ফুলতলা উপজেলা

ফুলতলা উপজেলা (খুলনা জেলা)  আয়তন: ৫৬.৮৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৫৪´ থেকে ২৩°০১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২৩´ থেকে ৮৯°২৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তর ও পশ্চিমে অভয়নগর উপজেলা, দক্ষিণে ডুমুরিয়া উপজেলা, পূর্বে খান জাহান আলী থানা ও অভয়নগর উপজেলা।

জলাশয় চিত্রা ও ভৈরব নদী এবং ডাকাতিয়া বিল উল্লেখযোগ্য।

জনসংখ্যা ৮৩৮৮১; পুরুষ ৪১৮৪৩, মহিলা ৪২০৩৮। মুসলিম ৭৪২৭১, হিন্দু ৯৫৯৫, খ্রিস্টান ১৩ এবং অন্যান্য ২।

প্রশাসন ফুলতলা উপজেলা গঠিত হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৮ ২৯ ৩১৫৮১ ৫২৩০০ ১৪৭৬ ৬২.৪ ৫৭.০
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৩.২১ ৩১৫৮১ ২৩৯১ ৬২.৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
জামিরা ৫৭ ৪৯৭১ ৯৪৭৫ ৯৬৬৩ ৫২.৭
দামোদর ৩৮ ৫২৭৮ ১৮৩৭৪ ১৮৩৬৮ ৬০.৫
ফুলতলা ৭৬ ৩৭৯০ ১৩৯৯৪ ১৪০০৭ ৬১.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে ফুলতলা উপজেলায় আসাদ এবং রফীক শহীদ হন।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকবাহিনী ফুলতলা প্রবেশ করলে ফুলতলা থানার পুলিশ ও জনতা মিলে তাদেরকে প্রতিহত কারার চেষ্টা করে। এতে থানার ওসি হাবিবুর রহমানসহ বেশসংখ্যক লোক শহীদ হন। ১২ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের ১টি কনভয় বাদামতলা চক্ষু হাসপাতালের কাছে পৌঁছলে পাকবাহিনীর এ্যাম্বুশে পড়ে কনভয়টি সম্পুর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এতে প্রায় ৪০০ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৩ ডিসেম্বর উপজেলা শত্রুমুক্ত হবার পর ফুলতলা বাজারে আনন্দ মিছিল চলাকালে ভারতীয় বিমানবাহিনী ভুল করে হামলা চালালে মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় ২০ জন নিহত হয়। উপজেলার চারাবাড়ির ঘাটে ১টি বধ্যভূমি রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন ফুলতলা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৮৬, মন্দির ৩৪। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ফুলতলা আহমদিয়া জামে মসজিদ, মসজি-ই-তাবেইন (জামিরা বাজার), মৌলভীবাড়ি মসজিদ, মোল্লাবাড়ি মসজিদ, মিছরি দেওয়ানের মাযার এবং কালাচাঁদ বিগ্রহের পুরাতন মন্দির, কার্তিকখোলা প্রাচীন মন্দির, রাধাগোবিন্দ মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৯.০%; পুরুষ ৬২.৮%, মহিলা ৫৫.৩%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৬, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১, কিন্ডার গার্টেন ৯, মাদ্রাসা ৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: ফুলতলা এম এম কলেজ (১৯৮০), ফুলতলা মহিলা কলেজ (১৯৯০), খানজাহান আলী আর্দশ কলেজ (১৯৯৪), ফুলতলা এম সি এস পি কলেজ (২০০১), ফুলতলা রি-ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৮), পয়গ্রাম কসবা মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৩), ফুলতলা আহমদিয়া মাদ্রাসা (১৮৯০), জামিরা বাজার পিপরাইল সিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২০)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  লাইব্রেরি ২, ক্লাব ১৯, নাট্যদল ৫, নাট্যমঞ্চ ২, মহিলা সংগঠন ৩, সিনেমা হল ২, জাদুঘর ১, পার্ক ১।

বিশেষ আকর্ষণ  দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স, বনবিলাস চিড়িয়াখানা ও পার্ক।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ১৯.১০%, অকৃষি শ্রমিক ৬.৭৭%, শিল্প ১৩.৪০%, ব্যবসা ২০.৯৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৬.৪৭%, চাকরি ২২.৬৪%, নির্মাণ ১.৯১%, ধর্মীয় সেবা ০.১৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৫১% এবং অন্যান্য ৮.১২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৬.৩৫%, ভূমিহীন ৫৩.৬৫%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, আলু, তামাক, আখ, ডাল, হলুদ, সরিষা, পান, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি বড়ান ধান।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, নারিকেল, সুপারি, সফেদা, কুল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৭২৭০ (চিংড়ি ঘেরসহ), হাঁস-মুরগির খামার ২১; নার্সারী ১০০০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৪৭ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪০ কিমি, কাঁচারাস্তা ১০০ কিমি; নদীপথ ৬ কিমি; রেলপথ ১৭ কিমি; রেলস্টেশন ৪।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা পাটকল ৩, লবনকল ২, ইস্পাতকল ১, ইটভাটা ৭।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৩, মেলা ৫। নাগরের হাট, ছাতিয়ানির হাট, ফুলতলা হাট, জামিরা বাজার, বেজের ডাঙ্গা বাজার, ইস্টার্ন বাজার, শিরোমণি বাজার এবং বেজের ডাঙ্গা মেলা, পীরের ওরশ মেলা, কার্তিক পূজার মেলা, দুর্গা পূজার মেলা ও বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য সূতা, চট, পান, সুপারি, নারিকেল, চিংড়ি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৮২.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.৯%, ট্যাপ ১.৪% এবং অন্যান্য ১.৭%। এ উপজেলায় অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৮.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৯.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ২, ক্লিনিক ৩, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, চক্ষু হাসপাতাল, পশু হাসপাতাল।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা।  [ফিরোজ আনছারী]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ফুলতলা উপজেলার সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।