নীলফামারী সদর উপজেলা

নীলফামারী সদর উপজেলা (নীলফামারী জেলা) আয়তন: ৩৭৩.৩০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৪৮' থেকে ২৬°০৩' উত্তর আংশ এবং ৮৮°৪৪' থেকে ৮৮°৫৯' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ডোমার ও জলঢাকা উপজেলা, দেিণ সৈয়দপুর উপজেলা, পূর্বে কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) ও জলঢাকা উপজেলা, পশ্চিমে খানসামা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা।

জনসংখ্যা ৪৩৫১৬২; পুরুষ ২১৯০৮০, মহিলা ২১৬০৮২। মুসলিম ৩৪৪৯২২, হিন্দু ৮৯৩০৭, বৌদ্ধ ৮, খ্রিস্টান ৫১৮ এবং অন্যান্য ৪০৭।

জলাশয় প্রধান নদী: যমুনেশ্বরী, চিকি ও খড়খড়িয়া। সিংগিমারী বিল, মোতিয়াতুরা বিল, ধুলিয়ার বিল ও চওড়া বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন নীলফামারী থানা গঠিত হয় ১৮৭০ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৫ ১০৫ ১০৮ ৪৫৩৮৬ ৩৮৯৭৭৬ ১১৬৬ ৬৪.১ ৪৩.৫
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৯.২৮ ১৩ ৪৫৩৮৬ ২৩৫৪ ৬৪.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ইটাখোলা ৩১ ৫০০৪ ১৪০৭১ ১৩৮৩৪ ৪৭.১
কচুকাটা ৩৭ ৫২৪৬ ১২৭৯৭ ১২৬৩৪ ৪৪.৩
কুন্দপুকুর ৫০ ৬৫৯৭ ১৫৯১৯ ১৫৭৭৭ ৪৫.৩
খোকসাবাড়ী ৪৪ ৬৪৫১ ১১৩৪২ ১১৩২০ ৪৪.৬
গোরগ্রাম ২৫ ৬৭৬৬ ১৪১৮৪ ১৩৭৩০ ৩৯.৫
চওড়া বড়গাছা ১৮ ৭৫৫৯ ১২৯৯২ ১৩৪০০ ৩৯.৭
চড়াইখোলা ১২ ৫৯০৩ ১৫৪৪৫ ১৫৩৪২ ৪২.১
চাপড়া সরমজানী ১১ ৫৬৯৭ ১৩৪২৩ ১৩৬০৪ ৩৬.৩
টুপামারী ৯৪ ৫৯৭০ ১৫২০৭ ১৪৬২৬ ৪৫.৫
পাঁচপুকুর ৬৩ ৪৫৭৮ ১১৪২৫ ১১০৩২ ৫০.০
পলাশবাড়ি ৬৯ ৫৬১৮ ১০৫১৩ ১০৫৭৯ ৪০.৯
রামনগর ৭৫ ৫১৭৯ ১২২৮৭ ১২১৮২ ৪০.৩
লক্ষীচাপ ৭৩ ৫৫৪০ ১০০৫২ ৯৯৭০ ৪৩.৩
সঙ্গলশি ৮২ ৪৯২০ ১১৫২৫ ১১২৩৯ ৪৬.৮
সোনারায় ৮৮ ৬৪৫১ ১৪৬১২ ১৪৭১৩ ৪৬.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্মসম্মদ নীলসাগর দীঘি (পূর্ব নাম বিরাট দীঘি বা বিন্নী দীঘি, গোরগ্রাম), হযরত পীর মহিউদ্দিনের মাযার (কুন্দপুকুর), বিষ্ণুমন্দির (পলাশবাড়ি)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে ৭ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেজারি থেকে ৩০০ রাইফেল ও ১০,০০০ রাউন্ড গুলি দখল করে নেয়। ৮ এপ্রিল পাকসেনারা নীলফামারী শহরের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে, ডিসেম্বর মাসে নীলফামারী সদর উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী খানসামা উপজেলায় সীমান্ত এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর একটি যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর ৩টি ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয় ও বেশ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। উপজেলায় স্বাধীনতার স্মৃতি অম্লান ও বাশার গেট নামে ২টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন নীলপামারী সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৬২৪, মাযার ২, মন্দির ৩৭১, গির্জা ১। সুপরিচিত: হযরত পীর মহিউদ্দিনের মাযার (কুন্দপুকুর), সৈয়দ পাগলা পীরের মাযার (দারোয়ানী)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৫.৭%; পুরুষ ৪৯.৪%, মহিলা ৪২.১%। কলেজ ৬, পি.টি.আই ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২১৭, মাদ্রাসা ৪৫, মক্তব ৪৬০। উল্লেখযোগ্য শিা প্রতিষ্ঠান: মশিউর রহমান কলেজ (১৯৫৮), সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৭২), নীলফামারী সরকারি কলেজ (১৯৮৬), নীলফামারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮২), সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫), সমির উদ্দিন বালক উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৩), নতুন বাজার দ্বিমূূূখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭০), রাবেয়া বালিকা বিদ্যা নিকেতন (১৯৭৩)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক নীল কথা; সাপ্তাহিক: নীলফামারী বার্তা, নীলসাগর, নীলসমাচার। অবলুপ্ত: জাগরী (১৯৬২), নীলাঞ্চল (১৯৭২)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান কাব ৫, লাইব্রেরি ২, নাট্যদল ৪, নাট্যমঞ্চ ১, সংগীত একাডেমি ৪, সাহিত্য সমিতি ১, সিনেমা হল ২, মহিলা সংগঠন ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৯.১০%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৪১%, ব্যবসা ১২.০২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৩৯%, চাকরি ৫.৯৩%, নির্মাণ ০.৯৫%, ধর্মীয় সেবা ০.২১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১২% এবং অন্যান্য ৪.৮৭%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৫.০২%, ভূমিহীন ৪৪.৯৮%। শহরে ৪০.৪১% এবং গ্রামে ৫৬.৭০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, আলু, তামাক, তুলা, আদা।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি নীল, তিল, তিসি, কাউন, সরিষা, আউশ ধান।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, জাম, পেয়ারা, কলা।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৪১.০০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৭৩৬.৪২ কিমি, রেলপথ ২৫.০৬ কিমি

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা টেক্সটাইল মিল, স’মিল, রাইসমিল, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশ ও কাঠের কাজ, সেলাই কাজ, বিড়িশিল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৬, মেলা ১। ভবানীগঞ্জ হাট, বাবড়ীঝাড় হাট, দারোয়ানী হাট, ঢেলাপীর হাট, পঞ্চপুকুর হাট, পলাশবাড়ী হাট, পোড়ারডাঙ্গা হাট, যাদুর হাট ও শাখামাচা হাট এবং সৈয়দ পাগলা পীরের মেলা (দারোয়ানী) উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, পাট, তুলা, আদা, তামাক।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৬.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.৭%, ট্যাপ ০.৭% এবং অন্যান্য ২.৬%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২৯.৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৪.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২৫.৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র জেলা সদর হাসপাতাল ১, টিবি হাসপাতাল ১, ডায়াবেটিক হাসপাতাল ১, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র ২, কুষ্ঠ হাসপাতাল ২, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ২, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৫, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ২।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার, নিজেরা করি, আরডিআরএস। [আবদুস সাত্তার]

তথ্যসূূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; নীলফামারী সদর উপজেলার সাংস্কৃতিক সমীা প্রতিবেদন ২০০৭।