ধনুষ্টংকার বিষ

ধনুষ্টংকার বিষ (Tetanus Toxin) ধনুষ্টংকার বা টিটেনাস হলো একটি নিউরোপ্যারালাইটিক রোগ, যা খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ অব্দে গ্রীসের (কোস দ্বীপ) হিপোক্রেটিস প্রথম বর্ণনা করেছিলেন। এই রোগটি ঐচ্ছিক পেশীগুলির অতি সক্রিয়তা (হাইপার অ্যাক্টিভিটি) দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যা অনমনীয়তা এবং ধনুষ্টংকারগত খিঁচুনির (টেটানিক স্প্যাজম) দিকে পরিচালিত করে। ১৮৮৪ সালে, কার্লে এবং র‌্যাটোন দেখিয়েছিলেন যে টিটেনাস একটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়, যা পরবর্তীতে বিজ্ঞানী কিটা সাটো আলাদা করেন এবং ক্লোস্ট্রিডিয়াম টেটানি (Clostridium tetani) নামকরণ করেন। ১৮৮৯ সালে, এটি প্রমাণিত হয় যে, ব্যাকটেরিয়া C. tetani একটি শক্তিশালী স্নায়ু বিষ (নিউরো টক্সিন) তৈরি করে, যা ধনুষ্টংকার বা টিটেনাস সৃষ্টি করে। C. tetani স্পোরগুলি সারাবিশ্বেই পাওয়া যায় এবং ক্ষত, ছড়া জায়গা এবং নবজাতক ধনুষ্টংকারের ক্ষেত্রে নাভির নাড়ি আক্রান্ত করতে পারে। অক্সিজেন বিহীন/বায়ুহীন অবস্থায়, C. tetani স্পোরগুলি উৎপাদনক্ষম ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে, যা টিটেনাস টক্সিন তৈরি করে এবং রোগ সৃষ্টি করে। টিটেনাস সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীকে আক্রান্ত করে, যদিও রোগের সংবেদনশীলতা পরিবর্তনশীল; ঘোড়া এবং উচ্চতর স্তন্যপায়ীরা মাংসাশী প্রাণীদের চেয়ে বেশি সংবেদনশীল। ধনুষ্টংকার স্নায়ুবিষ বা টিটেনাস নিউরোটক্সিন (TeNT) ১৫০ কিলো ডাল্টনের একক-শিকল পলিপেপটাইড হিসাবে সংশ্লেষিত হয়। ক্লোস্ট্রিডিয়াল প্রোটিয়েজ বা বাহক/হোস্ট থেকে এক্সোজেনাস প্রোটিয়েজ দ্বারা ব্যাকটেরিয়ার বাইরে টক্সিন প্রোটিওলাইটিক ভাবে সক্রিয় হয়। টিটেনাস নির্ণয় মূলত বৈশিষ্ট্যগত স্পাস্টিক প্যারালাইটিক লক্ষণগুলো দেখে শনাক্ত করা হয়। তবে, সন্দেহজনক ক্ষতের উপস্থিতি টিটেনাস নির্ণয়কে সহায়তা করতে পারে। ধনুষ্টংকার স্নায়ুবিষ বা টিটেনাস নিউরোটক্সিন (TeNT) শনাক্ত করা কঠিনই বলা চলে এবং সাধারণত জৈবিক নমুনায় শনাক্ত করা যায় না। C. tetani দূষিত ক্ষত থেকে বিচ্ছিন্ন করা সব সময় সম্ভব নয়। টিটেনাসের চিকিৎসায় সাধারণত খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং হৃদপেশী বা কার্ডিও ভাসকুলার অস্থিরতা হ্রাস করা এবং এতে ক্ষত দূর করা, অ্যান্টিটক্সিন, অ্যান্টিবায়োটিক এবং সহায়ক যত্ন রয়েছে। টিটেনাস টক্সয়েড দিয়ে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা যায়। টিটেনাস সংক্রামক রোগ নয়। যেহেতু রোগ সৃষ্টির উপাদান পরিবেশে ব্যাপক, তাই টিটেনাস নির্মূল করা অসম্ভব। অতএব, পুরোপুরি নির্মূলের চেয়ে ধনুষ্টংকারে আক্রান্তের ঘটনা কমানোর দিকে নজর দেয়া শ্রেয়। [এ.কে.এম মাহবুব হাসান]