পোগোজ স্কুল

পোগোজ স্কুল  ১৮৪৮ সালে ঢাকায় একজন আর্মেনীয় ব্যবসায়ী ও জমিদার এন.পি পোগোজ কর্তৃক দেশের প্রথম বেসরকারি স্কুল হিসেবে চালু হয়। শুরুতে এই স্কুল পোগোজ-এর বাড়ির নিচতলায় স্থাপিত হয়েছিল এবং ‘পোগোজ অ্যাংলো ভার্নাকুলার স্কুল’ নামে পরিচিত ছিল। সেখান থেকে ১৮৫৫ সালে আর্মানিটোলার জে.পি পানিওতির মালিকানাধীন ভাড়া বাড়িতে এবং আরও পাঁচবছর পর সদরঘাটে একটি দোতলা বাড়িতে স্কুলটি স্থানান্তরিত হয়। সদরঘাটের অবস্থান থেকে অবশেষে স্কুলটি তার বর্তমান ঠিকানা চিত্তরঞ্জন এভিনিউতে স্থানান্তরিত হয়। ১৮৬৭ সালে এই স্কুলে ৫০০ ছাত্র তালিকাভুক্ত ছিল এবং তখন তা বাংলার সবচেয়ে বড় স্কুলের অভিধা অর্জন করে। পোগোজের মৃত্যুর একবছর পর ১৮৭১ সালে মোহিনীমোহন দাস নামের একজন ব্যাংকার ও জমিদার এই স্কুলটির মালিকানা গ্রহণ করেন। ১৮৯৬ সনে মোহিনীমোহন দাসের মৃত্যুর পর তাঁর প্রতিষ্ঠিত এস্টেট স্কুলের স্বত্ব বহাল রাখে। মোহিনীমোহন স্কুলের প্রথম প্রতিষ্ঠাতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে এর নামের সঙ্গে নিজের নাম সংযুক্ত করার অনুমতি দেন নি।

১৯০৭ সালে ভারতে স্কুলের স্বত্বাধিকার পদ্ধতি পরিবর্তিত হলে এই স্কুলটি পরিচালনার জন্য একটি ব্যবস্থাপনা কমিটির ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় পোগোজ স্কুল নানারকম সমস্যায় পড়ে এবং ১৯৫০ সাল নাগাদ প্রায় ভেঙে পড়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়। সৌভাগ্যক্রমে, স্কুলটি দ্রুত তার সংকট কাটিয়ে উঠতে সমর্থ হয় এবং সে সময়ের সেরা স্কুলগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সামনে এগুতে থাকে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পোগোজ স্কুলের ছাত্রদের অংশগ্রহণের রেকর্ড রয়েছে।

এই স্কুলের ছাত্র ছিলেন এমন কয়েকজন খ্যাতিমান ব্যক্তি হচ্ছেন স্যার কে.জি গুপ্ত, আইসিএস (প্রথম ভারতীয় প্রিভি কাউন্সিলর), ড. পি.কে রায় (ঢাকা কলেজ ও কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ-এর প্রথম ভারতীয় প্রিন্সিপাল), ড. অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় (প্রথম ভারতীয় ডিএসসি ও সরোজিনী নাইডুর পিতা), ড. প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ এবং আতাউর রহমান খান (চিফ মিনিস্টার), জহিরুল হক (ডাইরেকটর অব ব্যাংকিং কন্ট্রোল, করাচি) এবং বাবু মথুরামোহন চক্রবর্তী (আয়ুর্বেদিক ঔষধ প্রস্ত্ততকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের অগ্রদূত শক্তি ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা)। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে পোগোজ স্কুল তার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য অব্যাহত রেখেছে, তবে তা নতুন সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলসমূহের সাথে প্রতিযোগিতায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। বর্তমানে এই স্কুলে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার কোর্স চালু রয়েছে।  [এস. এম মাহফুজুর রহমান]