পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্র

পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি) একটি মানব হিতৈষী প্রতিষ্ঠান। এটি বর্তমানে সাভারের চাপাইনে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠাতা ব্রিটিশ নারী ভেলরি অ্যান টেইলর। প্রতিষ্ঠানটি বেসরকারি অনুদানে পরিচালিত হয়। ১৯৭৯ সালের ১১ ডিসেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের দুটি পরিত্যক্ত গোডাউনে মাত্র ৪ জন রোগী নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। ১১ বছর বিভিন্ন স্থানে কার্যক্রম পরিচালনার পর ১৯৯০ সালে সিআরপি সাভারে স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে সিআরপি পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। এখানে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন করা হয়।

সিআরপি ভবন

সিআরপির উদ্দেশ্য পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষের চিকিৎসা ও প্রতিবন্ধীদের সার্বিক জীবনমান উন্নয়ন করা। চিকিৎসাধীন সময় রোগীদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তার নিরিখে যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবা প্রদান এর প্রধান লক্ষ্য। প্রতিবন্ধীদেরকে সমাজের মূলস্রোতধারায় একীভূত করাও সিআরপির লক্ষ্য। সিআরপি’র সুযোগ-সুবিধার মধ্যে রয়েছে পক্ষঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল। হাসপাতালটিতে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য শিশু বিভাগ, বহিরাগত রোগীদের জন্য বহির্বিভাগে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়াও এটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুর্নবাসনের লক্ষ্যে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির জন্য উচ্চমান সম্পন্ন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

ঢাকা শহরের জনগণের মাঝে সিআরপি’র সেবা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ঢাকার মিরপুরে ১৪ তলা বিশিষ্ট একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ২২টি সাধারণ শয্যা ছাড়াও এখানে মা ও শিশুদের জন্য ১১টি বিশেষায়িত শয্যা এবং ১৬টি প্রাইভেট কক্ষের ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি বহির্বিভাগে চিকিৎসার সুবিধাও রয়েছে। এর ৬ষ্ঠ তলা পর্যন্ত হুইলচেয়ারে চলাচলকারীদের যাতায়াতের জন্য র‌্যাম্পের ব্যবস্থা রয়েছে। সিআরপির অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব ধরে রাখার জন্যই ২০০৩ সাল থেকে এ শাখা কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়াও স্থানীয়ভাবে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন করার জন্য বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় সিআরপি সমাজভিত্তিক পুনর্বাসন কার্যক্রম কার্যক্রম চালু করেছে।

সিআরপি বিভিন্ন দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থা, ব্যবসায়িক ও সামাজিক সংগঠন এবং ব্যক্তিদের আর্থিক অনুদানের ওপর নির্ভরশীল, যার মাধ্যমে এখানে দরিদ্র প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের ভর্তুকি মূল্যে ও বিনামূল্যে চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবা প্রদান করা হয়। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির আয় বৃদ্ধির জন্য মৎস্য ও নার্সারি প্লান্ট, মৌসুমী ফল, পোল্ট্রি, হস্তশিল্প, হুইলচেয়ার এবং অন্যান্য সহায়ক সামগ্রী বিক্রি, গেস্ট হাউস ভাড়া ইত্যাদি কর্মকান্ড পরিচালনা করে।  [তুহিন রায়]