বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৯৭৮ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, নিরাপত্তা এবং উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয়াবলির ওপর গবেষণা ও চর্চার বিকাশই এই প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য। জাতীয় ও আঞ্চলিক পরিপ্রেক্ষিতে সমসাময়িক আন্তর্জাতিক ও কৌশলগত বিষয়ে জ্ঞান ও চর্চার প্রসারে বিআইআইএসএস অবদান রাখে। ১৯৮৪ সালের XXVI অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বিআইআইএসএস তার উদ্দেশ্য, কার্যাবলী এবং প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত অবস্থান নির্দিষ্ট করে।

প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক তত্ত্বাবধান ও পরিচালনার দায়িত্ব একজন চেয়ারম্যানের (সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত) নেতৃত্বে একটি বোর্ড অব গভর্নরস-এর ওপর ন্যস্ত। এই বোর্ড একজন চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও অর্থমন্ত্রণালয় এবং তিন বাহিনীর প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ ও পেশাজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত। প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক বোর্ড অব গভর্নরস-এর সদস্য সচিব এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদেয় বার্ষিক অনুদানই প্রতিষ্ঠানের আয়ের প্রধান উৎস। প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থ, জার্নাল ইত্যাদি বিক্রয় এবং প্রকল্প সাহায্য থেকে সীমিত আয় হয়ে থাকে। বিআইআইএসএস বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে অনুদান গ্রহণ করে থাকে। সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন জ্ঞানকান্ডের পূর্ণকালীন গবেষকেরা এই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করছে। কর্নেল পদবির একজন আর্মড ফোর্সের অফিসার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট গবেষণাগুলি পরিচালনা করার দায়িত্বে আছেন। পাঁচটি ভাগে গবেষণা কাজ বিভাগে বিভক্ত: আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, কৌশলগত বিষয়াবলি, গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রপরিচালনা এবং অর্থনীতি ও পরিবেশ। গবেষণা সম্পর্কিত নীতিমালা নির্ধারণ এবং বিষয়সূচি নির্বাচন বোর্ডের পরামর্শ মোতাবেক প্রতিষ্ঠান নিজেই করে থাকে। কোন কোন গবেষণার ক্ষেত্র যেমন, পররাষ্ট্রনীতি, নিরাপত্তা ও কৌশলগত বিষয়াবলি, আঞ্চলিক, আন্তঃআঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, রাজনীতি, উন্নয়ন, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক, পরিবেশ, সম্পদ ও তার স্থায়িত্বের উন্নয়ন, শান্তি ও সংঘর্ষ প্রভৃতি অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে।

প্রতিষ্ঠানের গবেষণাকর্মে উল্লিখিত এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ বিশ্ব প্রেক্ষাপটে চর্চা করা হয়। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের গবেষণাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। অবশ্য যে সমস্ত আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে সে সমস্ত বিষয়ই কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে দেশের সুসম্পর্কও প্রতিষ্ঠানের গবেষণা কর্মে যথেষ্ট গুরুত্ব পায়।

প্রতিবছরই বিআইআইএসএস জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলির ওপর সেমিনার, কনফারেন্স, কর্মশালা প্রভৃতির আয়োজন করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি প্রায়ই দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে বক্তৃতা প্রদান বা আলোচনা সভায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ করে। বিআইআইএসএস-এর সেমিনার, কনফারেন্স, কর্মশালা প্রভৃতি জনগণের জন্য উন্মুক্ত এবং এ ধরনের অনুষ্ঠানে সাধারণত বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারক, সাংবাদিক এবং সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করে থাকেন।

বিআইআইএসএস বিশ্বের বিভিন্ন দেশের, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। সহযোগিতার প্রধান প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে প্রকাশনা বিনিময়, গবেষকদেরকে পারস্পরিক গবেষণা সুবিধা প্রদান, যৌথ গবেষণা বা সেমিনার, বিশেষজ্ঞ বিনিময়, সফর বিনিময় প্রভৃতি।

বিআইআইএসএস দুটি ত্রৈমাসিক, বিআইআইএসএস জার্নাল এবং বাংলাদেশ ফরেন পলিসি সার্ভে প্রকাশ করে থাকে। বিআইআইএসএস জার্নাল ১৯৮০ সাল থেকে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এছাড়াও বিআইআইএসএস পেপারস নামে একটি মনোগ্রাফ সিরিজও প্রকাশ করে। অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা হলো রিজিওনাল প্রেস ডাইজেস্ট অন নিউক্লিয়ার ইস্যু ইন সাউথ এশিয়া (আরপিডি)। বিআইআইএসএস নিজস্ব সেমিনারসমূহের কার্যবিবরণী এবং গবেষণা প্রকল্পের ফলাফল বই আকারে প্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরি এবং ডকুমেন্টেশন সেন্টারের সংগ্রহে ৫,০০০ বই, ১৫০টি আন্তর্জাতিক জার্নাল, ২০০ ডকুমেন্ট, প্রায় ৫০টি সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন আছে এবং এখানে প্রায় ১৫০টি বিষয়ের ওপর ক্লিপিং সুবিধা আছে।  [এ.কে.এম আবদুস সবুর]