পীরগাছা উপজেলা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৬:২৫, ৬ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Robot: Automated text replacement (-'''''তথ্যসূত্র''''' +'''তথ্যসূত্র'''))

পীরগাছা উপজেলা (রংপুর জেলা)  আয়তন: ২৬৫.৩২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৩৩´ থেকে ২৫°৪৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১৮´ থেকে ৮৯°৩২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কাউনিয়া ও রাজারহাট উপজেলা, দক্ষিণে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে উলিপুর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে রংপুর সদর ও মিঠাপুকুর উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৯৫০৫০; পুরুষ ১৪৮৬৫০, মহিলা ১৪৬৪০০। মুসলিম ২৬৮৭১৬, হিন্দু ২৫৮২৬, বৌদ্ধ ১৮ এবং অন্যান্য ৪৯০।

জলাশয় প্রধান নদী: তিস্তা, ঘাঘট। হরডাঙ্গা বিল এবং চালুনিয়ার বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন রংপুর জেলা গঠনের সময় পীরগাছা ছিল মাহিগঞ্জ থানার অন্তর্গত। পরবর্তীতে ১৯১৩ সালে মাহিগঞ্জ থানা বিলুপ্ত করে নবাবগঞ্জ থানা গঠন করা হয় এবং মাহিগঞ্জ থানার কিছু অংশ নিয়ে পীরগাছা নতুন থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পীরগাছা থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৭০ ১৭০ ২৩৯৩১ ২৭১১১৯ ১১১২ ৪৬.৯৪ ৩৮.৪৫
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৪.২৯ ২৩৯৩১ ১৬৭৫ ৪৬.৯৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
অন্নদানগর ০৯ ৬৬৫৮ ১৫১২৭ ১৫১৩৫ ৪২.০৬
ইটাকুমারী ২৮ ৫৫৪৬ ১৩৪২৬ ১২৮২৯ ৪০.৩৮
কল্যাণী ৪৭ ৫০৬১ ১২৩৯১ ১১৬০৮ ৪১.৬৮
কান্দি ৫৭ ৬২২৭ ১৩৬৭১ ১৩৭৪২ ৩৬.৫৬
কৈকুড়ী ৩৮ ৭৩৩০ ১৬২২৬ ১৬৩২১ ৩৭.২৯
ছাওলা ১৯ ৯৩৩০ ১৭৮৮৮ ১৮২০২ ৩৭.৬২
তাম্বুলপুর ৮৫ ৯১১৫ ১৯৪২৫ ১৯৫৮৬ ৩৭.০৭
পারুল ৬৬ ৮০৪৪ ১৮৮৪১ ১৭৯৬৯ ৩৫.৮৬
পীরগাছা ৭৬ ৭৯৯৯ ২১৬৫৫ ২১০০৮ ৪৩.৮৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মন্থনা জমিদার বাড়ী, ইটাকুমারীর জমিদার বাড়ী ও শিব মন্দির, চন্ডীপুরে গোপন দুর্গ,  মন্থনা ত্রিবিগ্রহ মন্দির, ভবতারিণী মা কালী মন্দির, পীরগাছা শিব মন্দির, চন্ডী ও রাধা মন্দির, পীরগাছা ছোট তরফ দুর্গা মন্দির।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি পীরগাছা (মন্থনা) কোচবিহার রাজ্যের ফতেহপুর পরগণার একটি জমিদারী ছিল। কোচ কর্মচারী অনন্ত রাম (১৭০৪-১৭১৪) মুঘল আক্রমণের সময় তাদের বশ্যতা স্বীকার করে এই জমিদারী লাভ করেন যা ১৯৫০ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল। ১৭৬০ থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত এ অঞ্চলে ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল নব্দীগঞ্জ নামক স্থানে পাকবাহিনী ১১ জন বাঙালী ইপিআর সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে। স্থানীয় লোকজন রংপুর কুড়িগ্রাম রাস্তার পাশে তাদের কবর দেন। ২ ডিসেম্বর পারুল ইউনিয়নের মনুরছড়ায় পাকসেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের এক লড়াইয়ে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ২ জন পাকসেনা আহত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ১ (রংপুর কুড়িগ্রাম রাস্তার পাশে)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৪৫২, মন্দির ১৩, গির্জা ১, মাযার ৭, তীর্থস্থান ৫। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: কারবালা ঈদগাহ ময়দান, পীরগাছা আহলে হাদীস মসজিদ, সাতদরগা মসজিদ, ইটাকুমারীর শিব মন্দির, মন্থনা ত্রিবিগ্রহ মন্দির, ভবতারিণী মা কালী মন্দির, পীরগাছা শিব মন্দির, চন্ডী ও রাধা মন্দির, পীরগাছা ছোট তরফ দুর্গা মন্দির।


পীরগাছা উপজেলা


শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৯.১৫%; পুরুষ ৪৪.৪৮%, মহিলা ৩৩.৭৯%। কলেজ ৯, বিএড কলেজ (দূর শিক্ষণ) ১, এইচএসসি প্রোগ্রাম (উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়) কেন্দ্র ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৭৭, ভোকেশনাল স্কুল ৩, মাদ্রাসা ৩৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পীরগাছা কলেজ (১৯৭০), পীরগাছা জেএন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), অন্নদানগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫০), ইটাকুমারী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), পবিত্রঝাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩২), অন্নদানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৪২), নাছুমামুদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৭২), পবিত্রঝাড় কারামতিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৫০)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  লাইব্রেরি ১, ক্লাব ২৯, থিয়েটার গ্রুপ ১, মহিলা সংগঠন ৩, সিনেমা হল ৩, খেলার মাঠ ২৩।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭০.০৬%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৭২%, শিল্প ০.৩৩%, ব্যবসা ৯.৮৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৩৫%, চাকরি ৩.৭৯%, নির্মাণ ০.৮%, ধর্মীয় সেবা ০.২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৩% এবং অন্যান্য ৭.৬৭%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫১.৯৯%, ভূমিহীন ৪৮.০১। শহরে ৪৪.৬৩% এবং গ্রামে ৫২.৫৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, আখ, সরিষা, বাদাম, পাট, পান, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, তিসি, ভুট্টা, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদিব কলা, কাঁঠাল, আম, আনারস, লিচু, পেয়ারা, পেঁপে, সুপারি।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৩৯।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৮৭.৪২ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৪৬ কিমি। রেলপথ ২১ কিমি, রেলষ্টেশন ৩ (অন্নদাশঙ্কর, পীরগাছা, চৌধুরাণী)।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, মহিষ ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চিড়া ও মুড়ি মিল ৩, তুলাকল ২, কোল্ড স্টোরেজ ৫, ইটভাটা ৩।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২১, মেলা ৭। পীরগাছা হাট, পাওটানা হাট, অন্নদানগর হাট, সাতদরগা হাট, কালীগঞ্জ হাট, বড়দরগা হাট, পারুল হাট, নেক-মামুদ হাট, তামু^লপুর হাট, কৈকূড়ী হাট, কান্দি হাট, নয়ার হাট, নব্দীগঞ্জ হাট, দেউতী হাট, সৈয়দপুর হাট ও ইটাকুমারী হাট এবং থানাবর মেলা, পাগ্লা কুড়া মেলা, চন্ডীপুর মেলা, কান্দির বারুণী মেলা, বুড়া গাজীর মেলা, চৈত্র সংক্রান্তির মেলা ও মহররমের মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   পাট, পান, সুপারি, কলা, আলু, বাদাম, সরিষা, আখ, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১২.৭২% (শহরে ১১.২৮% এবং গ্রামে ৩০.৭%) পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৪৪%, ট্যাপ ০.০৯%, পুকুর ০.১৫% এবং অন্যান্য ৬.৩২%। উপজেলার ৭৯৮ টি অগভীর নলকূপের মধ্যে ৭০ টির পানি আর্সেনিকযুক্ত। অন্নদানগর, ছাওলা, ইটাকুমারী, কান্দি, তাম্বুলপুর ও পীরগাছা ইউনিয়নের নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা ২৫%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার  ৯.৪১% (শহরে ২০.০৯% এবং গ্রামে ৮.৫৩%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৭.৭৫% (শহরে ৩৯.৪৬% এবং গ্রামে ৩৭.৬১%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৫২.৮৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৯, দাতব্য ক্লিনিক ৪।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৯৭ সালে এ উপজেলায় ভয়াবহ ভূমিকম্প ও উপর্যুপরি বন্যায় তিস্তা নদীসহ অন্যান্য নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যায়।

এনজিও  ব্র্যাক, আশা, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ, আরডিআরএস।  [আহাম্মদ হোসেন চাঁন্দ]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; পীরগাছা  উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।