দেববর্মণ, শচীন

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২১:৪৬, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

দেববর্মণ', 'শচীন (১৯০৬-১৯৭৫)  কণ্ঠশিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর কুমিল্লার এক সঙ্গীতশিল্পি-পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা সুগায়ক নবদ্বীপচন্দ্র দেববাহাদুর ছিলেন ত্রিপুরা রাজবংশের সন্তান। আগরতলার বাসিন্দা হলেও শচীন দেবের শৈশব কেটেছে কুমিল্লায় এবং শেষ জীবন মুম্বাইতে। তাঁর সহধর্মিণী মীরা দেবী এবং একমাত্র পুত্র রাহুল দেববর্মনও মুম্বাই চিত্রজগতের প্রতিষ্ঠিত কণ্ঠশিল্পী।

শচীন দেব শৈশব থেকেই লোকসঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বহু  লোকসঙ্গীত সংগ্রহ করেন এবং রাগসঙ্গীতের সংমিশ্রণে সুরারোপ করে নতুন সুরজাল সৃষ্টি করেন। রাগসঙ্গীতে তাঁর ভাল দখল ছিল।  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করে তিনি ত্রিপুরার রাজদরবারে কিছুদিন চাকরি করেন। পরে চাকরি ছেড়ে  কলকাতা গিয়ে ওস্তাদ বাদল খাঁ,  আলাউদ্দিন খাঁ, ফৈয়াজ খাঁ, আব্দুল করিম খাঁ, ভীষ্মদেব, কানা কৃষ্ণ প্রমুখ সঙ্গীত বিশারদের নিকট রাগসঙ্গীতে আনুষ্ঠানিক তালিম নেন।

১৯২৩ সালে কলকাতা বেতারে শচীন দেব প্রথম গান করেন এবং ১৯৩২ সালে তাঁর প্রথম  গ্রামোফোন রেকর্ড বের হয়। তিনি  নজরুলসঙ্গীতও রেকর্ড করেন। এরপর তাঁর বহুসংখ্যক বাংলা ও হিন্দি গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। রেকর্ডকৃত তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গান হলো: ‘যদি দখিনা পবন’ (রাগপ্রধান), ‘প্রেমের সমাধি তীরে’ (কাব্যগীতি), ‘নিশীথে যাইও ফুলবনে’ (পল্লিগীতি), ‘বধুঁগো এই মধুমাস’ (পল্লিগীতি), ‘ওরে সুজন নাইয়া’ (পল্লিগীতি) প্রভৃতি।

শচীন দেব অনেক বাংলা গানে সুর দিয়েছেন। ১৯৩৪ সালে নিখিল ভারত সঙ্গীত সম্মিলনে গান গেয়ে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৩৭ সাল থেকে পরপর কয়েকটি বাংলা ছায়াছবিতে তিনি সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এক্ষেত্রে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ছায়াছবি হলো: রাজগী, ছদ্মবেশী, জীবন-সঙ্গিনী, মাটির ঘর ইত্যাদি। #চিত্র:দেববর্মণ, শচীন html 88407781.png

  1. শচীন দেববর্মণ

শচীন দেব ১৯৪৪ সাল থেকে মুম্বাই-এ বসবাস করেন এবং আশিটির মতো হিন্দি চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করে চিত্রজগতে বিশেষ খ্যাতির অধিকারী হন। সেখানে তিনি শিকারী, দেবদাস, সুজাতা, বন্দিনী, গাইড, আরাধনা, বাজি, শবনম, দো ভাই প্রভৃতি ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেন।

শচীন দেব বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনে উচ্চ পদ অলঙ্কৃত করেন এবং বহু সংগঠন কর্তৃক সম্মানিত হন। ১৯৫৮ সালে সঙ্গীত-নাটক আকাদেমি ও এশিয়ান ফিল্ম সোসাইটি (লন্ডন) এবং ১৯৬৩ সালে ত্রিপুরা ললিতকলা কেন্দ্র তাঁকে অভিনন্দিত করে। ১৯৬৯ সালে তিনি ভারত সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ উপাধি এবং চলচ্চিত্রে হিন্দি গানের নেপথ্য গায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। অনেক সাংস্কৃতিক দলের বিশিষ্ট শিল্পী হিসেবে তিনি ব্রিটেন, রাশিয়া ও ফিনল্যান্ডসহ বহু দেশ ভ্রমণ করেন। স্বীয় সঙ্গীতজীবনের বর্ণনা দিয়ে তিনি সরগমের নিখাদ নামক একখানি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন। শচীন দেব একজন বিশিষ্ট ক্রীড়ামোদীও ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর মুম্বাই-এ তাঁর মৃত্যু হয়।  [আলি নওয়াজ]