প্রশিকা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:১৪, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

প্রশিকা  বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ এনজিও। প্রশিকা শব্দটি প্রশিক্ষণ, শিক্ষা ও কাজ এই তিনটি বাংলা শব্দের আদ্যাক্ষর নিয়ে গঠিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের পরপরই কতিপয় উদ্যমী তরুণ গতানুগতিক উন্নয়ন কর্মসূচির বিকল্প হিসেবে এ সংস্থাটি গঠন করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনের জন্য প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র ১৯৭৬ সালে ঢাকা ও কুমিল্লা জেলার কিছু গ্রামে কার্যক্রম শুরু করে।

প্রশিকার ঘোষণা অনুযায়ী এটি অর্থনৈতিকভাবে উৎপাদনশীল, সামাজিকভাবে ন্যায়ভিত্তিক, পরিবেশগত দিক থেকে দূষণমুক্ত ও সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক একটি সমাজ সৃষ্টি করতে সংকল্পবদ্ধ। প্রশিকার লক্ষ্য হচ্ছে দরিদ্রদের ব্যাপক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে একটি উন্নত সমাজ গঠন। দরিদ্রদের ক্ষমতায়ন বলতে প্রশিকা বোঝে তাদেরকে সংগঠিত করা ও দারিদ্রে্যর কারণ সম্পর্কে তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। প্রশিকার আরও কাজ হচ্ছে দরিদ্রদের মধ্য থেকে যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টি; তাদের বৈষয়িক সম্পদ, আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা; তাদের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা সৃষ্টি করা; ব্যবহারিক শিক্ষার প্রচলন করা; স্বাস্থ্য রক্ষা ও পরিবেশ রক্ষায় তাদের উদ্বুদ্ধ ও সক্ষম করা; স্থানীয় প্রশাসনিক সংস্থায় দরিদ্রদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো; এবং সাধারণের জন্য নির্ধারিত সম্পদে তাদের আরও বেশি মালিকানা নিশ্চিত করা ও তা ব্যবহারে তাদের জন্য অধিকতর সুযোগ সৃষ্টি করা।

প্রশিকার গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিগুলির মধ্যে রয়েছে: বিভিন্ন স্তরে দরিদ্রদের জনসংগঠন নির্মাণ; আত্মকর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে দরিদ্র জনগণকে স্বনির্ভর করে তোলা; সর্বজনীন শিক্ষা; মানবিক উন্নয়ন ও দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ; স্বাস্থ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য অবকাঠামো নির্মাণ; নারীর সমন্বিত ও বহুমুখি উন্নয়ন; জৈবকৃষি উন্নয়ন; সেচ ও উন্নত কৃষি-প্রযুক্তি সেবা প্রদান; মৎস্য ও পশুসম্পদ উন্নয়ন; সামাজিক বনায়ন; জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা; গণসংস্কৃতির বিকাশ ও তার মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা; এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কর্মসূচি।

প্রশিকার জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত এর বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি দরিদ্র নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ১১ লাখ ৪২ হাজার বয়স্ক নারী-পুরুষ সাক্ষরতা অর্জন করেছেন এবং ৭ লাখ ১৭ হাজার ছেলেমেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেছে। ১ লাখ ৬৮ হাজার নারী-পুরুষ স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছেন। সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১ কোটি গাছের চারা লাগানো হয়েছে।

বিভিন্ন পেশার ৩০ জন প্রতিনিধি সদস্য নিয়ে এই সংস্থার জেনারেল বডি গঠিত। জেনারেল বডির কাজের মধ্যে রয়েছে সংস্থার জন্য হিসাব নিরীক্ষক নিয়োগ করা, বার্ষিক প্রতিবেদন ও বাজেট তৈরি করা, অডিট ফিস নির্ধারণ করা এবং একটি গভার্নিং বডি নির্বাচন করা। জেনারেল বডি থেকেই প্রতি বছর গভার্নিং বডির সদস্য নির্বাচন করা হয় যাঁরা সংস্থার নীতি নির্ধারণ ও উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। গভার্নিং বডির সদস্যরা তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে নির্ধারিত মেয়াদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। গভার্নিং বডি একজন প্রধান নির্বাহী নিযুক্ত করেন যিনি সংস্থার সার্বিক নির্বাহী দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

প্রশিকা বর্তমানে ২০০টি এরিয়া ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (এডিসি)-এর মাধ্যমে কাজ করছে যা ৫৯টি জেলার ২৪,২১৩টি গ্রাম ও বিভিন্ন শহরের ২,১১০টি এলাকায় অবস্থিত। সংস্থাটি ৯.২৬ লাখ নারী ও ৫.৩০ লাখ পুরুষ সমিতি-সদস্য নিয়ে কাজ করছে। এরা সকলে ১,১০,৯২০টি সমিতিতে বিভক্ত।

[শামসুল হুদা]