পাট প্রতিবেদন, ১৮৭৭

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:০৭, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

পাট প্রতিবেদন, ১৮৭৭  ১৮৭৩ সালের পূর্বে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাট চাষ সম্পর্কে অতি অল্প তথ্যই পাওয়া যায়। ১৮৭৩ সালে এইচ.সি কার-কে চেয়ারম্যান করে পাট বিষয়ক একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল। কমিশন পাট চাষের সূচনা এবং বিস্তৃতি সম্পর্কে জেলা কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিবেদন চেয়ে পাঠান। কমিশন ‘বাংলায় পাট চাষ এবং ব্যবসার উপর প্রতিবেদন’ শিরোনামে ১৮৭৭ সালে প্রাপ্ত তথ্যাদি প্রকাশ করে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী বিগত ২৫ বছর বা এর কাছাকাছি সময়ে রংপুরে পাটের চাষ ক্রমশ বিস্তার লাভ করেছিল। প্রায় ১৮৪৭ সাল হতে বগুড়ায় পাট চাষ এবং পাবনায় প্রায় ২৫ বছর ধরে পাট চাষের উন্নতি হচ্ছিল। ১৮৬৫ সাল হতে ঢাকায় ব্যাপক হারে এবং বিগত ২৫ বছর ধরে ময়মনসিংহে পাট চাষ শুরু হয়েছিল। ত্রিপুরা এবং নোয়াখালীতে বিগত ২০ বছর ধরে পাট চাষ হচ্ছিল। ফরিদপুরে বিগত ৯ বা ১০ বছরের মধ্যে এবং বাকেরগঞ্জে বিগত ১৫ বছর ধরে পাট চাষের বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়। ২৪ পরগনায় বিগত ১০ বা ১২ বছর ধরে পাট উৎপাদিত হচ্ছিল, যদিও হুগলি এবং বর্ধমানে এর চাষ শুরু হয়েছিল অনেক পরে ১৮৭২ সালে। জেলা কর্মকর্তাদের প্রতিবেদনসমূহ ধারণা দেয় যে, ১৮৪০ হতে বাংলায় ব্যাপকভাবে পাট উৎপাদন শুরু হয়।

সারণি ১  ১৮৩০/৩১ হতে ১৮৭৯ পর্যন্ত একরের পরিমাপে পাট চাষাধীন আনুমানিক জমির পরিমাণ:

বছর#একর

১৮৩০/৩১-১৮৩৪/৩৫১৮৩৫/৩৬-১৮৩৯/৪০১৮৪০/৪১-১৮৪৪/৪৫১৮৪৫/৪৬-১৮৪৯/৫০১৮৫০/৫১-১৮৫৪/৫৫১৮৫৫/৫৬-১৮৫৯/৬০১৮৬০/৬১-১৮৬৪/৬৫১৮৬৫/৬৬ - ১৮৬৯/৭০১৮৭০-১৮৭৪১৮৭৫-১৮৭৯#২,২৭৮ ৮,৩৫৭ ১৫,৮৪২ ১৯,৩৬৭ ৪৮,৭৬৯ ৬২,৩১৫ ১৮২,৪২৭ ২১৭,৩৮৬ ৪১৮,৪৮১ ৪৮৬,০৩১

উৎস  আলী, জুট, ১৯৯৮, ২৩

উপরিউক্ত সারণি ১৮৩০/৩১ হতে ১৮৭৯ সাল পর্যন্ত পঞ্চবার্ষিক ভিত্তিতে একরের মাপে পাট চাষাধীন আনুমানিক জমির পরিমাণ তুলে ধরে। এতে দেখা যায় যে, প্রথম পঞ্চবার্ষিকীতে পাট চাষাধীন এলাকার পরিমাণ ছিল অল্প কেবল ২২৭৮ একর। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকীতে এটা ৮৩৫৭ একর পর্যন্ত বেড়ে যায়। তখন থেকে পাট চাষের ভূমি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী এবং পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকীর মধ্যে বৃদ্ধির শতকরা হার ছিল প্রায় ৫০০ ভাগ। সর্বশেষ পঞ্চবার্ষিকীতে একরের মাপে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ৪,৮৬,০৩১ একরে। পঞ্চম এবং শেষ পঞ্চবার্ষিকীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্বল্পকালীন অবনতিসহ বৃদ্ধি ছিল প্রায় শতকরা ৯০০ ভাগ।

পাটের অভ্যন্তরীণ ব্যবসা  উৎপাদক হতে ভোক্তা পর্যন্ত কাঁচাপাট বাজারের চারটি স্তর অতিক্রম করত: প্রাথমিক অথবা হাট নামে পরিচিত গ্রাম্য বাজার, মাধ্যমিক অথবা মফস্বল বাজার, তৃতীয় স্তরে কলকাতার প্রান্তিক বাজার এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে কলকাতা রপ্তানি বাজার। ফড়িয়া এবং ব্যাপারীগণ (ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী) হাটে হাটে, কৃষকদের নিকট হতে পাট ক্রয় করত। তারা প্রধান সড়কসমূহের গুরুত্বপুর্ণ স্থানে এবং স্টীমারঘাটে ও রেলওয়ে স্টেশনের নিকটে অবস্থিত মাধ্যমিক বাজারের ব্যবসায়িদের কাছে পাট বিক্রি করত। পালাক্রমে ব্যবসায়ীগণ তাদের ক্রয়কৃত পাট কলকাতা প্রান্তিক বাজারের বেলার’দের নিকট বিক্রি করত। বেলারগণ কলকাতা রপ্তানি বাজারে জাহাজিদের যারা পাট বিদেশে রপ্তানি করত অর্থাৎ তাদের কাছে পাট বিক্রি করত।

১৮৭৯ সাল পর্যন্ত পাটের বহির্বাণিজ্য  আঠারো শতকের শেষ দশকে পাটের পরীক্ষামূলক জাহাজিকরণ শুরু হয়েছিল। পাটের বাণিজ্যিকীকরণের সূচনা ১৮৩৫ সাল হতে চিহ্নিত হওয়া উচিত। কারণ ঐ বছরেই ডান্ডিতে সফলভাবে যান্ত্রিক উপায়ে পাটের তন্তু উৎপাদন সম্পন্ন হয় এবং ডান্ডি পাট শিল্পের কেন্দ্র রূপে পরিণত হয়। এই সফলতা বিশ্বব্যাপী পাট শিল্পের ভিত্তি রচনা করে। ১৮৩৫ সালের পরবর্তী বছরগুলিতে পাট রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। নিচের সারণিতে এটি দেখানো হলো:

সারণি ২  মোট রপ্তানি (হাজার টনে)

বছর#রপ্তানি#পরিবর্তনের শতকরা হার

১৮৩০/৩১-১৮৩৪/৩৫১৮৩৫/৩৬-১৮৩৯/৪০১৮৪০/৪১-১৮৪৪/৪৫১৮৪৫/৪৬-১৮৪৯/৫০১৮৫০/৫১-১৮৫৪/৫৫১৮৫৫/৫৬-১৮৫৯/৬০১৮৬০/৬১-১৮৬৪/৬৫১৮৬৫/৬৬ - ১৮৬৯/৭০১৮৭০-১৮৭৪১৮৭৫-১৮৭৯#২৫৯১১৯৩২১২৫৩৫৬৮৪২০০৩২৩৮৯৫,২৯১৫,৩৪১#---২৬৪%৯০.১০%২২.৫৪%১৫২.৩৫%২৭.৮৫%১৯২.৮৩%১৯.১৭%১২১.৬৫%০.৯৪%

উৎস  আলী, জুট, ১৯৯৮, ২৩

১৮৩৫-৩৬ হতে ১৮৩৯-৪০ পর্যন্ত পঞ্চবার্ষিকীতে বার্ষিক গড় রপ্তানি ছিল ৯১০০০ সি.ডব্লিউ.টি পূর্বতন পঞ্চবার্ষিকীর বার্ষিক গড়ের চেয়েও শতকরা হারে ২৬৪ ভাগ বৃদ্ধি। তৃতীয় এবং চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকীতে রপ্তানি বৃদ্ধির হার হ্রাস পায়, কিন্তু পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকীতে তা অত্যধিক বৃদ্ধি পায়। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকীতে এটি আবারও হ্রাস পায়। সপ্তমে বৃদ্ধি পায় কিন্তু অনুবর্তী অষ্টমে কমে যায়। পুনরায় নবম পঞ্চবার্ষিকীতে বৃদ্ধির হার উচ্চ ছিল, কিন্তু শেষে আবার কমে যায়।

শণ-এর তুলনায় পাটের আপেক্ষিক কম মূল্য, ক্রিমিয়ার যুদ্ধ (১৮৫৪-৫৬), আমেরিকার গৃহযুদ্ধ (১৮৬১-৬৫) এবং ১৮৬০ এর দিকে বিশ্ব বাণিজ্যের বিস্ময়কর বৃদ্ধি পাট ব্যবসার ব্যাপক বৃদ্ধিতে ১৮৭৭ পর্যন্ত বিশেষ অবদান রাখে।

[এম ওয়াজেদ আলী]

গ্রন্থপঞ্জি  HC Kerr, Report of the Cultivation of, and Trade in, Jute in Bengal, Calcutta, 1877; MW Ali, Jute in the Agrarian History of Bengal, 1870-1914, Rajshahi, 1998.