বাংলাদেশ ভূগোল পরিষদ

বাংলাদেশ ভূগোল পরিষদ (Bangladesh Geographical Society-BGS)  বাংলাদেশের ভূগোলবিদদের প্রাচীনতম পেশাগত প্রতিষ্ঠান। এটি একটি জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান। শুরুতে এই পরিষদের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান ভূগোল পরিষদ। প্রখ্যাত ইংরেজ ভূগোলবিদ স্যার ডাডলী স্ট্যাম্প ১৯৫৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই পরিষদের উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সঙ্গে সঙ্গে এর নতুন নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ ভূগোল পরিষদ। পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে ষান্মাসিক গবেষণা পত্রিকা Oriental Geographer-এর প্রকাশনা, একটি রেফারেন্স গ্রন্থাগার পরিচালনা এবং নিয়মিত জাতীয় ভৌগোলিক সম্মেলন অনুষ্ঠান করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগে এর সদর দপ্তর অবস্থিত। জন্মলগ্ন থেকেই এদেশের ভূগোল বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভৌগোলিক জ্ঞানভান্ডার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিষদ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। ভূগোল বিজ্ঞানের প্রসার ও সমৃদ্ধি সাধন এই পরিষদের প্রধান উদ্দেশ্য। এর ফলে বাংলাদেশ ভূগোল পরিষদ গবেষণা, আলোচনা সভা, বক্তৃতা, সম্মেলন, প্রদর্শনী, পর্যবেক্ষণ, প্রকাশনা প্রভৃতি কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে।

বর্তমানে পরিষদের সদস্যপদ চার ধরনের: দাতা সদস্য, সাম্মানিক আজীবন সদস্য, আজীবন সদস্য এবং সাধারণ সদস্য। এছাড়া দেশেবিদেশে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক সদস্য, যারা পরিষদের গবেষণা পত্রিকা Oriental Geographer-কে কেন্দ্র করে। ১৯৫৭ সাল থেকে এই পত্রিকা প্রতি জানুয়ারি ও জুলাই মাসে প্রকাশিত হয়। পৃথিবীর প্রায় ৫০টি দেশে এই পত্রিকা প্রেরণ করা হয়। এছাড়া পরিষদ অনিয়মিতভাবে বাংলাদেশের ওপর বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বাংলাদেশ ভূগোল পরিষদ এ পর্যন্ত পাঁচটি মনোগ্রাফ ও ছয়টি প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশ করেছে। পরিষদ দেশ ও বিদেশের খ্যাতনামা ভূগোলবিদ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের বক্তৃতা, সেমিনার ও ভৌগোলিক সম্মেলনেরও আয়োজন করে থাকে।

পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম প্রফেসর নাফিস আহমদের স্মরণে প্রতি বছর নিয়মিতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পর্বের (এম.এসসি) শ্রেষ্ঠ মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীকে পরিষদ নাফিস আহমদ মেমোরিয়াল এওয়ার্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। মরহুম ড. এএইচ রিজভীর স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান শ্রেণির শ্রেষ্ঠ ছাত্র/ছাত্রীকে রিজভী মেমোরিয়াল এওয়ার্ড দেওয়া হয়। পরিষদের সদস্য ও ছাত্র গবেষকদের আর্থিক সহযোগিতা এবং লাইব্রেরি সুবিধা প্রদান করা হয়, তবে কোন বেতনভুক গবেষক নেই। পরিষদের নিজস্ব একটি লাইব্রেরি আছে। এতে গবেষণামূলক গ্রন্থ এবং দেশ বিদেশের ভূগোল ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের জার্নাল সংরক্ষণ করা হয়। এই লাইব্রেরি পরিষদের সদস্যদের ব্যবহারের জন্য কর্মদিবসগুলোতে খোলা থাকে। অনুমতি নিয়ে অন্যরাও পরিষদের লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারে।

প্রধানত সদস্যদের চাঁদা ও Oriental Geographer বিক্রয়ের মাধ্যমেই পরিষদের তহবিল গঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু নিয়মিত বার্ষিক অনুদান, সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অনিয়মিত অনুদান এবং অন্যান্য উৎস থেকেও পরিষদ অর্থ সংস্থান করে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশ ভূগোল পরিষদ ছাড়াও বাংলাদেশ জাতীয় ভূগোল সমিতি (BNGA) নামে আরও একটি ভৌগোলিক সমিতি গড়ে উঠেছে। [সুলতানা নাসরিন বেবী]