বসতবাড়ির গাছগাছালি

বসতবাড়ির গাছগাছালি  বাড়ি বা বসতির পাশে লাগানো বা আপনা থেকে বেড়ে ওঠা গাছগাছালি। এই জাতীয় গাছগাছালির জন্যই বাংলার গ্রামের এই নিবিড় শ্যামলশোভা। গ্রামের অধিকাংশ বসতভিটেই সাধারণত স্বাভাবিক বন্যার পানির স্তর থেকে উঁচু এবং বাড়িঘর কাছাকাছি অবস্থিত। সব গ্রামই সবুজবৃক্ষে ঢাকা। অতিমাত্রায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের বসতভিটে বিভক্ত হয়ে পড়ছে; ভিটেপ্রতি জমির আয়তন দাঁড়িয়েছে প্রায় ০.১৬ হেক্টর।

বসতবাড়ির আশপাশে বৃক্ষরোপণ একটি সুপ্রাচীন প্রথা। বাংলাদেশের এই জাতীয় গাছগাছালির মধ্যে শনাক্তকৃত প্রজাতির মধ্যে রয়েছে প্রায় ১৫০ প্রজাতির বৃক্ষ, ৫৫ প্রজাতির গুল্ম এবং ১০০ প্রজাতির লতা ও ওষধি। এসব গাছগাছালি কাঠ, জ্বালানি, পশুখাদ্য, ফল ও পরিবারের ব্যবহার্য নানাসামগ্রী যোগায়।

বসতবাড়িতে নানা ধরনের গাছগাছালি লাগানো হয় এবং সেগুলি বাস্ত্তসংস্থানিক পরিবেশ, স্থানীয় চাহিদা, রেওয়াজ, বন্যার স্তর, জমির পরিমাণ ও প্রজাতির লভ্যতার নিরিখেই নির্বাচিত হয়। দক্ষিণাঞ্চলের এই জাতীয় সাধারণ গাছের মধ্যে রয়েছে নারিকেল, সুপারি, সফেদা, কদম, রেইনট্রি, দেবদারু, কালোজাম, মাদার, কুল, হিজল, কয়েক জাতের বাঁশ, ডুমুর ইত্যাদি। মধ্য বাংলাদেশে সাধারণত নারিকেল, আম, কাঁঠাল, কালোজাম, রেইনট্রি, খেজুর, তাল, সুপারি, পেয়ারা ও বাঁশ লাগানো হয়। বন্যামুক্ত অঞ্চলে আম, কাঁঠাল, কড়ই, লিচু, বেল, তেঁতুল, কামরাঙ্গা, জলপাই, লেবু, কলা, পেয়ারা, পেঁপে ও কয়েক প্রজাতির বাঁশেরই প্রাধান্য। বসতবাড়ির আশপাশে আপনা থেকে জন্মানো গাছগাছালিও সংসারের নানা কাজে লাগে। এগুলি হলো হিজল, বাবলা, ডুমুর, শিমুল, বেত, মুর্তা, গাব, জাম্বুরা, ডেউয়া, ছাতিম, খেজুর ও কুল।

গ্রামীণ বসতবাড়ির আশপাশে বৃক্ষ ছাড়াও বহু জাতের লতাগুল্ম দেখা যায়। সেগুলি হলো বরবটি, শসা, লাউ-কুমড়া ও পুঁইশাক। অন্যান্যের মধ্যে আছে কচু, মরিচ, টমেটো, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, তুলসী, হলদি, আদা, বেগুন, মরিচ, লেবু, ঢেঁড়স ও নানা জাতের ডাঁটা। বসতবাড়ির আঙিনার বাগানে কিছু ফুলগাছও থাকে কলাবতী, হাসনা হেনা, গন্ধরাজ, জবা, জুঁই, রঙ্গন, শিউলি, বেলী, দোলনচাঁপা, রাধাচূড়া, বাগানবিলাস, পাতাবাহার, স্বর্ণলতা, কামিনী ও মধুমালতি।

বসতবাড়ির গাছগাছালিই প্রায় সব ধরনের কাঠের ৭০% চাহিদা মেটায়। এই জমির ২০% জুড়ে থাকে কলা ও বাঁশ। বিশেষ বাছবিচার ছাড়াই গাছ লাগানো বহুকালের রেওয়াজ হলেও সম্প্রতি বহুকাজে ব্যবহার্য উন্নতমানের বিদেশী প্রজাতির প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। সেগুলির মধ্যে মেহগনি, শিশু, মিনজিরি ও লম্বু উল্লেখযোগ্য।  [মোস্তফা কামাল পাশা]