বখত বিনত মসজিদ

বখত বিনত মসজিদ পুরানো ঢাকার পূর্বাংশে অবস্থিত। নারিন্দার একটি পুরানো সেতুর (হায়াত বেপারীর সেতু নামে পরিচিত) পার্শ্ববর্তী এলাকায় এ স্থানটিকে চিহ্নিত করা হয়। মসজিদটি বর্গাকৃতির এবং এক গম্বুজবিশিষ্ট। এর অভ্যন্তরভাগের পরিমাপ প্রতিদিকে ৩.৬৬ মিটার। মসজিদটির ছাদ গোলাকার গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত এবং গম্বুজটি সরাসরি ছাদে স্থাপিত। মসজিদের দেওয়ালগুলি ১.৮৩ মিটার পুরু। এর পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে মোট তিনটি প্রবেশপথ আছে। পশ্চিম দেওয়ালের পেছনের দিকে একমাত্র মিহরাবটি অভিক্ষিপ্ত। আদিতে চার কোণে প্লাস্টার বিহীন বক্রাকৃতির ‘ব্যাটেলমেন্ট’-যুক্ত চারটি অষ্টভুজাকৃতির বুরুজ ছিল। বারবার সংস্কার এবং পরবর্তী সময়ে সংযোজনের ফলে এর বাইরের প্রকৃত অবয়ব সম্পূর্ণরূপে পাল্টে গেছে। পূর্বের বপ্রকে সোজা করা হয়েছে। মসজিদটির দক্ষিণ পার্শ্বে আর একটি এক গম্বুজবিশিষ্ট কক্ষ এবং পূর্ব ও দক্ষিণে একটি বারান্দা সংযুক্ত করা হয়েছে। বারবার পুরু আস্তরণের ফলে মসজিদের পোড়ামাটির অলঙ্করণ এখন আর পরিলক্ষিত হয় না।

শিলালিপি অনুসারে জনৈক মারহামাত এর কন্যা মোসাম্মৎ বখত বিনত ৮৬১ হিজরিতে (১৪৫৬-৫৭ খ্রি.) মসজিদটি নির্মাণ করেন। শিলালিপিতে কোন শাসকের নামের উল্লেখ নেই, তবে এতে উল্লিখিত তারিখ (৮৬১ হি.) থেকে বোঝা যায় যে, মসজিদটি সুলতান নাসিরুদ্দীন মাহমুদ শাহ এর শাসনামলে (১৪৩৬-১৪৫৯ খ্রি.) নির্মিত হয়েছিল। সম্ভবত ঢাকায় প্রাপ্ত শিলালিপিসমূহের মধ্যে বখত বিনত মসজিদের শিলালিপিটিই ছিল প্রথম মুসলিম শিলালিপি।

মসজিদটির সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হলেও এতে প্রাক-মুগল সালতানাতের বৈশিষ্ট্যসমূহ বেশ ভালভাবেই লক্ষ্য করা যায়। একথা সত্য যে, এলোমেলোভাবে পরিবর্তন সাধন করার কারণে সালতানাতের নিদর্শনগুলির পরিচয় ও সৌন্দর্য অনেকাংশে হারিয়ে গেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, বখত বিনত মসজিদটি তার উৎকর্ষ ও মৌলিকত্বের জন্য টিকে গিয়েছিল। এর স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্যাবলি যেমন, বক্রাকার কার্নিস ও শরছিদ্র (ব্যাটলমেন্ট) এখনও কিবলা দেওয়ালে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এ মসজিদের উত্তর ও পশ্চিম ফাসাদ এবং প্রথম গম্বুজটি মসজিদটির সুলতানি যুগের বৈশিষ্ট্যের পরিচয় বহন করে। সম্ভবত, বখত বিনত মসজিদটি ঢাকায় টিকে যাওয়া ইমারতগুলির মধ্যে সর্বপ্রাচীন।  [আয়শা বেগম]