পদ্মা সেতু

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৪:০৮, ১৪ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদী-র উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। সেতুটি তিনটি জেলার এলাকাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে- মুন্সিগঞ্জ (মাওয়া পয়েন্টে/উত্তরপাড়), শরীয়তপুর এবং মাদারীপুর (জাজিরা/দক্ষিণপাড়)। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটেছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু অর্থনৈতিক ও অঞ্চলিক উন্নয়নের মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এটি দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন খাতের ইতিহাসে একটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে আছে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে বসানো হয়েছে একটি একক রেলপথ। ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার বা ৭২ ফুট প্রস্থ সম্বলিত পদ্মা সেতু এশিয়ার সর্ববৃহৎ এবং বিশ্বের ২৫তম সেতু।

পদ্মা সেতু

বহুমুখী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ নকশা বিশ্বের স্বনামধন্য ডিজাইন প্রতিষ্ঠান AECOM-এর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরামর্শকদের নিয়ে গঠিত একটি দল তৈরি করে। ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার মূল প্রকল্পের পরিকল্পনা করেন এবং সে সময় ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার ব্যয় ধরে পদ্মা সেতু প্রকল্প পাস করা হয়। প্রথম প্লান অনুযায়ী সেতুর নির্মাণ কাজ ২০১১ সালে শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত কওে এবং ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব সম্পদ থেকে অর্থায়ন করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর ব্যয় প্রাক্কলন পরবর্তীকালে দু’দফায় আরও প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। কোভিড ১৯ উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে সেতু সমাপ্তির সর্বশেষ প্রস্তাবিত সময় ধরা হয় জুন ২০২২।

পদ্মা সেতুর জন্য অধিগ্রহণকৃত মোট জমির পরিমাণ ৯১৮ হেক্টর। সেতুর ভৌত কাজকে মূলত (ক) মূল সড়ক, (খ) রেল সেতু, (গ) নদীশাসন, (গ) জাজিরা অ্যাপ্রোচ রোড, (ঙ) টোল প্লাজা এবং মাওয়া ও জাজিরা সার্ভিস এরিয়া এই পাঁচটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। নদীশাসন পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়। প্রথম দিকে পদ্মা নদীর তলদেশের মাটি খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়। তলদেশে স্বাভাবিক মাটি না পাওয়ায় সেতুর পাইলিং কাজ শুরুর পরে সমস্যা দেখা যায়। পরে নদীর তলদেশে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় মাটি বদলে দিয়ে নতুন মাটির স্তর তৈরি করে পিলার গাঁথার চেষ্টা করা হয়। স্ক্রিন গ্রাউটিং নামের এই পদ্ধতিতেই বসানো হয়েছে পদ্মা সেতু। সেতুর ভায়াডাক্ট ৩.১৮ কিলোমিটার, মোট ভায়াডাক্ট পিলার ৮১টি, পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা ৬০ ফুট, পাইলিং গভীরতা ৩৮৩ ফুট, মোট পাইলিং এর সংখ্যা ২৬৪। সেতুর সংযোগ সড়ক দুই পাড়ে মোট ১৪ কিলোমিটার, ইতোমধ্যে নদীশাসন হয়েছে দুই পাড়ে ১২ কিলোমিটার।

পদ্মা বহুমুখী সেতু মাওয়া জাজিরা পয়েন্ট দিয়ে নির্দিষ্ট পথের মাধ্যমে দেশের কেন্দ্রের সাথে দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সরাসরি সংযোগ তৈরি করেছে। এই সেতুটি সরাদেশের, বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত অনুন্নত অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিল্প বিকাশে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখবে। প্রকল্পটির ফলে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৪৪,০০০ বর্গ কিমি (১৭,০০০ বর্গ মাইল) বা বাংলাদেশের মোট এলাকার ২৯% অঞ্চলজুড়ে ৩ কোটিরও অধিক জনগণ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবে। পদ্মা সেতু দেশের পরিবহন নেটওয়ার্ক এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। সেতুটিতে রেল, গ্যাস, বৈদ্যুতিক লাইন এবং ফাইবার অপটিক কেবল সম্প্রসারণের ব্যবস্থা রয়েছে। এই সেতুটি দেশের জিডিপির পরিমাণ ১.২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। [মোহাম্মদ আবদুল মজিদ]