বকশীগঞ্জ উপজেলা

বকশীগঞ্জ উপজেলা (জামালপুর জেলা)  আয়তন: ২৩৮.২৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°০৬´ থেকে ২৫°১৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪৭´ থেকে ৮৯°৫৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে ইসলামপুর উপজেলা, পূর্বে শ্রীবর্দী উপজেলা, পশ্চিমে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা। উপজেলার উত্তর-পূর্বাংশে গারো পাহাড় অবস্থিত।

জনসংখ্যা ২১৮৯৩০; পুরুষ ১০৭৭১৮, মহিলা ১১১২১২। মুসলিম ২১৫৭৮০, হিন্দু ২৫২৫, বৌদ্ধ ২, খ্রিস্টান ৫৭৬ এবং অন্যান্য ৪৭ । এ উপজেলায় গারো আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদ-নদী: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, দশানী ও জিরজিরা; সিংগিজান বিল, কুইয়া বিল ও জিরজিরা বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন বকশীগঞ্জ থানা গঠিত হয় ৩০ এপ্রিল ১৯৮২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ২৫ ১৯৯ ২৮৮৯০ ১৯০০৪০ ৯১৯ ৪৬.৬ ৩১.০
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১২.৬২ ২৮৮৯০ ২২৮৯ ৪৬.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ধনুয়া ৪৭ ৬৮৬৫ ৯২৭৮ ৯৭৯২ ৩৮.৭
নিলক্ষ্মিয়া ৭১ ৫২২৭ ১২৮৯৬ ১৩০৪১ ২৬.১
বকশীগঞ্জ ২৩ ৭৫৭২ ২৪৪৭১ ২৪৭৬৬ ৪১.৫
বগার চর ১১ ৮৮৫৪ ১৯৩২৮ ২০৬৩৮ ২৯.২
বাট্টাজোড় ৩৫ ৬৩০৬ ১৩৭৪৩ ১৪৬০৮ ৩৯.২
মেরুর চর ৫৯ ১০২৮১ ১৬২১৭ ১৬২৯১ ২৭.২
সাধুর পাড়া ৮৩ ১৩৭৮১ ১১৭৮৫ ১২০৭৬ ২৫.৪

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে বকশীগঞ্জের ভিতর দিয়ে বহুবার কামালপুর ঘাঁটি আক্রমণ করে। ৩১ জুলাই ১১ নং সেক্টরের ১ম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট ব্যাটেলিয়ন কমান্ডিং অফিসার মেজর মইনুল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা কামালপুর আক্রমণ করে এবং এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি হয়। যুদ্ধের সময় ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন মমতাজ, আহাদুজ্জামান, আবুল কালাম আজাদসহ ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৪ নভেম্বর গোলার আঘাতে কর্নেল আবু তাহের গুরুতরভাবে আহত হন। ৫ ডিসেম্বর বকশীগঞ্জ উপজেলা শত্রমুক্ত হয়। উপজেলার ৭টি স্থানে (বকশীগঞ্জ হাইস্কুল মাঠ, কামালপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কামালপুর বাজার, বাট্টাজোড়, ধনুয়া, বকশীগঞ্জ গো হাট, বকশীগঞ্জ বাজার) গণকবর রয়েছে। ১টি স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন বকশীগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৭৫, মন্দির ২, গির্জা ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: বকশীগঞ্জ মসজিদ, ধনুয়া মসজিদ, কামালপুর মসজিদ, বাট্টাজোড় মসজিদ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৩.১%; পুরুষ ৩৫.৫%, মহিলা ৩০.৮%। কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯০, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৫, টেক্সটাইল অ্যান্ড ভোকেশনাল স্কুল ১, মাদ্রাসা ২২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বকশীগঞ্জ সরকারি কে ইউ কলেজ (১৯৭২), সারমারা নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), বকশীগঞ্জ নুর মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৫), নিলক্ষ্মিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৫), ধনুয়া কালামপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৪), বাট্টাজোড় কে আর আই সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৩৭)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৩৫, সিনেমা হল ২, মহিলা সংগঠন ৫, খেলার মাঠ ২২।

দর্শণীয় স্থান  উপজেলার লাউচাপাড়ায় অবস্থিত পিকনিক স্পট, কামালপুরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে নির্মিত স্মৃতিসৌধ, গারো পাহাড়, নিলক্ষ্মিয়া ও চরকাউরিয়ায় নীলকুঠির ভগ্নাবশেষ, ধনুয়া কামালপুর স্থল বন্দর।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৯.০৬%, অকৃষি শ্রমিক ৩.০১%, শিল্প ০.৩৮%, ব্যবসা ১১.৯০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.২৭%, চাকরি ৩.৮২%, নির্মাণ ১.২২%, ধর্মীয় সেবা ০.২৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৩% এবং অন্যান্য ৭.৯৮%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫০.৩৪%, ভূমিহীন ৪৯.৬৬%। শহরে ২৬.৫৩% এবং গ্রামে ৫১.৬০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, তুলা, সরিষা, আখ, মিষ্টি আলু, ছোলা, মসুরি, হলুদ, পিঁয়াজ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি ভুট্টা, তিল, তিসি, কাউন, চীনা।

প্রধান ফল-ফলাদি তরমুজ, জাম, কলা, পেঁপে, আনারস।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৬৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৫৬ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, বাঁশ ও বেতশিল্প, নকশীকাঁথা।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১০, মেলা ৪। নঈম মিয়ার হাট, কামালপুর বাজার এবং সারমারার অষ্টমী মেলা, বাট্টাজোড়ের আখড়া মেলা ও কামালপুরের শাহ কামালের (রঃ) মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, পাট, সরিষা, তুলা, পিঁয়াজ, হলুদ, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৪.৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ পাথর, সাদামাটি।

পানীয় জলের উৎস নলকূপ ৯৭.৩%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ২.৬%। এ উপজেলার প্রায় ৭০% অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫৭.০% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৪.৩% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৮.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৭।

প্রাকৃতিক দূর্যোগ  ১৯৩০ সালের ভূমিকম্প এবং ১৯৩১ ও ১৯৮৮ সালের বন্যায় এ উপজেলার ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার, উন্নয়ন সংঘ। [সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বকশীগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।