প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি  বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বিচারকদের প্রধান। তিনি অধস্তন আদালতসহ গোটা বিচার ব্যবস্থারও প্রধান। দেশের রাষ্ট্রপতি রেওয়াজ হিসেবে আপিল বিভাগের বিচারকদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতম বিচারককে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দান করেন। প্রধান বিচারপতি বিভিন্ন মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য অন্যান্য বিচারকদের সঙ্গে আপিল বিভাগের এজলাসে বসেন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসন, অধস্তন আদালতের বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা সম্পর্কিত কার্যাদি সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে আদালতের পূর্ণ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সুপ্রিম কোর্টের (অধস্তন আদালতসহ) আপীল ও হাইকোর্ট উভয় বিভাগ এবং ১৯৯৪ সালের কোম্পানি অ্যাক্ট ও ১৯৯১ সালের ব্যাংকিং কোম্পানি অ্যাক্টের মতো কোনো কোনো আইনে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লিখিত অন্যসব বিভাগের প্রয়োগরীতি ও কার্যপ্রণালী সম্পর্কিত প্রায় সকল নিয়ামক বিধিও প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আদালতের পূর্ণ বৈঠকে যথাযথ নিরীক্ষা ও অনুমোদন করা হয়। প্রধান বিচারপতি মূল, আপিল ও পুনর্বিচারযোগ্য মামলাগুলির ক্ষেত্রে স্ব স্ব এখতিয়ার অনুশীলনের জন্য বিভিন্ন বেঞ্চ গঠন করার মাধ্যমে হাইকোর্ট বিভাগের বিচার সংক্রান্ত কর্মদায়িত্ব বিলিবণ্টনও করেন। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি অধস্তন আদালতগুলির বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেটদের ওপর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ (পদ সৃষ্টি, পদোন্নতি দান ও ছুটি মঞ্জুরির ক্ষমতাসহ) ও শৃঙ্খলা আরোপ এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনাক্রমে এতদ্সংক্রান্ত অন্য জরুরী বিষয়াদি নিষ্পত্তি করেন। বাংলাদেশে এ যাবৎ যারা প্রধান বিচারপতি পদের দায়িত্ব পালন করেছেন তারা হলেন: (কালানুক্রমিক) বিচারপতি এ.এম সায়েম, বিচারপতি সৈয়দ এ.বি মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, বিচারপতি এফ.কে.এম.এ মুনিম, বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী, বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ, বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, বিচারপতি এ.টি.এম আফজাল, বিচারপতি মুস্তাফা কামাল, বিচারপতি লতিফুর রহমান,  বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী, বিচারপতি মাইনুর রেজা চৌধুরী, বিচারপতি কে. এম. হাসান, বিচারপতি সৈয়দ জে. আর মোদাচ্ছির হোসেন, বিচারপতি মোঃ রুহুল আমিন ও বিচারপতি এম.এম. রুহুল আমিন।।

এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৭৬ সালের সামরিক আইন দ্বিতীয় ঘোষণা আদেশ (১৯৭৬ সালের ৪ নং আদেশ) বলে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টকে দুটি সর্বোচ্চ বিচার বিভাগীয় স্বতন্ত্র স্থাপনা হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট এই দু’ই ভাগে বিভক্ত করা হয়। তৎকালীন দায়িত্ব পালনরত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এ.বি মাহমুদ হোসেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং বিচারপতি রুহুল ইসলামকে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৭ সালের সামরিক আইন দ্বিতীয় ঘোষণা আদেশ (১০ম সংশোধনী) বলে (১৯৭৭ সালের ১নং দ্বিতীয় ঘোষণা আদেশ) ঐ শীর্ষ পর্যায়ের আদালত দুটির একত্রীকরণের পূর্ব পর্যন্ত তাঁরা স্ব-স্ব পদে বহাল ছিলেন।  [কাজী এবাদুল হক]