দে, চন্দ্রকুমার

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২১:৪৫, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

দে', 'চন্দ্রকুমার (১৮৮৯-১৯৪৬)  লোকসাহিত্য সংগ্রাহক ও লেখক। বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোনা জেলার রাঘবপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। অল্প বয়সে পিতামাতাকে হারিয়ে তিনি অনাথ হন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। সংস্কৃত টোলে সামান্য লেখাপড়া শিখে পরবর্তীকালে তিনি নিজ চেষ্টায় বাংলা ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।

চন্দ্রকুমারের প্রথম জীবন খুবই দুঃখময় ছিল। প্রথমে তিনি মাসিক এক টাকা বেতনে গ্রামের এক মুদির দোকানে চাকরি নেন। কিন্তু কাজে মনোযোগ না থাকায় কিছুদিন পর তাঁর চাকরি চলে যায়। তারপর মাসিক দুই টাকা বেতনে গ্রামেরই তারানাথ তালুকদারের তহশিলদার নিযুক্ত হন। এ সময় (১৯১২) ময়মনসিংহের কেদারনাথ মজুমদার সম্পাদিত সৌরভ পত্রিকায় লোকসাহিত্যভিত্তিক তাঁর কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হলে সুধীসমাজে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন।

কিছুদিন পর কেদারনাথের সহায়তায় মাসিক আট টাকা বেতনে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের জমিদারিতে তাঁর গোমস্তার চাকরি হয়। এ কাজে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে খাজনা আদায়ের সময় প্রায়শ তিনি গৃহস্থ বাড়িতে থেকে রাতভর গান-বাজনা,  কবিগানপালাগান ইত্যাদি শুনতেন এবং সেগুলি সংগ্রহ করতেন। এতে খাজনা আদায়ের কাজ ব্যাহত হওয়ায় তাঁর আবার চাকরি চলে যায়। এমন একটি সময়ে আসে তাঁর জীবনের পরম মুহূর্ত। সৌরভ  পত্রিকার ১৩২০ বঙ্গাব্দের (১৯১৩) ফাল্গুন সংখ্যায় প্রকাশিত ‘মহিলা কবি চন্দ্রাবতী’ নামে তাঁর লেখাটি পড়ে  দীনেশচন্দ্র সেন মুগ্ধ হন এবং কেদারনাথের মাধ্যমে তিনি চন্দ্রকুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দীনেশচন্দ্র মাসিক সত্তর টাকা বেতনে চন্দ্রকুমারকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকসাহিত্য সংগ্রাহক নিযুক্ত করেন। এর ফলে চন্দ্রকুমারের আশৈশব বাসনা পূরণের সুযোগ ঘটে। তিনি পূর্ণোদ্যমে সারা বাংলা ঘুরে ঘুরে  লোকসাহিত্য ও  লোকসঙ্গীত সংগ্রহ শুরু করেন।

চন্দ্রকুমার আমৃত্যু পল্লীর এ লোকসম্পদ সংগ্রহে নিয়োজিত থেকে বহু সংখ্যক পালা সংগ্রহ করেন। সেগুলির অধিকাংশই দীনেশচন্দ্র সেনের সম্পাদনায়  মৈমনসিংহ-গীতিকা (১৯২৩) ও  পূর্ববঙ্গ-গীতিকা (১৯২৬) নামে  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয় এবং দেশবিদেশের বহু গুণিজনের ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। চন্দ্রকুমারের সংগৃহীত পালাগুলি হচ্ছে: মৈমনসিংহ-গীতিকা মহুয়া, মলুয়া, চন্দ্রাবতী, দস্যু কেনারাম, কমলা, রূপবতী, কঙ্ক ও লীলা, দেওয়ান মদিনা ও ধোপার পাট; আর পূর্ববঙ্গ-গীতিকা ভেলুয়া সুন্দরী, মইষাল বন্ধু, কমলারাণী, দেওয়ান ঈসা খাঁ, ফিরোজ খাঁ দেওয়ান, আয়না বিবি, শ্যামরায়, শিলাদেবী, আন্ধা বন্ধু, বন্ডুলার বারমাসী, রতন ঠাকুর, পীর বাতাসী, জিবালনি, সোনারামের জন্ম ও ভারাইয়া রাজা। এগুলি ছাড়া তাঁর সংগৃহীত আরও কতগুলি পালা হচ্ছে: অধুয়া সুন্দরী, সুরতজামাল, কাজলরেখা, আসমা,  সত্যপীরের পাঁচালি, চন্দ্রাবতীর রামায়ণ, লীলার বারমাসী ও গোপিনী কীর্তন। পালাগুলির বেশির ভাগ  ময়মনসিংহ ও  সিলেট থেকে সংগৃহীত হয়েছে। মৌখিক ধারার এসব গান ও সাহিত্য  মাঠপর্যায় থেকে সংগ্রহ করে জনসম্মুখে তুলে ধরার মৌলিক কৃতিত্ব চন্দ্রকুমারের। পালা সংগ্রহ ছাড়া চন্দ্রকুমার নিজে বেশ কিছু কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। ১৯৪৬ সালে ময়মনসিংহে তাঁর মৃত্যু হয়।  [আলি নওয়াজ]