বাংলাদেশ শিশু একাডেমী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
৪ নং লাইন: ৪ নং লাইন:
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫০.৫৩% অর্থাৎ প্রায় অর্ধেকই শিশু। এই শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই বাংলাদেশ শিশু একাডেমী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। প্রথমে এর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছিল সেগুনবাগিচায়, পরে ১৯৭৭ সালে এটি স্থানান্তরিত হয় পুরাতন হাইকোর্ট এলাকায়। প্রায় ৩.৬৯ একর ভূমির উপর চারটি ভবনে শিশু একাডেমীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ভবনসমূহ হচ্ছে- প্রশাসনিক ভবন, মিলনায়তন, যাদুঘর ও আর্ট গ্যালারি এবং প্রকাশনা ও লেকচার থিয়েটার ভবন।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫০.৫৩% অর্থাৎ প্রায় অর্ধেকই শিশু। এই শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই বাংলাদেশ শিশু একাডেমী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। প্রথমে এর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছিল সেগুনবাগিচায়, পরে ১৯৭৭ সালে এটি স্থানান্তরিত হয় পুরাতন হাইকোর্ট এলাকায়। প্রায় ৩.৬৯ একর ভূমির উপর চারটি ভবনে শিশু একাডেমীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ভবনসমূহ হচ্ছে- প্রশাসনিক ভবন, মিলনায়তন, যাদুঘর ও আর্ট গ্যালারি এবং প্রকাশনা ও লেকচার থিয়েটার ভবন।


[[Image:BagnladeshShishuAcademy.jpg|thumb|400px|right|বাংলাদেশ শিশু একাডেমী]]
শুরুতে একাডেমীর কার্যক্রম রাজধানী কেন্দ্রিক হলেও পরবর্তীকালে এর শাখা সারা দেশে এর শাখা বিস্তৃত হয়। তৃণমূল পর্যায়ে একাডেমীর কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হওয়ার প্রেক্ষিতে ১৯৮০-৮১ সালে তৎকালীন বৃহত্তর ২০টি জেলায় শিশু একাডেমীর শাখা স্থাপন করা হয়। ১৯৯৩-৯৫ সালে বাকি ৪৪টি জেলায় এবং ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে পরীক্ষামূলকভাবে ৬টি বিভাগের ৬ উপজেলায় শাখা স্থাপন করা হয়।
শুরুতে একাডেমীর কার্যক্রম রাজধানী কেন্দ্রিক হলেও পরবর্তীকালে এর শাখা সারা দেশে এর শাখা বিস্তৃত হয়। তৃণমূল পর্যায়ে একাডেমীর কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হওয়ার প্রেক্ষিতে ১৯৮০-৮১ সালে তৎকালীন বৃহত্তর ২০টি জেলায় শিশু একাডেমীর শাখা স্থাপন করা হয়। ১৯৯৩-৯৫ সালে বাকি ৪৪টি জেলায় এবং ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে পরীক্ষামূলকভাবে ৬টি বিভাগের ৬ উপজেলায় শাখা স্থাপন করা হয়।


১১ নং লাইন: ১২ নং লাইন:


বাংলাদেশ শিশু একাডেমী বছরব্যাপী যে সব কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা। ১৯৭৮ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার ৬২টি বিষয়ে উপজেলা, জেলা, আঞ্চলিক ও জাতীয় এ চারটি পর্যায়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতায় প্রতিবছর সারাদেশে প্রায় ৩ লাখ শিশু অংশগ্রহণ করে তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ লাভ করে।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমী বছরব্যাপী যে সব কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা। ১৯৭৮ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার ৬২টি বিষয়ে উপজেলা, জেলা, আঞ্চলিক ও জাতীয় এ চারটি পর্যায়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতায় প্রতিবছর সারাদেশে প্রায় ৩ লাখ শিশু অংশগ্রহণ করে তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ লাভ করে।
[[Image:BagnladeshShishuAcademy.jpg|thumb|400px|right|বাংলাদেশ শিশু একাডেমী]]


শিশু একাডেমীর দ্বিতীয় বৃহত্তম সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হচ্ছে মৌসুমী প্রতিযোগিতা। বর্ষার সময়ে শিশুদের কর্মব্যস্ত রাখার উদ্দেশ্যে এবং শিশুদের মধ্যে দলগত সমঝোতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ প্রতিযোগিতার প্রবর্তন করা হয়। জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতার ন্যায় এই প্রতিযোগিতা ও উপজেলা পর্যায় থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন পর্যায় পার হয়ে ঢাকার চূড়ান্ত পর্যায়ে জাতীয় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতার বিষয় তিনটি: বিতর্ক, জারিগান এবং জ্ঞান-জিজ্ঞাসা।
শিশু একাডেমীর দ্বিতীয় বৃহত্তম সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হচ্ছে মৌসুমী প্রতিযোগিতা। বর্ষার সময়ে শিশুদের কর্মব্যস্ত রাখার উদ্দেশ্যে এবং শিশুদের মধ্যে দলগত সমঝোতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ প্রতিযোগিতার প্রবর্তন করা হয়। জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতার ন্যায় এই প্রতিযোগিতা ও উপজেলা পর্যায় থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন পর্যায় পার হয়ে ঢাকার চূড়ান্ত পর্যায়ে জাতীয় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতার বিষয় তিনটি: বিতর্ক, জারিগান এবং জ্ঞান-জিজ্ঞাসা।
৩২ নং লাইন: ২৯ নং লাইন:
জাতিসংঘ ঘোষিত ৫৪টি ধারা সংবলিত শিশু অধিকার সনদ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যেও বাংলাদেশ শিশু একাডেমী কাজ করে থাকে। বিভিন্ন আলোচনা সভা, স্মরণিকা ও পোস্টার প্রকাশসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একাডেমী এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে। এছাড়া শিশু একাডেমীর তত্ত্বাবধানে বর্তমানে দুইটি প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। এগুলো হলো: ‘শিশুর বিকাশে প্রারম্ভিক শিক্ষা প্রকল্প’ এবং ‘সিসিমপুর আউটরিচ প্রকল্প’।  [রেজিনা আক্তার]
জাতিসংঘ ঘোষিত ৫৪টি ধারা সংবলিত শিশু অধিকার সনদ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যেও বাংলাদেশ শিশু একাডেমী কাজ করে থাকে। বিভিন্ন আলোচনা সভা, স্মরণিকা ও পোস্টার প্রকাশসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একাডেমী এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে। এছাড়া শিশু একাডেমীর তত্ত্বাবধানে বর্তমানে দুইটি প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। এগুলো হলো: ‘শিশুর বিকাশে প্রারম্ভিক শিক্ষা প্রকল্প’ এবং ‘সিসিমপুর আউটরিচ প্রকল্প’।  [রেজিনা আক্তার]


[[en:Bangladesh Shishu Academy]]
[[en:Bangladesh Shishu Academy]]
[[en:Bangladesh Shishu Academy]]
[[en:Bangladesh Shishu Academy]]


[[en:Bangladesh Shishu Academy]]
[[en:Bangladesh Shishu Academy]]

১০:০৮, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

বাংলাদেশ শিশু একাডেমী  মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, যার উদ্দেশ্য দেশের শিশুদের শারীরিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক এবং সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে সহায়তা করা। ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশ বলে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে সারা দেশে একাডেমীর ৭০টি শাখা রয়েছে। ঢাকার পুরাতন হাইকোর্ট এলাকায় এর সদর দপ্তর অবস্থিত।

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫০.৫৩% অর্থাৎ প্রায় অর্ধেকই শিশু। এই শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই বাংলাদেশ শিশু একাডেমী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। প্রথমে এর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছিল সেগুনবাগিচায়, পরে ১৯৭৭ সালে এটি স্থানান্তরিত হয় পুরাতন হাইকোর্ট এলাকায়। প্রায় ৩.৬৯ একর ভূমির উপর চারটি ভবনে শিশু একাডেমীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ভবনসমূহ হচ্ছে- প্রশাসনিক ভবন, মিলনায়তন, যাদুঘর ও আর্ট গ্যালারি এবং প্রকাশনা ও লেকচার থিয়েটার ভবন।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমী

শুরুতে একাডেমীর কার্যক্রম রাজধানী কেন্দ্রিক হলেও পরবর্তীকালে এর শাখা সারা দেশে এর শাখা বিস্তৃত হয়। তৃণমূল পর্যায়ে একাডেমীর কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হওয়ার প্রেক্ষিতে ১৯৮০-৮১ সালে তৎকালীন বৃহত্তর ২০টি জেলায় শিশু একাডেমীর শাখা স্থাপন করা হয়। ১৯৯৩-৯৫ সালে বাকি ৪৪টি জেলায় এবং ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে পরীক্ষামূলকভাবে ৬টি বিভাগের ৬ উপজেলায় শাখা স্থাপন করা হয়।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর কার্যক্রম পরিচালিত হয় ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট-এর মাধ্যমে। পরিচালক এই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রধান। একাডেমীর বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য মোট ছয়টি বিভাগ রয়েছে। এগুলি হলো: প্রশাসন, প্রকাশনা, সাংস্কৃতিক, জাদুঘর, গ্রন্থাগার ও হিসাব বিভাগ। একাডেমীর মূল কর্মকান্ড পরিচালিত হয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে। সারা দেশের জেলা ও উপজেলা শাখাগুলি এ কর্মসূচি অনুসরণ করে। একাডেমীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বর্তমানে ২০ জন কর্মকর্তা ও ৫৬ জন কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। ঢাকার বাইরের জেলা শাখাগুলির প্রত্যেকটিতে রয়েছেন একজন করে কর্মকর্তা ও চারজন করে কর্মচারী, আর ছয়টি উপজেলা শাখার প্রত্যেকটিতে একজন করে কর্মকর্তা ও দুজন করে কর্মচারী। জেলা শাখাগুলির সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি পরিচালনা কমিটি রয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় শিশু একাডেমীর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে স্থানীয় কমিটি রয়েছে।

একাডেমীর কার্যক্রমের পরিধি নির্ধারণের জন্য ১৯৮৩ সালে একটি কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটির সুপারিশ অনুসারে বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর মূল দায়িত্বসমূহ হল: ১. শিশুদের উপযোগী বিভিন্ন বই, মাসিক পত্রিকা কোষগ্রন্থ ইত্যাদি প্রকাশনা, ২. শিশুদের পাঠের সুবিধা সৃষ্টি এবং পাঠাভ্যাস গড়তে বিভিন্ন শিক্ষামূলক কর্মসূচি যেমন কুইজ প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা ইত্যাদি আয়োজন, ৩. প্রতিবছর শিশুদের জন্য জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা, মৌসুমী প্রতিযোগিতা এবং আনন্দমেলার আয়োজন, ৪. বাংলাদেশের শিশুদের আন্তর্জাতিক চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি, ৫. শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণ, ৬. বিভিন্ন দেশে শিশু সাংস্কৃতিক দল প্রেরণ, ৭. বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং বিভিন্ন দেশের ভৌগোলিক তথ্যসমৃদ্ধ শিশু জাদুঘর পরিচালনা, ৮. জাতীয়, আন্তর্জাতিক এবং ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসসহ রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তী এবং বিভিন্ন সামাজিক ও ঐতিহ্যগত আচার অনুষ্ঠান উদযাপন এবং ৯. শিশুদের জন্য বিভিন্ন বিষয়ে সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমী বছরব্যাপী যে সব কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা। ১৯৭৮ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার ৬২টি বিষয়ে উপজেলা, জেলা, আঞ্চলিক ও জাতীয় এ চারটি পর্যায়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতায় প্রতিবছর সারাদেশে প্রায় ৩ লাখ শিশু অংশগ্রহণ করে তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ লাভ করে।

শিশু একাডেমীর দ্বিতীয় বৃহত্তম সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হচ্ছে মৌসুমী প্রতিযোগিতা। বর্ষার সময়ে শিশুদের কর্মব্যস্ত রাখার উদ্দেশ্যে এবং শিশুদের মধ্যে দলগত সমঝোতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ প্রতিযোগিতার প্রবর্তন করা হয়। জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতার ন্যায় এই প্রতিযোগিতা ও উপজেলা পর্যায় থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন পর্যায় পার হয়ে ঢাকার চূড়ান্ত পর্যায়ে জাতীয় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতার বিষয় তিনটি: বিতর্ক, জারিগান এবং জ্ঞান-জিজ্ঞাসা।

শিশু আনন্দ মেলা হচ্ছে শিশু একাডেমীর আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান। শিশুদের তৈরি বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও হস্তশিল্প এই মেলায় প্রদর্শিত হয়। সপ্তাহব্যাপী এই মেলায় বিভিন্ন সংগঠনের শিশুরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকে। শিশু নাট্যচর্চায় দেশের বিভিন্ন শিশু সংগঠনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ মেলায় শিশু নাট্য প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৮০ সাল থেকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমীতে শিশুদের জন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা হয়। এসবের মধ্যে চিত্রাংকন, সঙ্গীত, নৃত্য, নাট্যকলা, আবৃত্তি, উচ্চারণ ও সরব পাঠ, তবলা, গিটার, স্পোকেন ইংলিশ ও কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। দরিদ্র শিশুদের জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশাপাশি শাখা কার্যালয়গুলিতেও এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু রয়েছে। শিশু একাডেমীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে শিশু চলচ্চিত্র নির্মাণ, দ্বি-বার্ষিক আন্তর্জাতিক শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা, শিশু সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দল বিদেশে প্রেরণ মেয়ে-শিশুদের জন্য বিশেষ কার্যক্রম, শিশুদের নির্বাচিত চিত্র সংরক্ষণ ও প্রদর্শনী, শিক্ষা সফর ও পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপন কর্মসূচি।  এছাড়াও একাডেমীর উদ্যোগে শিশু নামে একটি পত্রিকা এবং শিশুদের উপযোগী বই প্রকাশ করা হয়। একাডেমী এ পর্যন্ত  বিভিন্ন বিষয়ে ৫০১টি পুস্তক প্রকাশ করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শিশু বিশ্বকোষ ও ছোটদের বিজ্ঞানকোষ নামে দুটি কোষগ্রন্থ।

দেশের বিশিষ্ট লেখকদের মানসম্মত শিশুসাহিত্য রচনায় আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে বাংলা ১৩৯৬ সন (১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দ) থেকে প্রবর্তন করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ শিশু একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার’। একজন লেখককে তার সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের জন্য এই পুরস্কার প্রদান করা হয় এবং এর মূল্যমান হচ্ছে ২৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া একাডেমী অগ্রণী ব্যাংকের অর্থানুকূল্যে প্রতি বছরে ‘অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য ও শিশু নাট্য পুরস্কার’ প্রদান করে থাকে। ১৯৮১ সাল থেকে প্রতিবছর বুক ইলাস্ট্রেশনসহ ৭টি বিভাগে বছরের সেরা বইয়ের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর কেন্দ্রীয় অফিসসহ সকল শাখা অফিসসমূহে শিশু গ্রন্থাগার রয়েছে। এতে শিশুদের উপযোগী দেশি ও বিদেশি বই রয়েছে। গ্রন্থাগারে এসে শিশু/কিশোররা ও শিশু বিষয়ক গবেষকগণ বই ও পত্র-পত্রিকা পড়তে পারে ও নিয়মিত সদস্যরা বাড়িতে বই নিয়ে যেতে পারে। ৫-১৬ বছর বয়সের যে কোন শিশু/কিশোর এই গ্রন্থাগারের সদস্য হতে পারে। একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জোবেদা খানমের স্মৃতি রক্ষার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় অফিসের গ্রন্থাগারের নাম রাখা হয়েছে ‘জোবেদা খানম শিশু গ্রন্থাগার’। শিশুদের মধ্যে পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি ও গ্রন্থাগারের প্রতি আগ্রহী করে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে গ্রন্থাগার ভিত্তিক বিভিন্ন প্রকার শিক্ষামূলক কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে শিশুদের সচেতন করা ও জ্ঞানদানের উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা হয়েছে ‘শিশু জাদুঘর’। একাডেমীর কেন্দ্রীয় অফিসের শিশু জাদুঘরে ৭২টি শো-কেসে ত্রিমাত্রিক শিল্পকর্মের মাধ্যমে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় পর্যন্ত বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস শিশু-কিশোরদের উপযোগী করে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৬৫০ আসন বিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক মিলনায়তন রয়েছে। এ ছাড়াও ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানে নিহত কিশোর শহীদ মতিউরের স্মৃতি রক্ষার্থে একাডেমী প্রাঙ্গণে ‘মতিউর মঞ্চ’ নামে একটি মুক্ত মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন শিশু সংগঠন স্বল্পমূল্যে এই মঞ্চে তাদের অনুষ্ঠান পরিবেশন করে থাকে।

জাতিসংঘ ঘোষিত ৫৪টি ধারা সংবলিত শিশু অধিকার সনদ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যেও বাংলাদেশ শিশু একাডেমী কাজ করে থাকে। বিভিন্ন আলোচনা সভা, স্মরণিকা ও পোস্টার প্রকাশসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একাডেমী এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে। এছাড়া শিশু একাডেমীর তত্ত্বাবধানে বর্তমানে দুইটি প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। এগুলো হলো: ‘শিশুর বিকাশে প্রারম্ভিক শিক্ষা প্রকল্প’ এবং ‘সিসিমপুর আউটরিচ প্রকল্প’।  [রেজিনা আক্তার]