বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড প্রান্তিক তাঁতিদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেখাশুনার নিমিত্তে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাঁতশিল্পকে অধিক লাভজনক করার লক্ষ্যে একটি সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান তৈরি করার চিন্তা থেকে বাংলাদেশ সরকার  ৮ নভেম্বর  ১৯৭৫ তারিখে একটি পরীক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে। ১৯৭৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রণীত বাংলাদেশ সরকারের ৬৩ অধ্যাদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড নামে প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদিত হয় এবং ১৯৭৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়।

বাংলাদেশের তাঁতশিল্পকে আধুনিকীকরণ তথা নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্য নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এর প্রধান কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেসব স্থানে তাঁত সম্পর্কিত শিল্পকারখানা রয়েছে সেখানে এগুলির ব্যাপক উন্নয়নের জন্য অনেক সাব-অফিস স্থাপন করা হয়েছে। তাঁত বোর্ডের পরিচালনায় নিয়োজিতদের মধ্যে আছেন এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী একজন চেয়ারম্যান, একজন সচিব এবং চারজন নির্বাহী সদস্যসহ মোট ছয়জন কর্মকর্তা। এরা বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে ডেপুটেশনে আসেন এবং এদের মেয়াদ সরকারের পরবর্তী আদেশ পর্যন্ত বহাল থাকে। অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী সরাসরি সরকার কর্তৃক স্থায়িভাবে নিয়োজিত হন। একইসঙ্গে বোর্ডে বাংলাদেশ সমবায় সমিতিসমূহের মুখ্য নিবন্ধক, বাংলাদেশ টেক্সটাইল কর্পোরেশন-এর চেয়ারম্যান ও পরিচালক, বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং সেকশন থেকে একজন প্রতিনিধিসহ মোট পাঁচজন খন্ডকালীন সদস্য নিয়োজিত আছেন।

এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের তাঁতশিল্পের উন্নয়নের গতিবিধি নির্ধারণের জন্য দেশের সমগ্র তাঁতশিল্পের ওপর জরিপ করে এবং এর ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিদ্ধান্ত প্রদান করে। প্রতিবছর এ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সমগ্র তাঁতশিল্পের উন্নতি-অবনতির উপর একটি পরিসংখ্যান তৈরি করা হয় যার ভিত্তিতে এর বিভিন্ন সমস্যার দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হয়। তাঁত সম্পর্কীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সঠিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে নতুন কিছু আবিষ্কার করাও এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। তাছাড়া তাঁত বোর্ডের একটি উচ্চাগ্রাধিকার ক্ষেত্র হচ্ছে একটি তাঁতশিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক পর্যায়ে এর উৎপাদিত যাবতীয় তাঁতজাত দ্রব্য বিপণনের ব্যবস্থা করা। তাঁতশিল্পের বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে এ প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে, যাতে করে নতুন তৈরি পণ্য সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করা যায়। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে তাঁতিদের সহযোগিতার পাশাপাশি তাদের কাছে খুব কম মূল্যে তাঁত সরঞ্জামাদি (সুতা, মেশিনারি ইত্যাদি) বিক্রয় করে তাঁতশিল্প উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাঁতশিল্পের ব্যবহারযোগ্য নয় এমন ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ, ডাইস, কেমিক্যালস ও বিভিন্ন আনুষঙ্গিক উপকরণ নতুন করে ব্যবহারোপযোগী করে তুলতে এ প্রতিষ্ঠানটি যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। এছাড়া এ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কুটিরশিল্প মেলার ব্যবস্থা করে তাঁতিদের উৎসাহিত করা হয়।

দেশের প্রায় পনেরো লক্ষ তাঁতি এবং তাঁত বোর্ড বাংলাদেশের তাঁতশিল্প বিকাশে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। এ শিল্পটি দেশের বস্ত্র উৎপাদনের প্রায় ৬৩% যোগান দিচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ তাঁতশিল্প বোর্ড তাঁতিদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচিকে ব্যাপকভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। তাঁত বোর্ডের যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে সেগুলির মধ্যে আছে সার্ভিসেস অ্যান্ড ফ্যাসিলিটি সেন্টার (এসএফসি),  নরসিংদীর ক্লথ প্রোসেসিং সেন্টার (সিপিসি), নরসিংদী ও বেড়ার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এবং একটি টেক্সটাইল অ্যান্ড ফ্যাসিলিটিজ সেন্টার (টিএফসি)। এছাড়া মীরপুর ও ঈশ্বরদীতে বেনারসি পল্লী স্থাপনের প্রকল্প বর্তমানে বিবেচনাধীন রয়েছে।  [মো তুহীন মোল্লা]