ফারুকী, নবাব স্যার কে.জি.এম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Image:FaroquiNawabSirKGM.jpg|thumb|400px|নবাব স্যার কে.জি.এম ফারুকী]]
'''ফারুকী, নবাব স্যার কে.জি.এম '''(১৮৯১-১৯৮৪)  জমিদার, রাজনীতিক, সমাজসেবক। পুরো নাম কাজি গোলাম মহিউদ্দিন ফারুকী। তিনি নিজেকে খলিফা হযরত উমর ফারুকের (রা.) অধস্তন পুরুষ কাজী উমরশাহ ফারুকীর বংশধর বলে দাবি করতেন। কাজী উমরশাহ ফারুকী ছিলেন মুগল সম্রাট ফররুখ সিয়ারের অধীনে বাংলায় কর্মরত একজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা। তাঁকে ত্রিপুরা জেলার দুটি পরগনা জায়গির হিসেবে প্রদান করা হয়।
'''ফারুকী, নবাব স্যার কে.জি.এম '''(১৮৯১-১৯৮৪)  জমিদার, রাজনীতিক, সমাজসেবক। পুরো নাম কাজি গোলাম মহিউদ্দিন ফারুকী। তিনি নিজেকে খলিফা হযরত উমর ফারুকের (রা.) অধস্তন পুরুষ কাজী উমরশাহ ফারুকীর বংশধর বলে দাবি করতেন। কাজী উমরশাহ ফারুকী ছিলেন মুগল সম্রাট ফররুখ সিয়ারের অধীনে বাংলায় কর্মরত একজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা। তাঁকে ত্রিপুরা জেলার দুটি পরগনা জায়গির হিসেবে প্রদান করা হয়।


১৬ নং লাইন: ১৭ নং লাইন:
ফারুকী ১৯৩৪ সালে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৩৭ সালে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভায় সদস্য নির্বাচিত হন। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প ও সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে তিনি প্রায় দুই লক্ষ টাকা দান করেন। ফারুকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোর্টের সদস্য ছিলেন।
ফারুকী ১৯৩৪ সালে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৩৭ সালে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভায় সদস্য নির্বাচিত হন। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প ও সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে তিনি প্রায় দুই লক্ষ টাকা দান করেন। ফারুকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোর্টের সদস্য ছিলেন।


সমাজ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ব্রিটিশ সরকার ফারুকীকে ১৯২৪ সালে খান বাহাদুর, ১৯৩২ সালে নবাব এবং ১৯৩৬ সালে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৮৪ সালের ৪ এপ্রিল কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।  [মুহম্মদ আবদুস সালাম] [৪৮৪]
সমাজ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ব্রিটিশ সরকার ফারুকীকে ১৯২৪ সালে খান বাহাদুর, ১৯৩২ সালে নবাব এবং ১৯৩৬ সালে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৮৪ সালের ৪ এপ্রিল কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।  [মুহম্মদ আবদুস সালাম]
 
[[en:Faroqui, Nawab Sir KGM]]
 
[[en:Faroqui, Nawab Sir KGM]]
 
[[en:Faroqui, Nawab Sir KGM]]


[[en:Faroqui, Nawab Sir KGM]]
[[en:Faroqui, Nawab Sir KGM]]

০৯:৫৩, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

নবাব স্যার কে.জি.এম ফারুকী

ফারুকী, নবাব স্যার কে.জি.এম (১৮৯১-১৯৮৪)  জমিদার, রাজনীতিক, সমাজসেবক। পুরো নাম কাজি গোলাম মহিউদ্দিন ফারুকী। তিনি নিজেকে খলিফা হযরত উমর ফারুকের (রা.) অধস্তন পুরুষ কাজী উমরশাহ ফারুকীর বংশধর বলে দাবি করতেন। কাজী উমরশাহ ফারুকী ছিলেন মুগল সম্রাট ফররুখ সিয়ারের অধীনে বাংলায় কর্মরত একজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা। তাঁকে ত্রিপুরা জেলার দুটি পরগনা জায়গির হিসেবে প্রদান করা হয়।

মহিউদ্দিন ফারুকী ১৮৯১ সালে কুমিল্লা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানাধীন রতনপুর গ্রামে। ফারুকীর পিতা কাজী রিয়াজুদ্দিন আহমদ ফারুকী একজন সাবরেজিস্ট্রার ছিলেন। বাল্যকালে ফারুকী কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেন নি। হাজি আহমদ বেল, মি. ক্যালি ও মি. ইডেন নামের তিনজন ইংরেজ গৃহশিক্ষকের নিকট তিনি শিক্ষালাভ করেন। পরে ফারুকী ঢাকা কলেজে এফ এ ক্লাস পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।

মহিউদ্দীন ফারুকী ১৯১৬ সালে রাজনীতিতে যোগদান করেন। রাজনৈতিক জীবনে প্রথমে তিনি ছিলেন জাতীয়তাবাদী মধ্যপন্থী এবং শেষদিকে মুসলিম লীগপন্থী। তিনি ১৯১৭ সালে কুমিল্লা মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনার এবং ত্রিপুরা জেলা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯২৫ হতে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত তিনি ত্রিপুরা জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। ফারুকী দীর্ঘকাল কলকাতায় ত্রিপুরা সমিতির সভাপতি ছিলেন। তাঁর সম্পাদনায় হানাফী নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হত কলকাতা থেকে।

ফারুকী কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানা সদরে তাঁর পিতার নামে কাজী রিয়াজউদ্দিন উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় এবং পিতামহ কাজী আফতাবউদ্দীন আহমদ ফারুকীর নামে আফতাবিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় দেবিদ্বারে একটি দাতব্য চিকিৎসালয়, ডাকঘর, থানা ও সাবরেজিস্ট্রার অফিস স্থাপিত হয়। এসব প্রতিষ্ঠান স্থাপনে তিনি নিজ মালিকানাধীন জমি দান করেন। ফারুকী তাঁর জমিদারির আওতায় শ্রীমন্তপুর গ্রামে জনসাধারণের জন্য একটি পুকুর খনন করান এবং অন্যান্য স্থানে পুরাতন পুকুরের সংস্কার, রাস্তাঘাট নির্মাণ, খালখনন, নলকূপ স্থাপন ইত্যাদি জনহিতকর কাজ সম্পাদন করেন।

১৯২০ সালের দুর্ভিক্ষের সময় ফারুকী ত্রিপুরা জেলার আর্তমানবতার সেবায় একটি সাহায্য কেন্দ্র স্থাপন করেন এবং এর অধিকাংশ ব্যয়ভার তিনি নিজেই বহন করেন। কুমিল্লা শহরের বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা, চকবাজারের পানির ট্যাংক স্থাপন, কুমিল্লা কারাগার সংস্কার, পুরাতন হাসপাতাল সংস্কার, মাতৃসদন ও শিশু হাসপাতাল ইত্যাদি তাঁরই পরিকল্পনার ফসল।

মহিউদ্দিন ফারুকী ১৯২১ সালে ত্রিপুরা জেলার মুসলিম নির্বাচনী এলাকা থেকে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। তৎকালীন বাংলা সরকারের সিনিয়র মিনিস্টার স্যার সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী তাঁকে চিফ হুইপ পদে মনোনীত করেন। ১৯২৯ সাল পর্যন্ত তিনি উক্ত পদে বহাল ছিলেন। ১৯২১ সালের শেষভাগে ব্রিটিশ যুবরাজ অষ্টম এডওয়ার্ড কলকাতা সফরে এলে তাঁকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য গঠিত ৮৮ সদস্যের অভ্যর্থনা কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন ফারুকী।

১৯২৯ সালে ফারুকী স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন, জনস্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, সমবায় ও গণপূর্ত বিভাগের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৩১ সালে তিনি শিল্প খাতে সরকারি সাহায্য বিল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কৃষির সমস্যা নিরসনের জন্য কো-অপারেটিভ মর্টগেজ ব্যাংক স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

ফারুকী ১৯৩৪ সালে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৩৭ সালে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভায় সদস্য নির্বাচিত হন। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প ও সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে তিনি প্রায় দুই লক্ষ টাকা দান করেন। ফারুকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোর্টের সদস্য ছিলেন।

সমাজ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ব্রিটিশ সরকার ফারুকীকে ১৯২৪ সালে খান বাহাদুর, ১৯৩২ সালে নবাব এবং ১৯৩৬ সালে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৮৪ সালের ৪ এপ্রিল কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।  [মুহম্মদ আবদুস সালাম]