পোশাক শিল্প

পোশাক শিল্প তৈরি পোশাক বা আরএমজি (Readzmade Garments) নামে সমধিক পরিচিত। সুবিন্যস্ত কারখানায় বৃহদায়তনে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পোশাক উৎপাদনের ঘটনা বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত নতুন। ষাটের দশকের শুরু পর্যন্ত ব্যক্তি উদ্যোগে ক্রেতাদের সরবরাহকৃত এবং তাদেরই নির্দেশিত নকশা অনুযায়ী স্থানীয় দর্জিরা পোশাক তৈরি করতো। শুধুমাত্র শিশুদের জামাকাপড় এবং পুরুষদের পরিধানযোগ্য গেঞ্জি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে ষাটের দশক পর্যন্ত তৈরি পোশাক শিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজার ছিল না বললেই চলে। সত্তরের দশকের শেষার্ধ থেকে মূলত একটি রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়ন ঘটতে থাকে। তৈরি পোশাক শিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজারও দ্রুত সম্প্রসারিত হয় এবং এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের আয় বৃদ্ধি পায় ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসে। খাতটি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং তা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।

১৯৮০ সাল পর্যন্ত কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য মোট রপ্তানিতে ৫০% অবদান রেখে রপ্তানি আয়ে শীর্ষস্থান দখল করেছিল। আশির দশকের শেষার্ধে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের আয়কে অতিক্রম করে পোশাক শিল্প রপ্তানি আয়ে প্রথম স্থানে চলে আসে। ১৯৯৯ সালে এই শিল্পখাতে সরাসরি কর্মসংস্থান হয় ১.৪ মিলিয়নেরও বেশি লোকের, যার মধ্যে শতকরা প্রায় ৮০ জন মহিলা। তৈরি পোশাক শিল্পের সম্প্রসারণের সাথে সাথে বস্ত্র, সুতা, আনুষঙ্গিক উপকরণ, প্যাকেটজাতকরণের উপকরণ ইত্যাদি শিল্পেরও সম্প্রসারণ হতে থাকে। এতদ্ব্যতীত পরিবহন, ব্যাংকিং, শিপিং এবং ইন্সুরেন্স সেবার চাহিদাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর সবটাই অতিরিক্ত কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে। এ ধরনের নতুন পরোক্ষ-কর্মসংস্থান মূলত তৈরি পোশাক শিল্প কর্তৃক সৃষ্টি যার সুবিধাভোগী মোট ২,০০,০০০ শ্রমজীবী।

বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের (কেবলমাত্র ওভেন শার্ট) প্রথম চালানটি রপ্তানি হয় ১৯৭৮ সালে। এরপরেই বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়ে যায় এবং এই শিল্প দ্রুত বেড়ে ওঠে। ১৯৮১-৮২ সালে মোট রপ্তানি আয়ে এই খাতের অবদান ছিল মাত্র ১.১%। ২০১০ সালের মার্চ মাসে তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান দাঁড়ায় মোট রপ্তানি আয়ের ৭৬%। সময়ের পরিক্রমায় তৈরি পোশাক শিল্প আরও সম্প্রসারিত হয়ে ওভেন এবং নিটিং উপখাতে বিভক্ত হয়। ২০০২ সালে পোশাক রপ্তানিতে ওভেন ও নিটিং-এর অবদান ছিল যথাক্রমে ৫২.০৬% এবং ৮.৫৮%। পরবর্তীকালে নিট পোশাক উপখাত ওভেন উপখাতের তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে নিট উপখাত ওভেন উপখাতকে অতিক্রম করে সমগ্র রপ্তানিতে ৪১.৩৮% (৬৪২৯ মিলিয়ন ডলার) অবদান রাখে, বিপরীতে ওভেন পোশাক ৩৮.০২% (৫৯১৮.৫১ মিলিয়ন ডলার) নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে নেমে আসে। ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে নিট ও ওভেন একত্রে আমদানিকৃত কাঁচামালের মূল্যসহ সাড়ে ১২ বিলিয়ন ডলারে উপনীত হয় এবং সাড়ে ২২ লাখ মহিলা শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।

তৈরি পোশাক শিল্পের সম্প্রসারণ বাংলাদেশের সমাজে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধন করেছে। পরোক্ষভাবে এই সব সেবাখাতে প্রায় আড়াই লাখের মতো মানুষের কর্মসংস্থান হয়। জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ছাড়াও তৈরি পোশাক শিল্প সাড়ে ২২ লাখ নারী শ্রমিকের জীবনযাত্রার লক্ষণীয় পরিবর্তন সাধন করেছে এবং তারা অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। শ্রমজীবী নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন পরিবারে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন আনয়নে সক্ষম হয়েছে, আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের কারণে এসব নারী শ্রমিকের সামাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। চাকরির সুবিধাদি ভোগকারী বাবা, ভাই এবং স্বামীর ঐতিহ্যগত পিতৃতান্ত্রিক কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে পরিবর্তন সাধন করেছে। অধিকাংশ শ্রমজীবী নারী এখন বিয়ে এবং সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী সিদ্ধান্তের কথা বলতে পারে। তারা পরিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও অংশগ্রহণ করতে পারছে। সমাজে বাল্যবিবাহের সংখ্যা কমেছে, সেই সাথে হ্রাস পেয়েছে জন্মহার। শ্রমজীবী মেয়েরা তাদের ছোট ছোট ভাইবোনদের যত্ন নিচ্ছে এবং স্কুলে পাঠাচ্ছে। ফলে দেশে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, তৈরি পোশাক শিল্পখাতের সম্প্রসারণ নতুন উদ্যোক্তাদল সৃষ্টি করছে যারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে শক্তিশালী বেসরকারি খাত গড়ে তুলেছে। এই উদ্যোক্তাদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী। বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা ‘বৈশাখী’ ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন একজন নারী। বর্তমানে তৈরি পোশাক কারখানায় অনেক নারী ঊর্ধ্বতন নির্বাহী পদে অধিষ্ঠিত।

এই শিল্প মূলত উপচুক্তি ভিত্তিক। অর্থাৎ বাংলাদেশি উদ্যোক্তা বিদেশি ক্রেতার উপচুক্তিকারক বা মূল চুক্তির অংশ বিশেষ সম্পাদন করে। এটা গড়ে উঠেছে বিদেশি ক্রেতাদের সি-এম (Cut and Made অর্থাৎ কাটো এবং তৈরি কর) পদ্ধতিতে ফরমায়েশ অনুসারে। ক্রেতারাই চাহিদা অনুযায়ী সকল কাপড় এবং সহায়ক দ্রব্য সরবরাহ করে অথবা তাদেরই নির্দেশিত উৎস থেকে বাংলাদেশি উপচুক্তিকারকদের পোশাক তৈরির জন্য কাপড় আমদানি করতে হতো। বস্ত্র এবং সংশ্লিষ্ট উপকরণ পাওয়ার পর উপচুক্তিকারকরা বিদেশি ক্রেতাদের দেওয়া নকশা অনুযায়ী কাপড় কেটে ও সেলাই করে মোড়কে বেঁধে রপ্তানি করতো। বিদেশি ক্রেতাদের বাংলাদেশকে নির্বাচিত করার কারণ এখানে পোশাক তৈরিতে খরচ সবচাইতে কম।

শুরুতে এই শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প সম্পূর্ণভাবেই আমদানিকৃত কাঁচামাল নির্ভর ছিল। এই নির্ভরশীলতার কারণে পরিস্থিতি ছিল খুবই নাজুক। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশি মালিকেরা অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয় এবং পরিস্থিতির উন্নতি হয়। স্থানীয় উদ্যোক্তারা পশ্চাৎ-সংযোগ শিল্পের বিকাশ ঘটায় এবং স্থানীয়ভাবেই দক্ষতা বৃদ্ধি করে মানসম্পন্ন রপ্তানিযোগ্য সুতা ও কাপড় উৎপাদন শুরু করে। তাছাড়া পোশাক শিল্প রং ও প্রক্রিয়াজাত করার পর কাপড় কেটে এবং সেলাই করে রপ্তানিযোগ্য পণ্যে রূপান্তরিত করার যোগ্যতা অর্জন করেছে। একবিংশ শতকের শুরুর দিকে এই কার্যক্রম আরও বিস্তৃতি লাভ করেছে। দ্রুত পশ্চাৎ সংযোগ শিল্প গড়ে ওঠার কারণে এই শিল্প আর আগের মতো কাঁচামাল আমদানির উপর নির্ভরশীল নয়। ২০১০ সালের এপ্রিল মাসের পরিসংখ্যান অনুসারে ওভেন পোশাকের ৫০% আর নিট পোশাকের মাত্র ১০% আমদানি নির্ভর ছিল।

বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক বৃহৎ বহুস্তরবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ পোশাক কারখানা গড়ে উঠেছে। এ সমস্ত কারখানা সুতা কাটা, বয়ন, রং, প্রক্রিয়াজাত এবং ক্যালেন্ডারিংসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করে। তাছাড়া এ সমস্ত রপ্তানিযোগ্য কাপড় স্থানীয় কারখানায়ও বিক্রি হয়। এই কারখানাসমূহে বিদেশি ক্রেতাদের নকশা অনুযায়ী কেটে মোড়কে ভরে নির্ধারিত ক্রেতার কাছে পাঠানো হয়। পশ্চাৎ সংযোগ শিল্প গড়ে ওঠার ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান পূর্বের তুলনায় আরও সংহত হয়েছে।

১৯৮০ পরবর্তী ২৫ বছরে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ১৯৭৮ সালে মাত্র ৯টি রপ্তানিমুখী পোশাক তৈরির কারখানায় উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করে আনুমানিক এক মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ আয় করেছিল বাংলাদেশ। অনেক কারখানা ছিল ছোট আকারের এবং এখানে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও বিক্রি হতো। এরকম চারটি ছোট পুরাতন কারখানার নাম রিয়াজ গার্মেন্টস, প্যারিস গার্মেন্টস, জুয়েল গার্মেন্টস এবং বৈশাখী গার্মেন্টস। এর মধ্যে রিয়াজ গার্মেন্টস ছিল পথ-প্রদর্শক, যা ঢাকায় রিয়াজ স্টোর নামে একটি ছোট দর্জির কারখানা হিসেবে ১৯৬০ সালে কাজ শুরু করে। এটি আনুমানিক ১৫ বছর স্থানীয় বাজারে কাপড় সরবরাহ করেছে। ১৯৭৩ সালে কারখানাটি নাম পরিবর্তন করে মেসার্স রিয়াজ গার্মেন্টস লিমিটেড নামে আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তীকালে কার্যক্রম সম্প্রসারিত করে ১৯৭৮ সালে প্যারিসভিত্তিক একটি ফার্মের সাথে ১৩ মিলিয়ন ফ্রাংক মূল্যের ১০ হাজার পিস ছেলেদের শার্ট রপ্তানি করে। রিয়াজ গার্মেন্টসই প্রথম বাংলাদেশ থেকে সরাসরি পোশাক রপ্তানি করে। ১৯৭৯ সালে দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড প্রথম যৌথ উদ্যোগে নন-ইকুইটি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করে। দেশ গার্মেন্টস ও দক্ষিণ কোরিয়ার দায়েয়ু কর্পোরেশনের মধ্যে প্রযুক্তিগত এবং বাজারজাতকরণে সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপিত হয়। প্রথম দিকে মেশিনে কাজ করার মতো উপযোগী করে তোলার জন্য শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে পরিদর্শকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৩ জন মহিলাসহ ১২০ জন পরিচালক (মেশিন) দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয় এবং এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরাই ১৯৮০ সালে উৎপাদন শুরু করে। এটা ছিল প্রথম শতভাগ রপ্তানিমুখী কোম্পানি। ১৯৮০ সালে ইয়াঙ্গুন নামে অপর একটি কোরিয়ান কর্পোরেশন বাংলাদেশি ট্রেকসীম লিমিটেড নামে অপর একটি কোম্পানির সঙ্গে প্রথম যৌথ উদ্যোগে তৈরি পোশাক কারখানা গড়ে তোলে। বাংলাদেশি অংশীদাররা নতুন প্রতিষ্ঠান ইয়াঙ্গুনস বাংলাদেশ-এ শতকরা ৫১ ভাগ ইকুইটির মালিক হয়। এটি প্রথম ১৯৮০ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ থেকে প্যাডেড এবং নন-প্যাডেড জ্যাকেট সুইডেনে রপ্তানি করে। উভয় ক্ষেত্রেই বাজারজাতকরণের দায় বিদেশি অংশীদাররাই নিয়েছিল।

কম উৎপাদন খরচের কারণেই বাংলাদেশ বিদেশি ক্রেতার কাছে ক্রমবর্ধমান আকর্ষণীয় ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়। কম খরচের সুযোগ গ্রহণ করতেই তারা বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরবরাহকারী ঋণ সহায়তা বৃদ্ধি করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যাংক ইকুইটি ক্যাপিটালের যোগান দেয়। এত কিছু সত্ত্বেও নতুন কারখানাসমূহ চলতি পুঁজির জন্য প্রচন্ড সমস্যায় পড়ে। এই সময় ব্যাক-টু-ব্যাক এল.সি (লেটার অব ক্রেডিট বা আস্থাপত্র) লেনদেনের জন্য উদ্ভাবিত নতুন পন্থার অবদানে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনে। ব্যাক-টু-ব্যাক এল.সি চলতি মূলধনের সমস্যা লাঘব করে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য মানসম্পন্ন কাপড় আমদানির সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

১৯৮২ সালে কারখানার সংখ্যা ছিল ৪৭ এবং ১৯৮৫ সালে ৫৮৭, আর ১৯৯৯ সালে ২,৯০০টিতে উন্নীত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই শিল্পের সাফল্য স্পষ্ট হয়ে উঠে। এই ধারাবাহিকতায় উৎপাদন ও রপ্তানি ক্ষমতা সমানতালে বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৯ সালে কারখানার সংখ্যা ৩ হাজারে উপনীত হয়। বাংলাদেশ সে সময়ে বিশ্বের দ্বাদশ বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। তন্মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের স্থান ষষ্ঠ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে টি-শার্ট রপ্তানিতে বাংলাদেশ পঞ্চম স্থান দখল করে। ১৯৯০-এর দশকে এ শিল্পখাতের সম্প্রসারণ ঘটেছে বার্ষিক প্রায় ২২ শতাংশ হারে।

১৯৮৩-৮৪ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয় মাত্র ০.৯ বিলিয়ন ডলার, যা ছিল বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের শতকরা ৩.৮৯ ভাগ। ১৯৯৮-৯৯ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় ছিল ৫.৫১ বিলিয়ন ডলার যা মোট রপ্তানি আয়ের শতকরা ৭৫.৬৭ ভাগ। তবে নিট বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ছিল এর মাত্র ৩০% কারণ, তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল এবং আনুষঙ্গিক উপকরণ আমদানিতে ব্যয় হয় আয়কৃত বৈদেশিক মুদ্রার প্রায় ৭০%।

তবে একুশ শতকের প্রথম দশকে বিশ্বের আর্থিক মন্দার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ’র বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। এ দুটি বাজারে ভোক্তার ব্যয় হ্রাস পায়, ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের চাহিদাও হ্রাস পায়। ২০০৮ সালে রপ্তানিতে উর্ধ্বগতির পর ২০০৯ সালে প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ছিল। তবে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের দূরদর্শিতায় ২০১০ সালের শুরুতে আবার মন্দাভাব কাটিয়ে প্রবৃদ্ধির দিকে পা বাড়ায়। এতে প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প আর্থিক মন্দার ঋণাত্মক প্রভাব কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা অর্জন করে।

১৯৮৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ শক্তিমান পোশাক সরবরাহকারী হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের বাজারের ঐতিহ্যবাহী সরবরাহকারীদের কাছে শক্তিশালী প্রতিযোগী হিসেবে পরিণত হয়। ১৯৮৬ সাল থাকে বাংলাদেশ ইউএসএ এবং কানাডার ক্রমবর্ধমান কোটা বাধ্যবাধকতার আওতাভুক্ত হয়। ১৯৮০-র দশকে বেশকিছু দেশে তৈরি পোশাক শিল্প বিপত্তিকর অবস্থায় পড়ে। অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য কয়েকটি দেশে উৎপাদন খরচ দ্রুত বেড়ে যায়। ক্রেতারা বিকল্প উৎস খুঁজতে থাকে এবং সস্তা শ্রমিক ও বড় আকারের রপ্তানি কোটার সুবাদে বাংলাদেশ একটি আদর্শ বিকল্প হিসেবে প্রতীয়মান হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে অব্যাহতভাবে কোটামুক্ত মর্যাদা এবং জিএসপি সুযোগ-সুবিধা দিতে থাকে। তাছাড়া, ইউএসএ এবং কানাডা বাংলাদেশের জন্য বেশ বড় আকারের কোটা বহাল রাখে। এসব সুযোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে ইউএসএ, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজার নিশ্চিত করে। তৈরি পোশাক শিল্প বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলি কার্যকর ভূমিকা রাখে এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সস্তা শ্রমিকের সহজলভ্যতা বাংলাদেশকে তুলনামূলক সুবিধা এনে দেয়। সরকারের নীতিসমূহ এই শিল্পখাতের দ্রুত সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে অবদান রাখে। সরকার পিঠাপিঠি প্রত্যয়পত্রের মাধ্যমে শুল্কমুক্ত কাপড় আমদানি, শুল্কাধীন গুদাম ব্যবহারের সুবিধাদি, সুদের হারে বিশেষ ছাড়, রপ্তানির জন্য নগদ অর্থে প্রণোদনা, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার সুবিধাদিসহ বিভিন্ন ধরনের উৎসাহ-উদ্দীপনা যুগিয়ে থাকে। এছাড়া সরকার আমদানি ও রপ্তানি ক্ষেত্রে কার্যকর কিছু আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপও গ্রহণ করে।

পোশাক শিল্প

তৈরি পোশাক শিল্পের বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধির জন্য অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয় উপাদানই ভূমিকা রেখেছে। বাহ্যিক কারণের একটি ছিল গ্যাট (GATT) অনুমোদিত ও মাল্টি ফাইবার অ্যারেঞ্জমেন্ট’ (এমএফএ)-এর অধীনে কোটা পদ্ধতি। এই কোটা পদ্ধতিতে তৈরি পোশাকের আন্তর্জাতিক আউট সোর্সিং পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে বেশি দামে প্রস্তুতকারী দেশ থেকে কম দামে প্রস্তুতকারী দেশে স্থানান্তর করা হতো। এমএফএ’র প্রয়োগ বাংলাদেশের জন্য অনেকটা আশির্বাদ বয়ে আনে। নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশ হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাকের একটি উল্লেখযোগ্য ‘কোটা’ রপ্তানির সুযোগ পায়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কোটামুক্ত বাজারের পাশাপাশি বাংলাদেশকে জিএসপি সুযোগ দেয়া হয়। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বৃহৎ সরবরাহকারী পোশাক প্রস্তুতকারীরা কোটা সুবিধা এবং সস্তা শ্রমের দেশে কারখানা পুনঃস্থাপনের কৌশল গ্রহণ করে। বাংলাদেশকে তারা সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে। এ কারণেই বাংলাদেশে অনেক তৈরি পোশাকের কারখানা গড়ে ওঠে।

এ ছাড়াও আরও কিছু কিছু কারণ বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প গড়ে ওঠার পেছনে অবদান রেখেছে। কোনো কোনো দেশ যেমন শ্রীলংকা এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় শ্রম মজুরি দ্রুত বেড়ে যায়। ক্রেতারা বিকল্পের সন্ধানে ছোটে। শান্তিপূর্ণ কাজের পরিবেশ, সস্তা শ্রম এবং বড় আকারের কোটা সুবিধা প্রাপ্তির কারণে বাংলাদেশ আদর্শ স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। ইইউ কোটামুক্ত সুবিধা এবং জিএসপি’র মর্যাদা দেয়া অব্যাহত রাখে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কোটা বরাদ্দ দেয়। এই সুবিধাসমূহই যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ইইউতে বাংলাদেশের পণ্যের বাজার নিশ্চিত করে।

অভ্যন্তরীণ যে কারণটি তৈরি পোশাক শিল্প গড়ে ওঠার পিছনে অবদান রেখেছে তা হলো তুলনামূলক সুবিধা। আর এই সুবিধার কারণ সস্তা শ্রম এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রশিক্ষণযোগ্য শ্রমিকের সরবরাহ। সরকারের অভ্যন্তরীণ নীতিমালাও এই শিল্প গড়ে ওঠার পিছনে অবদান রেখেছে। সরকারের সুযোগ সুবিধার মধ্যে ব্যাক-টু-ব্যাক এল.সি (লেটার অব ক্রেডিট), পণ্য গুদামজাতকরণ সুবিধা (শুল্ক আদায় সাপেক্ষে), হ্রাসকৃত সুদে ঋণ, নগদ রপ্তানি সুবিধা, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা তৈরি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও আমদানি রপ্তানি নীতিমালা গতিশীল করতে সরকার অনেকগুলি বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

তৈরি পোশাক শিল্পে এখনো বেশ কয়েকটি দুর্বলতা বিরাজমান। শ্রম উৎপাদনশীলতায় প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বাংলাদেশ পিছে পড়ে আছে। একদিকে যেমন বাংলাদেশি শ্রমিকদের দক্ষতা হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অপরাপর দেশের তুলনায় কম, তার উপর অধিকাংশ কারখানায় ব্যবহৃত মেশিন আধুনিক নয়। এর অর্থ পোশাক তৈরিতে খরচ যতটা কম মনে হয় আসলে বাস্তবে ততটা নয়। এই শিল্পের অপর দূর্বলতম দিক হলো কাঁচামালের জন্য অতিমাত্রায় আমদানি নির্ভরতা এবং অনুন্নত অবকাঠামো। অপর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাও এই শিল্প বিকাশের পথে বাধা। এছাড়াও বন্দরে অপর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা এবং অব্যবস্থার কারণে ঘন ঘন জটের সৃষ্টির ফলে পণ্য চালানে অহেতুক বিলম্ব হয় এবং এতে খরচ বেড়ে যায়।

এমএফএ’র প্রয়োগ অনেক পোশাক রপ্তানিকারক দেশের উপর ঋণাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এই সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত দেশই বস্ত্র ও পোশাককে গ্যাট-এ একত্রিকরণ করে রপ্তানির সুযোগ রহিত করার জন্য আইএমএফ’র উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। ফলে উরুগুয়ে রাউন্ড আলোচনা-পর্যালোচনা করে ২০০৪ সাল থেকে এমএফএ তুলে দেওয়া হয়েছে। এমএফএ উঠে যাওয়ার পর বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের অবস্থানে পরিবর্তন এসেছে। এখন সীমার অধীনে থাকাসহ সকল দেশ কোটামুক্ত মর্যাদা ভোগ করছে।

বাংলাদেশকে এখন অনেক শক্তিশালী দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তন্মধ্যে পণ্য এবং বাজার বহুমুখীকরণ, অবকাঠামোগত অসুবিধা দূরীকরণ, পণ্য সরবরাহে ক্ষমতা বৃদ্ধি, উৎপাদন খরচ হ্রাসে কৌশল গ্রহণ এবং পশ্চাৎ সংযোগ সম্প্রসারণের মাধ্যমে মূল্য সংযোজন বৃদ্ধি।

তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য পশ্চাৎ-অন্বয়ী শিল্পসমূহের মধ্যে আছে বস্ত্রবয়ন, সেলাইয়ের সুতা কাটা, রং করা, ছাপ মারা এবং ফিনিশিং। এসব কাজ কম্পোজিট মিলে একত্রে সম্পন্ন করা যায় অথবা করা যায় পৃথকভাবে, আলাদা আলাদা ইউনিটে। বর্তমানে বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারকরা পিঠাপিঠি (back to back) প্রত্যয়নপত্র ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক মূল্যে বস্ত্র আমদানি করে। এই প্রক্রিয়ায় আমদানিকারকরা অর্থাৎ বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারকরা উচ্চহারে সুদ ও অন্যান্য চার্জ, কমিশন ও মধ্যস্থ কারবারিদের ফি পরিশোধ করে। বস্ত্র বয়ন, সুতা কাটা (স্পিনিং) এবং প্রক্রিয়াকরণের জন্য কম্পোজিট কারখানা স্থাপিত হলে অর্ডার গ্রহণ ও সে অনুযায়ী তৈরি পোশাক সরবরাহের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান কমে যাবে, মূল্য সংযোজন ও কর্মসংস্থান বাড়বে এবং বলাবাহুল্য, উৎপাদন ব্যয়েও সাশ্রয় হবে। পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৯৭-২০০২) বাংলাদেশ সরকার স্পিনিং-এর সম্প্রসারণের মাধ্যমে সেলাইয়ের সুতা উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। তাতে স্পিনিং খাতের উৎপাদনক্ষমতা পর্যাপ্ত পরিমাণে বাড়লেও তা চাহিদার তুলনায় এখনও অপ্রতুল। বাংলাদেশে এখন (২০০৫) ১৪২টি রিং স্পিনিং মিল এবং ১৫টি ওপেন-অ্যান্ড স্পিনিং মিলসহ ১,১২৬টি বয়ন ও স্পিনিং কারখানা আছে। এগুলি মূলত অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য উৎপাদন করে। উৎপাদিত মোট বস্ত্রের মাত্র ২৫% দেয় আধুনিক কারখানাসমূহ, অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত বাকি বস্ত্রের যোগান দেয় বিশেষায়িত ইউনিট, বিদ্যুৎচালিত তাঁত এবং হস্তচালিত তাঁতসমূহ। দেশিয় উৎপাদন রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য ওভেন খাতের মোট চাহিদার ৮ শতাংশেরও কম মেটাতে পারে, আর নিট বস্ত্রের চাহিদা মেটাতে পারে প্রায় ৪০%।

বাংলাদেশ সীমিত কয়েক শ্রেণীর তৈরি পোশাক রপ্তানি করে থাকে। বাংলাদেশের কারখানাগুলি প্রধানত শার্ট, জ্যাকেট ও পায়জামা তৈরি করে এবং মোট তৈরি পোশাকের প্রায় ৬০% শার্ট, যা রপ্তানি করা হয় কম দামে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বয়স্ক পুরুষ ও শিশু-কিশোরদের সুতি শার্টের প্রধান রপ্তানিকারক। এই বাজারে নিম্নমূল্যে পণ্য বিক্রয়ে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা করে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মেক্সিকো এবং সেন্ট্রাল আমেরিকার অন্যান্য দেশের সাথে। বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে ডজন প্রতি ৬২.৭৪ ডলারে শার্ট বিক্রয় করত। এই মূল্য ছিল দ্বিতীয় নিম্নতম। ডোমিনিকান রিপাবলিক একই ধরনের শার্ট বিক্রয় করতো সর্বনিম্ন মূল্য প্রতি ডজন ৫৪.৭৯ ডলারে। ভারতীয়, মেক্সিকান এবং শ্রীলঙ্কার শার্টের মূল্য ছিল ডজন প্রতি ৮১.০৪ ডলার, ৭৬.২৬ ডলার এবং ৭৪.৭৭ ডলার। অপরদিকে হংকং এবং মালয়েশিয়ার শার্টের মূল্য ছিল ডজন প্রতি ১০৭.৩৪ ডলার এবং ১৩৪.০৮ ডলার। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোটা দ্বারা নির্ধারিত ধরনের পোশাক প্রস্তুত করত। তবে, বেশ কিছু ব্যতিক্রমও ছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ঢাকা এবং চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা থেকে প্যাডেড জ্যাকেট এবং ট্রাউজার্স উচ্চমূল্যে রপ্তানি করত। বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান কিছু কোটা-বহির্ভূত আইটেম রপ্তানি করে থাকে। এসব আইটেমের পরিমাণ খুবই কম। সম্প্রতি বুনন কাপড়ের পোশাকের চেয়ে নিটওয়্যার এবং সোয়েটারের রপ্তানি অধিকতর দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বোঝা যায়, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদনে বৈচিত্র্যায়ন ঘটাচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রায় ৩০টি দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করলেও এর রপ্তানি বাজার মূলত যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে কেন্দ্রীভুত। সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৮-৯৯ সালে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত তৈরি পোশাকের সর্বমোট ৪৩.২৪% আমদানি করেছে। একই বৎসর যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের বাজারে বাংলাদেশ ছিল ষষ্ঠ বৃহত্তম সরবরাহকারী দেশ। তবে ইউরোপের সবকটি দেশের বাজারকে যদি সমন্বিত একটি একক বাজার হিসেবে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র পরিণত হবে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজারে। ১৯৯৮-৯৯ সালে ইউরোপীয় পোশাক বাজারে বাংলাদেশ ৫২.৩৮% তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ থেকে নিটওয়্যার রপ্তানির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যস্থল। এককভাবে জার্মানি বাংলাদেশে নিটওয়্যার এবং বুননবস্ত্রের পোশাকের বৃহত্তম ইউরোপীয় আমদানিকারক। বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত বুননবস্ত্র পোশাকের ১৫.৬% এবং নিটওয়্যারের ১৪.৮% যায় জার্মানিতে এবং এসবের ক্রেতা হিসেবে এর পরের স্থান দুটি যথাক্রমে যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি ব্লক হিসেবে বাংলাদেশ থেকে ক্রমাগত অধিক পরিমাণে পোশাক আমদানি করে। ১৯৯৫-২০০০ সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির হার ছিল ১৭৪%। এই অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি হারের প্রধান কারণ মূলত জিএসপি সুবিধার সুবাদে ইউরোপীয় বাজারে প্রায় শুল্কমুক্ত এবং কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার। অন্যান্য রপ্তানি বাজার বেশ ছোট। তবে, জাপান এবং আসিয়ান দেশসমূহের বাজারগুলি যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশ জাপান থেকে পোশাক শিল্পখাতের প্রায় ৯০% মেশিনারিজ আমদানি করলেও জাপানের পোশাক বাজারে বড় আকারের পোশাক রপ্তানিতে সক্ষম হয় নি। একইভাবে, বাংলাদেশ আসিয়ান বাজারে প্রবেশ করতেও সক্ষম হয় নি। আবার ভারতীয় বাজার থেকে বাংলাদেশ যদিও পর্যাপ্ত পরিমাণে কাপড় এবং সুতা আমদানি করে থাকে, এই দেশের বাজারেও বাংলাদেশের রপ্তানি সীমিত। এর প্রধান কারণ শুল্ক এবং শুল্ক-বহির্ভূত প্রতিবন্ধক ও বিধিনিষেধ। সম্প্রতি বাংলাদেশ ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অন্যান্য কয়েকটি নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু করেছে। সার্ক-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ভারত এবং সার্কের অন্যান্য সদস্য দেশসমূহের পোশাক বাজারে রপ্তানি করার বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

একটি বৃহৎ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ অনেকগুলি অসুবিধার সম্মুখীন। যদিও বাংলাদেশ প্রায় ৩০টি দেশে পোশাক রপ্তানি করে, তবে রপ্তানি মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ-এর বাজারে কেন্দ্রীভূত যা এই শিল্পের বড় দূর্বলতা। অর্থাৎ মোট রপ্তানির ৯০%-এর অধিক যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ বাজারে বিক্রি হয়। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মোট রপ্তানির ৪০% এবং ইইউতে ৫০% রপ্তানি হয়। এই দুই বাজারে বাংলাদেশকে চীন, ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, তুরস্ক, মেক্সিকো, পূর্ব ইউরোপের দেশ, ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার সাথে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। মেক্সিকো, বেশ কিছু ল্যাটিন আমেরিকার দেশ, আফ্রিকা এবং পূর্ব ইউরোপের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুযোগ পেলেও বাংলাদেশ পায় নি। এই বৈষম্যের কারণে বাংলাদেশকে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এই বৈষম্যের কারণে দাম পার্থক্য বাংলাদেশের প্রতিকূলে থাকায় কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। যদি কোনো কারণে একটি বাজার হাতছাড়া হয়ে যায়, তা হলে তৈরি পোশাক শিল্প বড় ধরনের হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।

এই প্রতিযোগিতামূলক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা পণ্য এবং বাজার বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। বেশ কিছু রপ্তানিকারক নতুন কিছু উচ্চ মূল্যের পণ্য রপ্তানির আদেশ পেয়েছে। অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের নিজস্ব বায়িং হাউজ খুলেছে। তারা আর বিদেশি ক্রেতার উপর নির্ভরশীল নয়। কেউ কেউ নিজস্ব ব্র্যান্ডের পণ্য রপ্তানি করছে। বাজার বহুমুখীকরণের পদক্ষেপ হিসেবে ইতিমধ্যেই স্বল্প পরিসরে হলেও ভারত, রাশিয়া, থাইল্যান্ড, জাপান, চীন ও অন্যান্য দেশে পণ্য রপ্তানি শুরু করেছে। বাংলাদেশে দুটি শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংস্থা বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নীটওয়ার ম্যানুফ্যাকচারিং এবং এক্সপোর্টিং এ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সরকারকে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা তৈরিতে সহযোগিতা দেয় এবং পণ্য এবং বাজার বহুমুখীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সকল কারখানার মালিক এই সংগঠনের সদস্য।

তৈরি পোশাক শিল্প ইতোমধ্যেই পরিপক্কতা অর্জন করেছে। এই শিল্প আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে শিশুশ্রম বন্ধ, ন্যূনতম মজুরি দেওয়া, ক্রেতাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজের পরিবেশ উন্নত করার ব্যবস্থা নিয়েছে। বেশ কয়েকটি কারখানায় সিবিএ-সহ ট্রেড ইউনিয়ন সক্রিয় আছে।

পোশাক শিল্প খাতে শিশুশ্রমিক বর্জনের আন্তর্জাতিক দাবিতে বাংলাদেশ ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। ১৯৯৪ সালের ৪ জুলাই ঢাকায় বিজিএমইএ, আইএলও, ইউনিসেফ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস যৌথভাবে এক স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করে এবং বাংলাদেশ ১৯৯৬ সালের নভেম্বর মাস থেকে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়। এটি সফলভাবে কার্যকর করা হয়। অর্থনৈতিক সমর্থন পেলে শিশুরা ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত স্কুলে অংশগ্রহণ করতে পারে। বিজিএমইএ এবং কিছু এনজিও যৌথভাবে শ্রমজীবী শিশুদের জন্য কিছু স্কুল পরিচালনা করছে। কারখানার মালিকদের প্রতি দাবি হলো আইন মেনে চলা, ন্যূনতম মজুরি চালু করা, কাজের পরিবেশ, ইকো-লেবেলিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে পোশাক শিল্প শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়ন করা এবং শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার এবং/অথবা ট্রেড ইউনিয়নে অংশগ্রহণ করার অনুমতি দেওয়া। পোশাক শিল্প কারখানাগুলিতে সিবিএ সহ অনেক সক্রিয় ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকাসমূহে অবস্থিত কারখানাগুলিতে ট্রেড ইউনিয়ন নেই। তবে এখানকার কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা উচ্চতর পারিশ্রমিক এবং উন্নত সুবিধাদি ভোগ করে। বিজিএমইএ আন্তর্জাতিক মানদন্ড মেনে চলতে এ শিল্পখাতকে সহায়তা করতে পারে, বিশেষ করে কারখানায় আজু ডাইসহ স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর রঙের কাজ না-করা নিশ্চিত করার মাধ্যমে। বাংলাদেশ এটা স্বীকার করে নিয়েছে যে, তৈরি পোশাক শিল্পের ভবিষ্যতের উপর দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নির্ভর করছে। সুতরাং এমএফএ-উত্তর বিশ্ববাজারের নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার লক্ষ্যে এই ক্ষেত্রে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করতে হয়েছে।

শতভাগ ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এবং দেশের উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক দক্ষতায় পরিচালিত তৈরি পোশাক শিল্প আজ একটি সফল কাহিনী। তৈরি পোশাক শিল্প গুরুত্বের বিচারে এখন এমন স্তরে উপনীত হয়েছে যে দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা অনেকাংশেই আজ এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল।

সম্প্রতিকালের কিছু তথ্য ২০১১ থেকে ২০১৯ সময়কালে বাংলাদেশে থেকে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি ৭% চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েছে এবং ২০১১ সালে এই খাতের রপ্তানি ছিল ১৪.৬ বিলিয়ন ডলার যা ২০১৯ সালে উন্নীত হয়েছে ৩৩.১ বিলিয়ন ডলারে (রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো)। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা যায় যে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশই আসে এই খাতের রপ্তানি থেকে।। দেশের জাতীয় আয়ে এই খাতের অবদান প্রায় ১২ শতাংশ এবং খাতটি প্রায় ৪ বিলিয়ন কর্মসংস্থান যোগায়। সর্বশেষ ৩ দশকে পোশাক রপ্তানি ব্যাপক পরিমাণে বেড়েছে। ১৯৯০-৯১ এ বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৬৮ মিলিয়ন ডলার, ২০১৮-২০১৯ এ তা দাঁড়িয়েছিল ৩০ বিলিয়ন ডলার। কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বেশ ক্ষতির শিকার হয় এবং চীন বাংলাদেশে কাঁচামাল সরবরাহ স্থগিত করলে এবং বিদেশী ক্রেতাসমূহ তাদের অনেক ক্রয়াদেশ বাতিল করার ফলে বাংলাদেশ পোশাক শিল্প বেশ বিপদে পড়ে। আদেশ স্থগিত বা বাতিল করা বিদেশী বেশ কটি প্রতিষ্ঠান হল প্রাইমার্ক, আর্কাডিয়া গ্রুপ, এম এন্ড এস, এইচ বন্ড এম, নরডসট্রম, আমেরিকান ঈগল, ভি.এফ কর্পোরেশন, পিভিএইচ গ্রুপ, লেভাইস, টার্গেট ও এরূপ আরও অনেক ব্রান্ড বিপণন কোম্পানি। শুধুমাত্র ২০১৯ সালেই বাতিল হওয়া ক্রয়াদেশের পরিমাণ ছিল ২.৪ বিলিয়ন ডলার। তবে বাংলাদেশ সরকার ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য দ্রুতই (৫০০০ কোটি টাকা/৫.৯ বিলিয়ন ডলার)- বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে এবং বরাদ্দের অর্থ ২% সুদ হারে ঋণ প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করে। এই ঋণের অর্থ দিয়ে পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের কর্মকর্তা কর্মচারিদের বেতন ও ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল এ সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। (ইউসুফ কামাল, বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রি ফ্রম চ্যালেঞ্জেস টু বেটার প্রসপেকটস, দি ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ঢাকা, ৬ অক্টোবর, ২০২০)।

সম্প্রতি (২০২০) হঠাৎ করে চাহিদা কিছুটা পড়ে যাওয়ার বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প যে সমস্যায় নিপাতিত হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকার আশাবাদী যে কোভিড-১৯ শেষ হলে অনেক সমস্যাই ১-২ বছরের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। আবার ক্রেতা দেশসমূহে পোশাকের চাহিদাও যে দ্রুতই বেড়ে যাবে তেমনটাও মনে হয় না, তাদের ক্রয় অভ্যাসে কি ধরণের পরিবর্তন আসবে তাও অনিশ্চিত। কোভিড-১৯ এর প্রকোপ কমে যাওয়ায় পর পরিস্থিতির বেশ উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাছাড়া গার্মেন্টস শিল্পে প্রযুক্তির পরিবর্তন হতে পারে এবং বাংলাদেশকে শস্তা শ্রমের উপর নির্ভর না করে নবোদ্ভাবনের কথা ভাবতে হবে। এতোসব কিছুর অর্থ হচ্ছে এখনকার সমস্যাগুলো গার্মেন্টস খাতকে ভবিষ্যতে নতুন পথে মোড় নিতে পারে এবং বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি স্বল্পমেয়াদী কোনো বিষয় হিসাবে বিবেচনা করাই ভালো। ইত্যবসরে বাংলাদেশকে নিচের বিষয়সমূহ বিবেচনা করতে হবে:

  • উৎপাদনের হার বাড়ানো এবং কারখানায় উৎপাদনের সীমবদ্ধতা/সমস্যা কাটিয়ে সরবরাহ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা;
  • পোশাক শিল্পখাতে শ্রমিকদের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি রোধ করা এবং বিজিএমই-এ ঘোষিত পদক্ষেপসমূহ অনুসরণ করে উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা;
  • কারখানার পরিসর বৃদ্ধি এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক সমস্যা সমাধান;
  • নতুন চাহিদা ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লব-কে মাথায় রেখে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য সাপ্লাই চেইন পুনর্বিন্যাস করা;
  • বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের জন্য প্রতিযোগিতার যে চাপ তৈরি হচ্ছে তা বহন করার সক্ষমতা বৃদ্ধি; এবং
  • বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা ও সরকারের ভর্তুকিনীতি সুষম করা (ফেরেস্ট বুকসন, দি ফিউচার অব বাংলাদেশ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি দি ঢাকা ট্রিবিউন, ১৮ মে ২০২১)।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের এধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা রয়েছে। তবে, কাজটি রাতারাতি সম্পন্ন করা যায় না এবং কয়েক বছরের প্রয়োজন হতে পারে, সম্ভবত ২০৩০ পর্যন্ত, যা একটি বাস্তবসম্মত বিষয় বলে মনে হয়। [মূল লেখক: হাফিজ জি.এ সিদ্দিকী; সাম্প্রতিক তথ্য সংযোজন: এস. এম মাহফুরজুর রহমান]