পাহাড়ি বন

পাহাড়ি বন

পাহাড়ি বন (Hill Forest)  পাহাড়ে বা পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত বনাঞ্চল। উষ্ণমন্ডলীয় চিরসবুজ ও অর্ধ-চিরসবুজ গাছপালা নিয়ে এ ধরনের বন গঠিত। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকার বনের অন্যতম এই বন আছে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য অঞ্চলে এবং চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলাসমূহের প্রায় ১৪ লক্ষ হেক্টর জুড়ে।

এই বনাঞ্চলের প্রায় ৬ লক্ষ ৭০ হাজার হেক্টর বন বিভাগের অধীনে এবং অবশিষ্ট প্রায় ৭ লক্ষ ৩০ হাজার হেক্টর অশ্রেণীকৃত বনাঞ্চল আছে পার্বত্য জেলা পরিষদগুলির অধীনে। এসব বন বাস্ত্তসংস্থানিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নানা জাতের বৃক্ষ, বাঁশ ও লতা গুল্মসমৃদ্ধ। পাহাড়ি বনে বিদ্যমান কাঠের পরিমাণ প্রায় ২ কোটি ৮৫ লক্ষ ৭০ হাজার ঘন মিটার। স্থানীয় প্রয়োজন ও শিল্পক্ষেত্রের চাহিদা পূরণের জন্য কাঠ ও জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ ছাড়াও এসব বন থেকে বাঁশ, ছন ইত্যাদিও সংগৃহীত হয়। অতীতে গাছ কেটে কৃত্রিম বনায়নের মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক উষ্ণমন্ডলীয় বনকে রোপিত বনে রূপান্তরের প্রক্রিয়া চালানো হয়। উজাড় বন ও বিরান জমিতে কৃষি বনায়ন অব্যাহত থাকে।

বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে বনায়ন চলছে। জ্বালানি কাঠ উৎপাদনের জন্য ৬ বছর আবর্তে দ্রুত বর্ধনশীল প্রজাতিগুলি লাগানো হচ্ছে। একইভাবে বেড়ার গোঁজ, ঘরের খুঁটি ও তক্তা তৈরির জন্য যথাক্রমে ১২, ১৮ ও ৪০ বছর আবর্তে বৃক্ষরোপণ করা হয়। বেশ কিছু কলকারখানা, বিশেষত রেয়ন, মন্ড, কাগজ, প্লাইউড, কেবিনেট ও আসবাবপত্র কারখানায় পাহাড়ি বনের কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়। পাহাড়ি বনাঞ্চলে, বিশেষত পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় বিভিন্ন আদিবাসীরা জীবিকা নির্বাহের জন্য বহুলাংশে বনের ওপর নির্ভরশীল এবং বিভিন্ন ফসল ফলাতে তারা ‘জুম’ চাষপদ্ধতি অনুসরণ করে। [মোঃ মাহফুজুর রহমান]

আরও দেখুন জুমচাষ; সামাজিক বনায়ন