পাদুকা শিল্প: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''পাদুকা শিল্প'''  বাংলাদেশে আধুনিক পাদুকা শিল্পের সূচনা ১৯৮০-র দশকে ঘটলেও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলেই এ অঞ্চলে পাদুকা শিল্পের প্রসার ঘটেছিল। আর ১৯৯০-এর দশকে এসে বাংলাদেশ পাদুকা সামগ্রী রপ্তানি শুরু করে। ব্রিটিশ আমলে পূর্ববঙ্গে যেসব পাদুকা নির্মাণ কারখানা ছিল সেগুলি ছিল নেহায়েৎই ক্ষুদ্র এবং সেগুলিকে সংগঠিত শিল্প না বলে কুটির পর্যায়ের কারখানা বলাই অধিকতর যুক্তিযুক্ত। এ জাতীয় কিছু কারখানা মূলত কয়েকটি জেলা শহরে গড়ে ওঠে। কলকাতা একসময় পাদুকা শিল্পে বেশ সমৃদ্ধ ছিল এবং ১৯৪৭-এর পূর্বপর্যন্ত কলকাতাই ছিল পূর্ববঙ্গের মানুষের ব্যবহারের পাদুকা সামগ্রী আমদানির প্রধান উৎস। ১৯৪৭-এর পর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এ এলাকায় পাদুকা আমদানি শুরু হয়। বাটা সু কোম্পানি টঙ্গীতে জুতা কারখানা প্রতিষ্ঠা করে ১৯৬২ সালে এবং এটিই ছিল বাংলাদেশ এলাকার বৃহদায়তন পাদুকা উৎপাদনের প্রথম শিল্প প্রতিষ্ঠান। এরপর ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইস্টার্ন প্রোগ্রেসিভ সু ইন্ডাস্ট্রিজ। দুটি প্রতিষ্ঠান একত্রে যা উৎপাদন করত তা স্থানীয় বাজারে যেমন প্রচুর পরিমাণে যোগান বৃদ্ধি করে তেমনি সোভিয়েত ইউনিয়ন, চেকোশ্লোভাকিয়া ইংল্যান্ডসহ বহু দেশে রপ্তানিও করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কারখানা দুটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে স্বাধীনতার পর এগুলিকে আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়, সেই সঙ্গে নতুন নতুন অনেক পাদুকা কারখানাও গড়ে ওঠে। নতুন তৈরি হওয়া কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পাদুকা শিল্প প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এপেক্স ফুটওয়ার, এক্সেলসিওর সু’জ এবং প্যারাগন লেদার অ্যান্ড ফুটওয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ।
'''পাদুকা শিল্প'''  বলতে জুতা উৎপাদন ও বিক্রির কাজে নিয়োজিত শিল্পকে বোঝায়। কতগুলো কারণে পাদুকা শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি তাৎপর্যপূর্ণ স্থান করে নিয়েছে। প্রথমত খাদ্য, বাসস্থান, জামা-কাপড়ের মতই জুতা একটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে পড়ে। দ্বিতীয়ত এটি  একটি শ্রম-নির্ভর প্রক্রিয়া যা প্রচুর সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। তৃতীয়ত স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চামড়া শিল্পের সাথে পশ্চাদমুখী সংযোগ এবং বিপণন বিক্রির কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের অগ্রমুখী সংযোগ স্থাপন করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশে পাদুকা শিল্প উৎপাদন ও রপ্তানির মধ্যে তুলনামূলক সুবিধা অর্জন করে এগিয়ে চলেছে।


বর্তমানে বাংলাদেশে দুই হাজারেরও বেশি পাদুকা শিল্পকারখানা রয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র ২৩টি মোটামুটি বৃহদায়তন এবং যান্ত্রিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন পরিচালনা করে। অন্যগুলিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশের পাদুকা শিল্পের মোট উৎপাদনক্ষমতা ৩ কোটি ২০ লক্ষ জোড়া। তবে এই সংখ্যা চামড়া, প্লাস্টিক, রাবার সব উপাদান দিয়ে তৈরি পাদুকার সর্বমোট হিসাব। মোট উৎপাদন ক্ষমতার ২ কোটি ৫০ লক্ষ জোড়া উৎপাদনের ব্যবস্থা আছে যান্ত্রিক প্রযুক্তিমূলক কারখানায়, বাকিটা তৈরি হয় হস্তশিল্প কারিগরদের নিয়ে গড়া ছোটখাটো [[কুটির শিল্প|কুটির শিল্প]] জাতীয় ঘরগুলিতে। পাদুকা খাতের বড় ও মাঝারি শিল্প-কারখানাগুলি দৈনিক ৭৫০ থেকে ৩,০০০ জোড়া জুতা উৎপাদন করে। আর উৎপাদনের বৃহদাংশই যায় স্থানীয় বাজারে, যদিও একটি অংশ রপ্তানিও হয়। পাদুকা শিল্পে প্রায় ২৫,০০০ লোকের সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে, যদিও এর কাঁচামালের যোগান, বিজ্ঞাপন ও বিপণন নেটওয়ার্ক বিবেচনায় আনলে এ শিল্পে কর্মসংস্থানের সংখ্যা দাঁড়াবে এর কয়েকগুণ। সরাসরি কর্মসংস্থানের অর্ধেকেরও বেশি নিয়োজিত রয়েছে যান্ত্রিক উৎপাদন পরিচালনার বড় ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিতে। ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প জাতীয় কারখানাগুলিতে যারা কাজ করে তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক মহিলা। দেশের সব পাদুকা কারখানার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি অবস্থিত ঢাকা ও চট্টগ্রামে। এ দুই জায়গার বড় বড় কয়েকটি কারখানাই মাত্র নিয়মিত ব্যবহারের জন্য বা খেলাধুলার জুতা অথবা বিবিধ মান ডিজাইনের ট্রেনিং শু, কেডস, চামড়া বা ক্যানভাসের স্যান্ডেল, চপ্পল অথবা অন্যান্য কারখানাকে যোগান দেওয়ার মতো সোল, সু-আপার ইত্যাদি তৈরির ক্ষমতা রাখে।
ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে তেমন কোন বৃহৎ জুতার কারখানা ছিল না। তখন মূলত কলকাতা থেকে জুতা আমদানি করা হতো। কিন্তু ১৯৬২ সালের দিকে প্রথমত তদানিন্তন পূর্ব বাংলায় বাণিজ্যিকভাবে জুতা উৎপাদন শুরু হয়, যার একটি ব্রান্ড নাম ছিল ‘বাটা’এবং প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল ‘বাটা স্যু কোম্পানি’। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে ইপ্সি জুতা উৎপাদন ও রপ্তানি আরম্ভ করে। এর রপ্তানির দেশগুলো ছিল ইউ.এস.এস.আর, চেকোশ্লোভাকিয়া এবং ইংল্যান্ড। এটিই ছিল আন্তর্জাতিক বাজারে প্রথম এদেশের জুতা রপ্তানির প্রথম ঘটনা। এ শিল্পে এখন উৎপাদন ইউনিটের সংখ্যা ২০০০ অতিক্রম করেছে। অধিকাংশ ইউনিটই হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকৃতির এবং ২৩টি ইউনিট তুলনামূলকভাবে বৃহৎ অকারের হলেও কারিগরি দিক থেকে যন্ত্রচালিত হস্তচালিত উভয় ধরনের রয়েছে। এ শিল্পের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৩২ মিলিয়ন জোড়া জুতা যার মধ্যে চামড়া ও চামড়া বহির্ভূত উভয় ধরনের কাঁচামাল অন্তর্ভূক্ত । প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রাত্যহিক উৎপাদন ক্ষমতা ৭৫০-৩০০০ জোড়ার মধ্যে উঠানামা করে।


দেশের বাজারে পাদুকা সামগ্রী বিপণনে নিয়োজিত পাইকারি খুচরা ব্যবসায়ে আনুমানিক ৫০,০০০ লোক কাজ করে। দেশের ভেতরে বিদেশি পাদুকা বিক্রয় করে কিছু আমাদানিকারক ও তাদের এজেন্ট আর স্থানীয় উৎপাদনকারীরা ঢাকা বা চট্টগ্রামের মতো বড় শহর ছাড়াও জেলা বা থানা শহরভিত্তিক এজেন্ট ব্যবহার করে। আর দেশ থেকে বিদেশে পাদুকা সামগ্রী রপ্তানি হয় পাইকারি ক্রয়ে নিয়োজিত আঞ্চলিক প্রতিনিধিদের মাধ্যমে।
পাদুকা শিল্প এর বাজারসমূহে বৈচিত্র্যময় জুতা সরবরাহ করে থাকে যার উদ্দেশ্য থাকে সর্বোচ্চ মূল্য অর্জন করা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ শিল্প বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করে যেমনÑ চামড়ার জুতা, খেলাধূলার জুতা, কাপড়ের স্যান্ডেল, পাটের জুতা, চপ্পল এবং জুতার তলির উপরিভাগ। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, পাদুকা শিল্প এর পশ্চাদ সম্মুখ সংযোগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে সবমিলে প্রায় ৫০,০০০ লোক নিয়োজিত রয়েছে। এখন পর্যন্ত জুতা বিক্রির ক্ষেত্রে পাদুকা শিল্প অভ্যন্তরীণ বাজারেই প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। তবে নামিদামী ব্রান্ড-এর বাজার শেয়ার উর্ধ্বমুখী এবং তা অভ্যন্তরীণ বাজার চাহিদার প্রায় ৩০ শতাংশের সমান। এছাড়াও পাদুকার বাজার বছরে ১২% থেকে ১৫% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাদুকা শিল্পের ব্যবসায় চক্রাকার প্রভাব বিদ্যমান কারণ একমাত্র ঈদ-উল ফিতরের সময় ২৫% থেকে ৩০% জুতা বিক্রি হয়ে থাকে। স্থানীয় বাজারে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে এমন কতিপয় ব্রান্ড হচ্ছে- বে, হেমকো, জেনি, ফরচুনা, ক্রিমেন্ট, ভাইব্রেন্ট, ওয়াকার ওরিয়ন, ফেলকন, জেইলস্, সাম্পান প্রভৃতি।


বাংলাদেশ এক সময় প্রচুর পরিমাণে পাদুকা আমদানি করলেও এখন পাদুকা উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং প্রচুর পাদুকা বিদেশে রপ্তানি হয়। ১৯৭২ সালেও বাংলাদেশ ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার পাদুকা রপ্তানি করেছে। তবে ১৯৯৭ সালে রপ্তানিকৃত পাদুকার মূল্য ছিল ১৯০ কোটি টাকা। রপ্তানি ক্ষেত্রে প্রকৃত অগ্রগতি ঘটেছে ১৯৯০-এর পর এবং ১৯৯০-৯১-এর তুলনায় ১৯৯৬-৯৭তে রপ্তানি বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৫২৭%বাংলাদেশ থেকে এখন যেসব দেশে পাদুকা রপ্তানি হয় সেগুলির শীর্ষে রয়েছে জাপান (বাজার শেয়ার ৩৪%)। অন্যান্য দেশ হচ্ছে যুক্তরাজ্য (১১%), স্পেন (৯%), জার্মানি (৮%), রাশিয়া ৭%), ইতালি (৫%) এবং যুক্তরাষ্ট্র (২%)।
১৯৬৭ সাল থেকেই জুতা রপ্তানি হয়ে আসছে এবং এর প্রবৃদ্ধির হার উর্ধ্বমুখী হলেও বার্ষিক প্রবৃদ্ধি খুবই দুর্বল। ১৯৭২ সালে ০.১৪ মিলিয়ন টাকা থেকে ১৯৯৭ সালে ১.৯ বিলিয়ন টাকায় উপনীত হয়। বাংলাদেশ প্রধানত চামড়ার জুতা রপ্তানি করে এবং রপ্তানির পরিমাণ ১৯৯০-৯১ এবং ১৯৯৬-৯৭ মধ্যকার সময়ে ৫২৭% হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী সংস্কৃতি এবং ফ্যাশনের পরিবর্তনের ফলে সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশী জুতার চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশ বিদেশ থেকে জুতা আমদানি করছে এবং এ হার ক্রমবর্ধমানশীল।


বাংলাদেশে পাদুকা ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণের সরকারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পাদুকা শিল্পের সামগ্রিক উন্নয়ন ও রপ্তানি পাদুকা শিল্প বিকাশে এফবিবিসিআই (ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ) এবং ইপিবি (রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে পাদুকা শিল্পখাত এবং এই খাতে নিয়োজিত ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখাশোনার প্রধান দুটি সংস্থা হচ্ছে বাংলাদেশ পাদুকা প্রস্ত্ততকারক সমিতি এবং বাংলাদেশ পাদুকা ব্যবসায়ী সমিতি। প্রথমটির প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৮৪ সালে এবং তা নিবন্ধিত হয় ১৯৮৮ সালে। ১৯৯৯ সালে এর সদস্য সংখ্যা ছিল ১৪৯। তবে বাটা, এপেক্স, এক্সেলসিওর ইত্যাদি বৃহদায়তন ও রপ্তানিকারক পাদুকা শিল্প প্রতিষ্ঠান এই সংস্থার সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্ট করে নি। বাংলাদেশ পাদুকা ব্যবসায়ী সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৩ সালে এবং বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪০০। চামড়াজাত পাদুকা তৈরিকারক এবং রপ্তানীকারকদের সঙ্গে বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে সুন্দর বাণিজ্য পরিবেশ এবং দ্বিপাক্ষিক লাভজনক সম্পর্ক তৈরি করার জন্য চামড়াজাত পণ্য এবং পাদুকা শিল্প ও বাংলাদেশ রপ্তানি এসোসিয়েশন নামে এক সাথে এলএফএমইএবি নামে ২০০৩ সালে একটি সংগঠন তৈরি হয়।
উৎপাদনের পরিমাণের দিক থেকে বাংলাদেশ বর্তমানে জুতার বিশ্ব বাজারে ৮ম স্থান দখল করে আছে। এ ছাড়াও অভ্যন্তরীন জুতার বাজারের বাৎসরিক চাহিদার পরিমান ৩০ মিলিয়ন জোড়া যা মধ্যবিত্তের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে দ্রুত বর্ধনশীল। বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য এবং জুতা উৎপাদনকারী এবং রপ্তানিকারক সমিতির তথ্যমতে, স্থানীয় জুতা শিল্প বাৎসরিক ২১% হারে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হচ্ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-র মতে দেশের জুতা রপ্তানির পরিমান ২০০৮-০৯ সময়কালে ৬১ মিলিয়ন ডলার থেকে ৮৫ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যার প্রবৃদ্ধির হার ৩৯ শতাংশ।


২০০৬ সালে এপেক্স কোম্পানি পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং জাপানে পাদুকা রপ্তানি করে ৪২ মিলিয়ন ইউএস ডলার  আয় করে।  [ইশতিয়াক আহমেদ খান এবং মো ওয়াহিদুল হাবিব]
রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি এ শিল্পের অগ্রগতির সম্ভাবনা নি:সন্দেহে উজ্জল। বর্তমানে জুতা শিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজার আয়তন প্রায় ১৭০ বিলিয়ন ডলার হিসাব করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ জুতার চাহিদার এ পরিমাণ বাৎসরিক প্রায় ২০০-২৫০ মিলিয়ন জোড়ার সমপরিমান; যার প্রায় ২৪ মিলিয়ন জোড়া ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে আমদানি করা হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬০৭.৮৮ মিলিয়ন ডলারের চামড়াজাত এবং ২৭১.৫৩ মিলিয়ন ডলারের চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি করেছিল। ২০১৭ অর্থবছরে জুতার বিশ্ব বাজারকে ২৪৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যায়ন করা হয়েছিল এবং ২০২১ সালে ৩২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে।


[[en:Footwear Industry]]
বাংলাদেশ জুতা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশ্বে একটি নতুন কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বর্তমান ভৌগলিক ও পরিবেশগত সক্ষমতার জন্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা তাদের চামড়া শিল্প কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরের জন্য উৎসাহী হয়েছে। অতি সম্প্রতি তাইওয়ানের তিনজন বৃহৎ বিনিয়োগকারী ঢাকা ও চট্টগ্রামের রপ্তানি প্রক্রিয়া অঞ্চলের বাইরে বর্তমানে ১৮টি জুতা এবং চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন কারখানায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কোরিয়ার ইয়ং ওয়ানস্ কোম্পানি বাংলাদেশে এশিয়ার সর্ববৃহৎ জুতা কমপ্লেক্স-এর নির্মাণ কাজ করছে।  [ইশতিয়াক আহমেদ খান, মো ওয়াহিদুল হাবিব এবং বেলায়েত হোসেন]
 
[[en:Footwear Industry]]
 
[[en:Footwear Industry]]


[[en:Footwear Industry]]
[[en:Footwear Industry]]

১৬:০৪, ১৫ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

পাদুকা শিল্প  বলতে জুতা উৎপাদন ও বিক্রির কাজে নিয়োজিত শিল্পকে বোঝায়। কতগুলো কারণে পাদুকা শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি তাৎপর্যপূর্ণ স্থান করে নিয়েছে। প্রথমত খাদ্য, বাসস্থান, জামা-কাপড়ের মতই জুতা একটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে পড়ে। দ্বিতীয়ত এটি একটি শ্রম-নির্ভর প্রক্রিয়া যা প্রচুর সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। তৃতীয়ত স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চামড়া শিল্পের সাথে পশ্চাদমুখী সংযোগ এবং বিপণন ও বিক্রির কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের অগ্রমুখী সংযোগ স্থাপন করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশে পাদুকা শিল্প উৎপাদন ও রপ্তানির মধ্যে তুলনামূলক সুবিধা অর্জন করে এগিয়ে চলেছে।

ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে তেমন কোন বৃহৎ জুতার কারখানা ছিল না। তখন মূলত কলকাতা থেকে জুতা আমদানি করা হতো। কিন্তু ১৯৬২ সালের দিকে প্রথমত তদানিন্তন পূর্ব বাংলায় বাণিজ্যিকভাবে জুতা উৎপাদন শুরু হয়, যার একটি ব্রান্ড নাম ছিল ‘বাটা’এবং প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল ‘বাটা স্যু কোম্পানি’। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে ইপ্সি জুতা উৎপাদন ও রপ্তানি আরম্ভ করে। এর রপ্তানির দেশগুলো ছিল ইউ.এস.এস.আর, চেকোশ্লোভাকিয়া এবং ইংল্যান্ড। এটিই ছিল আন্তর্জাতিক বাজারে প্রথম এদেশের জুতা রপ্তানির প্রথম ঘটনা। এ শিল্পে এখন উৎপাদন ইউনিটের সংখ্যা ২০০০ অতিক্রম করেছে। অধিকাংশ ইউনিটই হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকৃতির এবং ২৩টি ইউনিট তুলনামূলকভাবে বৃহৎ অকারের হলেও কারিগরি দিক থেকে যন্ত্রচালিত ও হস্তচালিত উভয় ধরনের রয়েছে। এ শিল্পের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৩২ মিলিয়ন জোড়া জুতা যার মধ্যে চামড়া ও চামড়া বহির্ভূত উভয় ধরনের কাঁচামাল অন্তর্ভূক্ত । প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রাত্যহিক উৎপাদন ক্ষমতা ৭৫০-৩০০০ জোড়ার মধ্যে উঠানামা করে।

পাদুকা শিল্প এর বাজারসমূহে বৈচিত্র্যময় জুতা সরবরাহ করে থাকে যার উদ্দেশ্য থাকে সর্বোচ্চ মূল্য অর্জন করা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ শিল্প বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করে যেমনÑ চামড়ার জুতা, খেলাধূলার জুতা, কাপড়ের স্যান্ডেল, পাটের জুতা, চপ্পল এবং জুতার তলির উপরিভাগ। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, পাদুকা শিল্প এর পশ্চাদ ও সম্মুখ সংযোগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে সবমিলে প্রায় ৫০,০০০ লোক নিয়োজিত রয়েছে। এখন পর্যন্ত জুতা বিক্রির ক্ষেত্রে পাদুকা শিল্প অভ্যন্তরীণ বাজারেই প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। তবে নামিদামী ব্রান্ড-এর বাজার শেয়ার উর্ধ্বমুখী এবং তা অভ্যন্তরীণ বাজার চাহিদার প্রায় ৩০ শতাংশের সমান। এছাড়াও পাদুকার বাজার বছরে ১২% থেকে ১৫% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাদুকা শিল্পের ব্যবসায় চক্রাকার প্রভাব বিদ্যমান কারণ একমাত্র ঈদ-উল ফিতরের সময় ২৫% থেকে ৩০% জুতা বিক্রি হয়ে থাকে। স্থানীয় বাজারে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে এমন কতিপয় ব্রান্ড হচ্ছে- বে, হেমকো, জেনি, ফরচুনা, ক্রিমেন্ট, ভাইব্রেন্ট, ওয়াকার ওরিয়ন, ফেলকন, জেইলস্, সাম্পান প্রভৃতি।

১৯৬৭ সাল থেকেই জুতা রপ্তানি হয়ে আসছে এবং এর প্রবৃদ্ধির হার উর্ধ্বমুখী হলেও বার্ষিক প্রবৃদ্ধি খুবই দুর্বল। ১৯৭২ সালে ০.১৪ মিলিয়ন টাকা থেকে ১৯৯৭ সালে ১.৯ বিলিয়ন টাকায় উপনীত হয়। বাংলাদেশ প্রধানত চামড়ার জুতা রপ্তানি করে এবং রপ্তানির পরিমাণ ১৯৯০-৯১ এবং ১৯৯৬-৯৭ মধ্যকার সময়ে ৫২৭% হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী সংস্কৃতি এবং ফ্যাশনের পরিবর্তনের ফলে সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশী জুতার চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশ বিদেশ থেকে জুতা আমদানি করছে এবং এ হার ক্রমবর্ধমানশীল।

উৎপাদনের পরিমাণের দিক থেকে বাংলাদেশ বর্তমানে জুতার বিশ্ব বাজারে ৮ম স্থান দখল করে আছে। এ ছাড়াও অভ্যন্তরীন জুতার বাজারের বাৎসরিক চাহিদার পরিমান ৩০ মিলিয়ন জোড়া যা মধ্যবিত্তের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে দ্রুত বর্ধনশীল। বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য এবং জুতা উৎপাদনকারী এবং রপ্তানিকারক সমিতির তথ্যমতে, স্থানীয় জুতা শিল্প বাৎসরিক ২১% হারে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হচ্ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-র মতে দেশের জুতা রপ্তানির পরিমান ২০০৮-০৯ সময়কালে ৬১ মিলিয়ন ডলার থেকে ৮৫ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যার প্রবৃদ্ধির হার ৩৯ শতাংশ।

রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি এ শিল্পের অগ্রগতির সম্ভাবনা নি:সন্দেহে উজ্জল। বর্তমানে জুতা শিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজার আয়তন প্রায় ১৭০ বিলিয়ন ডলার হিসাব করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ জুতার চাহিদার এ পরিমাণ বাৎসরিক প্রায় ২০০-২৫০ মিলিয়ন জোড়ার সমপরিমান; যার প্রায় ২৪ মিলিয়ন জোড়া ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে আমদানি করা হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬০৭.৮৮ মিলিয়ন ডলারের চামড়াজাত এবং ২৭১.৫৩ মিলিয়ন ডলারের চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি করেছিল। ২০১৭ অর্থবছরে জুতার বিশ্ব বাজারকে ২৪৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যায়ন করা হয়েছিল এবং ২০২১ সালে ৩২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জুতা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশ্বে একটি নতুন কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বর্তমান ভৌগলিক ও পরিবেশগত সক্ষমতার জন্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা তাদের চামড়া শিল্প কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরের জন্য উৎসাহী হয়েছে। অতি সম্প্রতি তাইওয়ানের তিনজন বৃহৎ বিনিয়োগকারী ঢাকা ও চট্টগ্রামের রপ্তানি প্রক্রিয়া অঞ্চলের বাইরে বর্তমানে ১৮টি জুতা এবং চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন কারখানায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কোরিয়ার ইয়ং ওয়ানস্ কোম্পানি বাংলাদেশে এশিয়ার সর্ববৃহৎ জুতা কমপ্লেক্স-এর নির্মাণ কাজ করছে। [ইশতিয়াক আহমেদ খান, মো ওয়াহিদুল হাবিব এবং বেলায়েত হোসেন]