ধোবাউড়া উপজেলা

ধোবাউড়া উপজেলা (ময়মনসিংহ জেলা)  আয়তন: ২৫২.২৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°০৫´ থেকে ২৫°২০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৪´ থেকে ৯০°৩৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে ফুলপুর ও পূর্বধলা উপজেলা, পূর্বে দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) উপজেলা, পশ্চিমে হালুয়াঘাট উপজেলা। উপজেলার উত্তর সীমান্তে অনেক টিলা রয়েছে।

জনসংখ্যা ১,৯৬,২৮৪; পুরুষ ৯৬,৪৪৮, মহিলা ৯৯,৮৩৬। মুসলিম ১৭৯৩৭১, হিন্দু ৬৯০০, বৌদ্ধ ৯৯০৭, খ্রিস্টান ৪ এবং অন্যান্য ১০২। এ উপজেলায় গারো, হাজং প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: কংস ও নিতাই।

প্রশাসন ধোবাউড়া থানা গঠিত হয় ১৯৭৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৯৯ ১৬৪ ৬৯২৭ ১৮৯৩৫৭ ৭৭৮ ৪৮.৮ ২৮.৬
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৫.৫৯ ৬৯২৭ ১২৩৯ ৪৮.৮
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
গামারীতলা ৪২ ৮১৫৩ ১২৮৪৪ ১৩১৫০ ২২.৭
গোয়াতলা ৪৭ ৭৮৭৪ ১২৪৭১ ১৩০১৪ ২৮.১
ঘোষগাঁও ৫২ ৬৬৩৫ ৯২৬৪ ৯৯৬১ ৩৩.৯
দক্ষিণ মাইজপাড়া ৩১ ১১০২৪ ১৫০৬৫ ১৬৩২৪ ২৮.১
ধোবাউড়া ৩৬ ৯৯৪০ ১৬৮৬১ ১৭০৭৮ ৩৭.৫
পোড়াকান্দুলিয়া ৭৩ ৮১১১ ১৪২৯৫ ১৪৮৭৪ ২৩.৫
বাঘবেড় ১০ ১০৫৯২ ১৫৬৪৮ ১৫৪৩৫ ৩০.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ দর্শা গ্রামে পাকা মসজিদ (মোগল আমল) ও পাথর কাটার দীঘি, ঘোষগাঁও গ্রামে কামাক্ষ্যা মন্দির, ৪০ কেজি ৫০০ গ্রাম ওজনের কষ্টি পাথরের বিষ্ণুমূর্তি (বর্তমানে জাদুঘরে সংরক্ষিত), লাঙ্গল জোড়া গ্রামে ধরম শাহ্ দীঘি।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত কমরেড মনি সিংহের নেতৃত্বে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ‘জান দেব তবু ধান দেবো না’ এই স্লোগান নিয়ে টংক-আন্দোলন সংগঠিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১৯ জুলাই জিগাতলা গ্রামে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের দিনব্যাপী যুদ্ধে দুজন মুক্তিযোদ্ধাসহ এগারো জন শহীদ হন। ৩ অক্টোবর পাকবাহিনী গোয়াতলা বাজারে মুক্তি বাহিনীর ক্যাম্পে গভীর রাতে অতর্কিত হামলা চালালে চারজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পরদিন পাকবাহিনী গোয়াতলা বাজার ও তারাইকান্দি ফেরিঘাটে গণহত্যা চালায়। এতে প্রায় ১২০ জন শহীদ হন। উপজেলায় গোয়াতলা বাজার, তারাইকান্দি ফেরিঘাট, ডেফুলিয়া পাড়া, মিলাগড়া, দিগলবাগ, গোবরচেনা ও জিগাতলায় ৭টি গণকবর রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন ধোবাউড়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৩০, মন্দির ২৩, গির্জা ১৩, তীর্থস্থান ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: দর্শা গ্রামে পাকা মসজিদ, ঘোষগাঁও গ্রামে কামাক্ষ্যা মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ২৯.৪%; পুরুষ ৩০.৪%, মহিলা ২৮.৪%। কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮১, স্যাটেলাইট স্কুল ২৪।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  ধোবাউড়া বার্তা ও উজ্জীবন (অনিয়মিত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, ক্লাব ২২, সিনেমা হল ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৭.৮৮%, অকৃষি শ্রমিক ৪.০২%, শিল্প ০.১৯%, ব্যবসা ৭.৩৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ০.৪৬%, চাকরি ২.২৬%, নির্মাণ ০.৩৫%, ধর্মীয় সেবা ০.১৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৫% এবং অন্যান্য ৭.২৭%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৯.০৫%, ভূমিহীন ৪০.৯৫%। শহরে ৪২.৭৫% এবং গ্রামে ৫৯.৫১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, সরিষা, ইক্ষু, তামাক, তিল, আউশ ধান, আশ্বিনা ধান।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১০, গবাদিপশু ৫, হাঁস-মুরগি ২৯।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকা রাস্তা ৩৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৫ কিমি, কাঁচা রাস্তা ৩৪০ কিমি; নৌপথ ১৪৩ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন গরু ও ঘোড়ার গাড়ি, সোয়ারি, পাল্কি।

শিল্প ও কলকারখানা স’মিল, ধানকল, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বুননশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ, রেশম গুটি চাষ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৩, মেলা ৪। ধোবাউড়া হাট, গোয়াতলা হাট, কলসিন্দুর হাট, মুন্সির হাট, ঘোষগাঁও হাট, পোড়াকান্দুলিয়া হাট এবং ঘোষগাঁও দোলপূর্ণিমা মেলা, ধোবাউড়া অষ্টমীর মেলা, পোড়াকান্দুলিয়ার নয়াগঙ্গা অষ্টমী স্নান মেলা উল্লেখযোগ্য।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৭.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ চীনামাটি, বালি ও কাঠ উল্লেখযোগ্য। দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের ভেদিকুড়া গ্রামে চীনামাটির খনি রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.০%, ট্যাপ ০.২% এবং অন্যান্য ৫.৮%। এ উপজেলার ৪৭% অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫২.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৪.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১২.৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, হাসপাতাল ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, পশু হাসপাতাল ১। 

এনজিও ওয়ার্ল্ডভিশন, কারিতাস, ব্র্যাক, প্রশিকা, ডিপিডিএস।  [আবদুল মোতালেব তালুকদার]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ধোবাউড়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।