বাংলাদেশ জাতীয় ক্যাডেট কোর

বাংলাদেশ জাতীয় ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি)  যুব সমাজের নৈতিক উন্নতি সাধন এবং তাদের মধ্যে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে গঠিত একটি জাতীয় সংগঠন। এর মূলমন্ত্র হচ্ছে জ্ঞান, শৃঙ্খলা ও একতা।

১৯২৩ সালে প্রণীত ইন্ডিয়ান টেরিটোরিয়াল ফোর্সেস অ্যাক্ট এর অধীনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মূলত এই কোরের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯২৭ সালের নভেম্বর মাসে এর প্রথম অ্যাডজুটেন্ট ক্যাপ্টেন ই গ্রুম ১০০ জন ছাত্র ও ১৬ জন শিক্ষককে সামরিক প্রশিক্ষণ দেন। ১৯২৮ সালের জুন মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউনিভার্সিটি ট্রেনিং কোর স্থাপিত হয়। ১৯৪৩ সালে এ কোরের নাম পরিবর্তন করে ইউনিভার্সিটি অফিসার্স ট্রেনিং কোর করা হয়। ১৯৭১ সালে এই কোরের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর ইউনিভার্সিটি অফিসার্স ট্রেনিং কোর ছাড়াও কলেজের ছাত্রদের নিয়ে বাংলাদেশ ক্যাডেট কোর এবং জুনিয়র ছাত্রদের নিয়ে জুনিয়র ক্যাডেট কোর গঠিত হয়। ১৯৭৯ সালের ২৩ মার্চ এক সরকারি আদেশবলে ইউনিভার্সিটি অফিসার্স ট্রেনিং কোর, বাংলাদেশ ক্যাডেট কোর এবং জুনিয়র ক্যাডেট কোর একত্রিত করে বাংলাদেশ জাতীয় ক্যাডেট কোর গঠন করা হয়। বর্তমানে এর প্রধান কার্যালয় ঢাকার উত্তরা ৬ নং সেক্টরে অবস্থিত।

একজন পরিচালকের অধীনে ৮টি সেনা-রেজিমেন্ট, ১টি বিমান ও ১টি নৌ-রেজিমেন্ট নিয়ে জাতীয় ক্যাডেট কোর গঠিত। রেজিমেন্টগুলি হচ্ছে: রমনা রেজিমেন্ট (বৃহত্তর ঢাকা ও টাংগাইল জেলা); ময়নামতি রেজিমেন্ট (বৃহত্তর কুমিল্লা, নোয়াখালী ও সিলেট জেলা); কর্ণফুলি রেজিমেন্ট (বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা); সুন্দরবন রেজিমেন্ট (বৃহত্তর খুলনা ও বরিশাল জেলা); মহাস্থান রেজিমেন্ট (বৃহত্তর রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়া জেলা); জঙ্গলবাড়ি রেজিমেন্ট (বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা); তিস্তা রেজিমেন্ট (বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর জেলা); আমঝুপি রেজিমেন্ট (বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর ও ফরিদপুর জেলা); কপোতাক্ষ রেজিমেন্ট (বিমান) (ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, লালমনিরহাট ও শমসের নগর) এবং শেরে-বাংলা রেজিমেন্ট (নৌ) (ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী জেলা)।

দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সহায়ক শক্তি হিসেবে তরুণদের সামরিক প্রশিক্ষণ দান, বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য দ্বিতীয় সারির প্রতিরোধ বাহিনী গঠন এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য স্বেচ্ছাসেবী গড়ে তোলার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই জাতীয় ক্যাডেট কোর তার কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে: সামরিক প্রশিক্ষণ (রণকৌশল, মানচিত্র গঠন, সংগঠন ও প্রশাসন); ক্ষুদ্রাস্ত্র প্রশিক্ষণ ও ফায়ারিং; রক্তদান; বৃক্ষরোপণ; প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সাহায্য ও সহযোগিতা দান; বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্যের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা; নিরক্ষরতা দূরীকরণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক খেলাধুলা ও ট্রাফিক সপ্তাহে পুলিশ বাহিনীকে সহায়তা দান। জাতীয় ক্যাডেট কোরের একজন ক্যাডেট স্বেচ্ছাভিত্তিতে বিনা খরচে মাসব্যাপী বিজয় দিবস শিবির ও কেন্দ্রীয় বার্ষিক প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশগ্রহণ এবং সামরিক প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়ে থাকে। নিয়মিত ক্যাডেটগণকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমর বিজ্ঞান সার্টিফিকেট কোর্সে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয় এবং সার্টিফিকেট কোর্সে প্রাপ্ত পাস নম্বরের অতিরিক্ত সর্বাধিক ২৫ নম্বর ডিগ্রির (পাস ও অনার্স) মোট নম্বরের সঙ্গে যোগ হয়। এতে পরীক্ষার ফলাফলে অগ্রগতির সুযোগ হয়। এছাড়া সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা এবং সরকারি চাকরিতে ক্যাডেটগণকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়। ক্যাডেটদের বিনোদনের জন্য রয়েছে শিক্ষা সফর, বনভোজন, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ। বাংলাদেশ জাতীয় ক্যাডেট কোর সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে এবং ভবিষ্যতে প্রতিটি উপজেলায় অন্তত ১টি কলেজ ও ১টি স্কুল এই সংগঠনের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। [মীর ফারজানা শারমীন]