পায়রা সমুদ্র বন্দর

পায়রা সমুদ্র বন্দর বাংলাদেশের ৩য় সমুদ্র বন্দর ‘পায়রা বন্দর’ পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া, বালিয়াতলী, ধূলাসার, ধানখালী ও টিয়াখালী ইউনিয়নের অন্তর্গত রাবনাবাদ চ্যানেলের পশ্চিম তীরে পোতাশ্রয় মুখ থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার অভ্যন্তরে অবস্থিত। ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর এ বন্দরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় এবং ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে এর কার্যক্রম চালু হয়।

পায়রা সমুদ্র বন্দরের আউটার অ্যাংকরেজ থেকে রাবনাবাদ চ্যানেলে ঢোকার পথে পানির সর্বনিম্ন গভীরতা প্রায় ৫ মিটার। চ্যানেলের ভেতর এই গভীরতা ১৬ থেকে ২১ মিটার। চ্যানেলের ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় ড্রেজিং করা হলে জোয়ারের সময় ১৬ মিটার গভীর (চট্টগ্রামে সর্বোচচ ৯.২ মিটার) এবং ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট জাহাজ (চট্টগ্রামে সর্বোচচ ১৮৬ মিটার) প্রবেশের সুবিধাসহ সামুদ্রিক বন্দর অবকাঠামো তৈরি হবে। বর্তমানে ৪৫ কিলোমিটার চ্যানেলে বছরে প্রায় ২০০ জাহাজ চলাচল করছে। তবে পুরো বন্দরের নির্মাণ কাজ শেষ হলে প্রতিদিন ৫০টির অধিক জাহাজ চলাচল করতে পারবে। প্রায় ৬ হাজার একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা সমগ্র পায়রা সমুদ্র বন্দরে কন্টেইনার, বাল্ক, সাধারণ কার্গো, এলএনজি, পেট্রোলিয়াম ও যাত্রী টার্মিনাল আছে। সেই সাথে অর্থনৈতিক অঞ্চল, তৈরি পোশাক, ঔষধশিল্প, সিমেন্ট, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, সার কারখানা, তেল শোধনাগার ও জাহাজ নির্মাণশিল্পসহ আরো অনেক শিল্প কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এ বন্দরকে কেন্দ্র করে সার কারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিপুল কর্মসংস্থান, জাহাজশিল্প, দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলায় খাদ্যশস্য সরবরাহ, ট্রানজিট সুবিধা এবং ইকোনমিক করিডোর, কুয়াকাটা কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা এবং সর্বোপরি ব্লু ইকোনমি প্রসারে বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি হবে।

অন্য বন্দরে জাহাজ চলাচলে জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করতে হলেও পায়রা বন্দরে অনায়াসেই পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করতে পারবে। গভীরতা বেশি থাকায় এ রুটে ২৪ ঘণ্টা জাহাজ চলাচলের সুযোগ রয়েছে। এ কারণে এ বন্দরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বেশি। দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দরের পাশে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আধুনিক নৌঘাঁটিতে নৌকমান্ডো, এভিয়েশন, জাহাজ ও সাবমেরিন বার্থিং সুবিধা থাকবে। এ ঘাঁটি দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মধ্যবর্তী হওয়ায় এখান থেকে নেভাল এভিয়েশন কার্যক্রম পরিচালনা করে দেশের বিস্তীর্ণ সমুদ্র এলাকায় নজরদারি রক্ষা করা সম্ভব হবে। নৌবাহিনীর এ ঘাঁটির মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি সুন্দরবন ও তদ্সংলগ্ন এলাকায় অপরাধ দমনে নৌবাহিনী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে পারবে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে সাধারণ জনগণের জানমাল রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। [মোহাম্মদ আবদুল মজিদ]