বরুড়া উপজেলা

বরুড়া উপজেলা (কুমিল্লা জেলা) আয়তন: ২৪১.৬৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°১৪´ থেকে ২৩°৩৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৬´ থেকে ৯১°০৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কুমিল্লা আদর্শ সদর ও চান্দিনা উপজেলা, দক্ষিণে লাকসাম ও শাহরাস্তি উপজেলা, পূর্বে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও লাকসাম উপজেলা, পশ্চিমে চান্দিনা ও কচুয়া (চাঁদপুর) উপজেলা। উপজেলার পূর্বাংশে রয়েছে লালমাই পাহাড়ের অংশবিশেষ।

জনসংখ্যা ৪০৫১১৮; পুরুষ ১৯০৩০৯, মহিলা ২১৪৮০৯। মুসলিম ৩৭৬৭৫৫, হিন্দু ২৭৯৭৭, বৌদ্ধ ৩৭৯, খ্রিস্টান ৪ এবং অন্যান্য ৩।

জলাশয় কার্জন খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন বরুড়া থানা গঠিত হয় ১৯৪৮ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। ১৯৯৫ সালে এটিকে পৌরসভায় রূপান্তর করা হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৪ ২১৩ ৩১৪ ৪৯১২৬ ৩৫৫৯৯২ ১৬৭৬ ৫২.৮ ৫২.০
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২৩.১৩ ২৬ ৪৯১২৬ ২১২৪ ৫২.৮
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আগানগর ১৮ ৪১০৪ ১১৩৭৮ ১৩০২৩ ৪৮.৪
আড্ডা ১১ ৪১৪৮ ১১৯১৪ ১৪৩৩২ ৫৮.৩
আদ্রা ১২ ৩৯০১ ১১৫৭১ ১৩৪৫০ ৫৭.১
খোশবাস (উঃ) ৬৩ ৩১৪১ ১৫৫০৯ ১৭০৭২ ৪৯.০
খোশবাস (দঃ) ৬৯ ৩৪৯৯ ১০৯০৩ ১২২০৯ ৪৮.৬
গালিমপুর ৪৪ ৮৪৬৪ ২২০৭৫ ২৫১১১ ৫৪.৪
চিতড্ডা ৫০ ৩৬৫৭ ৮৮৫৭ ১০২৩৩ ৪৩.৫
ঝলম ৫৬ ৩৩১৬ ১২২০৪ ১৪৩৫০ ৫০.২
দেওড়া ৩৭ ২১২৫ ৬০৮৪ ৬৫৮৫ ৫০.২
উত্তর পয়ালগাছা ৭৫ ৪১০২ ১১৫০৯ ১৩০৯৬ ৫৭.৩
ভবানীপুর ২৫ ৩৪০৬ ১১৬১০ ১২৯২৯ ৫১.১
লক্ষ্মীপুর ৮২ ৩৩২০ ১০২৩৮ ১২০২০ ৫৪.৩
শিলমুড়ী (উঃ) ৮৮ ২৬০৫ ৯৩৪৯ ১০৫০১ ৫১.৭
শিলমুড়ী (দঃ) ৯৪ ৪২২১ ১২৭৯০ ১৫০৯০ ৪৯.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ আদিনামুড়ার মসজিদ ও মাযার, চন্ডীমাতার মন্দির (চন্ডীমুড়ার বাজার সংলগ্ন লালমাই পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত), মইর দীঘি (বাঁশপুর গ্রাম)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২ সেপ্টেম্বর পাকবাহিনী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প আক্রমণ করে। একইদিন তারা গ্রামে প্রবেশ করে ৬ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে এবং অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। ১০ সেপ্টেম্বর পয়ালগাছার বটতলীতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘটিত লড়াইয়ে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা পয়ালগাছা, গালিমপুর ইউনিয়ন, নারায়ণপুর, বটতলীসহ উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেন। এসব যুদ্ধে ১০-১২ জন পাকসেনা নিহত হয়, ২৮ জন রাজাকার হতাহত হয় এবং ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ১টি গণকবর (বটতলীর অদূরে নারায়ণপুরে) রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন বরুড়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৫১২, মন্দির ১০০, গির্জা ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: বরুড়া জামে মসজিদ,গালিমপুর মসজিদ, আদিনামুড়া মসজিদ, মহেশপুরে আব্দুল হামিদ শাহের (র.) মাযার, বরুড়া কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান, চন্ডীমাতার মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫২.১%; পুরুষ ৫১.১%, মহিলা ৫২.৯%। কলেজ ৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৬, কারিগরি কলেজ ১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৪৯, মাদ্রাসা ২৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পয়ালগাছা পোস্ট-গ্রাজুয়েট কলেজ, বরুড়া শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজ (১৯৭২), গালিমপুর টিসি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), জয়নগর সিডিউল্ড কাস্ট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), বাতাইছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯), তলাগ্রাম তচলাহা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩১), বরুড়া হাজী নোয়াব আলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৭), পাঁচথুবি আহমদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৮৬০), বাতাইছড়ি দাখিল মাদ্রাসা (১৯১১), খলারপাড় ওয়াজেদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২১), রাজামারা ছুন্নিয়া মাদ্রাসা (১৯৪৪), বরুড়া আলিয়া মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: টেলিফোন, বরুড়া কণ্ঠ; অবলুপ্ত : আবাহন।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, ক্লাব ৩১, নাট্যদল ১, কমিউনিটি সেন্টার ১২।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৫.০৮%, অকৃষি শ্রমিক ২.৮৬%, ব্যবসা ১১.২১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৭৮%, চাকরি ৮.৯০%, নির্মাণ ১.৩৯%, ধর্মীয় সেবা ০.৪০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৭.১৭% এবং অন্যান্য ৯.২১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৬.৪৪%, ভূমিহীন ৩৩.৫৬%। শহরে ৬১.৬২% এবং গ্রামে ৬৭.০৭% পরিবারের কৃষিজমি আছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, গম, সরিষা, তিল, পান, পাট, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, তিসি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, নারিকেল, কুল, তরমুজ, তাল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৪৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১২ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫৪০ কিমি; রেলপথ ০.০৪ কিমি; হ্যালিপ্যাড ১, ব্রিজ ও কালভার্ট ৮৫০।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা রাইসমিল, ফ্লাওয়ারমিল, আইসমিল, ইটভাটা, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, রেশমশিল্প, পাটশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৪২, মেলা ৭। বরুড়া হাট, রামমোহন হাট, ঝলম হাট, ফকির হাট, খোশবাস হাট, মহেশপুর হাট, আদ্রা হাট, হরিপুর হাট, চন্ডীমুড়া হাট, আমড়াতলী হাট, পয়ালগাছা হাট, আগানগর হাট এবং চন্ডীমুড়া মেলা, সাহাপুর মেলা, লক্ষ্মীপুর মেলা, রামমোহন মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পান, ধান, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬১.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.১%, ট্যাপ ০.৯% এবং অন্যান্য ৪.০%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮৫.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন এবং ১১.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১৫, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫, পরিবার পরিকল্পনা উপকেন্দ্র ৫, কমিউনিটি ক্লিনিক ১৯, দাতব্য চিকিৎসালয় ৫, ক্লিনিক ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৭৪ সালের জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার প্রাণহানির ঘটনাসহ ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাছাড়া ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালের বন্যায় গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, কেয়ার।  [এ.কে.এম জসীম উদ্দীন]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বরুড়া  উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।