নদী ও নিষ্কাশন প্রণালী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
৩৪ নং লাইন: ৩৪ নং লাইন:


'''গ্রন্থপঞ্জি'''  MAH Khan, ‘Environmental aspects of surface water development projects in Bangladesh’ in AA Rahman ''et al'' ed, ''Environment and Development in Bangladesh,'' Vol 2, University Press Ltd, Dhaka, 1990; Haroun Er Rashid, ''Geography of Bangladesh'', University Press Ltd, Dhaka, 1991.
'''গ্রন্থপঞ্জি'''  MAH Khan, ‘Environmental aspects of surface water development projects in Bangladesh’ in AA Rahman ''et al'' ed, ''Environment and Development in Bangladesh,'' Vol 2, University Press Ltd, Dhaka, 1990; Haroun Er Rashid, ''Geography of Bangladesh'', University Press Ltd, Dhaka, 1991.
<!-- imported from file: নদী ও নিষ্কাশন প্রণালী.html-->


[[en:River and Drainage System]]
[[en:River and Drainage System]]

০৭:৪৬, ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

নদী ও নিষ্কাশন প্রণালী (River and Drainage System)  ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ৭০০ নদী সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে। তবে নদীগুলি দেশের সর্বত্র সমভাবে বণ্টিত নয়। উদাহরণস্বরূপ, উত্তরাঞ্চলের উত্তর-পশ্চিম অংশের চেয়ে দক্ষিণাঞ্চলের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে নদীর সংখ্যা অনেক বেশি এবং আকৃতিতেও অনেক বড়। বাংলাদেশের সমস্ত নদনদী, ক্ষুদ্র জলস্রোত, খাড়ি, খাল ইত্যাদির মিলিত দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪,১৪০ কিমি। নদী দৈর্ঘ্য, নিষ্কাশন অঞ্চল ও প্রবাহ পরিমাণের ভিত্তিতে বাংলাদেশের কয়েকটি নদী পৃথিবীর বড় বড় নদীগুলির মধ্যে অবস্থান করে। এ দেশের নদীগুলির অধিকাংশই দক্ষিণমুখী প্রবাহিত। চাষাবাদের জন্য পানির প্রধান উৎস এবং বাণিজ্যিক পরিবহণ পথ হিসেবে নদীগুলির ভূমিকা অপরিসীম। এছাড়া নদীগুলি স্বাদুপানির মাছের গুরুত্বপূর্ণ উৎস এবং জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ মৎস্য ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। অাঁকাবাঁকা সর্পিল নদীর তীরভাঙন ও নিয়মিত বন্যা জনগণের জন্য অপরিমেয় দুঃখকষ্টের সৃষ্টি করে এবং উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। আবার নদী প্রণালীগুলি দেশের কৃষিভূমিতে পলি ছড়িয়ে দিয়ে প্রাকৃতিক উর্বরতার ব্যবস্থা করে থাকে। নদীগুলি প্রতিবছর প্রায় ২.৪ বিলিয়ন টন পলি বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করে যার ফলে সমুদ্রমুখ বরাবর গড়ে উঠছে নতুন নতুন ভূমি। মৌসুমি বায়ু প্রবাহকালীন নদীগুলি সাগরে অতিরিক্ত পানি নির্গমন করে থাকে। এভাবে বিশাল নদী প্রণালীসমূহ একই সঙ্গে দেশের জন্য আশীর্বাদ আবার বিপর্যয় সৃষ্টিকারীও বটে। বাংলাদেশের নদী প্রণালীসমূহকে চারটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করা যায়: (১) ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী প্রণালী (২) গঙ্গা-পদ্মা নদী প্রণালী (৩) সুরমা-মেঘনা নদী প্রণালী এবং (৪) চট্টগ্রাম অঞ্চলের নদীমালা।

প্রথম তিনটি নদী প্রণালী একত্রে ১৭,২০,০০০ বর্গ কিলোমিটারের একটি বিশাল পানি নিষ্কাশন অববাহিকা জুড়ে বিস্তৃত এবং এ বিশাল অববাহিকার মাত্র ৭ শতাংশ বাংলাদেশের অন্তর্গত। নির্গত পানির মোট বার্ষিক আয়তন ১,১৭৪ বিলিয়ন ঘনমিটার যা বড় নদী প্রণালীগুলির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। অধিকাংশ নদী সূক্ষ্ম বালুকণাসমৃদ্ধ তলদেশ, পরিমিত ঢাল, সর্পিলাকৃতির গতিপথ, ভাঙনপ্রবণ তীর এবং পরিবর্তনশীল নদীখাত প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য দ্বারা মন্ডিত।

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী প্রণালী  প্রায় ২৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং বাংলাদেশের উত্তরাংশ থেকে গঙ্গার সঙ্গে মিলন পর্যমত বিস্তৃত। বাংলাদেশের বাইরে এ নদী প্রণালী প্রায় ৫৮৩,০০০ বর্গ কিলোমিটারের একটি নিষ্কাশন অঞ্চলসহ ২,৮৫০ কিলোমিটার সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করে এসেছে। ব্রহ্মপুত্র নদী তিববতের মানস সরোবর থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে ভারতের অরুণাচল প্রদেশের মধ্য-দিয়ে ব্রহ্মপুত্র (ব্রহ্মার সন্তান) নামে প্রবাহিত হয়েছে। প্রবাহপথে পাঁচটি প্রধান উপনদী থেকে ব্রহ্মপুত্র পানি সংগ্রহ করেছে যাদের মধ্যে ডিহঙ্গ (Dihang) এবং লুহিত (Luhit) প্রখ্যাত। এ ধারা পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার মাজাহরালীতে দক্ষিণ দিকে মোড় নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এখান থেকে নদীর নাম হয়েছে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা। অধিকতর ক্ষেত্রে যমুনা নামেই পরিচিত। এ ধারা দক্ষিণে ২৭৭ কিমি প্রবাহিত হয়ে আরিচার কাছে আলেকদিয়ায় গঙ্গা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এ মিলিত ধারা দক্ষিণ-পূর্বদিকে প্রায় ২১২ কিমি প্রবাহিত হয়ে চাঁদপুরের নিকট মেঘনায় পতিত হয়েছে। আসাম ও বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার প্রশস্ত অববাহিকা অংশটি সর্বত্র এর বিনুনি প্রকৃতি (braided nature), প্রচরণ এবং নদীখাতে একাধিক চর গঠনের জন্য বিখ্যাত।

দেশের উত্তর প্রান্ত থেকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর ডানতীরের উপনদীগুলি হচ্ছে ধরলা, দুধকুমার, তিস্তা, করতোয়া ও আত্রাই। ধরলা ও দুধকুমারের উৎপত্তি হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চলে। তিস্তা উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর একটি। ১৭৮৭ সালের পূর্বে এটি করতোয়া, আত্রাই এবং যমুনেশ্বরী নদীর প্রধান উৎস ছিল। ১৭৮৭ সালে প্রলয়ংকরী বন্যার ফলে তিস্তার মধ্য দিয়ে বিপুল পরিমাণ বালুস্রোত প্রবাহিত হয়ে আত্রাই-এর মুখে জমা হওয়ায় তিস্তার প্রবাহ সবলে ঘাঘট নদীতে প্রবাহিত হতে থাকে। এখনও এ প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তিস্তার দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮০ কিলোমিটার এবং প্রায় ২৮০ থেকে ৫৫০ মিটার প্রশস্ত। চিলমারীর দক্ষিণে তিস্তা ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ধরলা ও দুধকুমার নদী তিস্তার সমান্তরালে প্রবাহিত হয়। ধরলা বর্ষাকালে দ্রুত প্রবাহিত হওয়া একটি নদী, কিন্তু শুকনা মৌসুমে এটি বিনুনি প্রকৃতিতে পরিণত হয়। দুধকুমার একটি ছোট নদী। এটি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়।

করতোয়া যমুনার দীর্ঘতম উপনদী। এর মূলধারা ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার বৈকুণ্ঠপুর জলাভূমিতে উৎপন্ন হয়ে পঞ্চগড় জেলার ভিটগড়ের কাছে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর দিনাজপুর জেলার খানসামার নিকট থেকে এটি আত্রাই নামে পরিচিত। সেখান থেকে দক্ষিণ দিকে সমাধি ঘাট পর্যন্ত বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। এ ধারা পুনরায় রাজশাহী জেলার দেওয়ানপুরে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বড়াল নদীর মধ্য দিয়ে পাবনার বেড়ার নিকট যমুনায় পতিত হয়েছে। আত্রাই নদীর নিম্নাংশ দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহমান। এ অংশের নাম গুর। গুর ছোট যমুনা, আত্রাই, করতোয়া বিভিন্ন নামে দেশের উত্তরাংশে ছড়িয়ে আছে। দিনাজপুর-করতোয়া পূর্বে খানসামার উত্তরে রংপুর-করতোয়ার সঙ্গে মিলিত হতো। বর্তমানে রংপুর-করতোয়া সৈয়দপুরের নিকট উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ দিকে অাঁকা-বাঁকা পথ অনুসরণ করে গোবিন্দগঞ্জ পৌঁছেছে। এখান থেকে কাটাখালির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাঙ্গালী নদীতে পতিত হয়েছে। বগুড়া-করতোয়া মিঠাপুকুরের কাছে উৎপন্ন হয়ে বগুড়ার দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাঙ্গালী নদীতে পতিত হয়েছে। এ মিলিত ধারা ফুলঝুরি নদীকে সঙ্গে নিয়ে বাঘাবাড়ীতে এসে হুরাসাগরে পতিত হয়েছে। অতঃপর যমুনা নদীতে পতিত হয়েছে। করতোয়ার অন্য একটি অংশ জলপাইগুড়ি জেলায় উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে আত্রাই নদীতে পতিত হয়েছে। করতোয়ার এ অংশ পাবনা-করতোয়া নামে পরিচিত।

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর বামতীরে ধলেশ্বরী নদীর পূর্ব পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোগ্য শাখা নদী নেই। তবে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র বাহাদুরাবাদের নিকট থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মোড় নিয়ে জামালপুর ও ময়মনসিংহ শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভৈরব বাজারের নিকট মেঘনায় পতিত হয়েছে। ১৭৮৭ সালে আসামে সংঘটিত প্রলয়ংকরী বন্যার ফলে ব্রহ্মপুত্র নদের বর্তমান যমুনা নদী বরাবর স্থানান্তরের পূর্বে এটিই ছিল ব্রহ্মপুত্রের প্রধান ধারা। এ নদীর শাখানদীগুলি হচ্ছে বংশী, বানার, শ্রীকালী ও সাতিয়া। বংশী নদী দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে তুরাগ নদীর সঙ্গে মিলিত ধারা ঢাকার অদূরে বুড়িগঙ্গায় পতিত হয়েছে। বানার, শ্রীকালী ও সাতিয়ার মিলিত প্রবাহ শীতলক্ষ্যা নামে প্রবাহিত হয়ে মুন্সিগঞ্জের নিকট ধলেশ্বরীর সঙ্গে মিশেছে। ধলেশ্বরী যমুনা নদীর দক্ষিণ তীরের বড় শাখানদী। এটি পার্বতী থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণে মুন্সিগঞ্জের কাছে শীতলক্ষ্যায় পতিত হয়েছে। শীতলক্ষ্যা আরও দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে গজারিয়ার নিকট মেঘনায় পতিত হয়েছে।

১৯৮৮ সালের রেকর্ড অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্র-যমুনার সর্বোচ্চ প্রবাহ ৯৮,০০০ কিউমেকস; সর্বোচ্চ বেগ ৩-৪ মিটার/সেকেন্ড এবং গভীরতা ২১-২২ মিটার। বার্ষিক ১,৩৭০ মেট্রিক টন/বর্গ কিলোমিটারের পলিজ ভারসহ নদীর গড় নির্গমন প্রায় ২০,০০০ ঘন মিটার/সেকেন্ড। যমুনার গড় নতিমাত্রা হলো ১:১১,৪০০; যদিও বিভিন্ন স্থানীয় নতিমাত্রাসমূহ গড় চিত্র হতে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পার্থক্য প্রদর্শন করে।

গঙ্গা-পদ্মা নদী প্রণালী বৃহত্তর গঙ্গা নদী প্রণালীর একটি অংশ। হিমালয় পর্বতের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে নির্গত ভাগীরথী এবং মধ্য হিমালয়ের নন্দাদেবী শৃঙ্গের উত্তরে অবস্থিত গুরওয়াল থেকে উৎপন্ন অলোকনন্দা নদীর মিলিত ধারা গঙ্গা নামধারণ করে ভারতের হরিদ্বারের নিকট সমভূমিতে পৌঁছেছে। এ ধারা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রাজমহল পাহাড়ের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে। এরপর রাজশাহী জেলায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায় ১১২ কিমি প্রবাহিত হয়ে গঙ্গা নামে কুষ্টিয়া জেলার উত্তর প্রান্তে  বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অতঃপর আরিচার কাছে যমুনার সঙ্গে মিলিত হয়ে পদ্মা নামে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে চাঁদপুরের নিকট মেঘনায় পতিত হয়েছে। পদ্মার মোট দৈর্ঘ্য ৩২৪ কিমি।

উত্তর দিক থেকে আগত গঙ্গার প্রধান উপনদী মহানন্দা। দার্জিলিং-এর নিকটবর্তী মহালড্রীম পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এ নদী পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া সীমান্ত এলাকা হয়ে ভারতের পূর্ণিয়া ও মালদহ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নবাবগঞ্জের নিকট বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এখান থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে গোদাগাড়ীর কাছে গঙ্গায় পতিত হয়েছে। নাগর, টাঙ্গন ও পুনর্ভবা মহানন্দার উপনদী।

বড়াল গঙ্গার বামতীরের শাখানদী। এ নদী চারঘাটের নিকট উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে আটঘড়িয়ার কাছে দুভাগে বিভক্ত হয়ে মূল স্রোত নন্দনকুজা নামে প্রবহমান। এটি চানকোরের কাছে গুর নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মিলিত স্রোত গুমানি নামে পরিচিত। গুমানি চাটমোহরের কাছে আবার বড়াল নামে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে আত্রাই-করতোয়ার সঙ্গে মিশেছে। এ মিলিত ধারা হুরাসাগর নাম নিয়ে যমুনা নদীতে পতিত হয়েছে। গঙ্গার আরেকটি শাখানদী ইছামতি। এটি পাবনা শহরের দক্ষিণে গঙ্গা থেকে বের হয়ে পাবনা শহরকে দুভাগ করে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বেড়া থানার পাশ দিয়ে হুরাসাগরে পড়েছে। বর্তমানে এ নদীর উজানে পাবনা শহরের নিকট আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে সচল ধারা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটি এখন নিষ্কাশন খাল হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে।

সুরমা-মেঘনা নদী প্রণালী  বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী মেঘনার দৈর্ঘ্য ৬৬৯ কিলোমিটার। পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত সম্পন্ন অঞ্চলের একটি ধারা (drains) মেঘনা নদীর মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয় (মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত প্রায় ১,০০০ সেমি)। নদীটির উৎপত্তি ভারতের শিলং ও মেঘালয় পাহাড়ে। এর প্রধান উৎস বরাক নদী। বরাক-মেঘনার মিলিত দৈর্ঘ্য ৯৫০ কিলোমিটারের যার ৩৪০ কিলোমিটার বাংলাদেশে অবস্থিত। সিলেট জেলার অমলশিদে বাংলাদেশ সীমান্তে বরাক নদী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সিলেট অববাহিকার উত্তরে প্রবাহিত হয়ে সুরমা নদী খাসিয়া ও জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে আগত একাধিক উপনদী গ্রহণ করেছে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উল্লেখযোগ্য উপনদী হচ্ছে: লুবা, কুলিয়া, শারিগোয়াইন, চালতি নদী, চেনগড় খাল, পিয়াইন, বোগাপানি, যদুকাটা, সোমেশ্বরী ও কংস। ত্রিপুরা পাহাড় থেকে আগত একাধিক নদীকে কুশিয়ারা উপনদী হিসেবে গ্রহণ করেছে যাদের মধ্যে প্রধান হচ্ছে মনু নদী। সুরমার উপনদীগুলির তুলনায় কুশিয়ারার উপনদীগুলি কম খরস্রোতা, তবে আকস্মিক বন্যাপ্রবণ।

সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর মধ্যবর্তী এলাকাটি হাওর এলাকা যা বর্ষা মৌসুমে গভীরভাবে প্লাবিত থাকে। সুরমা ও কুশিয়ারা মারকুলির কাছে পুনরায় মিলিত হয় এবং মেঘনা নামে ভৈরব হয়ে প্রবাহিত হয়ে চাঁদপুরে পদ্মা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ত্রিপুরা পাহাড় থেকে উৎপন্ন গোমতী ও খোয়াই নদী মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মেঘালয় ও আসাম থেকে উৎপন্ন আরও কতগুলি পাহাড়ি স্রোতধারা মেঘনার সঙ্গে মিশেছে। ভৈরব বাজার পর্যন্ত সুরমা-মেঘনা নদী প্রণালীর নিষ্কাশন এলাকার মোট আয়তন প্রায় ৮০২,০০০ বর্গ কিমি যার মধ্যে ৩৬,২০০ বর্গ কিমি বাংলাদেশে অবস্থিত।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের নদী প্রণালী দেশের অন্যান্য নদী প্রণালী থেকে এ নদী প্রণালী বিচ্ছিন্ন। এ অঞ্চলের প্রধান নদী কর্ণফুলি, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। এর উৎপত্তিস্থল মিজোরামের (ভারত) লুসাই পাহাড়ে। রাঙ্গামাটি এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পতেঙ্গার সন্নিকটে এটি বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্ণফুলি নদীর তীরে অবস্থিত। কাপ্তাই নামক স্থানে এ নদীর উপর  বাঁধ নির্মাণ করে দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এ অঞ্চলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নদী হলো: ফেনী, মুহুরী, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, বাকখালি এবং নাফ।

এই চারটি বৃহৎ নদী প্রণালীর মাধ্যমে প্রায় ১৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চলের পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে নদীগুলি তাদের সর্বোচ্চ পরিমাণে প্রবাহিত হয় এবং মোট প্রবাহমাত্রা দাঁড়ায় প্রায় ১৪০,০০০ কিউমেকস এবং শুষ্ক মৌসুমে প্রবাহ ৭,০০০ কিউমেকস-এ হ্রাস পায়।  [মোহা. শামসুল আলম]

গ্রন্থপঞ্জি  MAH Khan, ‘Environmental aspects of surface water development projects in Bangladesh’ in AA Rahman et al ed, Environment and Development in Bangladesh, Vol 2, University Press Ltd, Dhaka, 1990; Haroun Er Rashid, Geography of Bangladesh, University Press Ltd, Dhaka, 1991.