ সালের ২৪ মার্চ একাদশ সভায় বিশ্ব স্কাউট সংস্থার অনুমোদনক্রমে গার্ল-ইন-স্কাউটিং চালু করে বাংলাদেশে।


[[Image:BangladeshScouts.jpg|thumb|400px|right|বাংলাদেশ স্কাউটস লোগো]]
বাংলাদেশ স্কাউটস কার্যক্রম শুরু করেছিলো মাত্র ৫৬,৩২৫ জন সদস্য নিয়ে। ১৯৭৮ সালে সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধির বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এ কর্মসূচির আওতায় সারা দেশে সকল স্তরের জন্য ট্রেনিং কোর্সসমূহ পরিচালনার মাধ্যমে ১৯৮৫ সালের মধ্যে এ সংখ্যা ৫ লাখে উন্নীত হয়। এরপর বাংলাদেশ স্কাউটস ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে গ্রহণ করে স্ট্রাটেজিক প্লা্যান- ২০১৩। এ প্ল্যানে স্কাউটদের শুধু সংখ্যাবৃদ্ধিই নয়, গুণগত মান অর্জনেরও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়। ৬টি অগ্রাধিকার ভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভলেন্টিয়ার লিডার ও স্কাউটারবৃন্দ সমন্বিতভাবে ২০১৩ সালের মধ্যে ১৫ লক্ষ স্কাউট তৈরির চেষ্টা করছেন। এর ফলশ্রুতিতে ২০১০ সালের মধ্যে স্কাউটের সংখ্যা ১০ লক্ষে পৌঁছেছে যা বাংলাদেশকে বিশ্ব স্কাউট সংস্থায় ৫ম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশ স্কাউটস অগ্রাধিকার কার্যক্রমগুলি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৪টি উচ্চপর্যায়ের জাতীয় কমিটি  গঠন করেছে যেগুলির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন বিশিষ্ট এভং অভিজ্ঞ স্কাউটারগণ।
বাংলাদেশ স্কাউটস কার্যক্রম শুরু করেছিলো মাত্র ৫৬,৩২৫ জন সদস্য নিয়ে। ১৯৭৮ সালে সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধির বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এ কর্মসূচির আওতায় সারা দেশে সকল স্তরের জন্য ট্রেনিং কোর্সসমূহ পরিচালনার মাধ্যমে ১৯৮৫ সালের মধ্যে এ সংখ্যা ৫ লাখে উন্নীত হয়। এরপর বাংলাদেশ স্কাউটস ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে গ্রহণ করে স্ট্রাটেজিক প্লা্যান- ২০১৩। এ প্ল্যানে স্কাউটদের শুধু সংখ্যাবৃদ্ধিই নয়, গুণগত মান অর্জনেরও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়। ৬টি অগ্রাধিকার ভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভলেন্টিয়ার লিডার ও স্কাউটারবৃন্দ সমন্বিতভাবে ২০১৩ সালের মধ্যে ১৫ লক্ষ স্কাউট তৈরির চেষ্টা করছেন। এর ফলশ্রুতিতে ২০১০ সালের মধ্যে স্কাউটের সংখ্যা ১০ লক্ষে পৌঁছেছে যা বাংলাদেশকে বিশ্ব স্কাউট সংস্থায় ৫ম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশ স্কাউটস অগ্রাধিকার কার্যক্রমগুলি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৪টি উচ্চপর্যায়ের জাতীয় কমিটি  গঠন করেছে যেগুলির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন বিশিষ্ট এভং অভিজ্ঞ স্কাউটারগণ।
[[Image:BangladeshScouts.jpg|thumb|400px|right|বাংলাদেশ স্কাউটস লোগো]]


বাংলাদেশ স্কাউটসের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পরিষদ হচ্ছে জাতীয় স্কাউট কাউন্সিল। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও চিফ স্কাউট এ কাউন্সিলের প্রধান। স্কাউট জাতীয় কাউন্সিলের সভা প্রতিবছর সদর দফতরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে প্রতি তৃতীয় বছরের সভায় প্রধান জাতীয় কমিশনার ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির অন্যান্য সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন।
বাংলাদেশ স্কাউটসের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পরিষদ হচ্ছে জাতীয় স্কাউট কাউন্সিল। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও চিফ স্কাউট এ কাউন্সিলের প্রধান। স্কাউট জাতীয় কাউন্সিলের সভা প্রতিবছর সদর দফতরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে প্রতি তৃতীয় বছরের সভায় প্রধান জাতীয় কমিশনার ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির অন্যান্য সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন।
২৪ নং লাইন: ২১ নং লাইন:
২০০৭ সালে স্কাউট আন্দোলনের শতবর্ষ পালন উপলক্ষে বিশ্ব স্কাউট সংস্থা ‘এক বিশ্ব এক প্রতিজ্ঞা’''' '''থিম নির্ধারণ করে যুক্তরাজ্যে বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরিসহ নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করে। বাংলাদেশ স্কাউটও যে সকল কর্মসুচি গ্রহণ করে তার মধ্যে; আন্তর্জাতিক শতবর্ষ কমডেক, জাম্বুরি অন দ্য ট্রেন, চতুর্থ এ.পি.আর এয়ার ইন্টারনেট জাম্বুরি, নবম জাতীয় রোভার মুট এবং দ্বাদশ মাল্টিপারপাস ওয়ার্কশপ উল্লেখযোগ্য।
২০০৭ সালে স্কাউট আন্দোলনের শতবর্ষ পালন উপলক্ষে বিশ্ব স্কাউট সংস্থা ‘এক বিশ্ব এক প্রতিজ্ঞা’''' '''থিম নির্ধারণ করে যুক্তরাজ্যে বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরিসহ নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করে। বাংলাদেশ স্কাউটও যে সকল কর্মসুচি গ্রহণ করে তার মধ্যে; আন্তর্জাতিক শতবর্ষ কমডেক, জাম্বুরি অন দ্য ট্রেন, চতুর্থ এ.পি.আর এয়ার ইন্টারনেট জাম্বুরি, নবম জাতীয় রোভার মুট এবং দ্বাদশ মাল্টিপারপাস ওয়ার্কশপ উল্লেখযোগ্য।


বিভিন্ন স্তরবিশিষ্ট ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে স্কাউটদেরকে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন সৎ, চরিত্রবান, কর্মোদ্যোগী সেবাপরায়ণ, সর্বোপরি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্কাউটস কাজ করে থাকে। বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও মূল্যবোধ অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতি গঠনে স্কাউট আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিহার্য।
বিভিন্ন স্তরবিশিষ্ট ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে স্কাউটদেরকে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন সৎ, চরিত্রবান, কর্মোদ্যোগী সেবাপরায়ণ, সর্বোপরি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্কাউটস কাজ করে থাকে। বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও মূল্যবোধ অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতি গঠনে স্কাউট আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিহার্য। [মো রমজুল হক]
 
[মো রমজুল হক]
 
[[en:Bangladesh Scouts]]
 
[[en:Bangladesh Scouts]]
 
[[en:Bangladesh Scouts]]
 
[[en:Bangladesh Scouts]]


[[en:Bangladesh Scouts]]
[[en:Bangladesh Scouts]]

১০:৩৩, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

বাংলাদেশ স্কাউটস বাংলাদেশের জাতীয় স্কাউটিং সংস্থা। ১৯৭২ সালের ৮-৯ এপ্রিল সারাদেশের স্কাউট নেতৃবৃন্দ ঢাকায় এক সভায় মিলিত হয়ে গঠন করেন বাংলাদেশ স্কাউট সমিতি। ঐ বছরের ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির ১১১ নং অধ্যাদেশ বলে উক্ত সমিতি সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। এর আগে প্রবীণ স্কাউটার সলিমুল্লাহ ফাহমীর নেতৃত্বে ২২মে ১৯৪৮ সালে ঢাকায় গঠিত হয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল স্কাউট এসোসিয়েশন। যাদের প্রচেষ্টায় এ অঞ্চলে স্কাউট কার্যক্রম ১৯৭১ সাল পর্যন্ত চলে আসছিল তাঁদের মধ্যে ছিলেন এ.এফ.এম আব্দুল হক ফরিদী, এইচ.জি.এস বিভার, ভি.এ আবাসী, ভি.সি প্রিন্স, আজীজ-উল হক, কমান্ড্যান্ট আব্দুর রশিদ, এম আব্দুল বারী এবং এম ওয়াজিদ আলী। বিশ্ব স্কাউট সংস্থা (WOSM) ১৯৭৪ সালের ১ জুন বাংলাদেশ স্কাউট সমিতিকে ১০৫ তম সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তবে ১৯৭৮ সালের ১৮ জুন পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল সভায় সমিতির নাম বদলে রাখা হয় বাংলাদেশ স্কাউটস। মেয়েদের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে জাতীয় কাউন্সিল ১৯৯৪ সালের ২৪ মার্চ একাদশ সভায় বিশ্ব স্কাউট সংস্থার অনুমোদনক্রমে গার্ল-ইন-স্কাউটিং চালু করে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশ স্কাউটস লোগো

বাংলাদেশ স্কাউটস কার্যক্রম শুরু করেছিলো মাত্র ৫৬,৩২৫ জন সদস্য নিয়ে। ১৯৭৮ সালে সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধির বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এ কর্মসূচির আওতায় সারা দেশে সকল স্তরের জন্য ট্রেনিং কোর্সসমূহ পরিচালনার মাধ্যমে ১৯৮৫ সালের মধ্যে এ সংখ্যা ৫ লাখে উন্নীত হয়। এরপর বাংলাদেশ স্কাউটস ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে গ্রহণ করে স্ট্রাটেজিক প্লা্যান- ২০১৩। এ প্ল্যানে স্কাউটদের শুধু সংখ্যাবৃদ্ধিই নয়, গুণগত মান অর্জনেরও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়। ৬টি অগ্রাধিকার ভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভলেন্টিয়ার লিডার ও স্কাউটারবৃন্দ সমন্বিতভাবে ২০১৩ সালের মধ্যে ১৫ লক্ষ স্কাউট তৈরির চেষ্টা করছেন। এর ফলশ্রুতিতে ২০১০ সালের মধ্যে স্কাউটের সংখ্যা ১০ লক্ষে পৌঁছেছে যা বাংলাদেশকে বিশ্ব স্কাউট সংস্থায় ৫ম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশ স্কাউটস অগ্রাধিকার কার্যক্রমগুলি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৪টি উচ্চপর্যায়ের জাতীয় কমিটি  গঠন করেছে যেগুলির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন বিশিষ্ট এভং অভিজ্ঞ স্কাউটারগণ।

বাংলাদেশ স্কাউটসের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পরিষদ হচ্ছে জাতীয় স্কাউট কাউন্সিল। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও চিফ স্কাউট এ কাউন্সিলের প্রধান। স্কাউট জাতীয় কাউন্সিলের সভা প্রতিবছর সদর দফতরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে প্রতি তৃতীয় বছরের সভায় প্রধান জাতীয় কমিশনার ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির অন্যান্য সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন।

প্রধান জাতীয় কমিশনার হচ্ছেন বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রধান নির্বাহী। এ পর্যন্ত ৫ জন এ পদে নির্বাচিত হয়েছেন- পিয়ার আলী নাজির ছিলেন প্রথম জাতীয় কমিশনার। সর্বশেষ প্রধান জাতীয় কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোঃ আবুল কালাম আজাদ। প্রধান জাতীয় কামিশনারকে সহায়তা দেয়ার জন্য রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী, ১৫ জন জাতীয় কমিশনার এবং ৩০ জন উপকমিশনার। দেশব্যাপি স্কাউট আন্দোলনের সার্বিক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে পেশাগতভাবে প্রশিক্ষিত ৫০ জন সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা (ফিল্ড কমিশনার) আছেন। বাংলাদেশ স্কাউটসের যাবতীয় কার্যক্রম, যথা: নীতিনির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, মনিটরিং, মূল্যায়ন, যোগযোগ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইত্যাদি কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় অবস্থিত জাতীয় সদর দফতর, স্কাউট ভবন থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে। অবশ্য দেশব্যাপি সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক অবকাঠামো সুষ্ঠু পরিচালনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্কাউসকে ১২টি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা ও সিলেটে ৬টি, শিক্ষা বোর্ডভিত্তিক কুমিল্লা ও দিনাজপুরে ২টি এবং রোভার, রেলওয়ে, নৌ এবং এয়ার  এই বিশেষ অঞ্চল ৪টির দফতর ঢাকায় অবস্থিত। তিন ধরনের উৎস থেকে বাংলাদেশ স্কাউটসের বাজেট বরাদ্দ আসে। ঢাকায় সদর দফতর ১৫ তলা ভবনের (১৯৮২ থেকে) ভাড়া এবং মৌচাক জাতীয় ট্রেনিং সেন্টারের আয় থেকে আসে ৫৪%, সরকারের অনুদান ৩৭% এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৯% আসে। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার কাব স্কাউট এবং স্কাউট সম্প্রসারণ প্রকল্পে যথেষ্ট অর্থনৈতিক সমর্থন দিয়ে থাকে।

বাংলাদেশ স্কাউট আন্দোলন প্রধানত তিনটি শাখায় বিভক্ত। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬ থেকে ১০+ বয়সী শিশুদের কাব স্কাউট, স্কুল ও মাদ্রাসার ১১ থেকে ১৬+ বয়সী বালক-বালিকাদের স্কাউট এবং কলেজ বিশ্ববিদ্যলয়ের ১৭-২৫ বয়সী যুবক রোভার স্কাউট বলে। তবে রেলওয়ে, নৌ এবং এয়ার অঞ্চলের চাকরিজীবিদের জন্য ৩০ বছর পর্যন্ত বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে মুক্তদল। উৎসাহী বয়স্করা বিভিন্ন ট্রেনিং নিয়ে ইউনিট লিডার বা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষকমন্ডলী বাংলাদেশ স্কাউটসের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট রয়েছেন।

স্কাউটিং-এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে শিশু, কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সামাজিক গুণাবলী উন্নয়নের মাধ্যমে তাদেরকে পরিবার, সমাজ দেশ তথা বিশ্বের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। স্কাউট কার্যক্রমে কতকগুলি বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়: হাতেকলমে কাজশেখা;  ছোট-দল পদ্ধতিতে কাজ করা; ব্যাজ পদ্ধতির মাধ্যমে কাজের স্বীকৃতি প্রদান; মুক্তাঙ্গনে কাজ সম্পদান, তিন আঙ্গুলে সালাম ও ডান হাত করমর্দন, স্কাউট পোশাক, স্কার্ফ ও ব্যাজ পরিধান এবং সর্বদা স্কাউট আইন ও প্রতিজ্ঞা মেনে চলা। স্কাউটদেরকে আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা লর্ড ব্যাডেন পাওয়েলের নির্দেশিত নিয়ম অনুসারে অনুশীলন, প্রতিজ্ঞাপাঠ ও দীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে স্কাউট আন্দোলনে সদস্য হতে হয়। স্কাউটদের মটো বা মুলমন্ত্র হচ্ছে: কাব- যথাসাধ্য চেষ্ট করা; স্কাউট- সদা প্রস্ত্তত; এবং রোভার- সেবাদান। স্কাউট কার্যক্রমে রয়েছে: সাপ্তাহিক ক্লাশ, ক্যাম্প ও হাইকিং, কমডেকা এবং বড় সমাবেশ যথা ক্যাম্পুরি (কাবদের), জাম্বুরি (স্কাউটদের) ও মুট (রোভারদের) আয়োজন করা হয়ে থাকে জাতীয়, জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে (এগুলি আন্তর্জাতিকভাবে) বিশ্ব স্কাউট সংস্থাও করে থাকে।

এছাড়া বিভিন্ন সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বিভিন্ন গ্রুপ ও জেলা পর্যায়ে গ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে বৃক্ষরোপন, টিকাদান, স্যানিটেশন ও পরিবেশ সংরক্ষণ, জ্বালানি-সাশ্রয়ী চুলা, এবং বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় স্কাউটদের সেবাদান কর্মসূচি বাংলাদেশের মানুষ সর্বদাই শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।

স্কাউটদের এ সকল কার্যক্রম এবং বিভিন্ন ট্রেনিং এর জন্য বিভিন্ন ব্যাজ প্রদানের মাধ্যমে স্বীকৃতি দেয়া হয়। স্কাউটের তিনটি শাখার জন্য সর্বোচ্চ ব্যাজ হচ্ছে: শাপলা কাব, প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট এবং প্রেসিডেন্ট’স রোভার স্কাউট। অ্যাডাল্ট লিডারদের স্কাউটিং এ অবদান রাখার জন্য তাদেরকেও বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ হচ্ছে রৌপ্য ব্যাঘ্র এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হচ্ছে রৌপ্য ইলিশ। বিশ্ব স্কাউট সংস্থাও বিভিন্ন দেশের অসাধারণ স্কাউটারদের দিয়ে থাকে ব্রোঞ্জ উলফ ব্যাজ। তবে এ ব্যাজ খুব কম সংখ্যক স্কাউটই পেয়ে থাকেন। ১৯৩৫ সনের ২ আগস্ট লর্ড ব্যাডেন-পাওয়েলকে সর্বপ্রথম এই ব্যাজ প্রদান করা হয়েছিল।

স্কাউট কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ স্কাউটসের রয়েছে প্রায় ৩০টির মতো প্রকাশনা। এগুলি অবশ্য ব্যাডেন পাওয়েলের বিভিন্ন লেখার ওপর ভিত্তি করেই রচিত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: পি.আর.ও, কাবস্কাউট হ্যান্ডবুক, ট্রেনিং ম্যানুয়াল, প্রোগ্রাম বই, স্কাউট রেকর্ড, প্যাট্রল লিডার্স হ্যান্ডবুক এবং প্রোগ্রাম বুলেটিন ইত্যাদি। এছাড়া বাংলাদেশ স্কাউটস রোভার অঞ্চল বিপির লেখা রোভারিং টু সাকসেস বইটির অনুবাদসহ প্রায় ডজন খানেক বই প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ স্কাউটসের অগ্রদূত নামে একটি মাসিক পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে, যা সম্প্রতি ৫৪তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনে স্কাউটদের দ্বারা এবং স্কাউটদের জন্য অগ্রদূত নামে একটি অনুষ্ঠানও প্রতিমাসের ১ম ও ৩য় সোমবার বেলা ২:১৫মি নিয়মিত সম্প্রচারিত হচ্ছে।

২০০৭ সালে স্কাউট আন্দোলনের শতবর্ষ পালন উপলক্ষে বিশ্ব স্কাউট সংস্থা ‘এক বিশ্ব এক প্রতিজ্ঞা’ থিম নির্ধারণ করে যুক্তরাজ্যে বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরিসহ নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করে। বাংলাদেশ স্কাউটও যে সকল কর্মসুচি গ্রহণ করে তার মধ্যে; আন্তর্জাতিক শতবর্ষ কমডেক, জাম্বুরি অন দ্য ট্রেন, চতুর্থ এ.পি.আর এয়ার ইন্টারনেট জাম্বুরি, নবম জাতীয় রোভার মুট এবং দ্বাদশ মাল্টিপারপাস ওয়ার্কশপ উল্লেখযোগ্য।

বিভিন্ন স্তরবিশিষ্ট ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে স্কাউটদেরকে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন সৎ, চরিত্রবান, কর্মোদ্যোগী সেবাপরায়ণ, সর্বোপরি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্কাউটস কাজ করে থাকে। বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও মূল্যবোধ অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতি গঠনে স্কাউট আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিহার্য। [মো রমজুল হক]